আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব- ১৩ )

আর.জে.পি. কোম্পানির ওনার মোঃ আজিম হোসাইন মধ্যবয়স্ক একজন লোক।চট্টগ্রামে ও ঢাকায় বেশ কয়েকটা টেক্সাটাইল ফ্যাক্টিরর ওনার।বতর্মানে একাকী জীবনযাপন করছে।সারা
হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব- ১৩ )
হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব- ১৩ )

#হৃদয়ের_নিকুঞ্জ_নিড়ে
পর্বঃ১৩
#গল্পকন্যা

(এডিট ছাড়া, ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

আর.জে.পি. কোম্পানির ওনার মোঃ আজিম হোসাইন মধ্যবয়স্ক একজন লোক।চট্টগ্রামে ও ঢাকায় বেশ কয়েকটা টেক্সাটাইল ফ্যাক্টিরর ওনার।বতর্মানে একাকী জীবনযাপন করছে।সারা জীবন কাটিয়েছে ওনার কাজের পেছনে।কাজ ছাড়া কিছুই বুঝেন না।উনি সব কিছু মেইনটেইন করে ওনার নিজস্ব রুটিন অনুযায়ি।এর ব্যতিক্রম হলেই উনি অস্বস্থি বোধ করেন।তখন মাথা ঠিক থাকে না।ওনার কাছে সবার আগে প্রায়োরিটি পায় ওনার সোসাইটি।সোসাইটির বিরুদ্ধে যাবে এমন কিছু ওনি বরদাস্ত করেন না।তাতে যা খুশি হোক।

তিন বছর আগে এসব কিছুকে কেন্দ্র করে নষ্ট হয়ে যায় ওনার বাইশ বছরের সংসার।ওনার এমন রোবটিক জীবনযাপনের জন্য বিয়ের পর থেকে কখনোই স্ত্রীকে আপন করে নিতে পারেন নি।দুজনের দাম্পত্য জীবন ছিলো ঠিকি কিন্তু কোনো ভালোবাসা বিদ্যমান ছিলো না তাদের মধ্যে।লোক দেখানোর জন্য নিজেরা সবসময় ভালো সেজে থাকতো কিন্তু চার দেয়ালের মধ্যে ছিলো অন্যকিছু।

প্রত্যেহ তাদের মধ্যে লেগে থাকতো কলহ-বিবাদ।দিনকে দিন তা সহ্যের মাত্রা অতিক্রম করে ফেলছিলো।এক পর্যায়ে তা গিয়ে ঠেকে তুই তুকারিতে।শেষ যেদিন ঝগড়া হলো।খুবই সামন্য বিষয় নিয়ে।


আজিম হোসাইনের স্ত্রী রিনা বেগমের মাইগ্রেনের ব্যথা সকাল থেকে।সারাদিন চুপচাপ নিজের ঘরে কাটিয়েছে।

এদিকে আজিম হোসাইন ফোন করে বলছে ওনার কয়েকজন বন্ধু ও তাদের স্ত্রীরা আসবে।"ইউনিক কিছু রান্না করো।যেন সবাই আজিম হোসাইনের বাড়ির কথা ভুলতে না পারে।"

রিনা বেগম বিরক্ত বোধ করেন।ওনার কাছে না জিজ্ঞেস করে, ওনার স্বাস্থ্যের খবর না জেনে,মেহমান নিয়ে আসাতে।

তবুও এক প্রকার বাধ্য হয়ে বিভিন্ন আইটেম রান্না করে।স্বামীর কথা চিন্তা করে মাংস পোলাউয়ের সাথে কিছু দেশি খাবারের ব্যবস্থা করে,যেমন-চিংড়ি ও টাকি মাছের ভর্তা,ডিমের ভর্তা,বেগুন ভাজা,পটল ভাজা,কুমড়ো ভাজা,ডাল ভর্তা,আলু ভর্তা,সিম ভর্তা,টমেটো ভর্তা,তেল কৈ,ছোটো মাছের চচ্চড়ি,ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে টক।

