আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা (পর্ব-০৩)

এক গুচ্ছ মাধবীলতা (পর্ব-০৩) - গল্পকন্যা (রোমান্টিক গল্প),প্রেম কাহিনী,এক গুচ্ছ মাধবীলতা,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 5 min

এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা (পর্ব-০৩)


০৩.
মধু ও কড়ি দুজনেই সমবয়সী। দুজনের মধ্যে কলিজার বন্ধুত্ব।বেড়িদিয়া গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ে একি শ্রেণীতে পড়ে দুজন।দুজনের সভাব প্রায় একি রকম।খু্বই ডানপিটে আর চঞ্চল।বাদরামিতে সেরা।

তাদের প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যে একটি হলো কিছু না কিছু চুরি করা। ওদের গ্রুপে ওরা আট জন।মধু ,কড়ি,বাবলু,টিপু,আমির,মিতু আর রোহান-সোহান দুই ভাই।কড়ি আর মধু ছাড়া সবাই ছোটো। তাই ওরা সব এই দলের নেতৃদের কথা শুনে চলে।  কার গাছে কি ধরেছে,কি ভালো সেই খবর দেয় বাবলু,টিপু,আমির,,রোহান-সোহান।আজকে স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখে এসেছে আছমত চাচাদের গাছে অনেক পেয়ারা ধরেছে।পেয়ারার সাইজ আর চেহারা দেখেই জিভে জল চলে এসেছে।সেদিন আছমত চাচা নাকি  একটা পেয়ারা পাড়ায় বাবলুকে খুব বকেছে। আজকে তার গাছ সাবাড় করবে।

স্কুল তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে।বই-খাতা বাড়ি রেখে সকলে বড়ো মাঠে জমায়েত হয়েছে।শুরু হয়েছে তাদের মিশন অব পেয়ারা চুরি।

আফজাল শেখ দেশের একজন সুনামধন্য ব্যবসায়ী।এক কথায় সবাই চেনে।ভিষণ পরোপকারী ধরনের মানুষ তিনি ।সবাই খুব শ্রদ্ধা ভক্তি করে।সারা বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী।সারা দেশে মোট দশটি ব্রাঞ্চ আছে উনার।দুই পুত্র ও এক তনয়ার পিতা। আফজাল শেখের প্রথম পক্ষের প্রথম পুত্র আরহাম শেখ স্নিগ্ধ।দ্বিতীয় পক্ষের দ্বিতীয় পুত্র আব্রাম শেখ নিশান এবং তনয়া তাহমিনা শেখ তুষি।উনার দ্বিতীয় স্ত্রী পারভীন বেগম।


ঢাকা উত্তরার আবাসিক এলাকার  সুলতানা নিবাসে পুরো পরিবারের বসবাস।

 বিশাল জমকালো অত্যাধুনিকতায় ঘেরা বাড়িটির নাম সুলতানা নিবাস।প্রথম স্ত্রীর নামে নামকরণ করেছিলেন।

উনার বড় পুত্র আরহাম শেখ স্নিগ্ধ বর্তমানে মেডিকেল ইউনিভার্সিটি ইন লন্ডন থেকে পিএইচডি করে দেশে ফিরার তোড়জোড় করছে।

আফজাল শেখ বহুদিন পর পুত্রের দর্শন পাবে।কাউকে না বুঝালে ও,ভেতরে ভেতরে আনন্দে আটখানা।


__________ 


ওই স্বপ্নটা দেখলেই কেমন একটা অদ্ভুত অনুভব হয়।মেয়েটার মুখটা পুরো পুরি দেখার আকাঙ্ক্ষা জাগে ।বারবার শুধু মনে পড়ে মাধবীলতা ফুলের কথা।স্বপ্নে দেখা ফুলটি ছবিতে ছাড়া বাস্তবে কখনো দেখেনি। নিজ হস্ত দ্বারা ছুঁয়ে দেখতে চায়।কেন চায় নিজে ও জানে না।ভাবনায় বিভোর হয়ে বিরবির করছে,

"এই যুগে এসে কি কেউ,এতো বড়ো চুল মাথায় রাখে?ঝামেলা মনে করে আর সময় বাঁচতে ও কেউ রাখবে না।এখনকার যুগে যে যতো শর্ট সে ততো বোল্ড।"

