আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-৩৮

Estimated read time: 5 min

ধ্রবতারা 
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)



দুজনেই চুপ চা'প, কারো মুখে কোনো কথা নেই।
প্রায় এক ঘন্টা পর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের এরিয়াতে এসে পৌঁছে।তুর তো বি'স্মি' ত।

"এখানে কেন?আমরা না বাড়ি যাবো? "

"এখানে কেন আসে?"

"ঘুরতে।"

"তো আমরা ও সে জন্য এসেছি।"

"হ্যাঁ.....!!"

চারদিকে সন্ধ্যা হয়ে আসছে।একটা রিসোর্টের সামনে ধ্রুব গাড়ি থামায়।তুর নেমে দাঁড়ায়।ধ্রুব গাড়ির পেছনের দরজা খুলে একটা ব্যাগ বের করে হাতে নেয়।

"এটা কোথা থেকে এলো? কি আছে এই ব্যাগে?"

"এতো প্রশ্ন কেন তোর।সময় হলে জানতে পারবি।প্রস্তুত থাক।"

বাড়ি থেকে ধ্রুবর মোবাইলে কল আসছে।

"কিরে কই তোরা?তন্নির বি'দা'য় এখন।তুরের না যাওয়ার কথা ওর সাথে।তাড়াতাড়ি আ'য়।"

"মা ওর শ'রী'রটা হঠাত খা'রা'প করেছে।তাই আমি ওকে নিয়ে ড'ক্ট'র' দেখিয়ে ঢাকা ফিরছি।তুমি ম্যা'নেজ করে নেও '।

এক মু'হূর্ত দেরী না করে কল কেটে দেয়।

এতো বড়ো মিথ্যে ধ্রুবর মুখ থেকে শুনে,তুর তো বি'স্মি'ত,অ'বা'কি'ত,বি'মো'হি'ত।

রিসপশন থেকে চাবি নিয়ে তুরকে বসতে বলে,ব্যাগটা নিয়ে উপরে নির্ধারিত রুমে যায়।

তুর এবার শি'উর হয় যে এসব ধ্রুবর পূর্ব প'রি'ক'ল্পনা।কিছু ক্ষণ পর একটা প্যাকেট হাতে নিয়ে ওর কাছে আসে।

তুর কৌতূহল নিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকায়।

"কি এভাবে তাকিয়েছিস কেন? চল বিচে যাই।"

দুজন মিলে হাটতে হাটতে বিচে যায়।

লোকজনের কোলাহল নেই।মৃদু ঠান্ডা বাতাস বইছে। নিস্তব্ধতায় বাতাসের শব্দ কানে কানে এক নিরবতার ছন্দ তুলছে।থেকে থেকে সমুদ্র ঢেউয়ের গ''র্জ"তুলছে।

ধ্রুব পূর্বের মতো মনের ইচ্ছেকে মনে চা'পিয়ে রাখেনি।এক হাত বাড়িয়ে প্রেয়সীর কোমল হাতটি আ'ক'ড়ে ধ'রে।তুর নিজে ও চাইছিলো ধ্রুবর হাতটা ধ'রতে।
 
এতো কাছে থেকে ওর হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাটতে খুব ভালো লাগছে।মনে মনে আওড়াচ্ছ,"আর কতো নতুন অনুভূতির জ'ন্ম দিবেন আপনি।"

একটা জায়গায় বসে দুজন।একের পর এক স্রোত এসে দুজনের পা ভিজিয়ে দিচ্ছে।দুজনে চুপ করে আছে।দৃষ্টি তাদের ওই সমুদ্রের জলে।কয়টা ঢেউ আছড়ে পড়ছে সেটা গো'না'য় ব্যস্ত।

তুর অনেক চেষ্টা করছে বলার,"আমি আপনাকে ভালোবাসি"কিন্তু ল'জ্জা'রা ওর গলা চে'পে ধ'রছে।

নিরবতা ভে'ঙে ধ্রুব ই বলে,"আমাকে ক্ষ'মা করতে পারিসনি,তাই না।"

