আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

জলফড়িং (পর্ব-০২) - রিধিমা জান্নাত রূপা

জলফড়িং,রিধিমা জান্নাত রূপা,থ্রিলার গল্প,ধারাবাহিক গল্প,প্রেমের গল্প,প্রেম কাহিনি,
Estimated read time: 7 min
জলফড়িং (পর্ব-০২) - রিধিমা জান্নাত রূপা


জলফড়িং
লেখনীতেঃ রিধিমা জান্নাত রূপা




পর্বঃ ০২
“দিয়া, এ্যাই দিয়া! চল তাড়াতাড়ি, আংটি পড়াবে। ওদের তো আর তড় সইছে না।”

চমকে উঠলো দিয়া, ছুটে গেল ভাবনায় আনা অতীতগুলো। এই মুহুর্তে ঠিক কি করবে, কিছুতেই যেন ভেবে পেল না। যেখানে বিয়ের কথায় নিজেই হাসিমুখে রাজি হয়েছে, তার কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়েছে, পরিবারের সম্মতিতে হ্যাঁ বলেছে সেখানে কিভাবে আবারও না করবে এই বিয়ে তে? এসব ভেবেই যেন সবটা এলোমেলো হয়ে গেল দিয়ার। বিয়েটা কিভাবে আটকানো যায় তার চিন্তায় চিন্তিত হয়ে উঠলো।

তবে বেশিক্ষণ ভাবতে পারলো না কিছু। তার ভাবী মিথিলা এসে নিয়ে যেতে লাগলো। ভাবীকে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না, আরও কিছু শুনিয়ে মজা নিতে লাগলো দিয়ার। হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো দিয়া, ইফাজের সাথেই আবারও কথা বলবে বলে ভেবে নিলো। তাকে বোঝালে হয়তো বুঝে যাবে দিয়ার কথাগুলো, ঠিক যেমন এর আগেও একবার বুঝেছিলো ইফাজ, সবকিছু ভুলো শান্ত হয়েছিলো। কিন্তু হঠাৎ এতদিন পর পুরানো কথাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো কেন ইফাজের? আর তাকেই বা কেন বিয়ে করতে চাইছে?

সবকিছু ভাবনায় এনে নিজের প্রতিই ভীষণ রাগ লাগছে দিয়ার। কেন যে বিয়েতে রাজি হলো, আর ইফাজের ছবি দেখে চিনতেই বা পারলো না কেন?

দিশার মতো প্রেম ঘটিত কোন সম্পর্ক ছিলো না দিয়ার, প্রেমের প্রস্তাব পেলেও নাকচ করে গেছে। তার বরাবরের মতোই ইচ্ছে ছিলো অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ করার। প্রেমঘটিত ব্যাপারে বাসা থেকে কোন বাঁধা না পেলেও দিয়ার প্রেম নামক জিনিসটা পছন্দ ছিলো না কোন কালেই। কিশোরীতে পা রাখার পরেই মনে মনে কাউকে কল্পনা করতো তার জীবনে, যাকে শুধুই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েই ভালোবাসতে চেয়েছে। তাই যখন পরিবার থেকে তার বিয়ের ব্যাপারে এগোতে চেয়েছে তখন আর না করে নি দিয়া, হাসি মুখেই সম্মতি জানিয়েছে।

হোস্টেলে থাকাকালীন একদিন হুট করেই খবর আসে বাসায় যাবার জন্য, সেদিন'ই ইফাজের পরিবার দিয়াকে দেখতে আসে। মেয়ে পছন্দ হয়েছে বলেও জানায়, দিয়ার পরিবারকেও দাওয়াত করে নিজেদের বাসায় যেতে বলে। সেদিন বেশ লজ্জায় পেয়েছিলো দিয়া, ইফাজকে না দেখেই নানান কল্পনা জল্পনা জুড়ে নিয়েছিলো মনে।

পড়াশোনার চাপে পরেরদিনই দিয়াকে ফিরে আসতে হয়েছিলো হোস্টেলে। তবে না দেখা হবু হাসবেন্ডের কথা মাথা থেকে সরাতে পরে নি। সেটাকে আরও স্থায়ীভাবে স্থাপন করতে ফোন করে দিয়ার ভাবী। বলে,

“উফ্! দিয়া, ইমতিয়াজ ভাইয়া আর তার পরিবারের লোকজন ভীষণ পছন্দ করেছে তোকে। সবাই তো তোর প্রসংশায় পঞ্চমুখ।”


“কি যে বলো ভাবী?”

