ভয়ংকর রহস্য (পর্ব ০৩) - Nayeem Chowdhori |
ভয়ংকর রহস্যপর্ব ৩লেখক Nayeem Chowdhori
নাইম আর মুগ্ধ বাইক নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করল । তারপর কিছু দূর যেতেই দেখলো সামনে জঙ্গলটা বের হয়েছে । একটু দূরে যেতেই দেখলো সামনে লাল রংয়ের একটা বাইক । নাইম নিজের আধামড়া বাইক টা সেখানে থামালো ।
মুগ্ধ সামনে তাকিয়ে দেখলো সামনে একটা লাল রংয়ের বাইক । নাইম আর মুগ্ধ সেখানে নেমে বাইক টা দেখতে লাগল । নাইম আর মুগ্ধ এইটা নিতে চাইলো যে কোন মূল্যে কিন্তু তারা কিছু করার আগেই সামনে থেকে একটা লোক দৌড়ে এসে বলতে লাগলো ,,, আমার ছেলে পাওয়া যাচ্ছে না আপনারা প্লিজ আমার ছেলেকে খুঁজে বের করেন তার বিনিময়ে আপনারা যা চাইবেন তাই পাবেন !
নাইম দেখলো লোকটা কান্না করে করে কথা বলছিল , অবশ্য টাকার গরম থাকবেই কারণ দেখেই মনে হচ্ছে এনার প্রচুর টাকা । নাইম বলল,,,সেটা না হয় বের করলাম কিন্তু এই বাইক টা কার ? নাঈমের কথায় লোকটা বলল ,,,এই বাইক আমার ছেলে সজীব এর কালকে রাতে জঙ্গলের পাশে রকির মৃত দেহ পাওয়া গেছে আর সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ঘটনা হলো রকি আর সজিব বন্ধু তারা অনেক রাত করে আড্ডা দেই কিন্তু রকির যদি মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে আমার ছেলে কোথায় প্লিজ আপনারা আমার ছেলেকে বের করে দিন ।
নাইম আর মুগ্ধ একটু বুঝলো তারা লোকটাকে একটু ভরসা দিয়ে সেখান থেকে সামনের দিকে যেতে লাগল , আর কিছুদূর যেতেই দেখলো অনেক লোকের ভিড় সেখানে । নাইম আর মুগ্ধ একটু ভিড় পেলিয়ে গিয়ে দেখলো সেখানে ভয়ংকর ভাবে একজন কে মারা হয়েছে । ওইটা দেখেই নাইম কিছুটা দূরে চলে আসল আসলে নাইম কোন রক্ত বা খুন দেখতে পারে না । নাঈমের বিনিময়ে মুগ্ধ লোকজনের থেকে সব তথ্য নিচ্ছে !
একটু পরে মুগ্ধ এসে বলতাছে ,,,ওরা পাঁচ বন্ধু ছিল , সোহাগ,রকি ,সজিব ,জিসান ,আর রহমান এরা পাঁচজন খুব কাছের বন্ধু , এরা যাই করে একসাথে করে তারা রাতে একসাথে জঙ্গলের শেষ প্রান্তের চায়ের দোকানে আড্ডা দেই , সবাই বড়লোক বাপের একমাত্র ছেলে , কিন্তু এইখানে তাদের ভেতর দুইজনের খুন হয়েছে আর একজন নিখোঁজ সে হচ্ছে সজিব ।
নাইম বিষয়টা বুঝতে পারলো । নাইম একটু ভেবে বলতে লাগলো ,, তারমানে কেসটা খুব সহজ দেখ এইখানে পাঁচজন বন্ধুর ভেতরেই খুন হচ্ছে তারমানে তাদের কোন নিশ্চয় শক্রু আছে আর আমাদের এখন জিসান আর রহমান কে খুঁজতে হবে তাইলেই আমরা রহস্য বের করতে পারবো আর তারা কি অন্যায় করেছিল সেটাও জানতে পারবো ?
