আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

জলফড়িং (অন্তিম পর্ব) - রিধিমা জান্নাত রূপা

সহসায় জবাব দিলো না দিয়া। ভাইয়ের কথাটা মন দিয়ে শুনলো। হ্যাঁ! তখন কখনোই বিয়েতে না করতো না দিয়া, কিন্তু এখন? এসব কিছুই না। সবটায় শুধু ধারণা মাত্র।
Estimated read time: 9 min
জলফড়িং (অন্তিম পর্ব) - রিধিমা জান্নাত রূপা

জলফড়িং
লেখনীতেঃ রিধিমা জান্নাত রূপা
অন্তিম পর্ব


নিশ্চুপ হতভম্ব দিয়া। ভাইকে কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না যেন। বিয়েটা ভাঙার দিহান'ই ভারসা ছিলো, আর সেই বলছে ইফাজকে বিয়েটা করতে? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? বেস্টফ্রেন্ডের প্রাক্তন প্রেমিককে নিজের স্বামী হিসেবে কিভাবে মেনে নিবে? না... পারবে না সে। বলে উঠলো,

“এ আমি কিছুতেই পারবো না ভাইয়া, ইফাজকে বিয়ে করতে পারবো না আমি।”

“কেন পারবি না বুড়ি? ছেলেটা দিশার প্রাক্তন ছিলো বলেই কি তোর এই সিদ্ধান্ত?”

মাথা ঝাকালো দিয়া। হ্যাঁ! এটাই কারণ দিয়ার বিয়েতে না করার জন্য। আর সবচেয়ে বড় কথাটা হলো ইফাজের পাগলামি। ইফাজের পাগলামিতে বড্ড ভয় দিয়ার। দিশাকে হারিয়ে ঠিক কতটা পাগলামো করছে তা বেশ জানে দিয়া। বান্ধবীর ভালোবাসায় কিভাবে নিজের ভাগ বসাবে সে?

সহসায় কিছু বললো না দিহান। সামান্য চুপ থেকে দিয়ার হাত ধরলো, বিছানায় বসিয়ে নিজেও বসলো। একটু সময় নিয়ে বললো,

“আচ্ছা বেশ, বুঝলাম তোর কথা। এখন আমার কিছু কথার উত্তর দে। দিবি তো?”

“হুঁউউ!”

আবারও মাথা ঝাকালো দিয়া। একটু সময় নিয়ে দিহান বলতে লাগলো,

“ধর তুই ইফাজকে চিনিস না। তোদের বিয়ে ঠিক হবার আগে কখনো দেখিস নি, দিশার প্রেমিকও ছিলো না। ইফাজকে যতটা চিনিস সবটা তোদের বিয়ে ঠিক হবার পর। বুঝতে পারছিস আমার কথাটা?”

“হু!”

“আচ্ছা! এবার ধর ইফাজের অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্ক ছিলো, চদর বছরের জায়গায় আরও দু'বছর বাড়িয়ে ছয় বছরের সম্পর্ক ছিলো। দিশার চেয়েও বেশি সে মেয়েটাকে ভালোবাসতো, মেয়েটা ধোঁকা দেবার পর পাগলামি করতো। কিন্তু এর কিছুতেই তুই অবগত ছিলি না, জানতি না ইফাজের পাস্ট নিয়ে। তখন? তখন কি করতি? বিয়েতে না করতি?”

সহসায় জবাব দিলো না দিয়া। ভাইয়ের কথাটা মন দিয়ে শুনলো। হ্যাঁ! তখন কখনোই বিয়েতে না করতো না দিয়া, কিন্তু এখন? এসব কিছুই না। সবটায় শুধু ধারণা মাত্র। বললো,৷

“কিন্তু এসব তো ধারণা মাত্র ভাইয়া। ইফাজ দিশার প্রাক্তন এটাই সত্যি।”

“হ্যাঁ! এটাই সত্যি। কিন্তু ফ্রেন্ডের প্রাক্তন কে বিয়ে করা যাবে না, এমনটা তো নয়।”

“ভাইয়া তুই এ-কথা বলছিস?”