“আহ্! এতেই লজ্জা পাচ্ছিস কেন? পরেরটা তো শোন।”

বলেই একটু থামলো মিথিলা, সেকেন্ডের মতো সময় নিয়ে আবারও বলতে লাগলো, “ছেলেটার কি সাহস বল তো। ঘরভর্তি সবার সামনে অকপটে বলে উঠলো —ভাবী দিয়ার মোবাইল নাম্বার'টা দেন তো। শোনার পর আমিই তো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম বোন। যাইহোক, ইমতিয়াজ ভাইয়া কিন্তু তোকে ফোন দিবে। কিভাবে কথা বলবি এখনি গুছিয়ে নে।”

বলেই হাসলো মিথিলা। এদিকে লজ্জা পায় দিয়া, লজ্জাবতীর ন্যায় নুইয়ে যায় যেন। কোনরকমে নিজেকে স্বাভাবিক করে সামান্য কথা বলে মোবাইল রেখে দেয়। কিন্তু বুকের দ্রিমদ্রিম শব্দটা কিছুতেই থামে না। মনে হয়, এই বুঝি মোবাইল বেজে উঠলো।

সারাটাদিন দিয়াকে এক উদগ্রীবতার মাঝে কাটিয়ে রাতের প্রহরে মোবাইল বেজে উঠলো, অচেনা নাম্বার দেখে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেল দিয়ার। কথা বলার সময় অপরিচিত কণ্ঠস্বরও পরিচিত বলে মনে হলো, কিন্তু তখনও বুঝতে পারলো না এটাই ইফাজ। পর পর কয়েকদিন কথা হলো ইফাজের সাথে দিয়ার, এর মাঝে ইফাজ তার ছবিও পাঠালো। কিন্তু আফসোস, কিছুটা সন্দেহ হলেও ইফাজের এডিট করা সাইট থেকে তোলা ছবিটায় চিনতে পারলো না যেন। ইমতিয়াজ নামটা শোনার পর ঘুণাক্ষরেও ধারণা করতে পারলো না এটা ইফাজ হবে। পরিষ্কার কোন ছবি দিতে বললেই ইফাজ বলে —ছবি কেন? সরাসরিই যত দেখার দেখে নিও। তখন লজ্জায় আর কিছু বলতে পারতো না দিয়া। বিয়ের আগে হবু বের সাথে একান্তে লুকিয়ে দেখা করার ইচ্ছে থাকলেও ইফাজের দিক থেকে কোন সারা পায় নি দিয়া। তাই নিজের ইচ্ছেটাকে দমন করে চুপ থেকেছে, অপেক্ষা করেছে আজকের এই দিনের। কিন্তু এভাবে যে সারপ্রাইজ পাবে তা ধারণাও করে নি।

বসার ঘরে যেতেই সবটা যেন তাড়াতাড়িই হয়ে গেল। সবার মধ্যমণি দিয়াকে করে আংটি পড়ানো হলো, সেই বাহানায় ইফাজ হাতটা চেপে ধরলো দিয়ার। বিরক্তি নিয়ে চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলো না দিয়া। বড়দের চোখে না পড়লেও কাজিনরা ঠিকই দেখলো, হাসি ঠাট্টায় আরও মজা নিতে লাগলো। বলার পরও দিয়ার হাতটা ছাড়লো না ইফাজ। ধীর গলায় বলে,

“কালকে রেডি থেকো বউ, বিয়ের শপিং করতে যাবো।”

“কেন করছেন আপনি এমনটা? কি চাইছেন?”

“তোমাকে!”

