আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্বঃ ১৬-১৭)

নন্দিনী নীলার ধারাবাহিক উপন্যাস- কৃষ্ণবেণী পর্বঃ ১৬-১৭,কৃষ্ণবেণী পর্বঃ ১৬,কৃষ্ণবেণী পর্বঃ ১৭,কৃষ্ণবেণী নন্দিনী নীলা
 কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা পর্বঃ ১৬-১৭
বাসা সম্পূর্ণ খালি উর্মি নিজের রুমে দরজা বন্ধ করেছিল বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে শুনে হন্তদন্ত হয়ে হসপিটালে ছুটেছে। আয়ান আর জেসমিন বেগম হসপিটালে গেছে। জায়ান তো আগেই গেছে। এখন বাসায় আছে শুধু বকুল আর তৃষ্ণা। উষসী না বাসায় আছে আর না হসপিটালে গেছে সে কোথায় গেছে কেউ জানে না। জোভান সকালবেলায় তার কোন এক বন্ধুর বাসায় গেছিল সেখান থেকে এখনো ফিরেনি। সে জানেও না তার বাবার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তৃষ্ণা আর বকুল খালি বাসায় গালে হাত দিয়ে বসে আছে।
বকুল বোনের দিকে তাকিয়ে বলল,"বুবু তোমার শশুর এক্সিডেন্ট করলো। তুমি যাইবা না হসপিটালে ?"

তৃষ্ণা আনমনে বলল,"আমি কেমনে যামু। হসপিটাল কোথায়? আমি তো এই বাসার বাইরে পা রাখি নাই আমি হসপিটাল চিনমু কেমনে? সবাই চলে গেছে আমারে নেওয়ার হলে তো নিয়েই যাইতো।"

" হ, আচ্ছা বুবু তোমারে একটা কথা কই।"

" বল।"
 
 কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

বকুল ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলল,"বুবু ঐ পূর্ব পাশে একটা রুম আছে না। বাইরে তালা মারা। তার ভিতরে কেউ একজন থাকে। চিৎকার করে কান্না করে।আমি ঐ দিন গেছিলাম। আমি না দরজা খুলতে চাইছিলাম। কিন্তু বাইরে ইয়া বড়ো একটা তালা দেওয়া। তুমি কি জানো ওই রুমে কে থাকে? আর তারে কেন তালা দিয়ে রাখছে?"

তৃষ্ণা মনে করার চেষ্টা করে বলল," বকুল তুই ওই পাশে গিয়েছিলি ক্যান? তুই জানিস ঐরুমে একটা পাগল থাকে!"

পাগলের কথা শুনে বকুল ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল,"ও মাগো বলো কি ওই রুমে পাগল থাকে। আমি আরো দরজা খুলে দেখার জন্য কত কষ্ট করছিলাম।"

" তোরে আমি বলছি না বেশি এদিক ওদিক ছোটাছুটি করবি না।"

বকুল মাথা নিচু করে বলল," আর করমু না আমি শুধু তোমার পাশে পাশেই থাকমু।"

"এবার বলতো একটু আগে তোর কি হয়েছিল? তুই শাড়িটা খোলার জন্য এতো উতলা হয়েছিলি ক্যান?"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

বকুল ভয়ার্ত চোখে বুবুর দিকে তাকিয়ে আছে।

কি করে বুবুকে সত্যিটা বলবে? মনে পরলে ওর গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে দুলাভাই ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিল আর তৃষ্ণা বলে ওকে চুমু দিয়েছিল। ছি ছি ছি আমি কেন বুবুর শাড়ি পরতে গেলাম। আমি তো কত শুকনো বুবুর থেকে তাহলেও দুলাভাই ভুল করলো কি করে?

