ধ্রবতারা
লিখিকাঃ গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)
গলায় আরো গভীর ভাবে নাক ডুবিয়ে দেয়।তুরের দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে।নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।নিজেকে শ্বাস কষ্টের রোগীর মতো মনে হচ্ছে।শরীরের সব শক্তি দিয়ে ও নড়তে পারছে না।এ দিকে বিছানায় পরার ফলে মাথার কাটা জায়গাটায় পুনরায় ব্যাথা চাড়া দিয়ে উঠে।আর মুখ দিয়ে অস্পষ্ট ভাবে "আহ..."শব্দ বের হয়। সাথে সাথে ধ্রুব চোখ মেলে তাকায়। তাকিয়ে তুর কে দেখে।তুর কে দেখে ভাবে ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে।তাই প্রেয়সীর গলায় নাক ঘসতে শুরু করে আর বলে"কবে এতো কাছে পাবো জান।এখন যতো কষ্ট দিচ্ছো সব সুদে আসলে পুষিয়ে নেবো।"গলা থেকে আস্তে আস্তে নিচের দিকে নামতে শুরু করে। তুর কান্না শুরু করে দেয়।কান্নার শব্দে ধ্রুবর হুশ ফিরে।না এটা কোনো স্বপ্ন না।এই তো ওর শরীরের স্মেল পাচ্ছি।চট করে মাথা তুলে ওর দিকে তাকায়।এ যেন বিশ্বাস যোগ্য না।এটা কিভাবে সমভব। "এটা কি সত্যি তুই নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি।" তুর চোখ বন্ধ করে ফুপাচ্ছে।আর ঠোঁট দুটি তিরতির করে কাপছে।ধ্রুব ওর শরীরের কম্পন অনুভব করে বুঝতে পারে এটা কোনো স্বপ্ন নয়। বাস্তবে ই ওর প্রেয়সী ওর বিছানায় ওর এতো কাছে ওর বাহু ডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে।চারিদিকে অল্প অল্প আলো ফুটছে।জানালার সচ্ছ পর্দা ভেদ করে ঘরে সেই আলো প্রবেশ করছে।সেই আবছা আলো অন্ধকারে তুরের মিষ্টি মুখোশ্রী আর কাপতে থাকা ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।দেখবে না ই বা কেন?এতো কাছ থেকে দেখার সুযোগ যেহেতু পেয়েছে।হাতের নিচে সফ্ট আর মসৃণ কিছু অনুভব হতেই হাত অনুসরণ করে সেখানে তাকায়।উন্মুক্ত ফর্সা নির্মেদ উদর....চোখ আটকে যায়। দেখার সঙ্গে সঙ্গে ভেতর টা নাড়া দিয়ে উঠে।শুকনো ঢোক গিলে।কন্ট্রোললেস হয়ে যাচ্ছে।ফর্সা উদরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হাত বুলিয়ে সরিয়ে নেয়। তুরের নিশ্বাস যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ধ্রুবর হাত সরিয়ে নেয়ার সাথে সাথে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। ধ্রুব শেষ বারের মতো কাপতে থাকা বন্ধ চোখ মুখের দিকে তাকায়। চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে যায়। নিজেকে কন্ট্রোল করতে আর তুরকে সাভাবিক হতে দিয়ে ওয়াশ রুমে ছুট লাগায়। ধ্রুব চলে যাওয়ার দু তিন মিনিট পরে তুর চোখ মেলে তাকায়।রুমে ধ্রুবর অস্তিত্ব নেই বুঝতে পেরে কোনো মতে রুম থেকে প্রস্থান করে। বাড়িতে তন্নি মনির ওদের মা আবিদা বেগম রয়ে যায়।ছোট চাচা(সমির সাহেব) এবার কয়েক দিনের জন্য ছুটি নিয়ে এসেছে।ধ্রুবর নানা বাড়ির লোকজন ঐ ঘটনার পর পরই চলে যায়।অন্যান্য মেহমান ও চলে গেছে। সকলে চলে গেলে ও আবিদা বেগম আর সমির সাহেবের পরিবার আছে। তাই বাড়িটা ভরা ভরাই লাগছে। তন্নি আর তুর ছাদে বসে বসে আমের আচার তেতুলের চাটনি খাচ্ছে।