নাইম আর মুগ্ধ সেখানেই বসে এইগুলো আলোচনা করলো হঠাৎ নাইম দেখলো জঙ্গলের ভেতর একটা বাচ্চা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে । নাইম সেই বাচ্চাটাকে চিনে এর আগে নাইম এই বাচ্চাটাকে অনেক খাবার কিনে দিয়েছিল কিন্তু এক সপ্তাহ হয়ে গেছে তবুও তাকে আর দেখছে না নাইম ।
নাইম ছেলেটাকে দেখার জন্য জঙ্গলের দিকে হাঁটা ধরল সেটা দেখে মুগ্ধ বলল ,, কোথায় যাচ্ছিস তুই ! নাইম বলল ,,তর মনে আছে আমি প্রতিদিন নিয়ম করে সন্ধ্যায় একটা ছেলেকে খাবার কিনে দিতাম । মুগ্ধ মাথা নেড়ে হ্যা সম্মতি দিল । নাইম আবার বলল ,,,ওই ছেলেটাকে এক সপ্তাহ ধরে খুঁজে পাচ্ছি না কিন্তু এখন দেখলাম জঙ্গলের ভেতরে হেঁটে যাচ্ছে তাই তার কাছে যাচ্ছি কথা বলতে ।
মুগ্ধর বিষয়টা সুবিধার মনে হলো না তাই সেও নাঈমের পিছে পিছে যেতে লাগল ! নাইম জঙ্গলের ভেতর যেতে লাগল তার হাতের ছোট মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে । জঙ্গলটা বেশ অন্ধকার ছিল । নাঈমের ফোনের আলোয় আশেপাশে তেমন দেখা যাচ্ছিল না কিন্তু আকাশ পরিষ্কার থাকায় একটু একটু দেখা যাচ্ছিল ।
জঙ্গলের ভেতর ঢুকতেই বিরাট একটা চিৎকার ভেসে আসল নাঈমের কানে । নাইম অবাক হয়ে মুগ্ধর দিকে তাকিয়ে দেখল মুগ্ধ ওহ একটু ভয় পেয়েছে । অদ্ভুত ভাবে ওই চিৎকারের সাথে সাথে আকাশের মেঘ সড়ে গিয়ে চাঁদের আলো পুরো জঙ্গলের উপর পড়ল ।
এখন আশেপাশে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । নাইম আর মুগ্ধ সামনের দিকে দৌড়াতে লাগল । হঠাৎ আবার আরেকটা চিৎকার ভেসে আসল । চিৎকার টা কোন ছেলে মানুষের ছিল । নাইম আর মুগ্ধ আরেকটু দৌড়াতেই দেখে একটা ছেলে তার পা দুটো খোড়ে খোড়ে সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে কিন্তু তার পা দিয়ে অনেক রক্ত পড়ছে তাই হয়ত সামনের দিকে ভালো ভাবে যেতে পারছে না ।
নাইম আর মুগ্ধ সেই ছেলেটার দিকে দৌড়াতেই দেখলো একটা কালো বোরখা পড়া মেয়ে সেই ছেলেটাকে পিছন থেকে একটা গাছের ডাল দিয়ে সজোরে আঘাত করল । এতটা জোরে আঘাত করল যে ছেলেটা উড়ে গিয়ে আরেকটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে সেখানে চোখ বন্ধ করে রয়ল । ছেলেটা আর কথাও বলছে না আর নড়াচড়াও করছে না ।
নাইম চোখের সামনে কাউকে মারতে দেখে বেশ রাগ করে ফেলল । নাইম মেয়েটার দিকে আঙুল তুলে বলল ,,, তর কি কোন মায়াদয়া নাই যে এইভাবে এই নির্জন জায়গায় একটা ছেলেকে আঘাত করলি এখন যদি ছেলেটা মারা যায় তাইলে কি হবে ?
নাঈমের কথা শুনে মুগ্ধ বেশ অবাক হয়ে গেল । মুগ্ধ মেয়েটাকে ভালো করে দেখতে লাগল , মুগ্ধ একটু নিচে তাকাতেই দেখে মেয়েটার কোন ছায়া নেই । মুগ্ধ বেশ ভয় পেয়ে যায় মুগ্ধ তুথলাতে তুথলাতে বলে ,,,ভাই দে দে দেখ মেয়েটার কোন ছায়া নেই ?
নাইম নিচে তাকিয়ে দেখল সত্যি মেয়েটার কোন ছায়া নেই । নাইম বেশ ভয় পেয়ে গেলো নাইম আর মুগ্ধ এর আগে কখনো ভূতকে দেখে নাই তাই চোখের সামনে ভূত কে দেখতে পেয়েই ভয়ে জোরে জোরে চিৎকার করে দেই ।
বোরকা পড়া মেয়েটা নাইম আর মুগ্ধর দিকে এগিয়ে আসতেই নাইম আর মুগ্ধ ভয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আরেকটা চিৎকার দেই । বোরখা পড়া মেয়েটা তার হাতে থাকা রক্তাক্ত লাঠিটা ছুড়ে মারতেই নাঈম আর মুগ্ধ ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে । একটু পরে যখন কোন লাঠি এসে নাইমদের উপর না পড়ল তখন নাইম আর মুগ্ধ ভয়ে ভয়ে চোখ খুলতেই দেখে লাঠিটা শূন্য ভাসতাছে...