পরক্ষণে নিজেই নিজেকে গাল মন্দ করে।একজন ডক্টর হয়ে ও কিনা স্বপ্ন নিয়ে ভাবছে।

এই সপ্তাহের শেষে স্নিগ্ধর ফ্লাইট।বাংলাদেশে চলে যাবে।সেখানেই সেটেল্ড হওয়ার ইচ্ছে। বড়ো জোর কিছু দিন বেড়াতে আসবে লন্ডনে।

সেই সুবাদে,সব ফ্রেন্ডরা গেট টুগেদার এরেন্জ করেছে।সবার মন খারাপ।সবচেয়ে বেশি ইনার।

ইনা স্নিগ্ধর খুব ভালো বন্ধু।বাংলাদেশে জন্ম হলেও পুরো পরিবার লন্ডনে থাকে।ইনার বেড়ে উঠা এশহরের মাটিতেই।পড়াশোনা করতে গিয়ে স্নিগ্ধর সাথে পরিচয়।পরে খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়।ওদের ব্যাচ ম্যাট ও ফ্রেন্ড সার্কেলদের সবার পড়াশোনা শেষ।এখন যে যার মতো সেটেল্ড হওয়ার পালা।ইনা লন্ডনেরই কোনো একটা হসপিটালে জয়েন হবে।বাকি সব ফ্রেন্ডরা ও যে যার মতো যুক্তরাজ্যের এখানে ওখানে সেটেল্ড হবে।কেউই বাংলাদেশে ফিরবে না।

ব্যতিক্রম হচ্ছে স্নিগ্ধ।অথচ সবচেয়ে যোগ্যতা সম্পন্ন   ডক্টর হচ্ছে স্নিগ্ধ।লন্ডনের যে মেডিক্যাল থেকে ডিগ্রি নিয়ে বের হয়েছে।সেখানে টপ ফাইভের মধ্যে একজন।অথরিটি তাকে সেখানে ডক্টর এবং প্রফেসর হওয়ার সুযোগ দিয়েছে।কিন্তু,সে তার লক্ষ্যে অটল।

কেউ যে বোঝাবে,নিষেধ করবে,তার ও উপায় নেই।নিজের মর্জিতে চলে সবসময়।কারো কোনো কিছুর তোয়াক্কা করে না।ওর সাথে না মিশলে চট করে কেউ ওর সভাব কেমন ধরতেই পারবে না।প্রথম দেখায় মনে হবে কঠোর মনের এক মানব।


পার্টিতে সবাই সবার মতো এনজয় করছে।ইনা ড্রিংক হাতে চুপ করে তাকিয়ে দেখছে।

"কি দেখছিস অমন করে?১৫মিনিট হলো ভ্যাবলির মতো তাকিয়ে আছিস!বেশি খেয়ে ফেলেছিস নাকি!"

"আর তো দেখতে পাবো না।তুই তো সে সুযোগটা ও দিচ্ছিস না!একটু ভালো করে দেখতে দে প্লিজ।হার্ট ব্যাংকে ডিপজিট করছি।সময় মতো তুলে মন কে সান্ত্বনা দিবো।"

"এভাবে বলছিস যেন আমি লন্ডন ছেড়ে না পুরো দুনিয়া ছেড়ে চলে যাচ্ছি!আসবো তো!তুই ও যাস!সবাই মিলে উইকেন্ডেতে যাবি।আর এই সব নষ্টালজিক কথা-বার্তা বলিস না তো।মন থেকে বের করে দে।না হয়,পেশেন্টের ট্রিটমেন্ট করতে পারবি না।"


"স্নিগ্ধ...!"

"হুম...

কিছু বলবি?"

"তুই কি কিছু ই বুঝিস না?যাওয়ার আগে একবার  হ্যাঁ বলা যায় না?"

"নাহ...!যায় না।

দেখ ইনা... ,

আমি এমন কিছু ভাবিনি।আর তুইও সম্পর্কের নাম চেন্জ করতে যাস না।নামের সাথে সাথে কিন্তু সব কিছু চেন্জ হয়ে যায়।"


"কিন্তু,তুই আমার মনে......"

