এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা |
পর্বঃ ১২
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্মনাম)
১২.
বেশ কিছু দিন হলো মধু এই বাড়িতে আছে কিন্তু এখনো কারো সামনে পড়েনি।কলেজ টু বাসা,বাসা টু কলেজ।এভাবেই চলছে।সেদিনের পর বাগানে ও যায় না।আজকে তুষি প্রভার সাথে আড্ডা দিতে এসেছিলো।তখন মধুর সাথে কথা হয়।মধুর সাথে প্রথম আলা'পেই বন্ধুর মতো মিশে যায়।তিন জনে প্রচুর আ'ড্ডা দেয়।আ'ড্ডার এক পর্যায়ে জানায় যে সে টুরে গিয়েছিল তাই এতদিন বাসায় ছিলো না।
মধু ও প্রভার রুমের ওয়াশরুমের দরজার ছিটকিনি খারা'প হয়ে গেছে।রহিম চাচা বলেছে ঠিক করে দিবে কিন্তু সময় করে উঠতে পারছে না।
শক্রবার বিধায় আজকে সবাই বাসায় আছে।
মধুকে দুপুরে সবার সাথে খেতে বলেছে আফজাল শেখ।যদি ও প্রতিদিন ওখানেই খাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু মধু যায় না।
বাগানে মালি কাজ করছে।কিছু নতুন জাতের গাছ আনা হয়েছে,বাগান জুড়ে সেগুলো রোপণ করবে। বাগানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মালির কাজ দেখছে তুষি,স্নিগ্ধ,প্রভা।প্রভা মধুকে ও যেতে বলেছিলো কিন্তু মধু জানায় সে গোসল করবে,আরো দেরিতে করলে চুল শুকাবে না।
কোথায় কোন গাছ রোপণ করবে স্নিগ্ধ দেখিয়ে দিচ্ছে।
মালি রাজ্জাক ভাইয়ের অসা'বধা'নতায় আক'স্মিক গাছের গোড়ার কাঁদাপানি স্নিগ্ধর টাউজার আর পায়ের উপর পড়ে।একদম মাখামাখি অবস্থা।রাজ্জাক ভয় পেয়ে বারবার ক্ষমা চাইছে।
" ইচ্ছে করে তো আপনি কিছু করেননি,ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই! "স্নিগ্ধ ওকে থামিয়ে দিয়েছে।
প্রভা বলছে,"ভাইয়া চলো আমাদের বাসা থেকে ধুঁয়ে আসবে।"
"আচ্ছা চল"
কোয়ার্টারে গিয়ে দেখে কেউ নেই।প্রভা স্নিগ্ধকে বলে ভিতরে যে কোনো একটা ওয়াশরুমে যেতে।স্নিগ্ধ ভেতরে প্রবেশের পরেই তুষি আবারও প্রভাকে টে'নে বাগানের অপর প্রান্তে মালির কাছে নিয়ে যায়।
স্নিগ্ধ একটা রুমের ভিতর প্রবেশ করে সেই রুমের ওয়াশরুমে যেয়ে দরজা লক করতে নেয় দেখে ছিটকিনি ভা'ঙা,সবে মাত্র পেছনে ঘুরে তাকিয়েছে।মুহূর্তেই চোখ ল'ক হয়ে যায়।বিশ্বাস করতে পারছে না।এটা কি বাস্তব নাকি স্বপ্ন! স্ত'ব্ধ লেগে নিয়'ন্ত্রণ হী'ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
দরজার ছিটকিনি খারা'প থাকায় মধু দরজা আট'কাতে পারেনি।গোসল সেরে সবে মাত্র শরীরের উপরিভাগের পরিধেয় পোশাক খুলে শুকনো পোশাকের জন্য হাত বাড়াবে,তক্ষুণি দরজার শব্দে ঘুরে দাঁড়ায়।সঙ্গে সঙ্গে বি'ক"ট চিৎ'কার দিয়ে ওঠে।মধুর চিৎ'কারে স্নিগ্ধর হুঁ'শ ফেরে।
"নাহ!এটা কোনো স্বপ্ন নয়।"
দিশে'হা'রা অব'স্থায়।আর কিছু ভাবার আগে দ্রুত প্রস্থান করে।"একি ভয়ং'কর সৌন্দর্য!"