বকুল ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা সন্দেহ চোখে চেয়ে বলল," চুপ করে আছিস কেন? সত্যি টা বল আমাকে।"

বকুল মাথা নিচু করে সব খুলে বলবে তখন বাসায় আসে জোভান। ওরা দুজন ড্রয়িং রুমে বসেছিল এজন্য জোভান কে দেখে দুজনেই কথা থামিয়ে দেয়।

" কি ব্যাপার ভাবি বাসা এতো নিরব কেন?"

তৃষ্ণা উঠে এসে জোভান কে সব খুলে বলে। জোভান এক নজর বকুলের দিকে তাকিয়ে ফোন বের করে উর্মিকে কল দেয়। কথা বলতে বলতে নিজের রুমে চলে যায়। জোভান কে দেখে তৃষ্ণার বকুল কে জেরা করার কথা মাথা থেকে চলে যায়।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

বকুল কে খেতে দিয়ে তৃষ্ণা মলিন মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। খেতে ইচ্ছে করছে না। সবার উপর দিয়ে কত ঝড় যাচ্ছে আর উনিও তো না খেয়ে আছে‌। কখন গেছে সবাই এখন রাত দশটা বাজে এখনো কেউ বাসায় আসলো না। জোভানের থেকে শুনতে হবে বাবা কেমন আছে?

তৃষ্ণা বকুল কে রুমে শুইয়ে দিয়ে জোভানের রুমে যাবে।

জোভানের থেকে খবর নিয়ে জানতে পারল।হসপিটালে পাশে নাকি উষসীর বাবার বাড়ি তাই সবাই সেখানে গেছে। জায়ান আর উর্মি চলে আসবে একটু পর।

আর জায়ানের বাবা এক্সিডেন্ট করে মোটামুটি ভালোই আঘাত পেয়েছে। কিন্তু গুরুতর আঘাত নয়। তিনি যতোটা আঘাত পেয়েছে তার থেকে বেশি ভেঙে পরেছে গাড়ি থেকে তার ইম্পর্ট্যান্ট একটা ফাইল মিসিং সেই টেনশনে তিনি অসুস্থ হয়েছেন বেশি।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

বকুল একা কোনভাবেই শুয়ে থাকবে না ওর জন্য তৃষ্ণা ওর পাশে একটু শুয়েছিল কিন্তু জায়ান না আসা পর্যন্ত তৃষ্ণা দুচোখের পাতা এক করতে পারবে না। অনেক বলে কয়ে ওর থেকে ছাড়া নিয়ে জোভানের কাছে গেছিল শুনতে। এসে দেখে এই মেয়ে বেস আছে। তাই বাধ্য হয়ে শুয়ে পড়ে।

শুয়েও জেগে ছিল বকুল ঘুমিয়ে পরতেই তৃষ্ণা বিছানায় থেকে উঠে যায়। জায়ানের রুম থেকে ঘুরে এসে কি মনে করে যেন সেই পাগলের রুমটায় যায়। একবার সামনাসামনি থেকে পাগল টাকে দেখার কৌতূহল দমাতে পারছে না। আবার জায়ান নাকি ওই রুমে যায়। জায়ান তাহলে পাগল টাকে ভয় পায় না।

ওই পাগল এই পরিবারের কি হয়?

আজ যেহেতু বাসায় কেউ নাই একটা সুযোগ তো নেওয়া যায়। তৃষ্ণা সত্যি সত্যি ভয় ডর ভুলে পাগল-টার রুমের সামনে এসে হাজির হলো। জায়ানের রুমে একটা বড়ো চাবির গোছা পেয়েছিল সেই চাবির গোছা টা নিয়ে এসেছে সাথে করে। একটা একটা করে চাবি তালায় দিয়ে খোলার চেষ্টা করছে।

দশটা চাবি দিয়ে চেষ্টা করে ফেলল তবু খুলে না আর মাত্র চারটা চাবি আছে। আর একটা দিয়ে মুচার দিতেই তালা খুলে যায়। ও লাফ দিয়ে উঠে তাল হাতে নিয়ে। আজ একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটেছে ভেতর থেকে কোন সারা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। পাগলটা এতো নিশ্চুপ হয়ে আছে কেন?
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