এই সব কিছু নিজের হাতে রান্না করে।কারণ আজিম হোসাইন কাজের লোকের হাতের রান্না পছন্দ করে না।যদি কখনো রান্না হয়ে যায় সেদিন আজিম হোসাইন আর ঘরের খাবার মুখে তুলে না।তাই বাধ্য হয়ে রিনা বেগম রান্না করে।সেজন্য একদিনের জন্য কোথাও যেতে পারে না।

যদিও কোথায় যাওয়া হয় তাহলে আজিম হোসাইনের সাথে বিভিন্ন সোশ্যাল পার্টিতে,নয়তো তার বন্ধুদের বাড়ি,কিংবা রেস্টুরেন্টে।সেখানে  গেলেও নিজের মতো কিছু করার উপায় নেই।সর্বদা ঠোঁটে প্লাস্টিক হাসি ঝুলিয়ে রাখতে হয়।

এসব থেকে বাদ যায়নি তাদের একমাত্র মেয়ে।তার পড়াশোনা এমনকি ড্রেস আপ পর্যন্ত আজিম হোসাইন ঠিক করে দিতেন।মেয়েকে বিলাসিতার মধ্যে ডুবিয়ে রাখতো।কিন্তু মেয়ের ইচ্ছেকে প্রাদান্য দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি কখনো।

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে,ছুটি হলে ড্রাইভারের সাথে বাড়ি ফিরে আসে,দুপুরের খাওয়া পর রুটিন মাফিক ঘুমাতে যেতে হয়,ঘুম থেকে উঠে একের পর এক করে তিন জন শিক্ষক এসে পড়িয়ে যায়।তারপর একটু লেপটপ টিপে সবার সাথে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ে।

ও কার কার সাথে বন্ধুত্ত করবে,কারে সাথে মিশবে তাও আজিম হোসাইন ঠিক করে দেয়।পাছে যার তার সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যায়।তখন তো সোসাইটিতে মুখ দেখানোর জো থাকবে না,সবাই আজিম হোসাইনের দিকে আঙুল তুলবে।


এভাবেই চলছিল স্ত্রী ও মেয়ের  সাথে জীবন যাপন।

মা মেয়ে দু'জনেই হাঁপিয়ে উঠেছে।রিনা বেগম স্বামীর এতো এতো অবহেলা পেয়ে,স্বামীর সাথে তাল মিলিয়ে এমন রোবটিক জীবন যাপন করতে করতে,প্রতিনিয়ত নিঃসঙ্গ অনুভব করে।ওনিও ঝুঁকে পড়ে টিভি সিরিয়ালের দিকে।তা না হলে বই পড়ার দিকে।নিজের একাকিত্ব মনমানসিকতা নিয়ে মেয়ের দিকে তাকানোর প্রয়োজন বোধ করেন না।

আজিম হোসাইন বাড়ি ফিরে মেহমান নিয়ে।আড্ডা শেষে টেবিলে মাংস পোলাউয়ের পাশে এসব ভর্তা ভাজি দেখে সকলের সামনে স্ত্রীকে অপমান করে।

"তুমি এখনো সোসাইটির রুলস রেগুলেশনে মতো চলতে পারছো না কেন?তোমাকে এসব রান্না করতে বলেছিলাম,আনকার্লচার কোথাকার।এরা কি তোমার মতো থার্ড ক্লাস,এরা এখন কি মনে করবে!"

রিনা বেগম সেদিন সবার সামনে স্বামীর কথায় চরম অপমানিত হন।সেদিন মেহমান চলে যাওয়ার পর দু'জনের মধ্যে শুরু হয়  তুমুল ঝগড়া।

রিনা বেগম আজিম হোসাইনের মুখে মুখে তর্ক করে উঠে,সাথে সাথে আজিম হোসাইন রিনা বেগমের গালে চড় মারে।তাদের মেয়ে ছিল নিরব দর্শক,কিন্তু এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে বাবা-মার পা জড়িয়ে ধরে।বলে,"বাবা-মা তোমরা থামো।আমার জন্য তোমরা থামো প্লিজ।একটা বার আমার কথা চিন্তা করে থামো।"কিন্তু কেউ কারো কথা শোনে না।

