আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব-০৬ )

গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম),প্রেম কাহিনী,হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে,ধারাবাহিক,বাংলা গল্প,রোমান্টিক গল্প,romantik premer golpo,
হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব-০৬ )


৬.
"সোহান ভাই আপুকে অনেক ফেসিলিটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে।হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।উপবৃত্তির ও ব্যবস্থা করে দিয়েছে।তেমন চাপ পড়ে না।আর আপু একদিন আমাকে বলেছিলো ক্যাম্পাসের বাইরে এই হাটহাজারীরই কয়েকটা স্টুডেন্ট পড়ায়।কিন্তু জানো ভার্সিটির অনেকের ধারণা টিউশন তো বাহানা মাত্র,আপু নাকি এমনি এমনি এই ভার্সিটিতে টিকে নেই।প্রায়ই একজন লোক নাকি দামি গাড়ি চড়ে আপুর সাথে দেখা করতে আসে।আপুকে অনেক সমীহ করে কিন্তু আপু ভিষণ এটিটিউট দেখায়।মানে সকলের ধারণা আপুর অনেকের সাথে অবৈধ মেলা...!যদিও আমি সে সব বিশ্বাস করি না।কিন্তু শুনতে ভিষণ খারাপ লাগে।জানো তো পৃথিবীতে ভালো মানুষের দোষ বেশিই থাকে।অনেক কথা বলে ফেললাম কাউকে বলো না যেন।তাহলে আমি শেষ।"

_________________



"আপনার বাড়ি কোথায়?"

"কেন?তা দিয়ে তুমি কি করবে?"

"কি করে মানুষ?এমনি জানতে চাইলাম!"

"আমার বাড়ি নেই,আমি অনাথ।"

"এতিমখানাটা কোথায়?"

"তা জেনে তোমার কি?"

"আচ্ছা তোমার জিএফ নেই?"

"নাহ!"

"কেন?"

"কাউকে ভালো লাগেনি কখনো।আর ভাবিনি কখনো কারো প্রেমে পড়বো।কিন্তু একজনকে হঠাৎ একদিন ভালো লেগে গেছে।অজান্তেই তার প্রেমে পড়ে গেছি।"

"ভালো।কিন্তু আমার মনে হয় এ প্রেমে পড়াটাও তোমার জন্য সঠিক ছিলো না।"

"তাই বুঝি!আচ্ছা জিজ্ঞেস করছেন না কেন কে সে? "

"জানার প্রয়োজনবোধ করছি না!"

"কারণ আপনি জানেন।"


অপর পাশ থেকে আর কোনো শব্দ ভেসে আসছে না।মিনিট খানিক বাদে রাত বলে,"কালকে ফ্রি আছেন?"


"কেন?"

"ঐ একটু স্বর্গের সিড়ির কাছে যেতাম আরকি।"

"ফ্রেন্ডদের নিয়ে যাও।"

"যাই তো,আপনার সাথে যেতে চাইছিলাম।"

"কখন যাবে?"

"ক্লাস শেষে।"

"হুঁ...।"

পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। বাতাসের সাথে মিশে আছে প্রাকৃতিক স্নিগ্ধতা,পাহাড়ী বুনো গন্ধ।

চবি ক্যাম্পাসের আর সব জায়গার মতো সবুজে শ্যামলে ঘেরা চবি ক্যাম্পাসের এই স্বর্গের সিঁড়ি।এই দিকটায় মানুষজন তেমন আসে না।বর্তমানে জনমানবহীন বললেই চলে।সিড়ির ধাপে ধাপে কৃষ্ণচূড়ার রঙীন পাপড়ি বিছিয়ে আছে।

মাঝামাঝি একটা সিঁড়ির ধাপে পাশাপাশি বসে আছে দু'জন।নিরব-নিস্তব্ধতায় কেটে যাচ্ছে কিছু সময়। মাথার উপরে দাড়িয়ে আছে বিশাল আকৃতির কৃষ্ণচূড়া গাছ।বাতাসের দোলায় হঠাৎ হঠাৎ সেই গাছ থেকে কৃষ্ণচূড়ার রাঙা পাপড়ি ঝরে পড়ছে দুজনের উপরে।এখানকার মনোমুগ্ধকর পরিবেশের বাতাসেও কেমন যেন প্রেম প্রেম ভেসে বেড়াচ্ছে।

নিস্তব্ধতা কাটিয়ে পাপড়ি বলে উঠে,"তোমার বাসায় কে কে আছে?"

