আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী-নন্দিনী নীলা (পর্ব ১৫.১)

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ১৫(১)-নন্দিনী নীলা (উপন্যাস),উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
কৃষ্ণবেণী-নন্দিনী নীলা (পর্ব ১৫.১)


বকুল তৃষ্ণার রুমে উঁকি মেরে দেখেছে বুবু আর দুলাভাই কথা বলছে ও আর ভেতরে ঢুকেনি। সবাই যেহেতু ঘুম আর কাজে লোকরা কাজে ব্যস্ত ও সারা বাসা চক্কর দিয়ে চঞ্চল পায়ে বাইরে চলে আসে।  সবাই সবার কাছে ব্যস্ত ছিল এজন্য কেউ আর ওকে এতটা লক্ষ্য করে নাই। ও নানান পদের গাছ দেখে তার সাথে ফুল গাছ ও আছে। বকুল নিজের লম্বা চুলের বেনি নাচাতে নাচাতে এগিয়ে পুকুর দেখতে পায়। সেটা ওর দৃষ্টিতে ছোট একটা পুকুর মনে হলেও সবার কাছে সুইমিং পুল। এতো পরিষ্কার সচ্ছ পানি দেখে ও তো অবাক। কারণ পুকুরের পানিতে এত পরিষ্কার হয় না এটা এতটাই পরিষ্কার যে ও নিজের প্রতিবিম্ব আয়নার মতো পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। আগ্রহী চোখে তাকিয়ে নিজের সম্পূর্ণ শরীর দেখার জন্য ও আরো এগিয়ে যায় সুইমিং পুলের দিকে ওর খেয়ালই থাকে না ও কখন সুইমিং পুলে ঠাস করে পরে যায়। ভোরের ঠান্ডা পানিতে পরে ওর গা শরীর কাঁপতে থাকে ও চিৎকার করে ওঠে। কয়েকজন গার্ড চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে বকুলের এই অবস্থা দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।

এদিকে তৃষ্ণা একটা কাজের মেয়েকে নিয়ে বাইরে আসে। ও এই বাসায় আসার পর এখন অব্দি বাইরে আসেনি। এই বাসার ঐ একটা রুমের চার দেয়ালে থেকে কখনো বাইরে আসার আগ্রহ অবধি করেনি। আর ওর বোন কিনা এক দিনে বাইরে চলে এসেছে। বাইরে একজন গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে বলে দেয় ঐদিকে গেছে। তৃষ্ণা সেদিকে যেতে থাকে কিছু দূর যেতেই কয়েকজন গার্ডকে দেখতে পায় তারা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে তার বোন দাড়িয়ে আছে ভেজা শরীরে পেছনে একটা ডোবা।

বুঝতে আর বাকি থাকে না বোন তার এই ডোবায় গোসল করেছে হয় সেচ্ছায় না হলে অনিচ্ছায়।


বকুল ওর বুবু কে রাগী চোখে নিজে দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। এভাবে যে ধরা পরে যাবে কে জানতো। চুপি চুপি এসে ঘুরে চলে যাবে ভেবেছিল। কিন্তু এভাবে গিয়ে ধরা খাবে কে জানতো।

"তুই এখানে কি করছিস?"

বকুল শুকনো ঢোক গিলে বলে,"বুবু আসলে আমি না একটু বাসাটা ভালো করে দেখতে আসছিলাম। এখানে এসে না আমি ভুল করে পানিতে পরে গেছি পা পিছলে।"

ভেজা শরীরে বকুল কাঁপছে এজন্য আর তৃষ্ণা এখানে দাঁড়িয়ে কিছু বলে না। বোনের হাত ধরে টেনে বাসার ভেতরে নিয়ে আসে। তখন দেখা হয় নিজের শাশুড়ির সাথে তিনি দাঁড়িয়ে আছে ডয়িং রুমে। তিনি বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণা আর বকুলের দিকে।

বকুল মাথা নিচু করে তৃষ্ণা কে নিজের জন্য বরাদ্দ করা রুমে গেল। 

জেসমিন বেগম ওদের দিকে তাকিয়ে বললেন," বাসা টাকে নর্দমা বানিয়ে ফেলল।"


" বুবু!"

