আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব- ১১ )

হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব- ১১ )
হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে- গল্পকন্যার ধারাবাহিক প্রেমের গল্প ( পর্ব- ১১ )


হৃদয়ের নিকুঞ্জ নিড়ে
পর্বঃ ১১
গল্পকন্যা



(গল্পের স্বার্থে কিছু কিছু কাল্পনিক জায়গার কথা উল্লেখ হয়েছে,বাস্তবের সাথে এর কোনো মিল নেই।)


লজ্জায় পাপড়ির চোখ কোটর থেকে বের হয়ে যাওয়ার অবস্থা।পাপড়ি ছোটো করে শুধু বলে,"হুম"।

রাত ওয়াটার বাইক সাইড করতেই পাপড়ি নেমে যায়।আর ওড়না দিয়ে পিঠ ঢাকার বৃথা চেষ্টা করে।রাত লোকটার কাছে টাকা পরিশোধ করে ওর ফোন ওয়ালেট নিয়ে আসে।

পাপড়ির দিকে ওর টি শার্টটা এগিয়ে দেয়।পাপড়ি রাতের দিকে তাকিয়ে দেখে রাত খালি গায়ে।নাভির নিচ থেকে হাঁটুর উপর পর্যন্ত প্যান্ট।হালকা লোমশ বুকের লোম গুলো ভিজে লেপ্টে আছে।মাথার চুল গুলো ভিজে কপালে ভ্রু পর্যন্ত লেপ্টে আছে।হাতের সাহায্যে সে গুলোকে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।

"ছেলেদের ও বুঝি এতো অপরূপ লাগে!"নিজের ভাবনার প্রতিফলনে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়।

পাপড়ি চোখ নামিয়ে টিশার্টটা পড়ে নেয়।রাত যেহেতু লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী সেক্ষেত্রে টিশার্ট টি যথেষ্ট ঢিলে আর লম্বা পাপড়ির হাটুর একটু উপর পর্যন্ত ঢেকে গেছে।

পাপড়ি হাঁটতে হাঁটতে আবারও রাতকে থ্যাংক্স জানায়।

দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর একটু রেস্ট নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

বের হওয়াটা মোটেই সহজ ছিলো না।স্যাররা একা দুজনকে বের হতে দিবে না।

তাই জাহিদ,ইফতি,তুলি,সুমন,কায়সার,আফসার আরো কয়েকজন মেয়েকে সাথে নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়েছে।

বিভিন্ন অজুহাতে স্যারদের অনুমতি নিয়ে বের হতে হয়েছে।সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বেড়ানোর সময় পায়েছে।

সবাই এক সাথে হোটেল থেকে ঘুরতে বের হয়েছে ঠিকি, কিন্তু বের হয়ে-ই রাত আর পাপড়ি সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে মেরিন ড্রাইভের উদ্দেশ্যে।

দু'জনে পাশাপাশি হাঁটছে।

পাপড়ি বলে,"ওরা কি না কি ভাবছে। আমাদের এভাবে আসাটা কি ঠিক হয়েছে?"

"ঠিক হবে না কেন,ঘুরতে-ই তো যাচ্ছি, হানিমুনে তো না!"

বলে-ই হেঁসে উঠে।পাপড়ি রেগে তাকায়।

তারপর বলে,"আচ্ছা একটা সত্যি কথা বলোতো!"

"হুম বলেন কি কথা।"

"তখন কি আঙুলে আমার নাম-ই উঠেছিলো?"

রাত রাস্তার দিকে তাকিয়ে হাঁটছিলো।পাপড়ির কথা শুনে দুষ্টু হাসি হেঁসে পাপড়ির দিকে তাকায়।

রাতের এই দুষ্টুমি মেশানো বাঁকা হাসি আর এই দুষ্টু চাহুনি,পাপড়ির শরীরকে অবশ করে দেয়।কেন এমন হয় তার ব্যাখ্যা পাপড়ির জানা নেই।

পাপড়ি ভ্রু নাড়িয়ে "কি" জিজ্ঞেস করে।

রাত মুচকি হাসি হেঁসে বলে,"তোমার এই ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্ন করাটা না অদ্ভুত সুন্দর।উফফ...! "

পাপড়ি বড়োবড়ো করে তাকায়,তা দেখে রাত বলে,"ওপস সরি, আপনার।"

"যেটা জিজ্ঞেস করছি সেটার এ্যানসার দাও।"

"সত্যি বলবো!"

"অবিয়্যাসলি!"