অবাকের সুর তুলেই বললো দিয়া। ভাইয়ের কাছে সে সমাধান নিতে এসেছিলো, কিন্তু সেই তাকে বিয়েতে রাজি হবার জন্য বোঝাচ্ছে? দিহান বললো,

“হু! বলছি। ওদের মাঝে জাস্ট একটা প্রণয়ের সম্পর্ক ছিলো, স্বামী-স্ত্রী তো ছিলো না। বিয়ের আগে অনেকের সম্পর্ক থাকে, কিন্তু সব সম্পর্ক তো আর পূর্ণতা পায় না।”

দিহানের কথা বুঝেও বোঝার চেষ্টা করলো না দিয়া। খানিকটা রেগে গেল ভাইয়ের প্রতি। রাগী সুর তুলে বলতে লাগলো,

“ইফাজ! ইফাজ তোকে এসব বুঝিয়েছে, তাই না? থাক, কিছু করতে হবে না তোর। বাবাকে সবটা জানাবো আমি। জানি, বাবা বুঝবে আমার কথা, ভেঙে দিবে বিয়েটা।”

“এসবটা বাবা আমাকে বুঝিয়েছে বুড়ি।”

কথাটা বলেই বিছানা ছেড়ে উঠে যাচ্ছিলো দিয়া, কিন্তু দিহানের বলা কথায় উঠতে পারলো না। স্থির হয়ে সেখানেই বসে রইলো। খানিক্ষণ সময় নিয়ে দিহান কে প্রশ্ন করলো, “বাবা?”

“হ্যাঁ! বাবা। বাবাই আমাকে বলেছে তোকে বোঝাতে। ইফাজ তো নিজেও বলেছিলো তোর মত না থাকলে এই বিয়েটা ভেঙে দিতে।”

হতভম্ব দিয়া। স্থির হয়ে নিশ্চুপ বসে রইলো, কিছু বলার মতো খুঁজেও পেল না। আর কি-ই বা বলবে? তার বাবা তো বিচক্ষণ মানুষ। ভেবেছিলো সবটা জানার পর মোটেও রাজি হবে না বিয়েতে, ভেঙে দিবে বিয়েটা৷ কিন্তু সেই মানুষটায় তাকে বোঝাতে বলেছে দিহান কে। সেসব ভেবেই চুপ রইলো দিয়া। খানিকটা সময় নিয়ে দিহান আবারও বলতে লাগলো,

“কাল রাতে তোর থেকে সবটা শোনার পর আমার ভীষণ রাগ হয়েছিলো ইফাজের প্রতি। সেই রাগের রেশ নিয়েই বাবার সাথে কথা বলি, সবটা জানায়। বাবা বোঝালো আমাকে, রাগের বসে হুটহাট কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক না এ-ও বললো। আমাকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে ইফাজের সাথে কথা বলতে বললো। ইফাজের সাথে দেখা করলাম, সবটা বললাম। ইফাজ মোটেও অবাক হলো না। হয়তো জানতো এমনটা হবে। সেও আমাকে বোঝালো, তোর মত না থাকলে ভেঙে দিতে বললো বিয়েটা। তোর অসম্মতিতে ইফাজও তোকে বিয়ে করবে না বললো।”

একটু থামলো দিহান। ইফাজের সাথে বলা কিছু কথা হয়তো লুকিয়েই গেল দিয়ার থেকে। খানিকটা সময় নিয়ে আবার বলতে লাগলো,

“কিন্তু ছেলেটা যতই না বলুক, আমি বুঝে গেছি ওর তোকে প্রয়োজন বুড়ি। বড্ড প্রয়োজন।”

প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠলো দিয়ার চোখমুখ। ঠিক যেন বুঝতে পারলো না ভাইয়ের কথাটা। বললো,

“কি বলতে চাইছিস তুই?”

“দিহান তোকে সর্বক্ষণের জন্য চায় বুড়ি, একজন স্ত্রী রুপে বন্ধুকে চায়। তোর থেকে সেই মানষিক সাপোর্ট চায় যা ওর প্রয়োজন।”

একটু থামলো দিহান। সেকেন্ডের মতে সময় নিয়ে আবারও বলতে লাগলো,

“ধোঁকা খেয়েছে ছেলেটা, ভালোবেসে ঠকেছে। নতুনভাবে আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারবে না। কিন্তু তোকে... তোকে না চাইতেও বিশ্বাস করে ফেলেছে। একজন বিশ্বাসযোগ্য ভরসাযুক্ত মানুষের জন্য হলেও তোকে চায়।”

“এসব সত্য নয় ভাইয়া। ইফাজ তো আমাকে দায়ী করে দিশার বিয়ের জন্য, আমাকে ব্লেম করে ওদের বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে।”