" আমি এখনো এই বাসার বাইরে গেলাম না। তুই একদিনে বাইরে চলে গেলি? এমন করলে আজ‌কেই তোকে বাড়ি পাঠাই দিমু।"

বকুল কান্না করে দিয়ে বলে," বুবু তোমারে না ব‌ইলা আর কোনখানে যামু না কথা দিলাম। এবারের মতো ক্ষমা ক‌ইরা দাও। আমারে বাড়ি পাঠাই ও না। আমি যামু না।"

তৃষ্ণা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 

" যা জামা পাল্টে আয়।"

বকুল ওয়াশরুমে চলে গেল। জামা পাল্টে এলো আজ দুই বোন রুমেই খেল। বকুল তৃষ্ণা গল্প করছে তখন উষসী আসে। 

" দুই বোন কি করো?"

তৃষ্ণা উষসী কে নিজের রুমে দেখে চমকে দাঁড়িয়ে পরে। উষসী কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবাক চোখে দেখছে বকুল।

কি সুন্দর সিনেমার নায়িকা দের মতো দেখতে। বকুল উষসীর দিকে তাকিয়ে বলল," তুমি কি নায়িকা?"

উষসী হেসে বলল," না তো আমি তোমার বোনের ছোট জা।"

" ওহ আপনে অনেক সুন্দর দেখতে। চুল কি সুন্দর লাল লাল।"

" বাহ তোমাদের দুইবোনের তো লম্বা হেয়ার। একেবারে কুচকুচে কালো।"

" হ কিন্তু আপনের চুল এতো সিল্কি কেমনে আমাগো চুল তো এতো সিল্কি না।"

বকুল চুলে হাত দিয়ে বলল। 

উষসী কিছুটা বিরক্ত হলেও প্রকাশ করল না। হালকা হেসে বলল," প্রতি মাসে স্পা করতে হয় এর জন্য। আরো অনেক কিছু করা লাগে তার জন্য তোমাদের পার্লারে যেতে হবে।"

" আমার বুবু রে নিয়া যাইয়েন।"

" আচ্ছা।"

তৃষ্ণা বকুল কে থামাতে চেয়েও পারল না। উষসী বেরিয়ে যেতেই তৃষ্ণা বকুল কে ধমক দিল।


সময়টা বিকেলের সারাদিন পর জায়ান বিকেলে বাসায় আসে। তৃষ্ণার সেদিকে খেয়াল নেয়। ও বকুলের সাথে আগের রুমে ঘুমিয়ে ছিল। জায়ান শাওয়ার নিয়ে তৃষ্ণার খোঁজ করতে এসে ব‌উকে পায় বেঘোরে ঘুমাচ্ছে‌‌। ও চুপিসারে তৃষ্ণাকে নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। তৃষ্ণা ঘুমে মগ্ন। জায়ান তৃষ্ণাকে বিছানায় শুইয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দেয়। তারপর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।


এদিকে হঠাৎ বকুলের ঘুম ভেঙ্গে যায় আর এই দৃশ্য দেখে ফেলে। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে থাকে। চলে যেতেই লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। ওরনা গলায় ঝুলিয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে আসে রুম থেকে। বকুল হাঁটতে হাঁটতে সেই পাগলের রুমের সামনে চলে আসে। এসেই রুম থেকে গুঙরানির আওয়াজ শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পরে। কে আর্তনাদ করছে ও অনুসরণ করে দরজার কাছে চলে আসে। দরজার সামনে বড়ো একটা তালা ঝুলছে। 

ও তালা ধরে দরজায় কান পেতে ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পায় আবার ভাঙার আওয়াজ পায়। মহিলা কন্ঠ। কে এমন করছে? ভয়ে ও শুকনো ঢোক গিলে। ভেতরে মানুষ আছে তাহলে বাইরে এতো বড়ো তালা ঝুলছে কেন?