তুর ধ্রুবর মুখের দিকে তাকায়,"আমি আপনাকে সেই কবেই ক্ষ'মা করে দিয়েছি।আপনার সাথে তো আমি অভি'মান করেছিলাম।যাওয়ার আগে একবার কেন বলে গেলেন না।আমি চলে যাচ্ছি।কেন এক বার বলে গেলেন না আমার ভু'ল হয়েছে,আমি স'রি তুর।চলে গিয়ে ছিলেন।ফেলে গিয়েছিলেন ঘৃ'ণা ভ'রা দৃষ্টি।ধা'রণা আছে কিভাবে কা'টিয়েছি আপনাকে ছাড়া।কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে যেতাম,আশায় থাকতাম আপনি আসবেন।মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেন কাঁদিস না পাগলি এই যে আমি এসে পরেছি।তবুও আপনি আসেননি।তখন ডিসিশন নেই যে আমাকে আপনি যত ক'ষ্ট দিয়েছেন তার শা'স্তি আপনাকে পেতে হবে।সে জন্য আপনি আসার পর বারবার আপনার থেকে দূরে সরে যেতাম। চোখে ভাসতো আপনার ঘৃ'ণা ভরা দু চোখ।কিন্তু ফিরার পর,বারবার আপনার কাছে আসা,অ'প'রা'ধ বোধ করা,বি'শে'ষ করে আপনার বাসায় যখন ছিলাম,আপনার কেয়ারিং সব কিছু দেখে আমার মনের সব
অভি'মা'ন' মুছে গেছে।না চাইতে ই মনের অজান্তে আপনাকে ক্ষ'মা করে দিয়েছি।"

আবারও সব কিছু চুপ।কিছু ক্ষণ পর ধ্রুব বলে উঠে ,"ভালোবাসিস না আমায়?যদি ক্ষ'মা করে থাকিস তাহলে কেন বলছিস না?"

"আসলে আমি... মানে.....আমার .... "

হাতের ব্যাগটা বাড়িয়ে দেয়,"যদি সত্যি ভালোবাসিস।এটা পরিস।আমি তোর অ'নু'মতির  অপে'ক্ষা'য় আছি।"

তুর ব্যাগটা খুলে দেখে এটা সেই সাদা শাড়ি টা।
ধ্রুব উঠে দাঁড়ায়।তুরের হাতে ধ'রে ওকে উঠতে সাহা'য্য করে।

আবারও দুজন হাটতে হাটতে রি'সোর্টে পৌঁছে।রাতের খাবার খায়।তারপর ওদের নি'র্ধা'রিত রুমে যায়।

এই রি'সোর্ট টা হচ্ছে একটা হানি'মুন রি'সোর্ট। তাই কোনো কাপল এলে হোটেল কতৃ'প'ক্ষের পক্ষ থেকে ওয়েলকাম স্পে'শাল ট্রি'ট থাকে।পুরো রুমে ফুল ক্যান্ডেল দিয়ে স্পে'শাল ভাবে সাজানো হয়।

তুর তো রুমে ঢুকে এসব দেখে,যারপরনাই অবাক।অবাকের শে'ষ সীমানায় পৌঁছে গেছে।

"আসলে রি'সোর্টের নামই মধু'চন্দ্রিমা।এটা হানি'মুন রি'সোর্ট তো তাই,তাদের পক্ষ থেকে সব কাপলদের জন্য স্পে'শাল ট্রি'ট দিয়ে ওয়েলকাম করে।"

তুরের সম'স্ত শ'রী'র অ'ব'স হয়ে গেছে।কিছু না বলে চুপ করে সোফায় বসে।ধ্রুব তুরকে আসছি বলে বাইরে বের হয়ে যায়।

পুরো রুমটা ভালো করে ঘুরে ঘুরে দেখে।সারা ঘরময় ফুলের সৌরভে মম করছে।হঠাত প্যাকেটটায় চোখ পড়ে।