আর পেটের সব কথা উগ্রে দিচ্ছে যেন কতো বছরের কথা জমে আছে কিছুই বলা হয়নি। কথায় কথায় তন্নি বলে "জানিস কাল তুই যখন সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলি।তখন ধ্রুব ভাইয়ার কি ছটফটানি একদম অস্থির হয়ে গিয়েছিল।তার পর একদম হিরোর মতো তোকে কোলে নিয়ে ছুট লাগালো।" " উনি আমাকে কোলে নিয়েছে?হুহ...ইয়ার অফ দা বেস্ট জোক।আমাকে কেন নিবে,উনি তো রাইসা আপু কে নিবে। আমি মরে গেলে ও উনার কিছু যায় আসে না।" "মাথা মোটা নাকি! ওই শাকচুন্নিরে কেন কোলে নিবে,হাতির মতো ওজন। সরিয়াসলি বলছি...ভাইয়া তোর অবস্থা দেখে কি অস্থির, কারো কোনো কথা শুনেনি।ডিরেক্ট তোকে সবার সামনে থেকে কোলে নিয়ে দৌড়ে গাড়িতে উঠেছে।কোলে নিয়ে ই হাসপাতালে গিয়েছে।আবার বাড়ি ফিরে ও একদম কোলে তুলে তোর বিছানায় ছেড়েছে।আমি তো শুধু দেখছিলাম আর ভাবছিলাম... ইস! আমাকে ও যদি এভাবে কেউ কোলে নিতো।" তুর অবাক হয়ে গেছে।"তন্নি আপু সত্যি বলছে? ইস....!এই লোকটা এতো বেহায়া কেন?সবার সামনে থেকে কিভাবে পারলো কোলে নিতে?সবাই কি ভেবেছে?ছি....ভাবতেই কেমন লাগছে।লজ্জায় বাড়ি ছেড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে।দেশের বাইরে থেকে আর প্ল্যেনে সুন্দরী স্টাফ দেখে দেখে লজ্জা কমে গেছে।সকালের ঘটনাটা মনে পড়ে যায়।শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। লোম গুলো সব কাটা দিয়ে উঠে।তাৎক্ষণাতই ভাবে,হয়তো অসুস্থ দেখে এমনি দয়া দেখিয়েছে।নিলেই কি দু দিন পর তো অন্য কাউকে নিবে।" "কিরে কৈ হারালি?গাল গুলো এমন ব্লাসান দিচ্ছে কেন?" "কিছু না।বিয়ের পর দুলাভাইয়ের কোলে উঠো।" "বিয়ের পর তো উঠবো ই সকালে দুপুরে বিকালে রাতে।যখন মন চাইবে তখনই উঠব।সিল মারা জামাই আমার।এতোদিনের যতো আফসোস আছে সব বরের সাথে পুরণ করবো।" "হুম করো।কিন্তু হবু ভাবিকে কেউ শাকচুন্নি বলে?এখন থেকে যদি এগুলো বলো।বিয়ের পর তো রাইসা আপুর মাথায় চুল থাকবে না।" "আরে কি ভাবি ভাবি করছিস।ওভার স্মার্ট একটা মেয়ে।ওরে ভাইয়ার সাথে যায়।ওরে তো ভাইয়া রিজেক্ট করে দিছে।ওনার মামা আর নানু রে একেবারে মুখের উপর জবাব দিয়ে দিছে।ওনারা তখনই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।" "এতো কিছু ঘটে গেছে আর আমি কিছুই জানি না।" "জানবি কেম্নে তুই তো তোর নিজের খবর ই জানোস না।কি রে তুই...? এই বয়সে তোর কিসের এতো স্ট্রেস যে শরীরের এ হাল করেছিস।এখন থেকে নিজের যত্ন নে।" "হুম।আমার জন্য সবাই কে কতো টেনশন নিতে হলো ।" "হুম নিতে তো হয়েছেই।আর ধ্রুব ভাইয়া না থাকলে তোকে তো আরো ভুগতে হতো।কি কেয়ার বাবা যেন কাজিনের না নিজের বউয়ের মাথা ফেটেছে।তবে,আজকে থেকে তুই আর শান্তি পাবি না।" "কেন?" "ফুড থেরাপির চোটে।যত দিন শরীর ঠিক না হচ্ছে ততোদিন।" "হুম,তা হবেই,কি আর করবো... খাল কেটে কুমির এনেছি।" "আচ্ছা আপু বিয়েটা ভেঙে দিলো কেন?আমার তো মনে হতো দুজনের মধ্যে প্রণয় ঘঠিত সম্পর্ক ছিলো। আর এতো দিন ধরে রোমাঞ্চ করে বেরিয়েছে।" "আজাইরা থাইকা আর কিছু পাস না খুঁজে,তাই না?