কাঁদামাটি লেগে থাকা শরীরে উদ'ভ্রা'ন্তের মতো নিজের রুমে ছুটতে থাকে।ত'প্ত মরুভূমির মতো খাঁ খাঁ করছে বুকের ভিতর।কোনো এক অতৃ'প্ত বাস'নারা মাথা চা'ড়া দিয়ে উঠেছে।আবারও হৃদয'ন্ত্রের গোল'যোগ দেখা দিয়েছে।সেখানের সাভাবিক ক্রিয়াশী'লতায় ব্যা'ঘা'ত ঘটিয়ে অসা'ভাবিক কা'র্যক্র'ম শুরু হয়েছে।
অপর দিকে মধু নিজের অবস্থান দেখে বারবার ফুঁপিয়ে উঠছে।বুকের ভেতরটা কেমন ধুপধাপ করছে।ল'জ্জা গুলো সব এক জায়গায় জোড়ো হয়ে পেটের ভিতর মুচ'ড়ে ধরেছে।ভাগ্যটা আজকে ওর সাথে বে'ঈ'মানী করলো।এতো বছরের আগলে রাখা নারী'ত্ব যা বিশেষ কারো জন্য তা...আর ভাবতে পারছে না।দুচোখ বেয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।
যদিও দুপুরে সবার সাথে টেবিলে খাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মধু শরীর খারা'পের অজু'হাতে যায় নি।
__________
কলেজের ইউনিফর্ম প্রস্তুত না হওয়াতে সিভিল ড্রেস কোডে ই যেতে হচ্ছে। মধু কলেজ যাওয়ার জন্য কোয়াটার থেকে বের হয়েছে। পড়নে তার শুভ্র রঙা থ্রি পিস, ডাগরডাগর চোখে গাড় কাজল,কানে ছোট্ট সাদা দুল,বা হাতের কব্জিতে চিকন ফিতের ঘড়ি,পায়ে ফ্ল্যাট জুতো,দীর্ঘকায় চুল গুলো বেনী করে রেখেছে।হাটার সাথে সাথে সর্পিলা বেনীটা এঁকেবেঁকে দোল খাচ্ছে।
মনে হচ্ছে আসমান থেকে কোনো শুভ্র পরী তার চোখ ধাঁধানো রূপের আলোকছটা ছড়াতে ছড়াতে জমিনে নেমে এসেছে।রূপের জাদুতে সবাইকে ব'শী'ভূত করণীয় ই যেন তার মূখ্য উদ্দেশ্য।
মধু গেটের কাছে এসে দেখে, যে গাড়ি প্রভা আর ওকে কলেজ ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আসে সে গাড়ি ন'ষ্ট হয়ে গেছে।প্রভার ক্লাস না থাকায় প্রভা আজকে যাবে না।কিন্তু গাড়ি ন'ষ্ট হওয়ায় মধু হতা'শ হয়ে গেছে।কি করবে বুঝতে পারছে না।
স্নিগ্ধ হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বের হয়েছে।গাড়ির কাছে শুভ্র এক পরীকে দেখে ঘো'র লেগে গেছে।সাত সকালে মগজ'ধো'লাই না করলে কি চলছিলো না এই মেয়ের।
রহিম চাচা মধুকে একটা সিএনজিতে তুলে দিবে সেজন্য সবে মাত্র বের হতে নিবে।তখনি স্নিগ্ধ হাজির।
"চাচা কোথায় যাচ্ছেন?"
"এই তো স্যার,মধু মামুণি কে সিএনজিতে তুলে দিবো,গাড়িটা ন'ষ্ট হয়ে গেছে তো তাই।"
"উনি তো মনে হয় রাস্তা-ঘাট চিনে না,প্রবলেম হতে পারে।আমি নামিয়ে দিয়ে যাচ্ছি!"