“হ্যাঁ! এটা ঠিক যে একসময় তোকে এর কারণ ভাবতো। কিন্তু এখন.... এখন ইফাজ ওর ভুলটা বুঝতে পেরেছে বুড়ি, জেনে গেছে সত্যিটা। তাই ও তোকে আর জোর করতে চায় না।”

এবারও অবাক হলো দিয়া, কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে রইলো দিহানের দিকে। কিন্তু এই ব্যাপারে জানতে চাইলো না কিছু। বেশ ভালো ভাবেই বুঝলো দিহানের কথাগুলো।

ইফাজ দিশার প্রাক্তন ছিলো বলে যে বিয়ে করতে চাইছে না দিয়া, এমনটা না। তাতে আপত্তি নেই তার। কিন্তু দিয়ার মন ও মস্তিষ্কে তো অন্য কথায় বাসা বেঁধেছে। দিশা বলেছিলো তাকে, ইফাজ একটা সাইকো, তার সাথে সংসার কথা কিছুতেই সম্ভব নয়। তাদের বিয়ের পর তার সাথে কিছু করবে না, তা তো জানে না দিয়া। তাছাড়া দিয়া নিজেও দেখেছে ইফাজের পাগলামি গুলো। তার জোরেই ঠিক এই কারণেই বিয়েতে সায় দিচ্ছে না দিয়ার মন। মনের কথা চেপে না রেখে ভাইকে বলেই ফেললো দিয়া। তা শুনে সামান্য হাসলো দিহান। বললো,

“দিশার সাথে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে ইফাজ তোকে দায়ী করতো, কিন্তু তার জন্য তোকে কি কখনো হার্ট করেছে ও?”

“উহুঁ!”

“আচ্ছা! ধর তোদের বিয়ে হলো, বিয়ের পর ইফাজ যদি অন্যথায় কোন সম্পর্ক বা কোন মেয়ের সাথে কথা বললে তোর খারাপ লাগবে না?”

সামান্য ভেবে মাথা ঝাকালো দিয়া। বোঝালো হ্যাঁ। সুপ্ত নিশ্বাস ছাড়লো দিহান। বললো,

“ঠিক এটাই ইফাজের সঙ্গে ঘটেছিলো। ইফাজের সাথে সম্পর্ক থাকাকালীনও দিশা আরও সম্পর্কে জড়িয়েছিলো। আর এতেই ইফাজের রাগ ছিলো।”

ভাবলো দিয়া। হ্যাঁ! ভাইয়ার কথা তো ফেলে দেবার নয়। ইফাজের সাথে সম্পর্কে থাকাকালীনও আরও সম্পর্কে জড়িয়েছে দিশা, ছাব্বিশ দিনের সম্পর্কে বিয়ে করেছে। এর কোথাও তো ইফাজের দোষ নেই, বরং বারংবার ঠকে গেছে ছেলেটা। খানিকক্ষণ ভাবলো দিয়া। সময় নিয়ে বললো,

“আচ্ছা বেশ, তোর কথা মানলাম ভাইয়া। কিন্তু.... দিশাকে কি ভুলতে পারবে উনি? সবটা ভুলে সংসার করতে পারবে তো? ভালোবাসতে পারবে তো আমাকে?”

“একটা বার সুযোগ দিয়েই তো দেখ। সবটা ভুলে তোকে আপন করতে চেয়েছে, দ্বায়িত্ব নিতে যখন চেয়েছে তখন ভালোবাসাটাও হয়ে যাবে।”

আর কিছু বললো না দিয়া, আর না দিহান কিছু জিজ্ঞেস করলো। ভাবলো দিয়া, সময় নিয়ে ভাবার জন্য ভাইয়ের কাছে সময় চাইলো। নিজের সিদ্ধান্ত জানাবে বললো। তাতে দিহানও রাজি হলো, সঠিক সিদ্ধান্ত'ই যেন নেয় এ-ও বললো। বেড়িয়ে গেল ঘর ছেড়ে।

দিয়ার সেই ভাবনা চললো পুরো দু’টো দিন। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়াও চললো না তার। নিজের জীবনের এতবড় সিদ্ধান্তে ঠিক ভুল বোঝার চেষ্টা করলো। পুরো দু'টো দিন পর অবশেষে নিজের সিদ্ধান্তে অটল হলো দিয়া। কিন্তু তাতে ইফাজের সাথে দেখা করতে চায় দিয়া, কথা বলতে চায় তার সাথে।

