আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্ব ১২)

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ১২ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক
Estimated read time: 7 min

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্ব ১২)


এই বাসায় আজকেই প্রথম তৃষ্ণা এসেছে ডাইনিং টেবিলে খাবার খেতে সবার সাথে। জায়ান তৃষ্ণাকে সাথে নিয়ে একটা চেয়ার টেনে তৃষ্ণাকে বসিয়ে নিজেও পাশে বসেছে‌। তৃষ্ণা জায়ান কে একসাথে খাবার টেবিলে এসে বসতে দেখে সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে ছিল। জায়ান সেসব এ পাত্তা না দিলেও তৃষ্ণা দিচ্ছিল। এর আগে ও নিজে এসেছিল এখানে বসে খাওয়ার জন্য কিন্তু কেউ ওকে বসতে দেয়নি এমনকি পাত্তা দেয় নি‌। আজকে জায়ানের সাথে আসায় কেউ কিছু বলবে তো দূরে থাক প্রশ্ন অবধি করতে পারল না। তৃষ্ণার ভেতরে খুশির লাড্ডু ফুটছে। মুখে কিছু না বললেও মিটিমিটি হাসছে।
তৃষ্ণা মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে ঠোট চেপে হাসি আটকে ডান পাশে তাকাতে চমকে উঠল। আয়ান এক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
তৃষ্ণা ভয়ে ভীত হয়ে জায়ানের গা ঘেঁষে বসল। জায়ান চামচ দিয়ে তখন খাবার মুখে তুলছিল তৃষ্ণার ধাক্কা খেয়ে চামচ সহ খাবারটা প্লেটে পরে গেল। তৃষ্ণা ভয়ার্ত দৃষ্টিতে আয়ানের থেকে চক্ষু সরিয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল," আমি এখানে খাব না।"

জায়ান বিরক্তকর চোখে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। গম্ভীর গলায় বললেন,"প্রবলেম কি?"
তৃষ্ণা বলল," এখানে খেতে ভালো লাগছে না। এতো দিন ধরে রুমে একা খেয়ে অভ্যাস হয়ে গেছে।"
"ভয়ে ভীত হয়ে আছো কেন? শুনেছি একা থাকলে মানুষ ভয় পায়। তুমি দেখছি সবার মাঝখানে বসে ভয় পাচ্ছ অদ্ভুত।"

"ভয়ংকর মানুষেরা ভীড়ের মাঝে থাকলে ভয় তো করবেই।"

" হোয়াট?"


তৃষ্ণা জায়ানের কথার উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল নাকি কে জানে। বসা থেকে উঠে ওর জন্য বরাদ্দ করা সেই রুমটাই চলে গেল। জায়ান শক্ত চোখে সে দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেও খাবার না খেয়ে উঠে দাঁড়াল।

জেসমিন বেগম বললেন,"কি ঢং চলছে? তুমি আবার কোথায় যাচ্ছ খাবার না খেয়ে?"

"আপনি কখনো ঢং দেখেননি এজন্য দেখাচ্ছি।"

"ভদ্রভাবে কথা বলো। মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?"

" আপনি ঢং এর কথা জিজ্ঞেস করলে আমি বলতে পারব না?"

"আমার সব কথায় তোমার তেরা উত্তর না দিলে ভালো লাগে না?"

জায়ান জেসমিন বেগমকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে উর্মির দিকে তাকিয়ে বলল,,"মিহির কে আসতে বলেছিস?"

উর্মি চমকে খাওয়া থামিয়ে দিল।
"হ্যাঁ আসলে না মানে...

"আমি তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিলাম!"