মধু রহিম চাচাকে মাথা নাড়িয়ে নি'ষেধ করে।
কিন্তু ,রহিম চাচা ভেবে দেখে স্নিগ্ধর কথা সত্যি।জেনেশুনে তো এমন করা যায় না।
"মামুণি তুমি স্যারের গাড়ি করে চলে যাও।রাস্তা ঘাটে নানা বি'প'দ উৎ পেতে থাকে।তুমি নতুন কখন কোন বি'প'দে পড়ো,বলা তো যায় না।"
"কিন্তু চাচা..."
আর কিছু বলার আগেই স্নিগ্ধ গাড়ির দরজা খুলে দেয়,"উঠুন!"
রহিম চাচা পুনরায় তা'ড়া দেয়,মধু উঠে বসে।স্নিগ্ধ ও ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে।কিছু দূর যাওয়ার পর আ'ক'স্মিক স্নিগ্ধ বলে উঠে,"আমি খুবই সরি, সেদিনের জন্য।আসলে আমি জানতাম না ওয়াশরুমের ডোরে প্রবলেম আছে।খুবই সরি।"
মধু চুপ করে বাহিরে তাকিয়ে আছে।মুখে কোনো রা নেই।সেদিনের কথা মনে হয়ে ল'জ্জায় কোনো খো'লসে ঢুকে যেতে ইচ্ছে করছে।
"আপনি মনে হয় আমার সাথে রা'গ করে আছেন?তাই কথা বলছেন না!আমি ক্ষমা চাইছি প্লিজ ক্ষমা করে দিন।"
মধু বুঝতে পারছে দো'ষ কারোরই না।কিন্তু ল'জ্জারা যে আ'ষ্টেপৃ'ষ্টে জড়িয়ে রেখেছে।কিন্তু এখন কথা না বললে যে বেয়া'দবি হয়ে যাবে।উনার সাথে তো বেয়া'দবি করা যায় না। দুই দুই বার যে উনি বি'পদ থেকে বাঁচিয়েছে।এক বার ধন্যবাদ টুকু ও বলে নি। তাছাড়া এতো গুলো ঘটনার পরে উনার প্রতিক্রিয়া কি তা ও তো এখনো অজানা।"ঠিক আছে,আমি বুঝতে পেরেছি।"
আবারও নিশ্চুপ।চারিদিক থেকে শুধু পেঁপোঁ গাড়ির শব্দ আসছে।
"আপনাকে নাকি আমাদের বাসার নিচ তলায় থাকতে বলেছিল?কোনো প্রবলেম হয়েছে কি?প্রভার সাথে ওখানে থাকতে গেলে তো পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে?"
"আমি গ্রামের মেয়ে,সব জায়গায় মানিয়ে নিতে জানি।তাছাড়া বাইরের লোক আপনাদের পরিবারের মধ্যে না থাকাই ভালো।"
"কথাটা বুঝলাম না!কেউ কি কিছু বলেছে আপনাকে?"
"বুঝতে হবে না!"
কলেজের সামনে এসে পড়ায় মধু নেমে যায়।মধু চলে গেলে ও তার রে"শ রয়ে যায় কারো মনে।
সেদিন দুপুরে সবার সাথে লাঞ্চে থাকতে পারেনি তাই আজকে রাতে যেতে বলেছে আফজাল শেখ।জয়নব বেগম মধুকে আজকে যে করেই হোক যেতে বলেছে।
রাত ৯টা।
সবাই ডিনারের জন্য বসেছে।সাথে মধুও আছে।টেবিলে একটি নতুন মুখ যাকে মধু চিনে না। কখনো দেখা হয়নি।মধুর খুব অস্ব'স্থি বোধ হচ্ছে।এতো গুলো মানুষের মধ্যে ও।যদিও তুষি মধুকে টেনে ওর পাশে বসিয়েছে।কিন্তু পারভীন বেগম এবং তার মা মনোয়ারা মধুর আগমনে বির'ক্ত বোধ করছে।এদিকে না চাইতে ও স্নিগ্ধর চোখ বারবার মধুর দিকে চলে যাচ্ছে।
আরও একজন মধুর সেই আগমনী থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত ড্যাবড্যাব করে দেখছে।দুই এক বার বিষয়টা মধুর ন'জরে পড়েছে।তাই মুখে খাবার তুলতে অ'স্বস্থি হচ্ছে।
পারভীন বেগম বলে উঠে,"নিশান খাচ্ছো না কেন?"