চুপ হয়ে গেল দিয়া, সহসায় কিছু বলতে পারলো না যেন। তা দেখে হাসলো ইফাজ। কথাবার্তা ফাইনাল করে বিয়ের আয়োজন শুধু করতে বললো পরিবারের বড়রা।

রাতের ঘুম চোখে এলো না দিয়ার। বিয়েটা কিভাবে আটকাবে সেটায় যেন ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে উঠলো। ভাবলো দিশাকে সবটা জানাবে, কিন্তু পর মুহুর্তেই ভাবলো দিশাকে জানিয়েই বা কি হবে? হ্যাঁ! কোন লাভ হবে না দিশাকে ইফাজের ব্যাপারে জানিয়ে। হয়তো বলবে,

“করে নে বিয়ে, কিন্তু ভালোবাসা পাবি না। ইফাজ তো আমাকে এখনো পাগলের মতো ভালোবাসে দিয়া।”

দিয়া জানে, দিশার এই কথাটা বলতে মোটেও খারাপ লাগবে না। কারণ কথাটা দিয়ার খারাপ লাগলেও সত্যি এটাই। ভালোবাসা আর বিশ্বাস ভরপুর ছিলো ইফাজের মধ্যে। কিন্তু চার বছরের সম্পর্কের সেই বিশ্বাসটা ভেঙে গেলেও ভালোবাসা ফুরিয়ে যাওয়া সহজ নয়। দিশার বিশ্বাসঘাতকতার পর ইফাজের পাগলামিতে তার ভালোবাসাটা প্রতিনিয়ত ফুটে উঠেছে দিয়ার চোখে। হঠাৎ করেই যেমন দু'জন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছে ঠিক তেমনি হঠাৎ করেই যেন তাদের বিচ্ছেদ ঘটে গেছে।

'জলফড়িং' নামের সেই ফেসবুক আইডি'টা খোলার পর কেটে যায় সপ্তাহ খানিক। এর মাঝে দিয়াও নানান কিছু শিখে ফেলেছে, নতুন নতুন ফেসবুক আইডি তে এক ফ্যান্টাসিও কাজ করে। মেসেঞ্জারে কথা না বললেও নিয়মিত পোস্ট করতে থাকে। একদিন হঠাৎই তার করা পোস্টেই কতগুলো কমেন্টের ভীরে একটা কমেন্টে নজর যায়। দুইদিন আগের করা। ছোট করে লেখা —বাহ্! কথাগুলো বেশ সুন্দর তো। কিভাবে লিখলেন?

হাসলো দিয়া। সেও সুন্দর করে বললো —কেন? হাত দিয়ে লিখেছি।

ব্যাস্! সেখান থেকেই আরও কিছু কথা বাড়লো, এরপর ইনবক্সে গিয়ে 'হাই হ্যালো!' শুরু হলো। দিয়াও শুধু হাই হ্যালো তো রিপ্লাই দিলো। সময় গড়িয়ে মাস হলো, একসময় দিয়া খেয়াল করলো ইফাজের সাথে বলা কনভারসন গুলো কথা বলার পর রিমুভ করা হতো। এটা যে দিশার কাজ সেটা বুঝতে বাকি রইলো না। তা নিয়ে কখনোই কথা বাড়ায় নি দিয়া। ভেবেছে, তাদের পারসোনাল কথা তার না জানায় ভালো।

মাস তিনেক পর দিয়া হঠাৎই জানতে পারে ইফাজ ও দিশার মাঝে এক নতুন সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। দিশা নিজেই জানায়। এটাও বলে, ফেইক নাম ঠিকানার জায়গায় আসল নাম ঠিকানার সবটায় জানিয়েছে, ইফাজকে দিশারও যে ভালো লাগে সেটাও বলে। সব শুনে সহসায় কিছু বলতে পারে না দিয়া, এত তাড়াতাড়ি প্রেম কিভাবে হয় সেটায় যেন ভাবতে থাকে। মনে মনে বলে —বাকিদের মতো বেশিদিন টিকবে না দিশার এই সম্পর্কটাও। কিন্তু দিয়াকে অবাক করে দিয়ে মাস পেরিয়ে বছরে পড়ে ইফাজ দিশার সম্পর্কটা, টিকে যায় বছর চারেক।

সুপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো দিয়া। দিশাকে এখনি কিছু জানাবে না বলে ভেবে নিলো। কিন্তু এবার কাকে জানাবে, সবটা থেকে কিভাবে বের হবে? বাবা মাকে তো বলাই যাবে না। রাজী হয়েও বিয়েতে না করার কারণ জানতে চাইবে, বলতে হবে দিশার কথা। ইফাজ ও দিশার সম্পর্কের কথা জানালে তাদের দু'জনকেই হয়তো খারাপ ভাববে দিয়ার বাবা মা, নয়তো বোঝাবে তাকে। হয়তো বলবে, “যা হয়েছে সেসব ভুলে যা মা। দিশা শুধুই অতীত ছিলো, তুই হবি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। তাছাড়া ইমতিয়াজও তোকে বিয়ে করতে রাজী।”

