আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

অতৃপ্ত আত্মা- অরিন ইসলাম অনি (অনুগল্প )

অরিন ইসলাম অনির লেখা অনুগল্প - অতৃপ্ত আত্মা,অরিন ইসলাম অনি,অনু গল্প,রহস্য গল্প,ভুতের গল্প
Estimated read time: 6 min
অতৃপ্ত আত্মা- অরিন ইসলাম অনি (অনুগল্প )


"সে মানুষ ছিলোনা। ছিলো একটা অতৃপ্ত আত্মা।"

সামান্য কোলাহলময় সন্ধ্যানগরীতে থমথমে গলার এমন কথাতে সবাই পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখলো সত্তরের উর্ধ একজন লোক লুঙি পরে গায়ে শাল জড়িয়ে রয়েছে। বয়সের ভারে মাজা বেঁকে উপরের ধড় ক্ষানিকটা সামনে হেলে গেছে।

দশ-পনের বছরের ছয়-সাতটি বাচ্চা গ্রামের মোড়ের একটা চায়ের দোকানে ভীড় জমিয়েছে। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। প্রায়ই বাচ্চারা এই দোকানে এসে গল্প শোনার জন্য পাগল হয়ে ওঠে। গ্রামের মোড়ে একটাই দোকান হওয়ার জন্য সবসময় দুই-একজন লোক থাকে এইখানে। আজ গ্রামের মফিজ চাচার কাছে বাচ্চারা ভুতের গল্প শুনার জন্য বায়না ধরেছে। মফিজের বয়স পঁয়ষট্টি পেরিয়েছে। তার জানা অতীতের কিছু ছোটো খাটো ভুতের ঘটনা ধীরে ধীরে শুনিয়েছে। কিন্তু তারা আরও শুনতে চায়। দোকানিও বেশ আগ্রহে নিয়ে বললো,,

"হুনান না চাচা। ছেমড়ারা জ্বেদ করতিছে যহন, আর একডা হুনায়া দেন।"

তখনি পাশ থেকে থমথমে গলায় উপরের কথাটি কেউ বললো "সে মানুষ ছিলনা।ছিলো একটা অতৃপ্ত আত্মা।"

দোকানি,মফিজ আর সকল বাচ্চারা তার দিকে তাকিয়ে আছে। লোকটিকে এর আগে এই গ্রামে দেখেনি কেউ। তাই দোকানি জিজ্ঞেস করলো, "কই যাইবেন?"

বৃদ্ধ লোকটি হাতের ইশারায় দূরে দেখিয়ে বললো, "ওই পাশের গ্রামে।" তারপর বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে বললো, "তোমরা কি গল্প শুনতে চাও?"
সাথে সাথে বাচ্চারা মাথা উপরনিচ হেলিয়ে বেশ ক্ষানিকটা সরে বসে তাদের পাশে বেঞ্চিতে জায়গা করে দিলেন বসার জন্য।

গ্রামে এমন শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা দেখে দোকানি ও মফিজ ভালো করে বৃদ্ধের পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরখ করে নিলেন।

বেঞ্চিতে বসে মাথা নিচে হেলিয়ে মিনিট ক্ষানেক চুপ থেকে থমথমে গলায় বলা শুরু করলেন,,,

"সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে বাসে করে রাজশাহীর জন্য রওয়ানা দিয়েছি। আমার গ্রামের বাসা রাজশাহীতে। কাজের জন্য ঢাকাতে থাকি। দুইদিন হলো আম্মা ফোন করে বলেছে, তোর আব্বার মাজার ব্যাথাটা অনেক বেড়েছে। যদি পারিস একটু তাড়াতাড়ি করে বাড়ি আসিস। তোর আব্বাকে নিয়ে শহরে গিয়ে বড়ো ডাক্তার দেখাতে হবে।

তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমিও বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছি। বাস চলছে তার আপন গতিতে। বাস ছাড়ার ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। জেগে আছি মাত্র কয়েকজন। সিরাজগঞ্জ পার হয়ে বেশ কিছুদুর এসেই হঠাৎ করে বিকট শব্দ হয়ে বাস থেমে গেলো। এমন শব্দে সকলেরই ঘুম ভেঙে গেছে। বাস থেকে বাসের হেলপার আর কয়েকজন নিচে নেমে দেখে বাসের দুইটা চাকা ব্লাস্ট হয়ে গিয়েছে। তখন বাসে দুইটা চাকা বাড়তি থাকলেও সেই দুইটার মধ্যে একটির ভিতরে আবার হাওয়া নেই। মানে বাতাস নেই।

বৃদ্ধটি কথা আটকে একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে নিলেন। দেখলেন সবাই অনেক আগ্রহ নিয়ে তার গল্প শুনছে। বাচ্চাগুলো বেঞ্চির উপর পা তুলে বসেছে। সবার আগ্রহ দেখে বৃদ্ধ আবার আগের ঢংয়ে মাথা হেলিয়ে বসে বলতে শুরু করলেন,,,