"জি মা,খাচ্ছি!"
মনে মনে নিশান গভী'র ভাবনায় ডুবে গেছে,"এমন সুন্দরী,সে* মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি।কে ও?"
আফজাল শেখ স্নিগ্ধর উদ্দেশ্যে বলেন,"স্নিগ্ধ তুমি তো সকালে হাসপাতালে যাও।যাওয়ার পথে তো মধুর কলেজ,ওকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে যেও।রহিম বলছিলো বাড়ির একটা গাড়ি নাকি ন'ষ্ট হয়ে গেছে।"
"জি বাবা।"
এ কথা শুনে মধু স্নিগ্ধর দিকে তাকায়।স্নিগ্ধর চোখে চোখ পড়তেই গা কেমন ঝা'ড়া দিয়ে উঠে।বুকের ভিতরটা কেমন ডিপডিপ করতে শুরু করে।
"শরীরটা কেমন দু'র্ব'ল দু'র্ব'ল অনুভব হচ্ছে।এই লোকটার সামনে আসলেই যত য'ন্ত্র'ণা শুরু হয়ে যায়।কোথায় উনার কাছ থেকে পা'লি'য়ে বাঁচতে চাই!উল্টো আমাকে বাঘের খাঁ'চায় সে'ধিয়ে দিচ্ছে।"
বোনাস পর্বঃ
স্নিগ্ধর গাড়ি করেই কলেজ যেতে হচ্ছে কদিন ধরে।প্রতিদিন যাওয়ার সময় বুঝতে পারে, স্নিগ্ধ ওর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে থাকে।মধু তাকালে দেখে সাভাবিক ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে।পুরোটা সময় ধরে কেউ কারো সাথে কথা বলে না।কলেজ গেটে আসলে মধু চুপচা'প নেমে যায়।
তুষির কাছ থেকে শুনেছে স্নিগ্ধর নাকি দু থেকে তিন দিন ছাড়া হাসপাতাল বা কলেজে তেমন কোনো কাজ নেই।কেবল ইমা'র্জেন্সি বা অপা'রেশন ডেট পড়লে হঠাৎ যায়।কিন্তু প্রতিদিন যাচ্ছে মধুকে নামিয়ে দিতে।
দু দিন ধরে স্নিগ্ধর সাথে কথা বলবে বলবে করে ও বলা হচ্ছে না।মনে হচ্ছে ল'জ্জারাণী তার কোলে বসে,দু হাত বাড়িয়ে ঠোঁ'ট চে'পে রেখেছে।বহু কসরতে শুধু ঠোঁ'ট দুখানা নড়াতে সক্ষ'ম হচ্ছে।নাড়াতে নাড়াতেই কলেজ গেটে পৌঁছে যায় ।আর বলা হয় না।
আজকে প্রচুর সা'হস জোড়ো করে মুখ খোলে,"আপনাকে কিছু কথা বলার ছিলো।"
স্নিগ্ধ অবাক হয়ে যায়,"হাই স্ট্রেঞ্জ! তুমি দেখি..., সরি আপনি দেখি কথা ও বলতে জানেন!তা কি বলতে চান বলুন শুনি!"
"আমি আপনার ছোট আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন,সম'স্যা নেই।"
"অনু'মতি পেলাম তাহলে।আচ্ছা,কি বলতে চাও শুনি!?"
"বাগানে ঘটা সে ঘটনা,তারপর স্কুলের সেই দিনের ঘটনার জন্য আপনি আমার সাথে রে'গে আছেন তাই না?নিশ্চয় আমাকে চো'র আর অ'কর্মা ভাবছেন?আসলে ওই গাছের তেঁতুল সব পড়ে পড়ে ন'ষ্ট হয়ে যায়,কেউ খায় না।তাছাড়া ঐ গাছের তেঁতুল আমার খুব পছন্দের তাই আরকি...!"