তৃষ্ণা এবার কিছুটা ভয় পাচ্ছে ভেতরে যেতে তবুও কাঁপা কাঁপা হাতে দরজার ছিটকারি ফুলে দরজা খুলতেই ভেতর থেকে বিচ্ছিরি দুর্গন্ধ নাকে এসে ঠেকলো‌। রানী গোলাপী কালার শাড়ি ওর পরণে ও তাড়াতাড়ি শাড়ির আঁচল টেনে নাকের মধ্যে চেপে ধরলো। ছি এখানে কোন মানুষ থাকে? কি বিশ্রী গন্ধ আর কি বিশ্রী অবস্থা? এই গন্ধটা এসেছে সামনে পাগল টা হতো বমি করে ভাসিয়েছে সেগুলো দেখে তৃষ্ণায় এখানেই বমি আসা ধরলো।ও আর ভিতরে যাওয়ার সাহস করতে পারছে না ভাঙাচোরা দিয়ে কি অবস্থা করে রেখেছে রুমটার। ও দরজা আটকে বেরিয়ে আসতে চাইল তখনই ভেতর থেকে এক ভুতের মত কেউ দৌড়ে এসে ওর চুল টেনে ধরলো।আচমকা কেউ দৌড়ে আসতে তো ভয় পেয়েছেই তার মধ্যে সেই মানুষটাকে দেখেও ভয়ে আরো কাঁপতে লাগে। কি ভয়ংকর লাগছে পাগলটাকে। চুল গুলো পুষ্ক খুশকো হয়ে মুখ ঢেকে আছে চোখ দুটো লাল টকটকে। মহিলাটার মাথার মাথার কয়েকটা চুল পাকা ধরেছে।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

চুলের বিনি ধরে এমন ভাবে টেনেছে ওর মাথা ব্যথা হয়ে গেছে ও ছাড়ানোর জন্য হাঁসফাঁস করতে লাগে। পাগলটা ওকে টেনে রুমের ভেতরে ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজে রুমের বাইরে চলে আসে। তারপর নাচতে নাচতে বলে," আমারে রুমের ভেতর আটকে রাখবি তোরা। আমারে আটকে রাখবি? তুই আটকে থাক আমি এখন বাইরে যামু গা। সবকটারে পুলিশে দিমু আমার বাপ পুলিশ আমারে আটকে রেখে আমার জ...

আর কিছু বলতে পারে না পাগলটা তার আগেই জায়ান সেখানে চলে আসে আর এসে দেখতে পায় তৃষ্ণা ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে । আর পাগল দরজার কাছে দাঁড়িয়ে লাফাচ্ছে হাততালি দিচ্ছে আর কি সব বলছে। তৃষ্ণার অবস্থা দেখে ওর মাথা খারাপ হয়ে যায় ও পাগলটাকে একটা ধমক দিতেই পাগলটা থেমে যায়।

তৃষ্ণা ভয় কাঁপছে জায়ান কে দেখে স্বস্তি পায় আর সাথে সাথে জ্ঞান হারায়। জ্ঞান হারানোর আগে একটা কথাই ভাবে কোন কুলক্ষণে এই পাগলের উপর কৌতুহল দেখাতে এসেছিলাম।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

পাগলটা জায়ান কে দেখেই হাসি দেয় আর জড়িয়ে ধরতে চায়। জায়ান নাক ছিটকে সরে যায় আর ধমক দিয়ে বলে," একদম আমার কাছে আসার চেষ্টা করবে না। তুমি কোন সাহসে? ওর গায়ে হাত তুলেছ ওকে আঘাত করেছ? তুমি জানো ওকে ও আমার স্ত্রী। ওকে আঘাত করে তুমি মোটেই ঠিক কাজ করো নি।"

পাগলটা ঠোঁট ভেটকিয়ে তাকায় তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা অচেতন হয়ে গেছে। পাগলটা তৃষ্ণার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর দিতে থাকে।