"বাবা,মা,বোন আর আমি।আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?"

"হুম করো।"

"সোহান ভাই আপনাকে অনেক ভালোবাসে তাই না?".

" জানি না..."

"আপনার বয়ফ্রেন্ড আপনি জানেন না সে আপনাকে কতটা ভালোবাসে!"

"নাহ উপলব্ধি হয় না।"

"কারণ কি না হওয়ার? "

"তাও জানি না।"

"তাহলে আপনি নিশ্চয়ই উনাকে অনেক ভালোবাসেন ?"

পাপড়ি রাতের দিকে তাকিয়ে থাকে নিষ্পলক।রাত ও তাকিয়ে থাকে।এ চোখ জোড়া থেকে রাতের চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না।এ চোখে লুকিয়ে আছে কোনো অজানা ভাষা, না বলা কিছু কথা,কিছু ব্যথা।

পাপড়ি চোখ নামিয়ে নেয়। নিচের সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

রাতের মনে হয় ওদের সম্পর্কটা কোনো সাভাবিক সম্পর্কের মতোন নয়।কারণ বয়ফ্রেন্ডের কথা বললে মেয়েদের চোখে মুখে চিলিক দিয়ে উঠে,তাদের মুখশ্রীতে এক অন্যরকম ঝেল্লা দেখা দেয়,কিছুটা লাজুকতা মিশ্রিত থাকে।যার লেস মাত্র নেই পাপড়ির চোখে।

" আপনি কি আমাকে ফ্রেন্ড ভাবেন?"

"হ্যাঁ!"

"কিন্তু আমার মনে হয় না।কারণ আপনি আমার কাছে সব কিছু শেয়ার করেন না।"

"ফ্রেন্ড ভাবি তবে শেয়ার করার মতো আমার তেমন কিছু নেই।"

"আপনারা দেখা করেন না?"

"হ্যাঁ করি।" রাতের প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছে পাপড়ির হৃদয়।পুরোনো ক্ষতে জ্বালা হচ্ছে,তাই কিছুটা জোরে বলে উঠে,"আচ্ছা আমাদের সম্পর্কে এতো কিছু কেন জানতে চাইছো? আমার এবার উঠতে হবে।"কথা শেষ করেই পাপড়ি উঠে দাঁড়ায়।সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকে।

রাত পিছনে থেকে বলে," টিউশন করাতে যাবেন বলে তাড়ায় আছেন?"

পাপড়ি দাঁড়ায়, পিছন ঘুরে তাকায়।"ভাবে ও জানলো কি করে!"

"কয়টা স্টুডেন্ট পড়ান?"

"৪টা!"

"হাটহাজারীতে সব?"

হাটঁতে হাঁটতে জবাব দেয়,"হ্যাঁ!"


পাশাপাশি হাটঁতে হাঁটতে বলে,"এতো সময় পান?পড়াশোনায় প্রবলেম হয় না?"

"নাহ!অনাথদের এতো প্রবলেম হতে নেই!ওদের পড়াতে না পারলে আমারই পড়া হবে না।"

"আপনি তো তাহলে এই বয়সেই স্বাবলম্বী?"

"পরিস্থিতি মানুষকে অনেক কিছু শিখায়,ক্ষেত্র বিশেষে অনেক কিছু বানায়। কলেজ ইউনিভার্সিটির সব স্টুডেন্টদেরই উচিত বাবা-মার উপর নির্ভরশীল না থেকে, কিছু না কিছু করা। এতে বাবা-মার উপর প্রেশার কম পড়বে, নিজের আয় উপার্জন হবে, উপার্জনের উপর আগ্রহ পোষণ হবে, সবচেয়ে বড়ো কথা যেটা সেটা হলো নিজের মেধার ঝালাই বাছাই হবে। মেধা আরো তীক্ষ্ণ হবে।"