দরজায় বারি মেরে ডাকতে যাবে তখনি কেউ পেছনে থেকে ওর মুখ সেপে ধরে সরিয়ে আনে দরজা থেকে।

" তুমি এখানে কি করছো?" একজন ফিসফিস করে বলল। বকুল ভয়ে জ্ঞান হারাবে এমন অবস্থা। ঢোক গিলে তাকিয়ে দেখে বুবুর দেওর ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর চোরের মতো ফিসফিস করে কথা বলছে। 

ও চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলে," ঐঘরে কেডা আছে। তারে তালা দিয়া রাখছেন ক্যান? আমি দরজা খোলার চেষ্টা করছিলাম।"

" তাড়াতাড়ি চলো। ভাই এখানে তোমাকে দেখলে সর্বনাশ হবে।"

" আরে কি কন আমি তো উপকার করতে আইছি ছাড়েন আহেন আমার লগে। দুজন মিলা দরজা খুলি। রুমের মহিলা টা না কাঁদতে ছিল।"

জোভান ঢোক গিলে। এই বাঁচাল কে তো চুপ করানো যাচ্ছে না। জোভান পকেটে থেকে রুমাল বের করে বকুলের মুখ বেঁধে দেয়‌। বকুলের চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেছে। ও না কিছু বলতে পারছে না সহ্য করতে পারছে। উম‌উম করছে। হাত ধরে টেনে জোভান ওকে সরিয়ে নিয়ে আসে। 

পাশের দেয়ালের পেছনে দুজনে লুকিয়ে পরে। জোভান আড়াল থেকে তাকিয়ে থাকে আয়ান একটা ইনজেকশনের সিরিজ নিয়ে সেই রুমের সামনে যায়। প্যান্টের পকেট থেকে চাবি বের করে তালা খুলে ভেতরে ঢুকে আবার দরজা আটকে দেয়। 

বকুল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। আয়ান কে ও জায়ান ভেবে তাকিয়ে আছে। 

জোভান দরজা বন্ধ হতেই বকুল কে নিয়ে ফিরে আসে।

বকুল মুখ খোলার জন্য কতো শত চেষ্টা করেছে অবশেষে জোভান খুলে দেয়। বকুল বড়ো শ্বাস নিয়ে বলে," আপনে আমার মুখ বাঁধলেন ক্যান?"

" তোমার মতো বাঁচাল মেয়ের মুখ না বেঁধে কি আর চুপ করানোর উপায় আছে? ভাবি এতো শান্ত শিষ্ট তুমি এতো বাঁচাল হলে কি করে?"

বকুল বোকা চোখে তাকিয়ে আছে জোভানের দিকে। মুখ বাঁধার জন্য রাগে ফুঁসছে ও কিছু বলতে যাবে তখন মাথায় আসে বুবু মনে হয় জেগে গেছে। তাই তো দুলাভাই ওইখানে গেছে। আমি বুবুর কাছে যাই না হলে আবার বকা খাব আর আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। 

বকুল জোভানের দিকে তাকিয়ে বলল," আপনেরে কিছু ক‌ইলাম না। বুবুর লিগা‌‌।"

বলেই বকুল দৌড়ে চলে গেল জায়ানের রুমের দিকে। 


তৃষ্ণা চোখ মেলে নিজেকে জায়ানের নিকটে ও তার রুমে দেখে বিস্মিত হয়। ঘুমালাম বোনের সাথে উঠলাম স্বামীর বাহুবন্ধনে থেকে। ও জায়ান কে ধাক্কিয়ে উঠে যায়। এ রুমে কখন এলো ও ভাবছে। জায়ান তৃষ্ণার ধাক্কা খেয়ে উল্টো ঘুরে ঘুমিয়ে গেছে তৃষ্ণা দরজা খুলে বাইরে এসে দেখে বকুল দাঁড়িয়ে আছে। 

দরজা খুলে বকুল কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। বকুল দৌড়ে এসে তৃষ্ণাকে বলে," বুবু আমারে একা রেখে চলে এলে কখন আমি কখন উঠে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি‌।"

ঢোক গিলে মিথ্যা কথা বলে বকুল। বুবু কে সব জানাতে ইচ্ছে করছে কিন্তু বকা খাওয়ার ভয়ে বলতে পারছে না। 

" আমি নিজেও জানি না কখন এই রুমে আসলাম।"

বকুল অন্যমনষ্ক হয়ে কিছু ভাবছে। তৃষ্ণা সন্দেহ চোখে আছে বকুলের দিকে। না পেরে ধাক্কা দিয়ে বলে,

" কি রে কি ভাবিস?"

"কিছু না বুবু।"বলেই বকুল রুমের ভেতরে যেতে চায়। তৃষ্ণা দরজা আটকে ওকে নিয়ে বাইরে চলে আসে।

বকুল চোরের মতো মুখ করে ওর সাথে যাচ্ছে।


চলবে.....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.