জায়ান পাগলটার হাত তৃষ্ণার মাথায় থেকে সরিয়ে একবার পাগলটার মুখে দেখে তাকিয়ে বলে,"তুমি এত মিষ্টি একটা মেয়েকে কিভাবে মারতে পারলে? পাগল হলেও তো তুমি ভালো আর খারাপের তফাৎ বুঝো। তাহলে ওকে তুমি মারার আগে বুঝতে পারোনি ও খারাপ নয় ও ভালো।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

পাগলটা এবার জায়ানের বাহু ধরে কান্না করে দিল।

"ওরা সবাই আমাকে মারে তুমি আমাকে একবার ও বাঁচাতে আসো নি কেন? তুমি ও কি সবার মতো আমাকে ঘৃণা করো?"

জায়ান তৃষ্ণাকে কোলে তুলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল," হ্যা করি ঘৃণা এজন্যেই তো আমি তোমার সামনে আসি না।"

বলে জায়ান চলে আসার জন্য পা বাড়ায়‌। পেছনে থেকে পাগলটা বলে উঠে," তুমি জানো তোমার ওই মুখটা আমার খুব প্রিয় ছিল কিন্তু তুমি রুপি আয়ান আমায় খুব কষ্ট দেয়।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

"যেটা আমার করার কথা ছিল সেটা এখন করে আয়ান। আমি রুপি আয়ানের থেকে আঘাতটা সহ্য করা তোমার জন্য ভালো নাকি সে আঘাতে তুমি আমার হাত থেকে সরাসরি নিতে চাও?"

পাগলটা সেখানে ফ্লোরে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা

 কৃষ্ণবেণী পর্ব ১৭

তৃষ্ণা যখন জাগ্রত হলো চোখের সামনে দেখতে পেল জায়ান বসে আছে। ও তাকালো তখনো জায়ান ওর মুখে পানি ছিটা দিচ্ছে ও ধরফরিয়ে উঠে বসে এদিক ওদিক তাকালো।

"পাগলটা আমাকে মারতে এসেছিল।" বলেই কান্না করে দিলো। তৃষ্ণা জায়ানের বাহু খামচে ধরে বলল,"আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর কোনদিন পাগলের কাছে যাব না। খুব ভয় পেয়েছি কি ভয়ংকর ওই পাগলটা। সময় মতো আপনি না আসলে আমার কি হয়ে যেতো? পাগলটা আমাকে মেরে ওই ঘরে বন্ধ করে দিতো।"

জায়ান ঝামটা মেরে বাহু থেকে তৃষ্ণার হাত ছাড়িয়ে ঠাস করে তৃষ্ণার গালে একটা থাপ্পড় মেরে বসল। তৃষ্ণা শক্তপোক্ত জায়ানের হাতের থাপ্পড় খেয়ে ছিটকে পরল বিছানায়। জায়ান তৃষ্ণার হাতের কনুই শক্ত করে ধরে টেনে আবার বিছানায় বসিয়ে গাল চেপে ধরে বলল,"কোন সাহসে তুমি ওই রুমে যাওয়ার সাহস করেছো? বেশি লাই দিয়েছি বলে মাথায় চরে বসেছো তাই না?"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
তৃষ্ণার ফর্সা গালে ৫ আঙ্গুলের ছাপ ফুটে উঠেছে। লাল টুকটুকে হয়ে। গাল চেপে ধরার তৃষ্ণার মুখ মন্ডল আরো ব্যথায় নীল হয়ে উঠছে। ওর চোখে জল ভর্তি হয়ে উঠেছে।

তৃষ্ণা কথা বলতে পারছে না উম উম করে কথা বলার চেষ্টা করছে। জায়ান হাত সরিয়ে মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালো।


মন চাচ্ছে তৃষ্ণাকে এর উপযুক্ত শাস্তি দিতে কিন্তু এই মেয়েটাকে ও একটু বেশি ভালোবাসে তাইতো একটু আঘাত দিয়েই এখন নিজের খারাপ লাগছে।