কল দিলো ইফাজকে, জানালো দেখা করার কথা। রাজি হলো ইফাজ, সময়ক্ষণ জানিয়ে দিলো। ভাইকে বলে বেড়িয়ে গেল দিয়া। ইফাজের বলা পার্কে গিয়ে দেখা পেল তার।

বেশ খানিকক্ষণ নীরবতার কেটে গেল। পাশাপাশি দু'জন বসেও কেউ কোন কথা বললো না। দিয়া বুঝতে পারলো না কি বলে শুরু করবে। নীরবতা ভেঙে ইফাজ'ই বলে উঠলো,

“আমি বাসায় বলে দিবো দিয়া, বিয়েটা করতে হবে না। আমি চাই না আবারও জোর করে একটা সম্পর্কে জড়াতে।”

নিশ্চুপ রইলো দিয়া, প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। খানিকক্ষণ চুপ থেকে ইফাজ আবারও বললো,

“জোর করে বিয়ের মতো একটা পবিত্র সম্পর্কে জড়াতে চাই না। জোর করে কিছু পাওয়া যায় না, কাউকে পাওয়া যায় না দিয়া। দেখলে না, ভালোবেসে দিশাকে নিজের সাথে জড়াতে চেয়েও পারলাম না।”
“ও হয়তো আপনাকে চায় নি ইফাজ।”

“হয়তো না, ও আমাকে কখনোই চায় নি। আরে যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে চাওয়া-চাওয়ির প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? ও তো আমাকে কখনো ভালোই বসে নি । ভালোবাসলে তো এভাবে ঠকাতে পারতো না আমাকে, বেইমানি করতো না।”

বেশ জোরেই বললো কথাগুলো, পরক্ষণেই নিজেকে শান্ত করলো ইফাজ। দিয়া বললো,

“তাহলে ওর কথা ভেবে দিন রাত কষ্ট পাচ্ছেন কেন? সবটা ভুলে নতুনভাবে শুরু করতে পারছেন না কেন?”

“নতুনভাবে শুরু করার জন্য বিশ্বাস করতে পারছি না কাউকে, ভরসা করতে পারছি না।”

“আমাকেও না?”

খানিকটা চমকে উঠলো ইফাজ। মাথা ঘুরিয়ে তাকালো দিয়ার দিকে। মেয়েটাও তার দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আছে। চোখাচোখি হয়ে গেল দু'জনের, কিন্তু দৃষ্টি সরিয়ে নিলো না কেউ'ই। ইফাজ পাল্টা প্রশ্ন করলো,

“তোমাকে?”

“কেন, পারবেন না? দিশার বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম বলে আমাকেও ওর মতো ভাববেন?”

“উহুঁ! তুমি আলাদা দিয়া, আমার ভাবনার চাইতেও আলাদা।”

সামান্য হাসলো দিয়া। সেই হাসিটা দেখালো না ইফাজকে। বললো,

“আমাকে বিশ্বাস করার কারণ?”

“তোমার এই চোখ দু'টো। সেই প্রথম দিনের মতোই জীবন্ত, বিশ্বস্ত।”

“থাকবে তো জীবনের সর্বক্ষণ?”

“রেখে দাও, থাকতে বাধ্য।”

“আচ্ছা বেশ, রেখে দিলাম। এবার থেকে যান, আমাকেও রেখে দেন।”

সামান্য হেঁসে বললো দিয়া। ইফাজের ঠোঁটেও হাসি ফুটে উঠলো। স্বস্তির হাসি, তৃপ্তির সেই হাসি। ইফাজের অনুমতি নিলো দিয়া, দিহানকে কল দিলো। সংক্ষিপ্ত আকারে জানালো সবটা, বিয়েতে রাজি এটাও বলো। মোবাইল রেখে ইফাজের দিকে তাকালো। ছেলেটা তার দিকেই তাকিয়ে আছে। খানিকক্ষণ নীরবতায় কেটে গেল। এক সময় ইফাজ হঠাৎ ডেকে উঠলো দিয়াকে। বললো,

“দিয়া।”

“হুঁ!”

“একটু জড়িয়ে ধরি তোমাকে?”

চমকে উঠলো দিয়া, সহসায় খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে সরে গেল। বললো,

“কি বলছেন এসব?”