মনে পড়ে যায় চিঠি তে লেখা ধ্রুবর কথাটা," যেদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবি।সেদিন এ শাড়িটা পড়ে সামনে আসবি।"

তাহলে কি সে এটাই তখন বুঝাতে চেয়েছে।সারা শ'রী'রে এক অ'দ্ভু'ত' অ'নূ'ভু'তির বি'চ'র'ণ হচ্ছে।

তুর ভাবে,"আর কতো অপে'ক্ষা করবে সে।অনেক তো হয়েছে,আজকে যে করেই হোক বলে দিবো।"

বহু চিন্তা ভাবনার পর শাড়িটা পড়বে ঠিক করে।

গোসল সেরে ফুরফুরা মন নিয়ে শাড়ি পড়তে শুরু করে।ভিডিও দেখে এক ঘন্টা অনেক পরিশ্রমের পর কোনো মতো পড়তে পারে।ভেজা চুল গুলো পিঠে ছড়িয়ে রাখে।কোনো প্রসাধনী না থাকায়,আর সাজ গোজের উপায় নেই।

আয়নায় তাকাতেই চোখ কপালে।শাড়ি টা এতো ফনফিনে যে শ'রী'রের সব অ'ব'য়ব স্প'ষ্ট।নিজের দিকে নিজে তাকাতেই ল'জ্জা পাচ্ছে।ধ্রুবর সামনে যাবে কি করে।উ'ফ'ফ....!! ল'জ্জা'য় ম'রি ম'রি অ'ব'স্থা।

সাদা চাদরে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে হা'র্ট সেপ করা সাজানো বিছানায় তাকাতেই ,চোখ ব'ন্ধ করে নেয়।
আজকে কি কোথাও তাকাতে ও পারবে না।

বিছানায় বসতে কেমন যেন লাগছে।বিছানায় না বসে সোফায় হেলান দিয়ে বসে।শ'রী'র ক্লা'ন্ত থাকায় কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে টের পায়নি।

ঘুম ভে'ঙে দেখে,ধ্রুব নিচে বসে এক ধ্যানে গালে হাত দিয়ে তুরকে দেখছে।

"কখন ঘুমিয়ে পড়েছি টের পায়নি।কোথায় গিয়েছিলেন? কখন এসেছেন?বাজে কয়টা?সকাল হয়ে গেছে?"

ধ্রুব কোনো উত্তর না দিয়ে, ঘো'র লা'গা দৃ'ষ্টিতে শুধু তাকিয়ে আছে।

ফোনে টাইম দেখে রাত দুটো বেজে গেছে।মনে মনে নিজেকে গা'ল ম'ন্দ করতে থাকে,"ইস আমি না ওনাকে ওই কথাটা বলবো।কি মরার ঘুম ঘুমালাম।"

"কি হলো ,আপনি এমন নিচে বসে এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? "
---------- 
"মন খা'রা'প? "
-----------
"কথা বলবেন না?"
-------------

তুর এলোমেলো শাড়ি নিয়ে আলুথালু হয়ে,ধ্রুবর সামনে মাথা নিচু করে ফ্লোরে বসে।

সকল সা'হ'স এক সাথে জ'রো করে চোখ ব'ন্ধ করে বলে,"আমি আপনাকে ভালবাসি।অনেক.. অনেক.. অনেক...ভালোবাসি।সেই ছোট্ট বেলা থেকে শুধু আপনাকেই ভালোবাসি।আর কিছু বলা আমার প'ক্ষে সম্ভব নয়।"

ধ্রুব প্রচ'ন্ড খুশি হয়।চোখে মুখে তার 'দু'ষ্টু হাসি।তুরকে শ'ক্ত করে জ'রি'য়ে ধ'রে।তুরও কোন বা'ধা দেয় না।কেন যেন আজকে কোনো বা'ধা দিতে পারছে না।মন বলছে,"যা হওয়ার হতে দে।"

ধ্রুব তুরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে,"কি বলেছিলাম মনে আছে?"

