আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা (পর্ব-০৪)

গল্প কন্যার ধারাবাহিক গল্পঃ 'এক গুচ্ছ মাধবীলতা' পর্ব-০৩,প্রেম কাহিনী,এক গুচ্ছ মাধবীলতা,গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম),ধারাবাহিক,
Estimated read time: 5 min
এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা (পর্ব-০৪)


৪.
সুলতানা নিবাসে আজকে খুশির আমেজ।সবচেয়ে বেশি খুশি আফজাল শেখ নিজে।আরহাম শেখ স্নিগ্ধ এসেছে বাড়িতে।বাড়ির কাজের লোকজন ও খুশি। শুধু খুশি নয় তিন ব্যক্তি।আফজাল শেখের স্ত্রী পারভীন বেগম,পারভীন বেগমের মা মনোয়ারা আর উনার দ্বিতীয় পুত্র আব্রাম শেখ নিশান।

কিন্তু ভাই আসাতে তুষি খুব খুশি।যেটা এই তিন ব্যক্তি মোটেই পছন্দ করছে না।


রহমত আলির বাড়িতে বড় একটা ফার্ম আছে।যার এক ভাগে কিছু মুরগি,এক ভাগে কিছু হাঁস,এক ভাগে কয়েকটা গরু আছে। বাড়ির পিছনে একটা পুকুর ও আছে।যেটাতে মাছ ছাড়া হয়েছে। মাছ,হাঁস,মুরগি,গাভীর দুধের যোগান দেয় তাদের এই ফার্ম।ছেলে গুলোর সাহায্যে সেগুলো গ্রামে ও বাজারে বিক্রি করা হয়। আজকাল গ্রামের লোকজনের কাছে ও বেশ চাহিদা বেড়েছে।


ফার্মে কাজ করার জন্য কয়েক জন ছেলে আছে।তার মধ্যে বাবলু একজন।তিন কুলে মা-বাবা কেউ নেই ওর।এর ওর বাড়ি খেটে খেতো।রহমত আলি তার দোকানের কাজের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন।থাকা খাওয়ার জন্য বাড়িতে নিয়ে আসেন।একদিন বাবলু নিজে থেকেই ফার্মের কাজে যোগ দেয়।ওর আগ্রহ দেখে আর কেউ বাধা দেয় না।মাজিদা ও রহমত আলি বাবলুকে নিজেদের ছেলের মতোই দেখে।মাজিদা নিজে গিয়ে ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছেন।মধু ও বাবলুকে খুব আদর করে ঠিক ওর ছোটো ভাইয়ের মতো।


মধু ও বাবা-মা আর সকলের সাথে কাজে সাহায্য করতে চায়।রহমত আলি করতে দেয় না।


বলে,"মাইয়া আমার পরের বাড়ি চইলা যাইবো সেখানে ও খাইটা খাবে ,বাপের বাড়ি ও খাইটা খাবে,এ কেমন কথা! "


বাবলু ও পাকাপাকা কথা বলে,"মধুপা তোমার কাম করা লাগবো কে?তোমার বেডা মানুষ ভাই থাকতে।তুমি যাইয়া তোমার সাপের মতো লম্বা চুল গুলাইন সামলাও।"সবাই ওর কথা শুনে হাসে।


কেউ কিছু করতে দেয় না মধুকে।কিন্তু মাজিদা সব আহলাদিপনা সরিয়ে রেখে,মেয়ে কে নিজের হাতে সব শিখাচ্ছেন। মেয়ে হয়ে জন্মেছে,বলা তো যায় না কখন কোন পরিস্থিতিতে পরতে হয়। মধু ও আনন্দের সাথে মায়ের শেখানো সব কিছু রপ্ত করে।


প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে মধু ওর মায়ের সাথে সব কাজে হাত লাগায়।তার পর ওর ছোট্ট বাগানটার পরিচর্যা করে।পরে শুরু হয় ওর দৈনন্দিন কাজ।কিছুদিন আগে ওর বাবা ওকে একটা ফুলের ছোট্ট চারাগাছ এনে দিয়েছিলো।ওটা নাকি মাধবীলতা ফুলের গাছ।ওর নামে একটা ফুল গাছ আছে জেনে মাধবীলতা সেদিন খুব খুশি হয়েছিলো। বাবা মেয়ে মিলে সেদিন ফটকের কাছে গাছটা রোপণ করেছিলো। গাছটা এখন বাড়ির চারিদিকে টিনের বেড়ার উপর ডালপালা ছড়িয়েছে।গাছটার কিছু কিছু জায়গায় থোকা থোকা কুড়ি এসেছে।