একটু থেমে আবার শুরু করে,"এভাবে পড়ে পড়ে ন'ষ্ট হয়,তাতে তো আপনাদের গুনাহ হবে তাই না?সেজন্য কিছু তেঁতুল আমরা নিয়ে আপনাদের গুনাহের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছি।কিন্তু আপনি কখন সামনে এলেন,আপনাকে আমি দেখিনি।অজান্তেই আপনার সাথে ধ্বা'ক্কা লেগে যায়।সত্যি আমি দুঃখীত।আর ঐ দিন বেখে'য়ালিতে পি'নটা আপনার বুকে... আমি ইচ্ছে করে করিনি,বিশ্বাস করুন...ইচ্ছে করে করিনি।খুব খুব খুবই দুঃখীত।আপনি দয়া করে আঙ্কেলকে কিছু বলবেন না।উনি আমাকে চো'র ভাববে,ভাববে আমি অক'র্মার ঢেঁকি। আমার প্রতি ভুল ধারণা জ'ন্মাবে উ..."
"স্টপ....!সিরিয়াসলি! তুমি বলছো এসব!এতো কথা বলতে জানো তুমি!"
মধু স্নিগ্ধর চোখের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে অস্পষ্ট স্বরে বলে,"এই ব্যাটা বলে কি!কথা বলতে জানবো না কেন?"
"কি বললে?"
"কই! কিছু না তো!আপনি বলেন কিছু মনে করেন নি আর কাউকে কিছু বলবেন না!"
"অর্ডার করছো নাকি রিকোয়েস্ট!"
থতমত খেয়ে যায় বেচা'রা মধু।কথার ধরন কি চেন্জ হয়ে গেলো নাকি!
"অনুরো'ধ করছি..."
মেয়েটা যে খুব দুষ্টু সেটা তো অনেক আগেই তার স্বপ্নে টের পেয়ে গেছে।মধু চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছে স্নিগ্ধর দিকে।স্নিগ্ধ তো সেই কখন এই ঘনঘন পলক ফেলা ডাগরডাগর চোখের মায়ায় ডুবে গেছে ।বক্ষ'স্থল ছেয়ে গেছে এক শীতল অনুভূতিতে।
"আসলে,তোমাদের তেঁতুল পারার বিষয়টি আমি খুব এনজয় করেছি।আর পি'নটা যে ইচ্ছে করে ফোঁ'টাও নি,সেটা বোঝার বয়েস আমার হয়েছে।তাই না?সো, আমি কিছু মনে করিনি।আর কাউকে কিছু বলার তো প্রশ্ন ই আসে না।বুঝতে পেরেছো?"
মধু স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।তার মানে শুধু শুধুই এ কদিন ভয় পেয়ে গেছে।লোকটাকে যতটা গোম'ড়া মুখো ভেবেছে আসলে ততোটাও গোম'ড়া মুখো না।এই তো কি সুন্দর মুচকি মুচকি হেসে কথা বলছে।
আজকে প্রথম চেহারাটা ভালো মতো খেয়াল করেছে।সত্যি লোকটা পুরো বিদেশিদের মতো সুন্দর।আর খুবই সুদর্শন।ইংরেজিতে যাকে বলে স্মার্ট।খুবই স্মার্ট,ডেসিং টাইপ।না জানি কতো জনের সাথে প্রনয় গঠি'ত ব্যাপার স্যাপার আছে।
"আর কিছু বলবে?তোমার কলেজ এসে গেছে!"
"হ্যাঁ বলবো!"
"হুঁম...!
বলুন তাহলে শুনি,আর কি বলতে চান!"
মধু স্নিগ্ধর এ বাক্য শুনে মুচকি হাসে,বলে,"ধন্যবাদ।"
"আচ্ছা!
ধন্যবাদ কেন?"
"পর পর দুদিন হাসিব ভাইয়ের বা'জে কথা থেকে বাঁচানোর জন্য। শেষ দিন আপনি না থাকলে কি হতো... ভাবতেই ভয় লাগে।সে দিন ঠিক সময় এসেছিলেন বি'ধায় আক'স্মিক দু'র্ঘ'টনা থেকে বেঁচে গেছি। আপনার এবং আপনার পরিবারের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।"
"তাই বুঝি ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করে দিচ্ছো!"