তুরও ধ্রুবর মত ফিসফিসিয়ে বলে"কি? "

"বলেছিলাম... আমার খুব ইচ্ছে ছিলো।আমার বউকে যেদিন আপন করে নিবো সেদিন বর'ফের মতো শুভ্র শাড়ি পড়বে।লম্বা খোলা চুলে এক গোছা কাঠ-গোলাপের গাজরা গুঁজে, 
কাঠ-গোলাপের গহনা পড়ে সাজাবে।আমি সেই শুভ্র বরফ কন্যার প'বি'ত্র মুখ খানি মুগ্ধ হয়ে দেখবো, তার সৌরভে মা'তো'য়া'রা হবো।যেদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবি।সেদিন এ শাড়িটা পড়ে সামনে আসবি।"

তুরের সারা শ'রী'র ঝিমঝিম করছে।এটাই তো ছিলো সে চিঠিতে।আগের কথা গুলো বেমালুম ভু'লে গেল কিভাবে।

"তাহলে আমি কি ধ'রে নিবো যে আমি অনুমতি পেয়ে গেছি?"

তুর ল'জ্জা'য় জ'ড়িয়ে রাখা ধ্রুবর পান্জাবি খা'ম'চে ধ'রে।ধ্রুব হোহো করে হেসে দেয়।

তুরকে ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় একটা পলিথিন থেকে কিছু বের করে তুরের সামনে বসে।নিজ হাতে একে একে কাঠগোলাপের সব গহনা পড়িয়ে দেয়।তুর কিছুতেই চোখ মেলতে পারছে না।খি'চে চোখ ব'ন্ধ করে রেখেছে।

তুরের এই ল'জ্জা মাখা মুখখানি,ধ্রুবর তৃ'ষ্ণা'য় আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।গহনা পড়ানো হলে,,ধ্রুব তুরকে কো'লে তুলে নেয়। তুরকে কোল নিয়ে বারান্দায় একটা ডিভানে বসে।কপালে গ'ভী'র চু'ম্ব'ন করে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎ'কা'র করে বলে,"এই আকাশ... তোমার বুকে রাত ছাড়া,তোমার ধ্রুবতারাকে দেখা যায়? যায় না.....তো।
চেয়ে দেখো..... আমার ধ্রবতারাকে দিন রাত সব সময়,আমার বুকে দেখা যায়।"

ধ্রুবর হৃদয় স্প'র্শ করা কথা শুনে তুর আ'বে'গে কেঁদে দেয়।চোখ বে'য়ে দু ফোঁটা আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। 

এমন একজন মানুষের জী'বন স'ঙ্গীনি হতে পেরে নিজেকে সৌভাগ্যবতি মনে হচ্ছে।সব ল'জ্জা দূরে স'রিয়ে ধ্রুবর গলা জ'ড়ি'য়ে ধ'রে।তাকিয়ে থাকে ধ্রুবর নে'শা'ক্ত চোখে।পূ'র্নিমা'র আলোতে দুজনের দুরত্ব গু'চতে শুরু করে।প্রেয়সীর স'ম্মতি পেয়ে বারান্দা ছেড়ে ক্যান্ডেল লাইট আর ফুলে ফুলে স'জ্জিত কক্ষে প্র'বেশ করে।গোলাপের পাপড়িতে ভরা বিছানায় প্র'স্থা'ন করে।

তুরের কানে কানে বলে "এই শাড়িতে কিন্তু তোমাকে প্রচ'ন্ড আবে'দন'ময়ী লাগছে।"

তুরের কর্ণ'কু'হরে ঝং'কা'রের মতো কথাটা বাজতে থাকে।দুহাতে মুখ ঢে'কে নেয়।

"আল্লাহ এতো ল'জ্জা আসে কোথা থেকে এই মেয়ের। আজকে দয়া করে সে'ন্স'লেস হয়ে পড়িস না।"

ধ্রুব হাত বাড়িয়েছে প্রেয়সীর পানে,ঢে'কে রাখা হাত দুটো স'রাতে যাবে,অমনি তুরের ফোন বেজে ওঠে।


চলবে....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.