স্কুলে পরীক্ষার্থীদের কোচিং ক্লাস হচ্ছে।তাই প্রায় প্রতিদিন ই স্কুলে যেতে হয়।আজকে ও কোচিং ক্লাস আছে সকাল নয়টায় যেতে হবে। পরীক্ষা অতি সন্নিকটে,যেন ঘরের দুয়ারে কড়া নাড়ছে।


মধু চুল গুলো ছেড়ে রাখতে পারে না।এলোমেলো হয়ে প্যাঁচ লেগে যায়।তাই বেশির ভাগই বেনি করে রাখতে হয়।নয়তো কাঠের বা লোহার কাটা দিয়ে আটকে রাখতে হয়। মাধবীলতা নিজের চুল নিজে আচড়াতে পারে না।কষ্ট হয় আর চুল ও ছিড়ে ফেলে। তাই প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার আগে মাজিদা মধুর চুল আচড়ে বেনি করে দেয়।


স্নিগ্ধ বাংলাদেশের মাটিতে পারা দেয়ার পর থেকেই মনে আলাদা এক প্রশান্তি অনুভব করছে।একেই বুঝি বলে,মাতৃভূমির প্রতি টান।


আসার পর থেকে মনে তীব্র বাসনা জাগে প্রকৃতি বিলাস করতে।তাই যখন-তখন এদিক সেদিক বেড়িয়ে পড়ে গাড়ি নিয়ে।ছুটে যায় মন যেদিকে চায়। একা একা ই হারিয়ে যায় অজানার উদ্দেশ্যে।


স্নিগ্ধ দেশে ফেরার পরপরই রীতি মতো হৈচৈ পরে গেছে।এ কদিন কতো প্রেস কনফারেন্স করতে হয়েছে।এতো সব ঝামেলার পর আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজে ও হাসপাতালে জয়েন করেছে।সার্জিক্যাল ডক্টর এবং প্রফেসর হিসেবে।সব কিছু ঠিক আছে,তবে মনের মধ্যে তৃপ্তি অনুভব করছে না।


আজকে আবার ইচ্ছে করছে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে। কিন্তু কোথায় যাওয়া যায় ভেবে পাচ্ছে না।

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।বড় বড় ইমারত অট্টালিকার দম বন্ধকর পরিস্থিতি ছেড়ে প্রকৃতির মুক্ত বাতাস নিতে হবে ।শহর যানযট পেরোতেই গাড়ির কাঁচ গুলো নামিয়ে দেয়। হুর হুর করে বাতাস আছড়ে পড়ে স্নিগ্ধর চোখে মুখে।এ কদিনের ঝামেলার অবকাশ যেন এবার কর্পূরের মতো উবে গেছে।


গাড়ি চলছে তার নিজেস্ব্য গতিতে অজানা গন্তব্যে।

হঠাৎ এক জায়গায় চোখ আটকে যায়।রাস্তার পাশেই সারি সারি নানান প্রজাতির গাছের সমাহার।সেই সকল গাছের ভীড়ে নজর কাড়ছে একটি লতানো গাছ।

মাধবীলতা। হ্যাঁ...এই তো সেই মাধবীলতা ফুলের গাছ।

রঙিন মাধবীলতা ফুল গুলো বাতাসে দোল খাচ্ছে। দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি তীব্র মিষ্টি ঘ্রাণে ভরিয়ে রেখেছে চারপাশ। ডালের আগায় বড় বড় ঝুলন্ত থোকা। প্রতিটি থোকায় ১০ থেকে ১৫টি লাল সাদা ফুল। সবুজ পাতার মধ্যে লালা সাদা ফুল দূর থেকে দেখতেই অসাধারণ লাগছে।