"না না,তা নয়।আপনাদের জন্য আমি সব কিছু করতে প্রস্তুত।"
"ছোটো মানুষ কতো বড়ো কথা বলে ভাবা যায়!তোমাকে এখন কিছুই করতে হবে না।নিজের এইমে ফো'কাস করো।যথা সময়ে চেয়ে নেবো!"
"কি চেয়ে নিবেন?"
"সেটা সময় বলে দেবে,তাই এখন তোমার ধন্যবাদ গ্রহনযোগ্য নয়।আর আমি ছোটোদের ধন্যবাদ নেই না।"
"এটা কেমন কথা!আর আমি মোটে ও ছোটো নই। এখন কলেজে পড়ি।"
"হ্যাঁ তাই তো!আমি ভুলে গেছি,সরি!"
গাড়ির দরজা খুলে মধু নেমে যায়।সুন্দর মতো হাঁটা ধরে,হাটতে হাটতে বলতে থাকে,"আমি বড়োদের সরি নেই না।দুঃখীত!"
মধুর এহেন আচরণে স্নিগ্ধর মনে পুনরা'য় লাবডুব লাবডুব শুরু হয়ে যায়। অজান্তেই ঠোঁ'ট প্রস'স্থ হয়ে যায়,"ভিষণ দুষ্টু তো এই মেয়ে!"
_____________________
বেশ কদিন কে'টে গেছে।
মধু এই কদিনে সবার সাথে মিশে গেছে।স্নিগ্ধর সাথেও বেশ অনেকটা ফ্রী হয়ে গেছে।আগের মতো ভয় পায় না।অস্বস্তি ও বো'ধ করে না।
এখন মাঝে মধ্যেই তুষির সাথে তুষির রুমে,ছাদে আ'ড্ডা দেয়। মধু তুষি ও প্রভার সাথে বন্ধুর মতো মিশে গেছে।মধুকে তুষির ভিষণ পছন্দ হয়েছে।মধু যতক্ষণ সামনে থাকে ততক্ষণ শুধু ওর দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছে করে।
মধু সবার সাথে মিশলে ও ঐ তিন জনের সাথে মিশতে পারেনি।নিশান বরাবর ওর দিকে কেমন করে যেন তাকায়।মধুর অস্ব'স্তি হয়।
সুলতান নিবাসের কিচেনে আজকে অনেক ব্যস্ততা।আজকে তুষির জন্মদিন।রাতে বাড়িতে পার্টি আছে।সেই মোতা'বেক কা'র্যক্র'ম চলছে।
রান্না ঘরে যয়নব বেগম,প্রভা বাকি কাজের লোকদের সাথে মধুও যতটা পারে সাহায্য করছে।
প্রভা হঠাৎ বলে উঠেছে,"মধু তুমি রাতে কি পড়বে?"
"এখনো জানি গো।আসতে ও পারি আবার নাও আসতে পারি।"
"তুমি না এলে তুষি কষ্ট পাবে,মন খারা'প করবে।”
"সেটাই ভাবছি।আচ্ছা তুমি কি পড়বে,আপু?"
"শাড়ি পড়বো।পার্টি শাড়ি।তুমিও পড়ো না।"
"কিন্তু আমার কাছে তো শাড়ি নেই।"
"আমি ম্যানেজ করে দিচ্ছি পড়বে কিনা বলো?"
"অন্য কারো থেকে শাড়ি নিয়ে পার্টিতে পড়বো! বিষয়টা কেমন দেখায় না?"
"তাহলে এক কাজ করো তুমি নোরা ফাতির খুছুখুছু একটা ড্রেস পড়ো।"
কাজ শেষ হওয়ায় দুজনেই রান্নাঘর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়ে।
"এটা আবার কি জিনিস,আপু! "
"ড্রয়িং রুমে বসে থাকা তুষি বলে উঠে,"কোনটা কি জিনিস?"
"নোরা ফাতির খুছুখুছু স্কার্ট !"
কথাটা শোনা মাত্র তুষি হো হো করে হাঁসতে শুরু করে।
"তুষি আপু তুমি হাসছো কেন?"