তৃষ্ণা ভয় খাটের সাথে লেপ্টে আছে। জায়ান রাগে হাত মুষ্টি বন্ধ করছে আবার খুলছে। তৃষ্ণা মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে আর ভয়ার্ত চোখে জায়ানের দিকে তাকাচ্ছে।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
জায়ান তৃষ্ণার দিকে চোখ ঘুরিয়ে একটু তাকাতেই তৃষ্ণা ভয়ে বিছানা থেকে উঠে পরল। জায়ান ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে আছে। আঙুল দিয়ে কাছে আসতে বলল।

তৃষ্ণা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।

" আমাকে ক্ষমা ক‌ইরা দেন।আমি আর কোনদিন ওই রুমে যামু না। আমাকে মাইরেন না।"

" এদিকে আসো।আমার উঠা লাগলে মার খাওয়া থেকে কেউ তোমায় বাঁচাতে পারবে না।"

তৃষ্ণা ভয়ে ভীত হয়ে এগিয়ে আসে জায়ানের কাছে।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে নিজের পাশে বসিয়ে দেয়। তৃষ্ণা বসে ও আরো দুইবার ক্ষমা চাইল কান্না গলায়‌।

জায়ান নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছে ওর মুখের দিকে। তৃষ্ণা মাথা নিচু করে কাঁদছে। জায়ান তৃষ্ণার গালে আঙুল স্পর্শ করতেই তৃষ্ণা আহ্ করে উঠে।

রাগের মাথায় খুব জোরেই থাপ্পড় মেরেছে। তৃষ্ণার গালের অবস্থা খারাপ করে দিছে।

জায়ানের রাগ এবার একটু কমলো। তৃষ্ণা ব্যথিত মুখশ্রী দেখে ওর রাগ নিমিষেই গায়েব হয়ে গেছে। ও নরম সুরে বললেন," ব্যথা কি বেশি লেগেছে?"

তৃষ্ণা বিস্মিত চোখে তাকালো জায়ানের দিকে।

" answer me"

" হ্যা অনেক ব্যথা করছে।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
জায়ান চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ দমন করে করে বলল," ঐ রুমে কেন গিয়েছিলে?"

তৃষ্ণা শুকনো ঠোঁট দুটো জিভ দিয়ে ভিজিয়ে বলল," পাগলটা কে দেখার অনেক ইচ্ছা হয়েছিল তাই গিয়েছিলাম। একটু দেখেই চলে আসবো। আমাকে ক্ষমা করে দিন আর কোনদিন এমন কাজ করব না।"

" পাগল কারো দেখার ইচ্ছে হয়? এই প্রথম শুনলাম।"

তৃষ্ণা আবার পলক নিচের দিকে নামিয়ে ফেললাম।

" বেশি দুঃসাহস করে ফেলেছ। তাই আঘাতটা তোমার প্রাপ্য ছিল।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
জায়ান পকেট থেকে ফোন বের করে কল করল লিয়াকে।

"হ্যালো লিয়া ফ্রিজ থেকে বরফ নিয়ে আসো আমার রুমে।"

বলে কল কেটে দিলো। কয়েক মিনিট পরে লিয়া বরফ নিয়ে এসে হাজির হলো বাটিতে করে।

"স্যার কি হয়েছে?"

"কিছু না তুমি আসতে পারো। বাকিটা আমি হ্যান্ডেল করে নিতে পারবো।"

লিয়া মাথা নিচু করে চলে যায় দরজা থেকেই। জায়ান তৃষ্ণার গালে আলতো হাতে বরফ লাগিয়ে দিতে থাকে। তৃষ্ণা ব্যথায় কেঁপে কেঁপে ওঠে।

" আহ্ ব্যথা লাগছে। ক্ষমা করে দিন।"

" তোমাকে এখন ব্যথা নয় বরফ দিয়ে ব্যথা সারাতে চাচ্ছি। বসো আমি মলম দিয়ে দিচ্ছি কমে যাবে। "

জায়ান তৃষ্ণার গালে মলম দিয়ে দিলো। তৃষ্ণা বলল," নিজে মারলেন এখন নিজেই সেবা করছেন?"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
জায়ান বললেন," আমার ব‌উ। আমিই মারব। আমিই আদর করবো। বুঝেছ"


"বুবু তোমার গালে কি হ‌ইছে?"