উর্মি কি বলবে বুঝতে পারছে না। ও কি করে ভাইয়া কে বলবে? যে মিহির ওকে ভালোবাসে না। ভালোবাসা তো দূরে থাক ওকে সহ্য করতে পারে না। সে নাকি আসবে বিয়ের কথা বলতে।

"শুক্রবারে আসতে বলবি।"

উর্মি কিছু বলার সুযোগ পেল না জায়ান তৃষ্ণার রুমে চলে গেল।

উর্মি নিজের রুমে এসে শুধু পায়চারি করছে আর চিন্তিত মুখে নখ কামড়াচ্ছে। কি করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ভাইয়া এখন যদি সত্যিটা জেনে যায়। মিহির আমাকে পাত্তা দেয় না আমাকে দুই চোখে সহ্য করতে পারে না। তাহলে ভাইয়া মিহিরের যে কি অবস্থা করবে কে জানে। আর যাই হোক আমাকে যে অবজ্ঞা করে তাকে তো আমার ভাই অন্তত ছেড়ে দেবে না। আমি জানি।

কিন্তু শুক্রবার যদি মিহির না আসে তাহলে তো লঙ্কাকান্ড বেধে যাবে। দোটানা মন নিয়ে উর্মি মিহির কে কল দিল পর পর পাঁচ বার কল দেওয়ার পরে মিহির এর নাম্বার সুইচ অফ বলল।
রাগে দুঃখে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে ফেলে বসে র‌ইল।


লিয়া তৃষ্ণার খাবার রুমে রেখে গেছে তৃষ্ণা হাত ধুয়ে কেবল একটা লোকমা নিজের মুখে দিতে যাচ্ছিল তখনই জায়ান এসে তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে নিজের মুখে খাবার নেয়। তৃষ্ণা বোকা চোখে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।

"তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। "

" আপনি আমার মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে খেলেন কেন?"

"তুমি ধাক্কা দিয়ে আমার মুখের খাবার ফেলে দিয়েছ কেন?"

"সেটা তো ভুল করে করেছি।"

"কিন্তু আমি ইচ্ছে করে করেছি।"

"আপনি এত দ্রুত খেয়ে চলে এলেন?"

"খেয়ে আসলে কি আর তোমার খাবারে ভাগ বসাতাম?"

"আপনি না খেয়ে আসলেন কেন?"

"তোমার জন্য।"

" আমার জন্য না খেয়ে আসলেন কেন!"

"তোমাকে এখন আমার কৈফিয়ত দিতে হবে? খাওয়া শেষ কর আর দ্রুত বাইরে আসো সারপ্রাইজ হয়তোবা চলে এসেছে।"

তৃষ্ণা কিসের সারপ্রাইজ তার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না কিন্তু জায়ানের তারা দেখে সত্যি তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করল। জায়ান একবারই ওর খাবার ছিনিয়ে নিয়ে খেয়েছে পরে না তৃষ্ণা আর সেধেছে আর না জায়ান জোর করে খেয়েছে।


তৃষ্ণার জন্য সত্যি বোধহয় এর থেকে বড়ো সারপ্রাইজ আর কিছু হতে পারে না। ড্রয়িং রুমে এসে যখন নিজের বাবা আর বোনকে সোফার জড়োসড়ো মেরে বসে থাকতে দেখতে পায় ওর চক্ষু দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায়। বকুল তো বুবু বলে চিৎকার করে এসে তৃষ্ণাকে জড়িয়ে ধরে। তৃষ্ণা নিজেও জড়িয়ে ধরে বকুল কে। বোনকে ছাড়িয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তৃষ্ণার বাবা আর বকুল চোখ কপালে তুলে বাসা দেখছে।তাদের ভাবনার থেকেও বেশি বড়লোক বাসায় তৃষ্ণার বিয়ে হয়েছে ভাবতেই পারছে না। এ যেন কোন রাজপ্রাসাদ।

বকুল ফিসফিস করে বলল," বুবু গো এই রাজমহলের রাণী তুমি। আমার বুবু রাণী মহা রাণী হয়ে গেছে। বাড়ি গিয়ে সবাইরে বলুম।"

তৃষ্ণা বকুলের হাত চেপে চুপ করতে বলে। বকুল আর বাবাকে তৃষ্ণা নিজের রুমে নিয়ে আসে। জায়ান কথা বলে সেই রুমেই যেতে বলেছে এজন্য তৃষ্ণা অপেক্ষা করেনি বাবা আর বোনকে নিয়ে নিজের রুমে এসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে।

"তোমরা যে আসছ সেটা কি উনি জানত?"