"আরে বোকা মেয়ে ঐ দিন টিভিতে খুছুখুছু হিন্দি গানটায়,নেচেছে একটা মেয়ে দেখলে না!ওর নাম নোরা ফাতি।আর ও যেই ড্রেসটা পড়ে ছিলো ওইটার কথা বলছে।"
তুষি প্রভা দুজনেই হো হো করে হেসে উঠে।মধু হকচকিয়ে দুজনের দিকে চেয়ে আছে।মজা নিচ্ছে বুঝতে পেরে প্রভাকে তা'ড়া করে।
প্রভা মেইন দরজার দিকে ছুটতে থাকে।প্রভা বের হয়ে যায়।যাওয়ার পর পরই মধু কোনো কিছুর সাথে ধ্বা'ক্কা খেয়ে সেটা নিয়ে ধ'পাস করে মাটিতে পড়ে।
পড়েছে অনেক জো'রে কিন্তু তেমন ব্যথা অনুভব হচ্ছে না।দ্রুত দুহাতে ভর দিয়ে উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু উঠতে পারছে না।মনে হচ্ছে কেউ পিঠ আর কোমড় শ'ক্ত করে চে'পে রেখেছে।বহু কসরতে মাথা তুলে তাকায়।
কি আ'শ্চর্য!এমন কিছুর প্রত্যাশা ছিলো না!
স্নিগ্ধ শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে বাহির থেকে বাসার ভিতরে প্রবেশ করতে যাবে তখুনি,প্রভাকে ছুটে বের হতে দেখে প্রভার যাওয়ার দিকে তাকায়।তাকিয়ে ভাবে,"ঐ দুষ্টুটাকে পেয়ে মেয়ে দুইটা আরো দুষ্ট হয়ে উঠেছে।"ভাবনার মাঝে কেউ জো'রেশো'রে ওর সাথে ধ্বা'ক্কা লাগে।বেখে'য়ালি থাকায় তাল সাম'লাতে না পেরে ধ্বা'ক্কা লাগা ব্যক্তিকে নিয়ে নিচে পড়ে।
আ'ক'স্মিক ঘট'নায় ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার জো।মধু মাথা তুলে দেখে স্নিগ্ধর বুকের উপর পড়ে আছে।স্নিগ্ধ আ'ষ্টেপৃষ্টে ওকে চে'পে ধরেছে।
সারা শরীরে নিউরোনেরা ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছে।শরীরের যে যে স্থানে স্পর্শ লেগে আছে,সেই স্থান গুলো শির'শি'রিয়ে উঠছে।কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরো শরীর অ'বশ হয়ে যাচ্ছে।মধু দ্রুতগতিতে নিজের ক'ম্পন রতো শরীরটা সরিয়ে নিয়েছে।
কিন্তু অপর ব্যক্তির বেনা'মি হৃদপি'ন্ডটা যে অন্য কিছু চাইছিল।কি হতো তেমনটা হলে।নতো মস্তকে দাঁড়িয়ে থাকা মধুর দিকে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে আছে।কেমন যেন ঘো'র লেগে যাচ্ছে।শিরদাঁ'ড়া বেয় ঠাণ্ডা শীতল স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
মনে মনে বিরবির করে,"আচ্ছা,আরো বেশি ল'জ্জা পেলে তোমায় কেমন লাগবে মাধবীলতা! "
এ ঘটনা ঘটার সময় ই ড্রয়িং রুমে মনোয়ারা বেগমের আগ'মন ঘটে।তিনি এসব দেখে ভ্রুকুটি করে তাকায়,মনে মনে মধুকে খুবই খা'রা'পের খাতায় নাম লিখায়। মুখে বলে,"এমন ধে'রী মেয়ে কিনা আমার জো'য়ান নাতিডার গায়ের উপর পরলো।এই মাইয়া হুঁ'শ থাকে না?কি বিতিকি'চ্ছা দেখছোনি!"
