আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্বঃ ১৫.২)

নন্দিনী নীলার ধারাবাহিক উপন্যাস- কৃষ্ণবেণী পর্বঃ ১৫.২
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা, পর্বঃ ১৫.২ 


কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলাঃ পর্ব ১৫.১ পড়ুন/link/button


আজ শুক্রবার

সকাল থেকে হাঁসফাঁস করছে উর্মি কোথাও দাঁড়াতে পারছে না। জায়ান আজকে মিহির আর ওর মাকে বাসায় আসতে বলেছে। কোনভাবেই উর্মি সেই দাওয়াত ওর কাছে পৌঁছাতে পারে নি। মিহির ফোন রিসিভ‌ই করেনি। উর্মি মিহিরের বাসা খুঁজে চলে গিয়েছিল মিহিরের বাসায়‌। ওর মাকে অনেক বলে রাজি করিয়ে এসেছে। আর ও নিজেকে মিহিরের ফ্রেন্ড বলে পরিচয় দিয়েছে। মিহিরের মাকে বলে এসেছে যেভাবেই হোক মিহির কে নিয়ে যেন শুক্রবার আসে।

এখন উর্মি একটাই টেনশন হচ্ছে উনি কি মিহির কে রাজি করিয়ে নিয়ে আসতে পারবে। যদি আজ না আসে ভাই তো ক্ষেপে যাবে। কি করব আমি?

ভয়ে পাচ্ছে উর্মি না আসলে ভাইয়াকে কি জবাব দেবে ও।


মিহির ওর মায়ের সাথে উর্মি'দের বাসায় সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মিহিরের চোখ দুটো কপালে উঠে গেছে।ও বিস্মিত চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে," মা এটা কোথায় নিয়ে আসলে আমাকে?"

মালেকা বানু হাতের ঠিকানা ছেলের হাতে দিয়ে বলল,," এই ঠিকানায় তো লেখা আছে। চল ভেতরে যাই।"

মিহির মায়ের হাত ধরে আটকে বলে," এসব কি? এই ঠিকানা কে লিখে তোমায় দাওয়াত করেছে? সত্যি করে বলো।"

" এখানে দাঁড়িয়ে এসব জিজ্ঞেস করবি নাকি বাসার ভেতরে যাবি।"

" আমাকে ক্ষমা করবে এই বাসায় আমি যাবো না। আর না তোমাকে যেতে দেবো।"

মালেকা বানু কে কিছু বলার সুযোগ দিল না মিহির একটা অটো রিকশা দাঁড় করিয়ে টেনে মাকে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলো।

মালেকা বানু ছেলেকে বকছে অনবরত। মিহির বাসায় মাকে উর্মির সব ঘটনা খুলে বলেন। সব শুনে তিনি চিন্তিত মুখে নিজেও উর্মির আসার কথা বলে। মিহির দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে চলে যায়।

জায়ান উর্মি কে ডেকে পাঠিয়েছে। উর্মি ভয়ে ভীত হয়ে জায়ানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে। মাথা তুলে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।

জায়ান ধমক দিয়ে বলল," কোথায় তোমার বন্ধু?"
উর্মি ঢোক গিলে বলে," ভাই আসলে...

" তুমি আমার থেকে কিছু লুকিয়েছো? আমি আগেই বুঝেছি এবার কারণ টা বলো।"

উর্মি সব খুলে বলে। সব শুনে আয়ান চিৎকার করে ওঠে," ওই ছোট লোকের বাচ্চা আমার বোনকে ইগনোর করে। ওকে তো আমি...

জায়ান আয়ানকে ধমক দিয়ে থামিয়ে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। যাওয়ার আগে বোনের দিকে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বলে," সব আমাকে আগে জানাতে পারতে। মিহির দের জন্য আমি নিজের কাজ ফেলে বাসায় বসে ছিলাম আর তুমি আমায় অপমান করলে।"

উর্মি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না।


জায়ান রুমে আসে। রুমে বকুল আর তৃষ্ণা একসাথে বসে গল্প করছিল। জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বকুল কে বলে," তুমি উর্মির কাছে যাও।"

বকুল চমকে দাঁড়িয়ে বেরিয়ে আসে। জায়ান তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলে," আমার মাথা টিপে দাও তো।".

