ভয়ংকর রহস্য (পর্ব ০৪) - Nayeem Chowdhori |
ভয়ংকর রহস্যপর্ব ৪লেখকঃ Nayeem Chowdhori
৩য় পর্বের পর থেকেঃ
গ্রামের পাঁচজন মানুষ নাইমদের কাছে এগিয়ে আসল তারা ভেবেছিল এই চিৎকার হয়ত নাইমদের এইটা ভেবে এগিয়ে এসেছে । তারা এগিয়ে এসেই দেখে গাছের গোড়ায় একটা ছেলের রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে ।তারা গিয়ে ছেলেটার দেহ উল্টাতেই দেখে ওইটা সজিবের লাশ ।
গ্রামের পাঁচজন মানুষ নাইমদের কাছে গিয়ে বলতাছে ,,,আপনারা থাকতে সজিব কিভাবে মারা গেল । মুগ্ধ দেখলো নাইম এখনো এক ধ্যানে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে । মুগ্ধ নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো ,,,,আমরা আন্দাজ করতে পারি জঙ্গলের ভেতর কোন ছেলেকেও কোন আত্না মারছে তাই আমরা তাড়াতাড়ি এখানে আসি কিন্তু আমরা আসার আগেই ওই আত্না সজিব কে মারে আর আমাদের দেখেই পালিয়ে যায় ।
গ্রামের মানুষ বুঝে গেল মুগ্ধ আর নাইমই পারবে তাদের কে এই ভয়ংকর রহস্য থেকে বের করতে তাই তারা কোন কথা না বলে সজিবের লাশটা কাঁধে নিয়ে গ্রামের দিকে যেতে থাকে । নাইম এখনো সামনের দিকে তাকিয়ে আছে এইটা দেখে মুগ্ধ নাইমকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগলো ,,,, কিরে ওইভাবে কি দেখছিস ?
নাইম কল্পনার জগৎ থেকে ফিরে আসল । নাইম স্বাভাবিক হয়ে বলতে লাগলো ,, কিছু না চল গ্রামে গিয়ে বাকি দুইজন কে খুঁজতে হবে নাহলে তাদের কে আমরা কিছুতেই বাঁচাতে পারবো না ! মুগ্ধ বুঝে গেল নাইম এই সত্যিকারের আত্নার সাথে লড়তে চায় আর নাইম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে !
মুগ্ধ ভালো করেই জানে নাইম কিছু একটা ভেবে ফেললে ওইটা করেই ছাড়বে তাই সে আর কোন কথা বলল না । নাইম আর মুগ্ধ জঙ্গল থেকে বের হয়ে গেল দেখল সেখানে কোন মানুষ নেই । মুগ্ধ আর নাইম বাইকের কাছে গেল কিন্তু মুগ্ধ লক্ষ্য করল নাইম আজকে বাইকে না উঠে কি জেন একটা ভাবছে ।
মুগ্ধ নিজেই বাইকের সামনে উঠল তারপর দেখলো নাইম বাইকের পিছনে উঠে মুগ্ধর কাঁধের উপর নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে রয়ল । মুগ্ধ বুঝে গেল নাইম কোন একটা নিয়ে ভাবছে । মুগ্ধ বাইক নিয়ে গ্রামে প্রবেশ করল । এতটুকু যাএার মাঝে নাইম একটা কথাও বলে নাই ..
নাইম আর মুগ্ধ গ্রামে প্রবেশ করতেই দেখলাম সবাই রকি আর সজিবের লাশটা নিয়ে কান্না করছে । মুগ্ধ গিয়ে জিসান আর রহমানের খোঁজ করতে লাগলো আর নাইম বাইকের উপর বসেই কিছু একটা ভাবতে লাগলো ।
গ্রামের সব মানুষ মিলে রকি আর সজিবের জানাযা করে কবরস্থান মাটি দিয়ে আসল । অনেক্ষণ পর মুগ্ধ ফিরে আসল নাঈমের কাছে । মুগ্ধ দেখলো এখনো নাইম আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবছে ।
মুগ্ধ নাইমের কাছে যেতেই দেখলো নাঈমের চোখে পানি । মুগ্ধ নাইমের সাথে ৫,৬ বছর ধরে রয়েছে কিন্তু কখনো ওর চোখে পানি দেখে নাই । কিন্তু আজকে দেখতে পেয়ে মুগ্ধ খুব অবাক হয়ে গেল ।
মুগ্ধ নাইমের কাঁধে হাত রাখতেই দেখল নাইম তার হাতের তালু দিয়ে চোখের পানি মুছল ।
মুগ্ধ বিষয়টা পরে বলার জন্য রেখে দিল তাই এখন এই কথাটা নিয়ে আলোচনা করল না । মুগ্ধ বলল ,,,রাতে রকি একলা একলা জঙ্গলের পথে আসছিল না ওর উ তিনজন ওহ ছিল ,,সজিব , রহমান আর জিসান কিন্তু সজিব মারা গেছে আর বাকি দুইজন কে এখনো পাওয়া যাচ্ছে না ?