বাবা মায়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো দিয়া, ভাবলো তার ভাবীকে বলবে। কিন্তু ভাবীর সাথে তো মোটেও ফ্রি নয় দিয়া। সম্পর্ক বেশ মজবুত হলেও পেটের কথা কখনোই বলা হয় নি। হয়তো পরবর্তীতে জেনে গেছে মিথিলা, আন্দাজে কোন কথা বলে শুনে নিয়েছে দিয়ার কাছে। কিন্তু হবু বর ও বেস্ট ফ্রেন্ডের প্রেম ঘটিত কথাটা বলা লোভনীয় মনে করলো না দিয়া।

সবকিছু ভাবনার পর একজনের কথায় মাথায় আসলো দিয়ার। তার বড় ভাই দিহান। দিয়ার সাত বছরের বড় ভাই হলেও তাদের সম্পর্কটা ছোট বেলা থেকেই বেশ মিষ্টিমধুর। দিহান ছোট থেকেই দিয়ার সাথে এভাবেই মিশেছে, নিজেকে এক বন্ধু বানিয়ে নিয়েছে ছোট বোনের। বাবা মা কে কোন কথা বা আবদার না করতে পারলেও অনায়াসেই দিহান কে তার সবটা বলে ফেলে দিয়া। দিশা ও ইফাজের সম্পর্কের সবটাই জানে দিহান। দিয়া'ই বলেছে। কিন্তু ইফাজ'ই যে সেই ছেলে সেটাই এখন অজানা দিহানের।

ভাইয়াের কথা ভাবতেই যেন এক প্রশান্তির ছায়া মেললো দিয়ার চোখে মুখে। ভাইকে সবটা বললে যে অনায়াসেই সবটা বুঝে যাবে সেই খুব ভালোভাবেই জানে। বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

“ভাইয়া রে, তুই এখন আমার একমাত্র ভারসা। জানি আমার পরিস্থিতি তুই ঠিকই বুঝবি।”

আর দেরি করলো না দিয়া। বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। মোবাইল হাতে নিয়ে সময়টা দেখে নিলো। রাতের ১১ টা বেজে ১৯ মিনিট। এত রাতে ভাইয়ের ঘরে যাওয়াটা ঠিক হবে কি না সেটাও ভাবলো একবার। পরমুহূর্তেই নিজের ভাবনাটা ছাড়িয়ে বলে উঠলো —সময়ের কাজ সময়েই করতে হয় দিয়া। ছোট বেলা থেকে ভাইয়া তোকে এটাই শিখিয়েছে। তাহলে জীবনের এতবড় একটা কাজে কেন সময়টা নষ্ট করবি?

বলেই নিজের রুম ছেড়ে বেড়িয়ে গেল দিয়া। সোজা দিহানের রুমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পর পর দু'বার নক করলো, কিন্তু কোন সারা পেল না যেন। সামান্য চুপ থেকে এবার খানিকটা জোরেই ডাকলো,

“ভাইয়াআ! দরজাটা খোল।”

বলতেই সারা দিলো দিয়ার ভাবী। আধা মিনিটের ব্যাবধানেই দরজা খুলে দিলো। এত রাতে দিয়াকে দেখে খানিকটা অবাক হলো মিথিলা। ব্যস্ত সুরে বললো,

“দিয়া এত রাতে? কিছু হয়েছে বোন?”

“না ভাবী। কিছু হয় নি। আসলে ভাইয়ার সাথে একটু কথা ছিলো।”

“সত্যি তো, কিছু হয় নি?”

“না... না! ভাইয়া কি করে?”

“তোর ভাইয়া তো ঘুমিয়ে গেছে দিয়া। দেখলি তো, সারাদিন কতো খাটুনি গেল।”

মুহুর্তেই মন খারাপ হয়ে দিয়ার। মিথিলা ভেতরে আসলে বললেও নাকচ করে দিলো। বিক্ষিপ্ত মনে নিয়ে ফিরে এলো রুমে। ভাবলো, কাল সকালে ভাইয়াকে ডেকে সবটা জানিয়ে দিবে।




.

.

চলবে.....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.