বলেই তৃষ্ণার কোলের উপর মাথা রেখে শুয়ে পরে। তৃষ্ণা হতচকিয়ে উঠে।

"আমার লজ্জা লাগছে আপনি উঠুন।"

"পরপুরুষ তোমার কোলে মাথা রাখে নাই। স্বামীর প্রতি এতো কিসের লজ্জা? চুপচাপ মাথা টিপে দাও।"

তৃষ্ণা জায়ানের চুলে হাত দিয়ে আছে। অনেক সিল্কি চুল ও টেনে না দিয়ে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

জায়ান তৃষ্ণার কোল থেকে উঠে বসে বলে," গায়ে শক্তি নাই? এটা কি করছো?"

তৃষ্ণা থতমত খেয়ে বলে,"আপনি এখানে হেলান দিয়ে বসেন। আমি আপনার চুল টেনে দেই।"

তৃষ্ণা খাটে হেলান দিয়ে বসতে বলল জায়ান কে। জায়ান বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে বসলো আর বলল,," তুমি কি এতোটাই লজ্জা পাও নাকি আমাকে দূরে রাখছো?"

" এটা কেমন কথা আপনাকে দূরে কোথায় রাখছি? আপনি তো আমার কাছেই বসে আছেন?"

"তুমি কি এতটাই অবুঝ? আমি কি বুঝিয়েছি বুঝতে পারছো না।"

তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল,"সত্যি বুঝিনি!"

জায়ান চোখ বন্ধ করে মাথা টিপে দেওয়া ইশারা করলো।

তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল," আজকে না উর্মি আপুর বিয়ের কথা বলবেন বললেন। আপনি রুমে এসে শুয়ে আছেন কেন তাহলে?"

"যা করতে বলছি তাই করো পাল্টা প্রশ্ন করবে না।"

তৃষ্ণা ঢোক গিলে এগিয়ে আসলো। জায়ানের মুখের সামনে হাঁটু উঁচু করে বসে কপালে আঙুল চালাতে লাগল। দশমিনিট পর জায়ান চোখ মেললো। তৃষ্ণা ওর খুব নিকটে। তৃষ্ণা নিঃশ্বাস ওর মুখে পরছে‌‌। জায়ান তাকিয়ে আছে অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে। তৃষ্ণা চমকে হাত থামিয়ে ফেলল। এমন হা করে তাকিয়ে থাকলে কি তার সামনে বসে থাকা যায়। কোলে মাথা রেখে দিয়েছিল অস্বস্তি এখন তাকিয়ে আমায় চোখের দৃষ্টি দিয়েই খুন করছে।


"আপনি চোখ বন্ধ করে থাকেন না দয়া করে।"

" কেন প্রবলেম কী?" ভ্রুকটি করে বলল জায়ান।

" আমার লজ্জা লাগছে। আপনি চোখ বন্ধ করুন। নয়তো আমি এভাবে মাথা টিপে দিতে পারব না‌।

" লজ্জা লাগছে?"

" হুম।"

তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলল।

জায়ান তৃষ্ণার কোমরে হাত রেখে আচমকা টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। তৃষ্ণা থমকে গেছে। চোখ বড়ো সড়ো করে তাকাল জায়ানের দিকে। জায়ানের ঠোঁটের কোনে দুষ্টু হাসি।

জায়ান তৃষ্ণার নাকে নাক ঘষে বলে," এখনো লজ্জা লাগছে?"

তৃষ্ণা ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে। ওর হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে গেছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে কিছু বলতে চায় বলতে পারে না। ও চোখ খিচে বন্ধ করে বলে," ছাড়ুন দয়া করে।"

" নো ছেড়ে দিলে তোমার লজ্জা ভাঙাবো কিভাবে? স্বামীর কাছে এসে লজ্জা পাও এটাও একটা বড়ো লজ্জার কথা?"

" কি করবেন আপনি?"

" যা করলে আমার এই লজ্জাবতী ব‌উয়ের লজ্জা ভাঙবে তাই করব।"

তৃষ্ণা কিছু বুঝতে না পেরে ভয়ে ছাড়ার জন্য অনুনয় করতে লাগে। জায়ান তৃষ্ণার ভয়ার্ত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। যেন মজা পাচ্ছে।

তৃষ্ণা চমকে উঠা গলায় বলল," আপনি কে?"