বকুল চোখ বড়ো বড়ো করে তৃষ্ণার গালের দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা গাল হাত দিয়ে বলল,"কিছু না কি হবে?"

"হাছা কথা ক‌ও। তোমার গাল ওমন গাল হয়ে আছে ক্যান? মনে হ‌ইতাছে কেউ মারছে!"

" ধুর কি বলিস! কে মারবে আমারে?"

" তাইলে গাল ওমন লাল হ‌ইয়া আছে ক্যান?"

" ঘুম থেকে উঠে দেখি ফুলে আছে। বাদ দে তো এসব।"

"আমারে রাইতে তুমি একলা ঘরে রাইখা আসছিলা আমিতো টের ও পাইলাম না।"

" টের পাইলে কি তুই আর একা থাকতি? ভালোই হয়েছে রাত শেষ করে ফেলেছিস এক ঘুমে। তোর ঠোঁটা এতো লাল হইয়া আছে ক্যান?"

বকুল থপ করে বিছানায় থেকে উঠে গেল।

"আমি মুখ ধুইয়া আসি।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
তৃষ্ণা সন্দেহ চোখে তাকিয়ে আছে। বকুল বাথরুমে ঢুকে নিজের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ বন্ধ করতেই একটা ঘটনা ওর চোখের সামনে ভেসে উঠল। ও লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল।


"তুই আমার কাছ কিছু লুকাচ্ছিস?" সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলল তৃষ্ণা।

" বুবু কি ক‌ও? কি লুকামু?" চমকানো কন্ঠে বলল বকুল।

" আর দুই দিন আছিস তাই কিছু লুকাবি না আমার থেকে।"

" বুবু কি যে ক‌ও না। আমি কিচ্ছুটি লুকাই নি।"

" আচ্ছা।"

তৃষ্ণা বাইরে আসতে বলে চলে গেল। বকুল ভয়ে কাঁপছে। ও কি ভাবে সব বুবু কে বলবে?

ও বিছানায় বসতেই দরজা আটকানোর আওয়াজ হলো। ও চোখ কপালে তুলে সামনে তাকিয়ে আছে। জোভান ভয়ে ভীত হয়ে এগিয়ে এসেছে বকুলের দিকে।

" বকুল আই এ্যাম সরি। বিশ্বাস করো কালকে তোমাকে ওইভাবে স্পর্শ করতে চাইনি। কিভাবে যেন হয়ে গেল। আমাকে ভুল বুঝো না বিলিভ মি আই রিয়েলি লাভ ইউ। আমার তোমাকে খারাপ ভাবে অপবিত্রভাবে স্পর্শ করার ইচ্ছে ছিল না। আমি ভুল করে তোমার ঠোট স্পর্শ করে ফেলেছিল।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
" শয়তান পোলা আবার আইছিস? বুবুর দেবর ব‌ইলা এহনো কিছু ক‌ই নাই। তোর ভালো আচরণ দেইখা তোরে আমার মনে ধরেছিল আর তুই সুযোগ পাইয়া কি করলি?"

জোভান কীভাবে মানাবে জানে না তাই। মাথা নিচু করে বলল," দুইদিন পর চলে যাবে শুনলাম সত্যি?"

" হ সত্য।"

"তোমাকে অনেক মিস করব। আবার কবে আসবে?"