নাইম এখানে একটা রহস্যের ঘ্রাণ পেল । নাইম মুগ্ধ কে বলল ,,, আচ্ছা তারা যদি রকির সাথে থেকে থাকে তাহলে কিছু একটা তো তারা জানে তাহলে একটা কাজ কর চল আমরা দুইজন ওদের বাসায় যায় । মুগ্ধ ওদের বাসা কোথায় এইটা গ্রামের মানুষের থেকে শুনেছে !
নাইম আর মুগ্ধ হেঁটে হেঁটে যেতে লাগল কিছুদূর হাটার পর তার আসল রহমান দের বাসায় । মুগ্ধ বাড়িতে ঢকঢক আওয়াজ করতেই একটা মহিলা বাসা থেকে বের হয়ে আসল । নাইম তাকে দেখে বলল ,,,,আমরা কি রহমানের সাথে দুইটা কথা বলতে পারি !
মহিলাটি বলতে লাগলো ,,,, আমার ছেলে এখন জিসান দের বাসায় আছে আর আপনারা কারা ? মুগ্ধ বলতে লাগলো ,,,আমরা তাত্ত্বিক আমরা এসেছি এই ভয়ংকর খুনের রহস্য বের করতে ! এটা বলতেই সেই মহিলা বলতে লাগলো,,,আমি রহমানের আম্মা আপনারা একটু ভেতরে আসেন আপনাদের সাথে আমার কিছু কথা আছে !
নাইম আর মুগ্ধ ভিতরে যেতেই তাদের কে সোভায় বসালো রহমানের আম্মা । তারপর ভেতরে গিয়ে কয়েকলাখ টাকা এনে নাইমদের হাতে দিয়ে বলল ,,,,আমার ছেলেটা হয়ত কোন ভুল করেছে পিল্জ আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান , আমার একটা মাএ ছেলে ওকে গিরেই আমার সব ।
মুগ্ধ হাসিমুখে টাকা গুলো নিল । নাইম রহমানের আম্মা কে বলল ,, আচ্ছা রহমানের রুমটা কি আমি একটু দেখতে পারি । রহমানের আম্মা কোন কথা না বলেই অনুমতি দিল তারপর নাইম একাই রহমানের রুমে প্রবেশ করল ।
নাইম রুমে ঢুকে দেখলো একটা ড্রিম লাইট জ্বলছে রুমে । টেবিলের উপর কম্পিউটার আর তার নিচে কিছু কাগজপত্র । নাইম টেবিলের সব কাগজপত্র চেক করে দেখল সেখানে কোন সূএ নেই । নাইম কম্পিউটার টা অন করতেই দেখলো সেখানে পাসওয়ার্ড দেওয়া আছে । নাইম আর চেষ্টা করল না নাইম কম্পিউটার এর পিছনে একটু উকি দিতেই দেখলো সেখানে একটা কাগজ পড়ে আর তাতে কিছু একটা লেখা আছে ।
নাইম হাত দিয়ে কাগজ টা নিয়ে বুঝে গেল এইটা কয়েকদিন আগের কাগজ । কাগজটাতে লেখা ছিল ,,,,, আমি তোদের পায়ে ধরি আমার জীবন টা ভিক্ষা দে তোরা ! নাইম লেখাটা দেখে কিছু বুঝলো না কিন্তু এইটা দেখে অবাক হলো যে লেখাটা সম্পন্ন রক্ত দিয়ে লেখা ছিল ।
নাইম কাগজ টা নিয়ে নাকের কাছে নিতেই দেখলো রক্ত এখনো তাজা আছে । হঠাৎ নাঈমের মনে হলো ওর পিছনে কেউ আছে । নাইম পিছনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই । নাইম পিছনে ঘুরতেই ওর মনে হলো ওর ঠিক সামনে কোন ছায়া দাঁড়িয়ে আছে । নাইম দ্রুত সামনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই ।
অন্ধকার রুম তাই নাইম একটু ঘাবড়ে গেল । নাইম লাইটের কাছে যেতেই দেখলো দেওয়ালে রক্ত দিয়ে কিছু লেখা উঠছে । নাইম দেখলো দেওয়ালে এমন লেখা উঠছে ,,,,, আপনি শত চেষ্টা করলেও তাদের কাউকেই বাঁচাতে পারবেন না মরতে হবে তাদের কে মরতেই হবে ।
নাইম লেখাটা দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গেল । নাইম নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে সজোরে একটা চিৎকার দিল । নাঈমের চিৎকার টা এত জোরে ছিল যে আশেপাশের অনেক বাড়ি পর্যন্ত এই চিৎকার পৌঁছেছে ।
মুগ্ধ আর রহমানের আম্মু দৌড়ে আসল । মুগ্ধ নাইম কে পিছন থেকে হাত দিয়ে চেপে ধরে বলল ,,,কি হয়েছে তোর এমন ভাবে চিৎকার করছিস কেন ? নাইম হাত দিয়ে দেওয়ালের দিকে ধরতেই দেখে দেওয়ালে কোন রক্ত দিয়ে লেখা নেই !