"স্টপ...!আর কিছু শুনতে চাই না!এনজয় দা পার্টি।"

মেডিক্যালের শত ছেলেদের ক্রাশ,ছলছল নয়নে এক কঠিন মনের মানুষের দিকে চেয়ে আছে।

রহমত আলি আজমল শেখের বাড়িতে আজমল শেখের সামনে তার অভিযোগ তুলে ধরেন।স্ত্রীর কথা মতো ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছেন।কে জানে কতোক্ষাণি বুঝাতে সক্ষম হয়েছে।

আজমল শেখ কাজের লোককে দিয়ে এক মাত্র ছেলে হাসিব শেখকে ডেকে পাঠায়।হাসিব শেখ নামে শহরে ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলে ও,পড়াশোনার খবর নাই।তবে বখাটেপনায় সেরা।গ্রামে সব ধরনের খারাপ কাজের যোগান দেয় হাসিব শেখ।নেশাদ্রব্য,জুয়ার আড্ডা,মেয়েদের উত্তক্ত করা,মারামারি করা সব ধরনের বাজে কাজে লিপ্ত।ইলেকশনের সময় কয়েকবার থানা-পুলিশ ও করতে হয়েছে।কিন্তু,বাপের টাকার জোরে মুহূর্তেই ছাড়া পেয়ে যায়।এই সব কথার ই জানান আছে গ্রামবাসীর।তদ্রূপ রহমত আলির ও।তবুও এক মাত্র মেয়ের ব্যাপার।এটাকে সহজ ভাবে নিতে পারবে না।


"আসসালাম ওয়ালাইকুম,আব্বা।"

"ওয়ালাইকুম সালাম,আব্বা।এই যে তোমার চাচা ,তোমার চাচা রে ও সালাম দেও।"

"জি আব্বা।চাচা আসসালামু ওয়ালাইকুম।কেমন আছেন?আপনার বাড়ির সবাই কেমন আছে,চাচা?"

"ওয়ালাইকুমুস সালাম,ভালো।"

"বয় আব্বা,এনে বয়।"

"জি ,আব্বা।আসলে আমি তো মুরুব্বীদের সামনে বসি না।"

"হ... আমার তো মনে নাই,তুমি তো বসো না।আমার ভদ্র পোলা।তা আব্বা তোমার চাচায় এই সব কি বলতাছে?"

"কি আব্বা?"

"তুমি নাকি তার মেয়েরে বিরক্ত করো?রাস্তা-ঘাটে নোংরা কথা বার্তা বলো?এসব কি হাছা কথা? "

"চাচা বলছে আপনারে এই গুলা?"

"হ।তার মেয়ের লগে অমন করছো তো কইবো না!"

"চাচা,আপনের মাইয়া তো আমাগো এলাকার মাইয়া।ওরে তো দেইখা রাখা আমগো দায়িত্ব।আর দেইখা ও রাখি।আর আপনে আমারে দোষ দিতাছেন।"

"তুমি ওইদিন মাইয়াডারে কত বাজে কথা কইছো।বাড়িত যাইয়া কানদাকাদি করছে।খায় নাই পর্যন্ত।পোলাপান মানুষ তুমাগো ছোডো বইনের মতো।এসব কইরো না বাজান।মাইয়া মানুষ নরম মনের মানুষ।এসব কইলে পড়াশোনার প্রতি বিতৃষ্ণা আইয়া পড়বো।হেয় তো স্কুল যাইতে ও ভয় পাইতাছে।আমি দিয়া আইছি।ওরে নিয়া আমগো অনেক স্বপ্ন বাজান।এমন আর কইরো না। তোমার কাছে অনুরোধ।"

"আরে চাচা কি বলেতাছেন এসব!আমি তো এমনে ই ডাক দিছি। ওয় তো না শুইনা ই চইলা গেছে।আপনে চিন্তা কইরেন না।ওরে দেইখা রাখা আমার দায়িত্ব।ভয় পাইবো ক্যান।আপনে কইলে আমি ই  ওরে প্রতিদিন স্কুলে আনা-নেওয়া করবো।আপনে নিশ্চিন্ত থাকেন,কোনো চিন্তা কইরেন না।"

"না বাজান,তোমার এতো কষ্ট করা লাগবো না।তুমি খালি ওরে কোনো রকম বিরক্ত কইরো না।আমি কোনো ঝামেলা চাই না,হের লেইগ্গা চেয়ারম্যান ভাইজানের কাছে আসছি।লোক জানাজানি হইলে জিনিসটা সবার লেইগ্গাই খারাপ। আপনের কানে কথাটা দিয়া গেলাম,ভাইজান।আপনে বিচক্ষণ মানুষ,বিষয় টা আমলে নিয়েন।আর ও পোলারে বুঝায়েন।আসি ভাইজান,আসসালামু ওয়ালাইকুম।"

"ওয়ালাইকুম...."

আজমল শেখ তীক্ষ্ন নজরে রহমত আলির যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে...


চলবে...

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.