তৃষ্ণা বাবা বলেন,"হ'রে মা জামাই বাবাজি তো সবই জানত। আমি তো আব্দুল এর ফোন দিয়া ফোন দিছিলাম জামাইরে। জামাই তো গাড়িও পাঠাইছিল সেই গাড়িতে কইরা আইছি।"

" ওহ আচ্ছা। তোমরা বসো আমি খাওন আনতে বলি।"

দুজনকে বিছানার উপর বসিয়ে তৃষ্ণা বের হয়। বাইরে এসে দেখতে পায় লিয়া খাবার নিয়ে আসছে। ঘুরে আবার রুমে চলে আসে।


এতটা পথ পেরিয়ে এসেছে এজন্য দুজনে খুব ক্লান্ত আর ক্ষুধার্ত। খাবার পেতেই দুজনে গপাগপ খেয়ে ফেলে। তৃষ্ণার বাবা খাবার খেয়ে বিছানার এক পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পরেছে। আর বকুল ঘুমায় না ও তৃষ্ণার হাত জড়িয়ে ধরে শুধু এটা ওটা জিজ্ঞেস করে যাচ্ছে।

ওর বুবুর শশুর বাড়ি এত বড়ো আর এত সুন্দর রুমে বুবু থাকে এসব দেখে ওতো খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে। কি থেকে কি জিজ্ঞেস করবে বুঝতে পারছে না। এজন্য খালি উল্টাপাল্টা তৃষ্ণাকে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছে।

"অনেক তো কথা বললি এবার একটু ঘুমা।"

"বুবু আমার তো ঘুম আসব না। আমি কিন্তু অনেকদিন থাকমু। আব্বায় চইলা যাইব বিকালে দুলাভাইদের গাড়ি কইরা দিয়া আসবে। কিন্তু আমি থাকমু তোমার কাছে কয়দিন।"

"আব্বায় চাইবো ক্যান? তারেও থাকতে বলুমনি।তুই থাইকা যা আমার কাছে এই বাড়িতে আমার একলা ভালো লাগেনা।"

"বাইরে কত মানুষ দেখলাম তুমি একলা কোথায়?"

"বাড়িতে মানুষের অভাব নাই কিন্তু আমার সঙ্গী হবার মত কেউ নাই।"


বকুল সুন্দর কারু কাজ করা ফুলদানির কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্লাস্টিকের ফুল হাতে দিয়ে ছুঁয়ে বলছে," বুবু কি সুন্দর ফুল! তোমাদের বাড়ি অনেক ফুল গাছ আছে তাই না?"

" ওইগুলো নকল ফুল। গাছের নয়। আমি এই বাসার আসার পর থেকেই দেখতেছি এই ফুলদানিতে এই ফুলগুলা। এগুলা নষ্ট হয় না আর না গাছ থেকে নেওয়া হয়েছে।"

"প্লাস্টিকের ফুলগুলো কি সুন্দর তাজা ফুলের মতন দেখতে তাই না বুবু। শুধু কোন ঘ্রান নাই।"

" হ।"

বকবক করে একাই বকুল ঘুমিয়ে গেছে দুপুরের খাবার খেয়ে তৃষ্ণার বাবা যাওয়ার জন্য তারা দিতে লাগল। তার বাড়িতে অনেক কাজ আছে সংসারের কাজ ফেলে এখানে থাকতে পারবে না কিছুতেই। তৃষ্ণা অনেক জুড়াজুড়ি করেও তার বাবাকে রাখতে পারল না। বাবাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বের হলো জায়ান দের বাসায় গাড়ি।


বকুল বুবু কে নিয়ে বাসা ঘুরে ঘুরে দেখছে। ওরা ঘুরতে ঘুরতে জায়ান এর রুমের সামনে চলে এলো। বকুল দরজা খুলে উঁকি দিয়ে জায়ান কে রুমের ভেতরে দেখে বলল,," দুলাভাই!!"
জায়ান চোখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখল তৃষ্ণা আর বকুল দাঁড়িয়ে আছে। তৃষ্ণাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখেই বকুল দৌড়ে রুমের ভেতরে চলে গেল।

"দুলাভাই এইটা কার রুম?"

"আমার, কেন?"