"তগো এই শয়তান বাড়িতে আর জীবনে আসমু না।"

জোভান আরেকবার সরি বলে চলে গেল। চলে যাওয়ার আগে বকুলের রাগ ভাঙাতে হবে যেভাবেই হোক ভাবতে ভাবতে গেল।

বকুল বাইরে এসে আজ প্রথম ঝটকা খেল। ও তৃষ্ণার মতো দুইটা জায়ান দেখে চোখ কপালে তুলে ভূত বলে চিৎকার করে উঠে। ওর চিৎকার শুনে সবাই চমকে ওর দিকে তাকায়।

তৃষ্ণা কাছে এসে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? চিৎকার করছিস কেন?"

জোভান তখন খাবার জন্য টেবিলের দিকে আসছিল বকুলে চিৎকার শুনে ও বুঝে গেছে কাহিনীটা ও এগিয়ে এসে বলে,"ভাবি আমার দুই জমজ ভাইকে দেখে তোমার বোন হয়তো ভূত ভেবে চিৎকার করেছে তাই না বকুল?"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
"দুলাভাই এর মত আর একটা দুলাভাই আছে? আয় হায় দুজনে জমজ !"

বকুল চিন্তিত মুখে ভাবছে তাহলে আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল কে? সে আবার তৃষ্ণা বলে চুমু দিয়েছিল। তাহলে সেটা দুলাভাই কিন্তু তার কপালে যেন আমি তিল দেখছিলাম। এখন আমার দুলাভাই কোনটা ও বুবুর দিকে তাকিয়ে বলল,"বুবু আমার দুলাভাই কি ওই লাল তিল ওয়ালা টা?"

ওর ঠোঁট কাঁপছে উত্তেজনায়।

তৃষ্ণা মাথা নাড়িয়ে না বলে বলল," ওই তিল ওয়ালা টা আমার দেবর তোর দুলাভাইয়ের জমজ ছোট ভাই‌।"

বকুল জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান কেমন অদ্ভুত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

তৃষ্ণা বকুল কে চেয়ার টেনে বসিয়ে নিজেও বসল।

বকুল ভয়ে কাঁপছে ওর সোজা বসেছে আয়ান পাশে জোভান।
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
"বুবু তোর সাথে আমার কথা আছে।"

" কি কথা বল?"

" বুবু তোর দেবর তোরে জড়িয়ে ধরে ক্যান?" কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বলল।

তৃষ্ণা থমকানো চোখে তাকালো বকুলের দিকে।

" কি আজেবাজে কথা বলছিস তুই বকুল?"

" বল না বুবু আমি নিজের চোখে দেখছি!"

" কি দেখছিস তুই? এরকম একটা কথা কিভাবে বলতে পারলি? আমার দেবর আমারে...

তৃষ্ণা থেমে গিয়েও আবার বলল," এমন...

বকুল বলল," তোমারে আমার কিছু কথা জানানোর আছে। আমারে তুমি ভুল বুঝো না‌। আমি আসলে কথাটা এভাবে বলতে চাইনি অন্য একটা কথা বলতে চাইছিলাম।"
 
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
"যা বলার সরাসরি বল। এতো ভনিতা কবে থেকে শুরু করছিস?"

বকুল ঢোক গিলে ভাবে সমস্ত কথা বলে দিবে এক্ষুনি। আর সময় নষ্ট করবে না। এতো দিন ভেবেছিল দুলাভাই না হয় একবার ভুল করে ধরেছে কিন্তু দুলাভাইয়ের ভাই কেন ওর বুবুকে জড়িয়ে ধরতে চাইছিল? ব্যাপারটা তো পরিষ্কার হচ্ছে না কোন তো গন্ডগোল আছেই। তৃষ্ণা বোনের দিকে তাকিয়ে আছে কি সত্যি জানাতে চাই বকুল। সেটা জানবার জন্য অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে বকুলের দিকে। আর বকুল হাঁসফাঁস করছে। কথাটা কীভাবে বলবে ভেবে অস্থির ও।


কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা
 
চলবে...


Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.