জায়ান তৃষ্ণার কোমরে আরো জোরে চাপ দিয়ে নিজের বুকের উপর ফেলে দেয় তৃষ্ণা কে। তৃষ্ণা জায়ানের শার্ট হাতে ধরে আছে।

" আবার আমি কে বলছো? তুমি তো বহুত চালাক মেয়ে। স্বামী রোমান্স করতে আসলে তাকে না চেনা ভান করে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করো।"

আরেকটু ঘনিষ্ঠ হতে যাবে জায়ান তখন বকুলের কন্ঠ শুনে চমকে উঠে দুজনেই। দরজা বন্ধ তাই বকুল ভেতরে যেতে পারে নি। কিন্তু দরজা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে।

জায়ান বিরক্তিকর চোখে দরজার দিকে তাকিয়ে ছেড়ে দিল। তৃষ্ণা দ্রুত দরজা খুলে দিল।

" কি হয়েছে?"

" বুবু আমার ভয় করছে একা আমার সাথে আয় না।"

" কোথায় যাব? উর্মি আপু ক‌ই?"

" সে দরজা বন্ধ করে রাখছে আমি একা কি করব আমার না ভয় করছে আয় না আমার লগে।"

জায়ান কে রেখে তৃষ্ণা বকুল কে নিয়ে বাইরে এলো।

" বুবু দুলাভাই ক‌ই?"

" কেন? দুলাভাইয়ের লগে গল্প করবি নাকি?"

বকুল ভয়ার্ত মুখে জোর করে হাসি এনে বলে," ক‌ও না বুবু‌। আমার না তোমার শাড়ি পরে ভালো লাগছে না আমি এটা পাল্টে ফেলি।"

বলেই বকুল বাথরুমে ঢুকে গেল। তৃষ্ণা অবাক চোখে বোনের দিকে তাকিয়ে ছিল। এই তো দুপুরের বকুল জোর করে কত বলে ওর একটা শাড়ি নিয়ে পরলো। ওর নাকি পরার অনেক ইচ্ছা হয়েছে‌। এখন তাহলে কি হলো মেয়েটার শাড়ি পাল্টানোর জন্য এতো তাড়াহুড়ো করল কেন? আর এতো ভয় পেয়ে আছে কেন?

আয়ান চোরের মতো মুখ করে হাঁটছিল তখন ধাক্কা খায় জায়ানের সাথে।

জায়ান ভ্রু কুঁচকে আয়ান কে জিজ্ঞেস করে," হোয়াট হ্যাপেন্ড?"

আয়ান কপালের ঘাম মুছে বলে," নাথিং।"

বলেই এক প্রকার পালিয়ে যায়। আয়ানের যাওয়ার দিকে জায়ান সন্দিহীন চোখে তাকিয়ে আছে।

জায়ান তৃষ্ণার ব্যবহারে রাগে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে আসছিল। তখন একটা কল আসে জায়ানের ফোনে। ও রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন বলে উঠে," স্যার বড় স্যারের গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে স্যারকে সিটি হসপিটালে ভর্তি করা হয়েছে আপনি দ্রুত চলে আসেন।"

জায়ান স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে? ও চিৎকার করে মা বলে ডেকে উঠে।

জেসমিন বেগম দৌড়ে বাইরে আসে। জায়ান প্রায় তিন বছর পর উনাকে মা বলে ডেকেছে। উনি খুশি মনে এগিয়ে আসে। উনার চোখ ছলছল করছে আনন্দে।

জায়ান বাবার এক্সিডেন্ট এর কথা জানায়। কিন্তু তার মধ্যে কোন হেলদোল নেই তিনি ছেলে তাকে মা বলেছে এতদিন পর সেই খুশি আছেন।

" আমি কি বলছি শুনতে পাননি?"

জেসমিন বেগম বলেন," তোমার ড্যাড এক্সিডেন্ট করলে তুমি আমায় আবার মা ডাকবে জানলে কবেই নিজেই তার গাড়ির ব্রেক ফেল করিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে ফেলতাম।"


" আপনার মাথা গেছে। সরুন আপনি আনন্দ উল্লাস করেন আমি আমার বাবার কাছে যাচ্ছি।"

" আমি আয়ান কে নিয়ে আসছি।"

জায়ান রাগী দৃষ্টি ফেলে হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।


কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা পর্বঃ ১৬ এবং ১৭ পড়ুন একসাথে/link/button

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.