মেয়েটি রেগে বলে,"তোমাদের মতো বাবা-মা যেন কারো না হয়।তোমরা আমার লাইফ টাকে হেল করে দিয়েছো।"

এটা শুনে আজিম হোসাইন রেগে যায়,"কি বললে তুমি?মুখে মুখে কথা বলতে শিখে গেছো।কারটা খেয়ে এতো বড়ো হয়েছো হ্যাঁ।এক টাকা রোজকার করার সাধ্য আছে।আমারটা খেয়ে আমার মুখের উপর কথা বলছো।পুরো মায়ের মতো সাহস হয়েছে।যাও  আমার বাড়ি থেকে তোমরা মা মেয়ে বেড়িয়ে যাও।তোমার মাকে তো ইমিডিয়েটলি ডিবর্স দিবো।আর তুমি যেদিন রোজকার করে দেখাতে পারবে সেদিন আমার মুখের উপর কথা বলো।আমার সামনে এসো,তার আগে নয়।"মেয়েটি সেদিন ওর জমানো কিছু টাকা নিয়ে সত্যি সত্যি বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।


—————————


সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে।বাসা থেকে জার্নি করে এসে এক্সাম দিতে সমস্যা হবে।তাই হলে সিটের জন্য এপ্লাই করেছিলো।জাহিদ,কায়সার সবাই হলে সিট পেলেও  রাতের ভাগ্যে মেলেনি।এর পেছনে রয়েছে সোহানের হাত।

হাটহাজারীতে একটা বাসা নিয়েছে রাত।বাসাটি ক্যাম্পাসের কাছাকাছি। বেড রুম ও ডাইনিং ড্রইং স্পেসের সম্বন্নয়ে দুটো রুমের ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট।  দুই মাসের জন্য নিয়েছে।

পাপড়ির লাস্ট ইয়ারের লাস্ট এন্ড ফাইনাল এক্সাম শুরু হবে।

কক্সবাজারের সেই ঘটনার পরে  দু'জনের মধ্যে আর কোনো কথা হয় না।না কোনো যোগাযোগ।রাস্তায় হঠাৎ দেখা হলেও এড়িয়ে যায় অচেনার মতো।

সেদিনের রাতের ঘটনার পর দিন  পাপড়ি ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে শুরু করে।রাত কাছে গিয়ে স্বান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে।কিন্তু কোনো ভাবেই কান্না থামাতে সক্ষম হয় না। রাত পাপড়ির কান্নার কারণ জানতে চায়।পাপড়ি কান্না ভেজা কন্ঠে বলে,"সোহান জানতে পারলে আমি আর এই হোস্টেলে থাকতে পাড়বো না,আর ক্যাম্পাসের হোস্টেল থাকতে না পারলে আমার আর  পড়াশোনাও হবে না।"

রাত পাপড়ির একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।তারপর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,"বোকা মেয়ে কাঁদছেন কেন,এ কথা তো আমি আর আপনি ছাড়া কেউ জানে না,আর আপনি না চাইলে কেউ কখনো জানবে ও না।আমি আপনার বন্ধু ছিলাম বন্ধুই আছি।"

সেদিন হোটেলে ফেরার পর স্যার অনেক বকাঝকা করে।তখন রাত বলে,"স্যার আমরা হিমছড়িতে ঘুরতে গিয়েছিলাম আসার পথে বাইকে নষ্ট হয়ে যায়, আমরা ঝড়ের কবলে পড়ে একটা পরিবারের সাহায্য নেই।"এভাবে নানান ছলে বোঝানোর চেষ্টা করে।ওরা এই ঝড়ের কবল থেকে ফিরতে পেরেছে দেখে স্যার আর কিছু বলেন নি।কিন্তু পাপড়িকে পছন্দ করা ছেলে গুলো সে সব ভালো ভাবে নেয়নি।সবার মধ্যে রটিয়ে দেয় পাপড়ি রাতের সাথে রাত কাটিয়ে  এসেছে।

সেখান থেকে আসার পরেও সব সাভাবিক ছিলো।

একদিন রাতের সাথে পাপড়ি দেখা করে ঝুলন্ত সেতুতে।রাত শেন দৃষ্টিতে পাপড়িকে দেখে চলেছে।আসলে রাত যতই বলুক না কেন।সেদিনের পর থেকে পাপড়িকে ও মন থেকে নিজের স্ত্রীর জায়গা দিয়ে ফেলেছে।পাপড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবে,"মেয়েটা এতো সুন্দর কেন?"