নাইম আর মুগ্ধ হা করে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখল তাদের সামনে সেই ছোট ছেলেটাও রয়েছে । হঠাৎ করে ছেলেটাকে দেখতে পেয়ে নাইম বেশ অবাক হয়ে গেল । সেই ছোট ছেলেটা বলতে লাগলো ,,,, ইসরাত আপু এদেরকে মেরো না এরা দুইজন অনেক ভালো পিল্জ আপু এদেরকে ছেড়ে দাও । সেই ছেলেটার কথাই মেয়েটা নাঈমের দিকে একবার তাকালো ।
নাইম ওই মেয়েটার দিকে তাকালো । নাইম দেখলো চাঁদের আলোয় মেয়েটার চোখ দুটো অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে । নাইম যেন চোখের সামনে এক চাঁদের পরী কে দেখছে । ছোট ছেলেটা আবার বলল ,,আপু এরা খুব ভালো পিল্জ এদেরকে কিছু বলো না !
ছেলেটার কথাই ইসরাত কোন কথা না বলে তাদের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রয়লো । এইটা দেখে নাইম আর মুগ্ধ অনেক অবাক হয়ে গেল তারা ভাবতেই পারছে না তাদের সাথে এটা কি হচ্ছে । ছোট ছেলেটা বলতে লাগলো ,,,ভাইয়া আপনি এখানে কেন এসেছেন ?
নাইম ছোট ছেলেটার সামনে হাঁটু গেড়ে বলতাছে ,,,, ভাইয়া তুমি আর বাজারে থাকো না কেন তোমাকে আমি কত খুঁজেছি তবুও পাইনি কেন আর ? ছোট ছেলেটা একটু অভিমান করে বলল ,,, ভাইয়া আমি আর কখনো আপনাদের সামনে আস্তে পারবো না ।
নাঈম একটু মুচকি হেসে বলতে লাগলো ,,, তোমাকে খাবার কিনে দিতে আমি আর পারবো না এখন থেকে তুমি আমার বাড়িতে যাবে আর আমাদের দুইজনের সাথে সেখানেই থাকবে ! নাঈমের কথাই ইসরাত অবাক হয়ে নাঈমের দিকে তাকিয়ে রয়লো ।
হঠাৎ করেই ছোট ছেলেটার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল । নাইম এইটা দেখে ছেলেটার চোখে হাত দিয়ে পানি মুছে দিল কিন্তু নাঈমের কেমন জানি মনে হলো ছেলেটার পুরো শরীর বেশ ঠান্ডা । নাইম ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলল ,,, কান্না করে না আমার ছোট ভাই আর তোমার শরীর এত ঠান্ডা কেন তোমার কি শরীর খারাপ চলো চলো এত রাতে বাইরে না থেকে আমার সাথে আমার বাসায় যাবে !
নাঈমের কথাই ইসরাত মন খারাপ করে বলতে লাগলো,,, আপনাদের এই সমাজ ভালো থাকতে দেয়নি আপনার ছোট ভাইকে তাই তার শরীর এত ঠান্ডা । ইসরাতের কথাই কেমন জানি কষ্টের ছাপ খুঁজে পেল নাইম ।
নাইম সেই ছোট ছেলেটাকে জড়িয়ে ধরে বলল ,,,এখন থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে আর তোমার বোন যদি থাকতে চায় তাইলে তাকেও থাকার ব্যবস্থা করে দিব কিন্তু তার বিনিময়ে তোমার বোনকে কিন্তু আমাদের তিনজন কে প্রতিদিন মজার মজার রান্না করে দিতে হবে ,
নাঈমের কথাই সুখের ছাপ থাকলেও তাদের দুইজনের মনে কোন হাসি নেই । সেই ছেলেটা চোখের পানি আবার ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো ,,, আমাকে এই সমাজ বাঁচতে দেয় নাই ভাইয়া আমাকে সুখে থাকার সৌভাগ্য করে দেয় নাই এই সমাজ ।
এ কথা বলতেই জঙ্গলের ভেতর কয়েকটা মানুষের কথা শোনা গেল আর লাইটের আলো নাইমদের কাছে আসল । সেই ছেলেটা তাড়াতাড়ি বলল ,, ভাইয়া আমাকে যেতে হবে আল্লাহ হাফেজ ! এটা বলে সেই ছেলেটা আর ইসরাত অদৃশ্য হয়ে গেলো ....
এইটা দেখে নাইম আর মুগ্ধ বেশ ভয়ে পেয়ে গোলো । তারা দুইজন এতটা ভয় পেল যে মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না । সেই চারপাচজন লোক গাছের কাছেই আসতেই দেখল সেখানে একটা ছেলের বডি শুয়ে আছে আর পিছন থেকে অনেক রক্ত পড়ছে । তারা সবাই দেহটাকে উল্টাতেই দেখল ..........?
তারপরেই ঘটল আরেকটা বিশাল ঘটনা .........?
#চলবে
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর কারো কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই বলবেন !