নাইম বুঝে গেল এইটা আত্না দের খেলা । মুগ্ধ কিছু দেখতে না পেয়ে নাইম কে আবার প্রশ্ন করল কিন্তু নাইম কোন কথার জবাব না দিয়ে বাইরে বাইকের কাছে চলে গেলো । মুগ্ধ ওহ বিষয়টা একটু বুঝল যে নাঈমের কিছু একটা তো হয়েছে বা কিছু একটা তো দেখেছে ।
নাইম বাইরে গিয়ে বাইকের উপর আসছেই মুগ্ধ আসল । নাইম কোন কথা না বলে বাইকে উঠল মুগ্ধ ওহ কোন কথা না বলে বাইকে উঠল । নাইম তাদের আধামড়া বাইক টা স্টাট দিল । একটু পর একটা নদীর তীরে আসল নাইম আর মুগ্ধ ।
নাইম বাইকটা থামিয়ে দিয়ে নদীর কিনারায় গিয়ে বসল । মুগ্ধ নাইমের কাঁধে হাত দিয়ে বলল ,,, তুই কি কোন ভাবে ইসরাত কে চিনিস ? মুগ্ধর কথাই নাইম আকাশের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সম্মতি দিল । মুগ্ধ নাইমের পাশে বসে পড়ল ।
নাইম আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো ,,,,শোন তাহলে কয়েকমাস আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ...?
আমি তখন নিয়ম করে বিকালে একা একা একটা জায়গায় যেতাম তর মনে আছে । আমি তোকে সবসময় বলতাম আমি একটা একা থাকার জন্য যায় কিন্তু আসলে আমি যেতাম সিমান্তবাজার তারাকান্দি স্কুলের সামনে । আমি প্রতিদিন ওইখানে একটা মেয়েকে দেখতাম । সে মেয়েটা প্রতিদিন বিকালে একা একা বের হতো । আমি তাকে এক সপ্তাহ দেখি । এই এক সপ্তাহে আমি তাকে ভালোবেসে ফেলি । আমি তাকে শুধু স্কুল থেকে বাসায় আসার সময়ই দেখতাম । আমি একদিন জানতে পারি তার নাম ইসরাত । আমি তাকে অনেক বার ভালোবাসি কথাটা বলতে চেয়েছি কিন্তু যতবার তার সামনে গেয়েছি ততবারই ভয় পেয়ে পালিয়েছি । কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে আমি তাকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না ,জানিস আমি তাকে পাগলের মতো খুঁজছিলাম কিন্তু কোথায় পায়নি । আমার কাছে তার সাথে যোগাযোগ করার মতো কোন কিছু ছিল । এইভাবে কেটে যায় দুই সপ্তাহ তবুও তাঁকে আমি পাইনা । আর আজ যখন তাকে বোরকা পড়া অবস্থায় দেখি তখন আমার খুব ভালো লাগে আমি চোখ দেখেই বুঝে যায় এইটা ইসরাত । জানিস আমার সামনে যখন সে একটা ছেলেকে মারছিল তখন আমি ওইটা না দেখে শুধু তাকে দেখছিলাম । কিন্তু একটু পর জানতে পারি সে একটা আত্না , জানিস তখন আমার খুব খারাপ লাগে নিজের অজান্তেই কান্না করে ফেলি ।
মুগ্ধ পাশ থেকে বললো ,,,, তারমানে আপনি প্রতিদিন আমাকেই দেখতে যেতেন ?
নাইম অবাক হয়ে গেল। নাইম অনেক ভয় পেয়ে গেল যে মুগ্ধ এইটা কি বলছে । নাইম পাশে তাকাতেই দেখে সেখানে কেউ নেই । নাইম ভয়ে সেখানেও একটা চিৎকার দেই । তারপরেই যা হলো সেটার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিল না.......?
#চলবে
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন আর কারো কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই বলবেন আল্লাহ হাফেজ...!