"তোর রূপ,তোর যৌবন আমাকে চুম্বকের মতো তোর দিকে টানে রে..,তাই তো তোর কাছে বারবার ছুটে আসি।কি করবো বল তো? একা একা ঘুম আসতে চায় না।মনটা শুধু তোর জন্য আনচান আনচান করে। তোকে ছাড়া খুব কষ্ট হয় রে।আর কতো দিন কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমোবো? শশুর আব্বা কে বল না রাজি হতে,নয় তো তুই রাজি হয়ে যা। বিশ্বাস কর অনেক অনেক আদর করবো। দিন রাত একদম আদরে আদরে ভরিয়ে রাখবো।"
কিছুক্ষণ আগে,
স্কুল থেকে ফিরতি পথে পুরোনো নিম তলার নিচে হাসিব শেখ তার বখাটে গ্রুপ নিয়ে আড্ডা দেয়,রোজকার মতো আজও দিচ্ছিলো।এখানে বসে রোজ রোজ মেয়েদেরকে উতক্ত করাই এদের মূল উদ্দেশ্য।
হাসিবের কথা মতো সে মধুকে পছন্দ করে।তাই সে বারবার মধুকে প্রপোজাল দেয়।
আজকে কড়ি স্কুল কামাই দিয়েছে। মধুকে তাই একা একাই স্কুল থেকে ফিরতে হচ্ছে। ইদানিং হাসিব শেখ খুব বেশিই উতক্ত করছে।
মধু খুব ভয়ে আছে। মনে মনে প্রার্থনা করছে আজকে যেন ওই ফাজিলটা রাস্তায় না থাকে।ভীতিকর অবস্থা নিয়ে তড়িঘড়ি হাটছে।কিন্তু,ফলাফল হলো ভিন্ন।
দূর থেকে মধুকে দেখেই হাসিব শেখ রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।রোজকার মত আজকে ও শুরু হয়ে গেছে।আজকে মধুকে একা পেয়ে মনে হচ্ছে সাহস আরো বেড়ে গেছে।
মধু হাসিবকে না দেখার ভান ধরে এগিয়ে যাচ্ছে।আর মনে মনে কড়িকে বকছে।
"মধু!
এই মধু!
দাড়া....!"
"আমার তাড়া আছে যেতে হবে, হাসিব ভাই।"
"কিসের এতো তাড়া তোর?"
"রাস্তা ছাড়ুন!"
"আমার মতো সুদর্শন ,বলিষ্ঠবান ,তাগড়া জোয়ান একটা পোলা সামনে পাইয়া ,কই গলা জড়াইয়া ধরবি?নাহ! আমারে দেখলেই তুই ভয় পাওয়া শুরু করোছ? আরে আমি ই তো তোর ভবিষ্যৎ জামাই। আয় না... নিম তলায় দুজন একটু নিরিবিলিতে বসি। খানিকটা জিরোনো ও হইবো,আর দুজনে দুজনের পাশাপাশি বসে একটু কাছাকাছি ও আসা যাইবো।"
"কি সব যা তা বলছেন!আমি কিন্তু বাবা কে দিয়ে আপনার বাড়ি বিচার পাঠাবো!"
"বিচার পাঠাবি?পাঠা!
আচ্ছা তুই এমন করোস কেন রে?
আল্লাহ তোরে এমন অপরূপ রূপের অধিকারি বানাইছে কি,শুধু তোরে দূর থেকে দেখার জন্য? একদমি না...।বিশেষ কারো উপোভোগের জন্যও তো। তোর এই রূপ রূপের মধু খাওয়ার সেই অধিকার তো আমারই। বুঝস না! সেটা আমি যখন চাই তখনই করতে পারি। আর করবো ও। বাধা দেয়ার সাধ্য কারো নাই। এই আমি, হাসিব শেখ রে ভয় দেখাইয়া কোনো কাজ হবে না।"
পেছনের লেজগির দলগুলো হুহা করে হাসা শুরু করে দিয়েছে।
"আচ্ছা বলতো? তোর রূপের মধু খাওয়ার জন্য একটা মৌমাছি কিভাবে তোর চারদিকে ঘুরঘুর করছে। তোর আর তোর বাপের নজরে কি পড়ে না?"
বিশ্রী সব কথা শুনে এক্ষুনি কেঁদে দিবে দিবে অবস্থা।মধু কাঁদোকাঁদো হয়ে হাসিব শেখ কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
"কোথায় যাইতাছোস? আগে কথার উত্তর দে। আমারে কি নজরে পড়ে না? নাকি পড়লে ও সেটা আমলে নেস না? শোন তোর বাবা রে বলিস, এই হাসিব শেখের মতো বলিষ্ঠবান, সুদর্শন ও সুনামধন্য ছেলে আসপাশের পাঁচ গ্রামে একটা ও পাইবো না।
আমারে পাইলে বুঝবি,আমি তোরে কতো আদর আর ভালোবাসা দেই। তোর জীবনটা কেমন সুখে সুখে ভরাইয়া দেই। তখন তুই ই আপা ভাবিগোরে ডাইকা ডাইকা গল্প বলবি, তুই কতো ভাগ্যবতী।"
এসব কথা শুনে লজ্জা আর ঘৃণায় মধু কেঁদে ফেলে।
কান্নারত অবস্থায় হাসিব কে এড়িয়ে দু তিন কদম সামনে এগিয়ে যায়। হাসিব আবারো সামনে গিয়ে দুহাত দুপাশে মেলে দাঁড়ায়।নিম গাছ তলায় বসা ওর সাঙ্গপাঙ্গরা সব হো হো করে হেসে উঠে।
"আরে আরে কাঁনদোছ কেন?ক্লান্ত বোধ করতেছস?আয় আয় বোস না। একটু আদর করে দেই।"
মধুর আপাদমস্তক চোখ বুলিয়ে ব্যঙ্গ করে পুনরায় শুরু করে লাগামহীন অশ্লীল কথা বার্তা।
"জানি না কেন তোর রূপের জাদুর কাছে বারবার হেরে যাই। তোর রূপ,তোর যৌবন আমাকে চুম্বকের মতো তোর দিকে টানে রে.., তাই তো তোর কাছে বারবার ছুটে আসি। কি করবো বল তো? একা একা ঘুম আসতে চায় না । মনটা শুধু তোর জন্য আনচান আনচান করে। তোকে ছাড়া খুব কষ্ট হয় রে। আর কতো দিন কোলবালিশ জড়িয়ে ঘুমোবো? শশুর আব্বা কে বল না রাজি হতে, নয় তো তুই রাজি হয়ে যা। বিশ্বাস কর অনেক অনেক আদর করবো। দিন রাত একদম আদরে আদরে ভরিয়ে রাখবো।"
এই সব অশ্লীল কথা বার্তা শুনে মধু ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে স্কুলের ব্যাগটা চেপে ধরে, আর কিছু শোনার আগে দিকবিদিকশুন্য দৌড়াতে শুরু করে।
হাসিবের পৌষ্য বখাটে ছেলের দল জোরেজোরে শিষ বাজায়,হাতে তালি বাজায়।
একি সাথে সকলে অট্টহাসিতে মেতে উঠে।