আশেপাশে সব শুনশান। কোথাও কোনো আলোর ছিটেফোঁটাও নেই। বাস ঠিক করতে হলে ঘুরে আবার সিরাজগঞ্জ যেতে হবে। এতোদুর যাওয়াও এখন দুস্কর হয়ে পড়েছে। তাই হেলপার অপেক্ষা করছে কোনো গাড়ি ওয়ালা যদি সেইদিকে যায় তো সেই গাড়িতেই বাসের চাকা নিয়ে গিয়ে সারিয়ে নিয়ে আসবে। কিন্তু কোনো গাড়ির দেখা মিলে না।

সময় ঘন্টা ক্ষানিক পেরিয়ে গিয়েছে। বিশ পঁচিশ মিনিট হলো একটা ঢাকাগামী মালবাহী ট্রাকে করে চাকা সারাতে নিয়ে গিয়েছে হেলপার আর একটা প্যাসেঞ্জার। সেইখানে পৌঁছে হেলপার ফোন করে জানিয়েছে টায়ার ঠিক করতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে।

আমি সহ আরও তিনজন বাইরে বাসের আশেপাশে ঘুরাঘুরি করছি। তখন দূর থেকে আলোর রেশ দেখে সবাই চকিতে সেইদিকে তাকিয়ে দেখি একটা গাড়ি এইদিকে আসছে। আলোর ছটা চোখে পড়ার জন্য গাড়িটা, কি গাড়ি কেউ বুঝতে পারছিনা। একটুপর গাড়িটা আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে হেডলাইট বন্ধ করতেই দেখলাম এইটা একটা এম্বুলেন্স।

দরজার কাঁচ নামিয়ে মাথাটা বের করে এম্বুলেন্স এর ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলেন,, "এমন শুনশান জাইগায় বাস দাঁড়িয়ে আছে কেন?"

বাসের সব সমস্যা খুলে বললাম তাকে। কথায় কথায় আমাদের মধ্যে একজন জিজ্ঞেস করলো, "আপনার এম্বুলেন্স কতদুর যাবে?"

সে বললো, "রাজশাহী মেডিকেল পর্যন্ত।"

আমরা সবাই সবার মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ড্রাইভারকে বললাম আমরাও তো রাজশাহীর যাত্রী। আপনার এম্বুলেন্স কি ফাঁকা আছে। তাহলে আমরা কয়েকজন যেতে পারতাম। কিছুক্ষন কথা বলে আমরা ঠিক করলাম তাহলে আমরা চারজন এই এম্বুলেন্সে করেই রাজশাহী ফিরবো। বাস ড্রাইভারের সাথে কিছুক্ষন কথা কা'টা'কা'টি হলো। কারন সে আমাদের এইভাবে যেতে দিবেন না। প্রথমত আমরা সবাই টিকিট কেটে উঠেছি, টাকা ফেরত দিতে চান না তিনি। আর আমাদের একা ছাড়ার আরও একটি কারন, রাস্তায় যে কোনো দু'র্ঘ'ট'না ঘটতে পারে। তার দায়ভার যদি ড্রাইভার এর ওপর পড়ে এইরকম নানা ধরনের কথা শুনিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত আমরা একপ্রকার জো'র করেই সে এম্বুলেন্সে করে রাজশাহী রওয়ানা দেই।
তখন কথায় কথায় জানতে পেরেছিলাম এম্বুলেন্সে একটি লা*শ আছে। আমাদের মধ্যে দুইজন একটু উশখুশ করলেও বাড়ি যাওয়ার আনন্দে রাজি হয়ে যায়। আমি বসেছি ড্রাইভার এর পাশে। আর পিছনে তিনজন। ড্রাইভার এর নাম খলিল।

যেতে যেতে লা*শটার সম্পর্কে শুনলাম। একটা তরুনি মেয়ের লা*শ। কোনো কারনে গলায় দড়ি দিয়ে মা*রা গেছে। রাজশাহী মেডিকেল ভর্তির পরও বেঁ'চে ছিলো। চিকিৎসারত অবস্থায় মা*রা গেছে। তারই পোস্ট মর্ডাম করতে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়েছিলো।

ঘন্টা দুয়েক যাওয়ার পর খেয়াল করলাম পেছন থেকে কেমন যেন গোঙ্গানোর আওয়াজ আসছে। দুই তিন সেকেন্ড পরপর এমন গোঙ্গানোর আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। পিছনের তিনজনের কেউই কোনো কথা বলছে না। ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছে হয়তো তাই নাক ডাকার এমন শব্দ। ড্রাইভার খলিল আপন মনে গাড়ি চালাচ্ছেন। ধীরে ধীরে গোঙ্গানোর আওয়ার ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অধর্য্য হয়ে পিছনে ঘুরলাম থামানোর জন্য। কিন্তু একি!!!!