পাপড়ি অনেকক্ষণ ধরে খেয়াল করছে রাতকে।তারপর বলে,"এভাবে বেহায়ার মতো কি দেখছিস?"


"দেখার জিনিস...? "

"তোকে না নিষেধ করেছি,এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে!"

"কেন?তাকালে কি তোমার...,সরি...,আপনার রূপ ঝলসে যাবে?"

"মেজাজ খারাপ করবি না রাত।"

"আমি কি করলাম!

একটু দেখেছি বলে এতো কথা শুনালে!

দেখো বিয়ের পর এক মাস শুধু আমার বউকে বেহায়ার মতো দেখেই যাবো।"

"আবার তুমি!আর তুই তোর বউকে কি করবি তা আমাকে বলছিস কেন?নাক চাপলে দুধ বেরোবে,এখনই মুখে বিয়ে বিয়ে করে ফেনা তুলে দিচ্ছে।জুনিয়র জুনিয়রের মতো থাকবি।না হয় এক চড়ে হ্যাং বানিয়ে দিবো!"

রাত বলে," মারো মারো।"বলেই দৌড়ে একটা গাছের কাছে গিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়।পাপড়ি ও তাড়া করতে করতে সেখানে যায় আর রাতকে পেটে বুকে ঘুষি দিতে থাকে।

এমন সময় পাপড়িকে পছন্দ করতো এমন একটা ছেলে ও তার সাথে কিছু বন্ধুবান্ধব আসে।এসে রাত আর পাপড়িকে মারামারি হাতাহাতি করতে দেখে বলে,"দেখছিস আমি বলছিলাম না মেয়েটা ভালো না,দেখ ছেলেদের সাথে দিনে দুপুরে কেমন হাতাহাতি করে।এই ছেলের সাথে তো কক্সবাজার গিয়ে হোটেলে রাত-ও কাটিয়ে এসেছে।তাছাড়া একে কলেজের সেরা মেয়ে বলতে হবে,এক সাথে মাল্টিন্যাশনাল বুইড়া,কলেজের সিনিয়র ভিপি সম্পাদক,আর জুনিয়রদের বিছানা ও গরম রাখতে পারে।"

সবাই এক সাথে হোহো করে হেঁসে উঠে।তখন এদের মধ্যে যে ছেলে পাপড়িকে পছন্দ করতো সে বলে,"তো আমি কি দোষ করছিলাম,আমাকেও একটা চান্স দিতো,আমার বিছানা গরম করলে কি আমি এর দাম দিতাম না....!"

এসব কথা শুনে পাপড়ি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।কিন্তু রাত স্থির থাকে নি।মুহূর্তের মধ্যে সব ছেলেদের ভিরে ঐ দুটো ছেলের নাকে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে রক্ত বের করে দেয়।চেঁচিয়ে বলে,"মা****,তোর মা সবার বিছানা গরম করে।কোন ব্যা*র পেটে জন্মাইছিস রে..."

বাকিরা সবাই রাত কে ধরে ফেলে।সবাইকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে রাত তেড়ে যায় পুনারায় মারতে।তখনই পাপড়ি এসে আটকে দেয়।

 ছেলে গুলো সঙ্গে সঙ্গে জায়গাটি ছেড়ে চলে যায়।

পাপড়ি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে।চোখ জোড়া থেকে অঝোর বর্ষণ হচ্ছে।রাত কে বলে,"তুই আমাকে ভালোবাসিস তো?"

মাথা নাড়িয়ে বলে,"হুম"

"তাহলে আজ থেকে আর কখনো আমার সাথে কথা বলবি না,যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না।দেখা হলেও আমার দিকে তাকাবি না।যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে সুইসাইড করবো।"


চলবে...


Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.