"এইটাতো বুবুর রুমের থেকেও বেশি সুন্দর। আমার বুবু বুঝি এই রুমে থাকে। আমি তো তখন ঐ রুমটা আপনার রুম ভাবছিলাম।"

"ওইটা তোমার বুবুর রুম এটা আমার রুম।"

"আপনাদের দুইজনের দুই রুম?"

জায়ান কিছু বলতে যাবে তৃষ্ণা এসে বকুল কে টেনে জোর করে রুম থেকে নিয়ে আসে বাইরে।

"চল এখান থেকে! ঘুরতে এসে গল্পে পরলি কেন?"

"বুবু তোমার আর দুলাভাই রুম আলাদা কেন?"

"কোথায় আলাদা? আমরা তো এক রুমে থাকি। উনি অনেক কাজ করে ব্যস্ত মানুষ যখন থাকে না তখন আমি ওই রুমে সময় কাটাই। আমার ঐ রুমে ভালো লাগে না এজন্য।"

"কত সুন্দর রুম। ভেতরে ঢুকলেই শরীর ঠান্ডা হয়ে যায়। তোমার ভালো লাগে না। কি যে কও না তুমি!"


রাতে বকুলকে তৃষ্ণার সাথে থাকতে দেওয়া হলো না। এতদিন তৃষ্ণা আলাদা রুমে থাকলেও এখন সে জায়ানের রুমে থাকার পার্মানেন্ট অধিকার পেয়ে গেছে। জায়ান নিজের বউকে আর আলাদা রাখবে না। এজন্য বকুলকে উর্মির সাথে উর্মির রুমে থাকার কথা বলল। উর্মি মিশুক স্বভাবের মেয়ে। এক বাক্যে রাজি হয়ে গেল।
রাতে--

তৃষ্ণা জায়ানের নরম বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছে। জায়ান ল্যাপটপে কিছু করছে আর একটু পর পর তৃষ্ণার দিকে তাকাচ্ছে।

" কি হয়েছে? না ঘুমিয়ে ছটফট করছ কেন?"

তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল," আলোয় আমি ঘুমাতে পারি না।"

" কেবল সাড়ে দশটা বাজে। দুই ঘন্টার আগে রুমের লাইট অফ করা সম্ভব না আমার কাজ শেষ না হ‌ওয়া পর্যন্ত। ঘুম না আসলে উঠে আমার জন্য কফি নিয়ে আসো। অযথা শুয়ে টাইম ওয়েস্ট না করে কাজ করো।"

তৃষ্ণা লাফ দিয়ে বিছানা থেকে উঠে পরল। আর সোজা রুমের বাইরে চলে এলো। গায়ের কমলা রঙের শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে রান্না ঘরে এসে কফি করতে লাগল। এখন আর করতে সমস্যা হয়না কারন লিয়ার থেকে শিখে নিয়েছে ভালো করে। তৃষ্ণা কফি মগে ঢালতে যাবে তখনি একটা নরম স্পর্শ পেল কাঁধে। প্রথমেই ওর মাথায় আয়ানের নোংরা স্পর্শের কথা মনে পরল। ও সামনে থাকা চামচ নিয়ে ব্যক্তির মাথা আঘাত করে।

জায়ান কপালে হাত দিয়ে তৃষ্ণার থেকে দূরে সরে দাঁড়ায়।
তৃষ্ণা চামচ হাতেই পেছনে ঘুরে রাগী চোখে সামনে তাকাতেই চমকে উঠে। আবার ওই শয়তান কে ভেবে নিজের স্বামীকে আঘাত করেছে ভাবতেই হাত থেকে চামচ পরে যায়। আর ঢোক গিলতে থাকে শুধু। উনি এবার আমার কি করবে আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। হে আল্লাহ রক্ষা করো আমায়।


#চলবে....


লেখিকার কথাঃ
( আসসালামু আলাইকুম। সবাই কেমন আছেন? অনেকদিন পর গল্প দিলাম। যারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করছেন তাদের জন্য কষ্ট করলাম। দেওয়ার সবোর্চ্চ চেষ্টা থাকবে বাকিটা আল্লাহ ভরসা।)

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.