মধুর ভয় পেয়ে যায়।একে তো স্নিগ্ধ কি ভাববে তা ভেবে দিশেহা'রা।তারপর আবার মনোয়ারা বেগমের গা জ্বা'লানো কথা।তাছাড়া নিজের ভিতর অজানা অনুভূতিরা ও যে পুরো স'ত্তাকে অস্ব'স্তিতে ভরিয়ে দিয়েছে।
"আমি দুঃখীত,বুঝতে পারিনি এমন হবে।"
"নানু দো'ষটা ওর না আমারই ছিলো।আমি অন্য'মনস্ক হয়ে প্রবেশ করছিলাম।"
"আহারে...কাজ থেকে সবে ফিরছিলা!ব্যথা পাইছো না?"
মধু স্নিগ্ধর দিকে আবারও তাকায়।স্নিগ্ধ ওর ভয়া'র্ত লাজুক চাহুনি দেখে মুচকি হাসে।
"কিছুই হয়নি ,তুমি যাও।"
তুষি শুধু ভেবলাকা'ন্তের মতো চেয়ে রয়েছে।"হোয়াট এ রোমান্টিক সিন!!!"
সন্ধ্যায় পার্টি শুরু হয়।
তুষির সব ফ্রেন্ডস,নিশানের সব ফ্রেন্ডস,স্নিগ্ধ ও আফজাল শেখের পরিচিতরা,বেশ কিছু আত্মীয় স্বজনরা ও এসেছে।
মুখশ্রীর দু পাশে কিছু চুল সুবিন্যস্ত ভাবে লে'প্টে রয়েছে। দীর্ঘকায় কেশরাশি গুলো একটি কারুকাজ করা কাটা দিয়ে খোঁপা বে'ধে নিয়েছে। প্রভা জোর করে চোখে আইলাইনার টে'নে দিয়েছে।ঠোঁ'টে মেরুন রঙা লিপস্টিক দিয়ে দিয়েছে।পড়নে তার সাদা পাড়ের জলপাই রঙা শাড়ি,সাদা ব্লাউজ।কানে সাদা পাথুরে কানের দুল।দু হাতে দু গাছা সাদা রেশমি চুরি।
মধুর সাজ সম্পূর্ন হওয়ার পর।প্রভা ওর দিকে অপলক চেয়ে রয়েছে।
"মধুরে...তোকে তো পুরা পুতুল লাগছে।আমি ই তো বেসা'মাল হয়ে পড়ছি!
হ্যাঁ...!
না জানি কার কার নজ'র পরে আজকে তোর উপর!"
"বলছে তোমারে খালি বাড়াই বাড়াই বলা!
আচ্ছা আপু খুলে টুলে যাবে না তো?"
"আরে না,কি বলো খুলবে কেনো?"
"আমার না কেমন যেন লাগছে আপু!"
নিজের ঠোঁ'টে লিপস্টিক লাগাতে লাগাতে বলছে,"কেমন?"
"ওখানে কতো লোকজন আসবে,আমাদের কি ওদের সাথে যায় বলো?আমরা ইনাদের এই পার্টিতে বে'মানান।"
"আমরা তো তুষির জন্য যাচ্ছি।আমরা আমাদের মতো থাকবো,কেক কা'টা হলে চলে আসবো।এতো প্যারা নিও না তো!চলো আমার হয়ে গেছে।"
দুজনেই চলে যায় বাগানে।বাগানের এক পাশে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।কতশত অচেনা মুখ।
গ্রাম থেকে আজমল শেখের পরিবার ও এসেছে।
মধু আর প্রভা তুষির কাছে গিয়ে দেখে,হাসিব সেখানে তুষির সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
মধুকে দেখে মধুর দিকে ভাবলে'শহীন চেয়ে আছে।জিজ্ঞেস করে,"কেমন আছো?"
ইতস্তত বোধ করতে করতে মধু সংক্ষেপে উত্তর করে,"ভালো।"
এদিকে আরো দুজন মানুষের দৃষ্টি কে'ড়ে নিয়েছে মধু।একজন তো মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে গেছে কল্পনায়।
আর একজনের মাথা চা'ড়া দিয়ে উঠেছে এক ভয়ং'কর নি'ষি'দ্ধ ইচ্ছেরা।যে করে হোক মনোসকা'মনা পূরণের জে'দ চে'পেছে মনে....
চলবে.....