"আসলে সব আঙুলে আপনার নাম-ই ধরেছিলাম।অন্য কোনো মেয়ের ভেজা শরীরে লেপ্টে থাকা,আমার পক্ষে পসিবল না।"

রাতের কথা বলতে দেরি,কিন্তু পাপড়ির রাতকে তাড়া করতে দেরি হয়নি।পাপড়ি তেড়ে যায় রাতকে মারা জন্য।

রাত শব্দ করে হাসতে হাসতে দৌড় লাগায়।পাপড়িও পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে।দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ বালিতে হোঁচট খেয়ে রাত পড়ে যায়।আকস্মিক রাতের পায়ে লেগে পাপড়িও রাতের উপর পড়ে যায়।

পাপড়ি দ্রুত উঠে যেতে নিতে-ই রাত বলে,"থাকো না একটু এভাবে,নিজে ইচ্ছেতে তো কখনো আসবে না।"

পাপড়ি ভিষণ লজ্জা পায়,রাতের দুষ্টুমিতে।আরো দ্রুত উঠে বসে বালিতে।তারপর রাতের বুকে-পেটে-হাতে দুমাদাম মারতে শুরু করে।

রাত হো হো করে হাসতে থাকে।হাসতে হাসতে এক পর্যায়ে চোখে পানি চলে আসে।

হাসি থামিয়ে উঠে বসে পাপড়ির মুখোমুখি।নেশাক্ত কন্ঠে বলে,"ভালোবাসি প্রিয়।"

পাপড়ি উঠে দাঁড়ায় বলে,"দেরি হচ্ছে কিন্তু,দ্রুত চল।"

রাত হাত বাড়িয়ে বলে,"তুলো...! না হয় উঠবো কিভাবে?"

পাপড়ি দু'হাতে টেনে তুলার চেষ্টা করছে, কিন্তু রাতের ভারি শরীরটা টেনে তুলতে পারছে না।তাই বলে,"রেশনের চাল খেয়ে খেয়ে শরীরটাকে এমন ভারি বানিয়েছিস,বাবা রে...!"

রাত হেসে বলে,"তোমার মতো না খেয়ে শুটকি হলে ভালো হবে!এমনি কয়েক মাস ধরে ডায়েট করে, জিম করে বডি যা শুকিয়েছে তা দেখে,আমার মা খেতে বসলেই আমাকে বকে।"রাত নিজেই উঠে হাঁটা ধরে,সাথে পাপড়ি ও।

"তো ডায়েট করছো কেন?এখন যেমন আছো একদম পারফেক্ট আছো।"

"করি কি আর স্বাদে!কেউ একজন বলেছিলো,আমি নাকি ফাইনাল ইয়ারের ড্রপ যাওয়া আবুল হোসেনদের মতো দেখতে।"

পাপড়ি হেসে ফেলে,"সেটা তো মজা করে বলেছি।তবে এটা সত্যি যে তোমাকে দেখে ভেবেছিলাম,হয়তো সিনিয়র নয়তো সমবয়সী।কথা না বললে জানতেই পারতাম না তুমি জুনিয়র ।"

"স্বীকার করছেন তাহলে।"

"হ্যাঁ যেটা সত্যি সেটা বলেছি।"

"আর আপনার সোহানকে দেখতে একদম পুঁটিমাছের মতো লাগে।" বলে-ই হেঁসে উঠে।

পাপড়ি রেগে তাকায় ।"সরি সরি মজা করেছি।আসলে আপনার সাথে আমার মতো কাউকেই মানায়,সোহানকে না। "

"অনেক ফটর ফটর করছিস,এখন চল তাড়াতাড়ি।আকাশের অবস্থা ভালো না বৃষ্টি নামতে পারে।"

কলাতলি থেকে রাত একটা বাইক ভাড়া নেয়।যেহেতু ওরা তিনটার সময় বের হয়েছে সন্ধ্যা সাতটার আগে ওদের ফিরতে হবে।তাই চার ঘন্টার জন্য একটা বাইক ভাড়া নেয়।

বাইকের টেংকে পর্যাপ্ত তেল ভরে উঠে পড়ে বাইকে।উদ্দেশ্য হিমছড়ির ঝর্ণা দেখা।

ওরা যেখানে আছে সেখান থেকে হিমছড়ি প্রায় বারো কিলোমিটার দূরে।

রাত মিডিয়াম স্পিডে বাইক চালানো শুরু করে।পাছে যদি পাপড়ি ভয় পায়।কিন্তু পাপড়ি নিজে থেকেই বলে,"রাত জোরে চালাও।"রাত খুশি মনে যথাসাধ্য স্পিডে ছাড়ে।

মেঘলা আকাশ রাস্তার দুপাশে ঝাউগাছ।বাতাসের তোড়ে ঝাউপাতা গুলো শনশন করে বইছে।আর তাদের স্নিগ্ধ মনমাতানো বাতাসে দোলা দিচ্ছে দুটি প্রাণে।