বেশ শব্দ করেই হেঁসে উঠলো ইফাজ। হাসি মুখেই দিয়াকে জ্বালাতে বলে উঠলো,

“আচ্ছা, তোলা রইলো আজকের জড়িয়ে ধরাটা। বিয়ের রাতে এর সবটায় কিন্তু উসুল করে নিবো।”

কেটে গেছে বছর খানিক, পাল্টে গেছে সম্পর্কের সমীকরণ, সেই সাথে মজবুত হয়েছে ইফাজ দিয়ার সম্পর্ক। হ্যাঁ! বিশ্বাস, ভারসা, দ্বায়িত্ব, ভালোবাসা। সবটাই তাদের সম্পর্কে জায়গা করে নিয়েছে, কাটিয়েছে প্রায় দু'টো বছর। ইফাজের প্রথম ভালোবাসা হতে পারে নি বলে আফসোস করে না দিয়া, বরং শেষ ও অসমাপ্ত ভালোবাসা বলে গর্ব করে। সবটা ভুলে গেছে ইফাজ। তার বলা কথায় দিশার কথা তাদের বিয়ের পর আর কখনোই মুখ ফুটে উচ্চারণ করে নি। এই দু’টো বছরে দিয়াকেও কোন অভিযোগের সুযোগ দেয় নি। তবে দিশার কথা মতো ক্ষণে ক্ষণে বুঝেছে ইফাজ একটা সাইকো, সহ্য করেছে ইফাজের পাগলামি। আর সবটাই ছিলো দিয়াকে কেন্দ্র করে, তাকে ভালোবেসে। হ্যাঁ! ইফাজের ভালোবাসার পাগলামি গুলো খুব করে সহ্য করেছে দিয়া, দু'টো বছর পর এখনো সহ্য করে চলেছে।

নিজের ভাবনায় মসগুল ছিলো দিয়া। হঠাৎই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো ইফাজ। এতে চমকালো না দিয়া, আর না ভরকালো। এসব কিছুই যে তার অভ্যাসগত। তাদের বিয়ের প্রথম রাতেও ঠিক এভাবেই তাকে জড়িয়ে ধরেছিলো ইফাজ। বলেছিলো, ‘হুটহাট এই আক্রমণের অভ্যাস করে নাও বউ।’ তারপর থেকে একই ভাবে জড়িয়ে ধরে দিয়াকে। ইফাজ বলে উঠলো,

“এত মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিলেন ম্যাডাম?”

“তোমাকে!”

নির্লিপ্ত ভাবে জবাব দিলো দিয়া। হাসলো ইফাজ। বললো,

“তা এত মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছিলে আমাকে নিয়ে?”

“এটাই যে তোমার বাসায় ফিরতে আজকার এত লেট হচ্ছে কেন? পুরানো প্রেমিকাকে মনে করে সেই রাস্তায় যাচ্ছো না তো আবার?”

সহসায় রেগে গেল ইফাজ। ছেড়ে দিলো দিয়াকে। তাতে দিয়া হাসলো, তবে বুঝতে দিলো না ইফাজকে। মনে মনে কিছু একটা ভাবলো ইফাজ, বিরবির করে বললো —উফ্! ইফাজ। বউ তোকে রাগাচ্ছে। রেগে গেলি তো হেরে গেলি।

বলেই এগিয়ে এলো দিয়ার কাছে, আবারও জড়িয়ে ধরলো তাকে। বলে উঠলো,

“আমার আদুরে বউকে ভালোবাসি আমি, তাকে ভালোবাসে পর-নারীর কথা ভাবনাতেও আসে না এই ইফাজের। বুঝছেন ম্যাডাম?”

“হুউউ! বুঝলাম। তবে এবার তো আরও একজনকে ভালোবাসে হবে।”

“মানেএ? কার কথা বলছো?”

“ওর কথা।”

মুচকি হেঁসে ইফাজের হাত নিজের পেটে নিলো দিয়া। খানিকটা চমকে উঠলো ইফাজ, বুঝে গেল দিয়ার না বলা কথাটা। দিয়াকে ফের প্রশ্ন করলো সত্যি কি-না। লাজুক হেঁসে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বললো দিয়া। এতে খানিকক্ষণ সময় নিলো ইফাজ। নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,

“আমি তোমার কাছে ঠিক এই সুখের কাছেই হেরে যাই দিয়া, বারংবার হারাতে চাই।”



সমাপ্ত.....!




এতদিন সাথে থাকার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা পাঠকমহল। গল্প নিয়ে ভালো-খারাপ নিজেদের মতামত জানাবেন আশা রাখছি। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালোবাসা অবিরাম।🖤

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.