গায়ের পশম গুলো মুহুর্তেই দাঁড়িয়ে গেলো। কারন পিছনে তিনজনের কেউ নেই। সাথে লা*শটাও নেই।

হ'ন্ত'দ'ন্ত হয়ে ড্রাইভারকে বললাম, "গাড়ি থামান এখনি। দ্রুত গাড়ি থামান।"

আমার কথা শুনে গাড়ি থামিয়েই জিজ্ঞেস করলো,"কি হয়েছে ভাই? আপনি এমন অস্থির কেন?"

আমার গলা দিয়ে কোনো রকম কথা বের হচ্ছে না। কথা আউড়ে যাচ্ছে। বললাম, "তারা কোথায়? পিছনে তো কেউ নেই।"

আমার কথা শুনে ড্রাইভার ভ্রু কুঁচকে পিছনে তাকিয়ে দেখে সত্যিই কেউ নেই। তা'ড়া'হু'ড়ো করে গাড়ি থেকে নেমে গেল ড্রাইভার, সাথে আমিও নেমে গেলাম। ড্রাইভার হন্তদন্ত হয়ে এদিক সেদিক খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমিও তার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছি।

ড্রাইভার বললো আপনি একটু ওই সাইডে দেখেন। আমি এদিকটায় দেখি। আমি তার দেখানো সেইদিকে গিয়ে দেখি রাস্তার একদিকটায় ঘন জঙ্গল। গাড়ি থেকে দশ-পনেরো গজ দূরে রয়েছি আমি। আমার থেকে জঙ্গলের ভিতরে মনে হচ্ছে বেশ ক্ষানিক দূরে কারো গোঙ্গানোর আওয়াজ আসছে। গাড়িতে যেমন পাচ্ছিলাম ঠিক তেমন আওয়াজ। ভিতরটা ভ*য়ে টিপটিপ করছে। এতোক্ষনে ভ*য়*টা ভেতরে জেঁকে বসেছে। একটা লা*শের সাথে এতোরাতে এমন নির্জন রাস্তায় এতক্ষন আসা কোনো ভাবেই স্বাভাবিক ছিলো না। ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছি,যেদিক থেকে আওয়াজ টা আসছে। জঙ্গলের কাছাকাছি আসতেই ঝড়ের বেগে জঙ্গলের ভিতর থেকে কিছু একটা আমার পাশ কাটিয়ে রাস্তায় এসে পড়লো। আমার ভিতরে তখন প্রানের প্রদিপটা নিভেই গিয়েছিলো প্রায়। কি পড়লো রাস্তায় সেইটা দেখার যেন আর ক্ষ'ম'তা নেই আমার। দুই ধাপ পিছনে আসতেই কিছুর সাথে ধা'ক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম নিচে। পাশেই তাকিয়ে দেখি সেই তিনজনের ধড় পরে রয়েছে আমার পাশে। একজনের ঘাড়েও মাথা নেই। শরির থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এমন দৃশ্য দেখে আমি বিকট চিৎকার দিয়ে গাড়ির দিকে ছুটা শুরু করি।কিন্তু হাজার চেস্টা করেও গাড়ি অব্দি পৌঁছতে পারছিলাম না।

তখন গাড়ির পাশ থেকে একজনের মাথা হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসছে সেই ড্রাইভার। মুখে লেগে আছে তৃপ্তিময় হাসি। মুখের আশেপাশে রক্ত লেগে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মানুষ খেকো পিশাচ।

আমার দিকে তাকিয়ে আবারও একটা তৃপ্তিময় হাসি দিয়ে হাতে থাকা মাথাটির চোখ দুইটি তুলে খেয়ে ফেললো। তারপর ভয়ংকর রুপ ধারন করে হাতে থাকা মাথাটি ফেলে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমার মুখের ভাষা নেই। চিৎকার করতেও পারছিনা। কোথায় পালাবো আমি! পুরো জায়গাটা ভয়ংকর হয়ে গেছে। চারিদিকে গাছপালা গুলো মনে হচ্ছে আমাকে তাদের নাগালে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। চোখের পলকেই সে আমার কাছে, একদম আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে এতোটা কাছে দেখেই আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছিলাম। জ্ঞান যাওয়ার আগে শুধু এটুকুই কথা কানে এসেছিলো,,,"তোর আর বাড়ি ফিরা হবে না। এইটাই তোর শেষ রাত।" বলেই বিকট শব্দে হেসে পুরো জায়গাটা কাঁপিয়ে তুলছিলো।"

.
.
এইটুকু বলে বৃদ্ধ থামলো।

এমন ভৌতিক কাহিনি শুনে বাচ্চারা,দোকানি আর মফিজ একে অপরের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,,,"তারপর?"

কিন্তু আর কোনো উত্তর না আসায় বৃদ্ধের দিকে চেয়ে দেখে,, সেইখানে কেউ নেই।😳

বৃদ্ধ যেখানে বসে ছিলো সেই যায়গাটা একদম ফাঁকা। হটাৎ বৃদ্ধর অনুপস্থিতিতে সবাই স্তব্ধ......


সমাপ্ত

تعليقان (2)

  1. ❤️❤️
    1. ☺️☺️
অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.