বাতাসে পাপড়ির পিঠে ছড়ানো খোলা চুল গুলো উড়ছে।মাঝেমধ্যেই রাতের চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে।পাপড়ির চুলের শেম্পুর ঘ্রাণ রাতকে মাতাল করে তুলেছে।রাতের কাঁধে দু'হাত রেখে পেছনের সিটে বসে আছে।দু'জনের মধ্যকার দুরত্ব মাত্র দুই তিন ইঞ্চি।মাঝে মাঝে পাপড়ির শরীর স্পর্শ করছে রাতকে।যা দু'জনের মনেই জাগরণ ঘটাচ্ছে এক নতুন অনুভূতির।শিহরিত হচ্ছে দু'জনের তনু-মন।আবার কিছুটা লজ্জিত বোধ হচ্ছে।এসবের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দু'জন।

প্রিয় মানুষকে সাথে নিয়ে প্রিয় জায়গায় ঘুরছে,রাতের কাছে এবারের মেরিন ড্রাইভ হচ্ছে সেরা অনুভূতি,প্রত্যেকটা ছেলেরি এমন একটা স্বপ্ন থাকে।

দুই কিলোমিটার অতিক্রমের পর পর-ই ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি নামতে শুরু করে।আরো রয়েছে দশ কিলোমিটার।রাত বাইকের স্পিড কমায়।দুজনেই ভিজে যাচ্ছে।

পাপড়িকে বলে,"কি করবেন ফিরে যাবেন নাকি?এ বৃষ্টি থামবে বলে মনে হয় না।"

পাপড়ি খুশি মনে বলে,"নাহ ফিরবো না,এগোতে থাকো।"

রাতও তাই করে।বাইক জোরে ছাড়ে।বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে এগিয়ে যাচ্ছে দু'জন মানব-মানবী।

দু'জনের তৃষ্ণার্থ মন আজ ভিজে একাকার।মনে কেবল উচ্ছ্বাস আর উচ্ছ্বাস।ভুলে গেছে পেছনের সব কিছু।

ওদের দেখে মনে হচ্ছে এই ভ্রমণটাই পৃথিবীতে ওদের একমাত্র কাজ।

দেখতে দেখতে ওরা ওদের কাঙ্ক্ষিত জায়গায় চলে এসেছে।হিমছড়ির নয়নাভিড়াম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখে দুজনে-ই মুগ্ধ।ওদের ভাগ্য অতি সুপ্রসন্ন ছিল। তাই তো ঝর্ণার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে ঝুম বৃষ্টি হয়ে গেছে।

এখন অবশ্য বৃষ্টি নেই থেমে গেছে।বৃষ্টিস্নাত আকাশে রামধনু উঠেছে।দু'জনেই ঝপঝপে ভিজে শরীর নিয়ে-ই হিমছড়ির সব সৌন্দর্য দর্শন করছে।

তার পর পাপড়ি বলে,"রাত চলো ফিরতে হবে,ক'টা বাজে দেখেছো?এখন না ফিরলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দেরি হয়ে যাবে, পরে স্যারের বকা খেতে হবে।"

রাত দুষ্টু হাসি হেসে বলে,

" আজ ঘড়ির দিকে তাকাস না,
উড়িয়ে দে সব চিন্তা গুলো
তোর বদনে যে তা মানায় না।
দেখ, ঐ রামধনুতে রাঙা আজ বৃষ্টিস্নাত আকাশটা,
আজ অন্তত ফেরার জন্যে পা বাড়াস না।
জল থৈ থৈ সমুদ্রের বুকে ভাসবো দুজন
ডানে-বায়ে লোকসকলে তুই আমায় নিয়ে করবে গুঞ্জন।
তাতে কি?আজ দুজনে হারিয়ে যাবো
ঐ শাটলের গহ্বরে,
ব্যস্ততম রাস্তা পেরোবো তোর হাতটি ধরে।
তোর প্রিয় টং দোকানের ফুচকা খাবো,
স্টেশনের দুধ মালাইয়ের চা টাও মন্দ নয়।
হয়তো তুই আমার না,
নতুন করে কোনো গল্প রচিতও আর হবে না,
তবু এই রামধনু রাঙা মেঘলা দিনে,
হারিয়ে যেতে দে তোর খোলা চুলে
আজ অন্তত বলিস না,
সুহাসিনী কোনো রূপকথার গদ্য কিংবা পদ্য না।"


পাপড়ি সম্মোহনীর মতো মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে কেবল শুনেই যায়,প্রতিটি শব্দ,প্রতিটি বাক্য।প্রতিটি লাইনে আছে রাতের পবিত্র ও গাঢ় লাল রঙা ভালবাসা।প্রকাশিত হচ্ছে ওর হৃদয়ের তীব্র ব্যাকুলতা।

অজান্তেই বেরিয়ে আসে,"অসাধারণ রাত!এতো সুন্দর করে কেউ আবৃতি করতে পারে!"

পাপড়ির চোখে চেয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বলে,"শুধু আবৃত্তি টাকে দেখলে,এর মধ্যে বিদ্যমান আমার ভালোবাসাটা দেখলে না!"




চলবে....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.