স্নিগ্ধ গাড়ি থেকে নেমে নার্সারিতে প্রবেশ করে।গাছটি নিতে চাইলে বিক্রেতা বলে,"স্যার এই গাছটা তো বড়ো হইয়া গেছে,আপনেরে ছোটো একটা ভালো গাছ দেই ওইটা নিয়ে লাগাইলে ভালো হইবো।"

স্নিগ্ধ দোটানায় ভোগে,কারন বড়ো ফুল ধরা গাছটা ওর মনে ধরেছে।ফুল গুলো হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেয়।এই তো স্বপ্নে দেখা সেই ফুল টা।মনে মনে ভাবে,"স্বপ্নে দেখা ফুলের সন্ধান যেহেতু পেয়েছি,তাহলে কি সেই স্বপ্ন পরি মাধবীলতার দেখা ও পাবো!সত্যি ই কি তার অবস্থান ও এই ফুলের মতোই বাস্তবিক!নাকি শুধুই আমার কল্পনার রাজ্যের কল্পরাণী!"


বিক্রেতার কথায় ধ্যান ভঙ্গ হয়,"স্যার এই গাছটা তো মাডিত লাগাইন্না তুইলা নিলে মইরা যাইবো,জেতা হইবো না।আপনেরে ভালা জাতের একটা গাছ দেই।দুই এক মাসের মধ্যেই গাছ ভইরা ফুল আসবো।না আসলে আপ্নে আমারে ধইরেন।আমি অনেক বছর ধইরা এই হানেঐ গাছগাছালি বেচা কেনা করি।আরো অনেক জাতের গাছ আছে।অন্য সব গাছ লাগলে ও নিতে পারেন।"


স্নিগ্ধ কি মনে করে,লোকটার কথা মতো ছোটো একটা মাধবীলতার চারাগাছ কিনে বাড়ির পথ ধরলো।

বাড়ি ফিরে ওর কক্ষের খোলা বারান্দা বরাবর নিচের দিকে বাগানে যত্ন সহকারে রোপণ করেছে।

সব কিছু করে ওঠে দাঁড়াতেই,তুষি এবং বাড়ির কেয়ার টেকার ও ড্রাইভার রহিম চাচার মেয়ে প্রভা মুখ চেপে হাসতে শুরু করে।


স্নিগ্ধ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকায়,"হাসছিস কেন!হাসার মতো কি করলাম?"

তুষি হাসতে হাসতে বলছে,"ভাবতেই অবাক লাগছে,ভাইয়া।তোমার মতো লন্ডন ফেরত সুনামধারী একজন সার্জারি ডক্টর কিনা,বাচ্চাদের মতো জামায় কাদামাটি লাগিয়ে গাছ লাগাচ্ছে!"

"এতে হাসার কি হলো!গাছটা পছন্দ হয়েছে তাই কিনে এনে লাগিয়ে দিলাম।অসাবধানতার ফলে গায়ে মাটি লেগে গেছে।আর ডক্টরদের কি গাছ লাগানো নিষেধ নাকি?মাটির মানুষ মাটি না ছুলে হয় বল!"

রহিম চাচার মেয়ে প্রভা বলছে,"ভাইয়া আপনি যে এসব করছেন সাংবাদিকরা জানলে তো বাড়ির সামনে হামলে পড়বে।আরো একটা জবরদাস্ত নিউজ হবে।"

হাসতে হাসতে তুষি অভিনয় করে দেখাচ্ছে,"প্রিয় দর্শক,আমরা এখন আছি,দেশের নামকরা তরুণ সার্জারী ডক্টর স্নিগ্ধ শেখের বাড়ির সামনে।দর্শক শোনা যাচ্ছে,লন্ডন থেকে ডিগ্রি ধারণ করা এই নামি দামি ডক্টর এখন জামা কাপড়ে মাটি লাগিয়ে বাগানে মালির কাজ করছে......তিনি আমাদের তরুণ প্রজন্মের আইডোল।চলুন স্বচোক্ষে পর্যবেক্ষণ করে আসি আপনার আমার আইডোল ডক্টর স্নিগ্ধকে।"

তুষি ,প্রভা দুজনেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।স্নিগ্ধ ও মুচকি হেসে উঠে বোনের সাথে।দুজনের মাথায় গাট্টা মেরে সেই স্থান ত্যাগ করে।



এক গুচ্ছ মাধবীলতা-  পর্ব-০৫ পড়ুন/link/button

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.