রাত পাপড়ির পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে।তারপর বলে,"বাহ! বেশ ভালো এডভাইস দিলেন তো।এই না হলে সিনিয়র।"

ধীর গতিতে হাঁটতে হাঁটতে দুজনে এগোচ্ছে।

পথিমধ্যে আকস্মিক সোহানের সাথে দেখা হয়ে যায়।ওর সাথে আরো কিছু ছেলেপুলে আছে।পাপড়ি ও ইফরাতকে একসাথে দেখে সোহান ভ্রু কুঁচকে তাকায়।বিষয়টা তার পছন্দ হচ্ছে না।

সোহান এগিয়ে এসে দাঁড়ায় ঠিক পাপড়ির সামনে।তারপর প্রশ্নছুঁড়ে,"কোথায় গিয়েছিলে?"

পাপড়ি সাবলীলভাবে উত্তর করে,"এখানেই।"

এবার সোহান খানিকটা ক্রোধান্তিত হয়ে বলে,"সিড়ির কাছে?এই ছেলের সাথে?"

পাপড়ি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সোহান রাতের সামনে ফিরে রাগান্বিত স্বরে বলে,"কে রে তুই?ওর সাথে কি করিস?"

রাত সোহানের ব্যবহার দেখে স্তম্ভিত।মনে মনে ভাবছে,"এমন ব্যবহার কেউ কিভাবে তার জিএফ এর সাথে করে।"

"কিরে!কি বলছি শুনতে পাচ্ছিস না?"

রাত ওর পরিচয় দেয়।সাথে এটা ও বলে ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট।

সোহান পাপড়িকে ফের বলে,"আমি বললে আমার সাথে তো কখনো কোথাও যেতে চাও না।এই সিড়ির কাছে ও তো জীবনে আনতে পারিনি।ওর সাথে একাকী এখানে চলে এসেছো।কাহিনী কি? হ্যাঁ...?"শেষের শব্দটা ধমকের সহিত উচ্চারণ করে।

পাপড়ি কিছুটা কেঁপে উঠে।

এমন ব্যবহার রাতের একদমি ভালো লাগছে না।রাত কিছু না ভেবে বলে উঠে,"গার্লফ্রেন্ড দেখে এমন রূঢ় ব্যবহার করবেন?তাও এতো গুলো বাইরের মানুষের সামনে!আমার মনে হচ্ছে উনার প্রতি আপনার বিন্দু মাত্র বিশ্বাস নেই।ভালোবাসার মানুষের প্রতি বিশ্বাস না থাকলে সেটাকে কখনো ভালোবাসা বলে না।আর হ্যাঁ ভালোবাসার মানুষকে রেসপেক্ট করতে শিখুন,রেসপেক্ট ছাড়াও কোনো ভালোবাসা টেকে না।আর ভাইয়া সিনিয়র হয়ে জুনিয়রের সাথে যদি এমন বিহ্যাভ করেন তো আমরা কি শি...."

কথা শেষ হওয়ার আগেই রাতের গালে চড় পড়ে।রাত বিস্মিত হয়ে গেছে।কারণ চড়টা পাপড়ি দিয়েছে।

হতবিহ্বল হয়ে ভাবছে দোষটা কোথায় করেছে।

সোহান ওর দিকে ক্রোধান্তিত হয়ে এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলো।কিন্তু এখন ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটে উঠেছে ।

সোহান পাপড়ির এহেন কাজে খুশি হয়েছে।খুশি হয়ে খানিক কোমল স্বরে পাপড়িকে বলে,"জান,কেন তুমি এদের সাথে যাও।জানোই তো অন্য কোনো ছেলের পাশে তোমাকে দেখতে আমার ভালো লাগে না।"

তারপর রাতকে ধমকে বলে,"শোন নিজের ক্ষতি না চাইলে ওর থেকে দূরে থাকবি।"

রাত ক্ষুব্ধ হয়ে চলে যায়।পিছন ফিরে তাকালে দেখতে পেতো পাপড়ি জল ভরা চোখে চেয়ে আছে ওর যাওয়ার দিকে।




চলবে...


Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.