ওই ঢঙ্গি গায়ে পড়া মেয়ের সাথে ধ্রুব ভাইয়া করবে প্রেম। ভাইয়ার পারসোনালিটি দেখেছিস।কোন দিক দিয়ে ওই সাদা ভূতনি ভাইয়াকে ডিজার্ভ করে।আচ্ছা তুই কোন দুনিয়ায় থাকিস রে...? " "ইস...তুমি তো ওনাকে পুরো ধোয়া তুলসীপাতা বানিয়ে দিচ্ছো।যেয়ে দেখো বিয়ে ভাঙছে অন্য কারণে।আমার চেয়ে ভালো ওনাকে কেউ চেনে না।এক নাম্বারের বদের হাড্ডি।" "কি কারণে রে...? " "কি আবার ,হয়তো এক সপ্তাহ প্রেম করে আকর্ষণ শেষ তাই।" "আশ্চর্য!কেউ নিজের কাজিনের নামে এম্নে বলতে পারে।ওনি তোরে কি করছে... যে তুই উনার সব কথা নেগেটিভলি নিস।উফফ...বুঝলাম না..." "উফফ.... বুঝলাম না।"ভেঙচিয়ে হিহিহিহি করে হেসে উঠে। "ওই কালিতারা...ভেঙাবি না।যেটা জিজ্ঞেস করছি ওটার উত্তর দে।উনি তোকে কতো কেয়ার করে।আর তুই উনার সব কিছুতেই নেগেটিভ।তুই জামা কিনিসনি বলে,কতো সুন্দর একটা ড্রেস আমার হাত দিয়ে তোকে পাঠালো।সব কিছুতেই কতো এক্সট্রা খেয়াল রাখে তোর,আর তুই কিনা।" "কি...ওনি দিয়েছে?আগে বলোনি কেন? শয়তান লোক একটা এ জন্য ই এম্নে বলি।" "হ্যা সেদিন বাড়িতে ঢুকে তোকে খুজছিলাম।তখন ভাইয়া এসে প্যাকেটটা দিয়ে বলে,তোকে দিতে আর ওনার কথা না বলতে।তুই নাকি রাইসার সাথে রাগ করে কোনো নতুন জামা কিনিসনি।তখন আমিও দিলাম।কি হয়েছে তাতে? এতো ভালো একটা কাজ করেছে।তোর তো ভাইয়াকে থ্যাংকস দেয়া উচিত। " তুর আবারও ভাবনায় ডুব দিলো"উনি কি তাহলে সেদিনের ঘটনা খেয়াল করেছে?খেয়াল করেই কিনেছে?তাই তো বলি দুজনের ড্রেসে এতোটা মিল কিভাবে হয়।আচ্ছা এটা কি কোনো কপাল ড্রেস ছিলো?উনি কেন এমন ধরনের কাপড় দুজনের জন্য কিনলো?কি দরকার..ছিলো?এসব করে কি বুঝাতে চাচ্ছে?আর বিয়ে যদি ভেঙেই দিবে তো রাইসা আপুর সাথে ওইদিন ছাদে কি ছিলো? আমি কি উনাকে ভুল বুঝছি?উনি কি ....উফফ... যা খুশি তাই।"আর ভাবতে পারছে না। "কৈ হারিয়ে যাস।চল নিচে যাই।" "হুম চলো।" দুটো দিন পার হয়ে গেলো, সত্যি সত্যিই দুটো দিন তুরের কোনো শান্তি ছিলো না।রুটিন করে খাইয়ে দিয়েছে মা,বড় মা।ওর বাবা বড় আব্বু ছোট আব্বু সবাই ওর খুব খেয়াল রেখেছে।তুর সবার কেয়ার দেখে ভাবে ও খুব ভাগ্য করে এমন ফেমিলিতে জন্মেছে। গতকাল মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলেছে।কাটা জায়গায় অনেকটা টান ধরেছে।দুই দিন ধরে ঘর থেকে বের হয় না।না বের হয়েও প্রবলেম হচ্ছে না কারণ সবাই ওর কাছে আসছে।শুধু ধ্রুব ছাড়া। তবে তুরের মনে হয় রাতের বেলা ওর রুমে অন্য কেউ ওকে দেখছে।মনের ভুল আর আগের ঘটনার কথা মনে করে ঘুমিয়ে থাকে। ________ ধ্রুবর হাতে আর বেশি দিন সময় নেই। মাত্র বারো দিন।দেখতে দেখতে সময় পেরিয়ে গেছে।জহির সাহেবের সাথে কথা বলে এয়ারপোর্টের পাশেই একটা আবাসিক এলাকায় একহাজার স্কোয়ার ফিটের একটা ফ্ল্যাট কিনেছে। আজকে ওই বাসাটা ফার্নিসড করবে।আর থাকার জন্য যা যা লাগবে সব গুছিয়ে আসবে।তাই সকাল সকাল ফাহিমকে নিয়ে চলে গেছে। তন্নিরা চলে গেছে তুরের খুব মন খারাপ। এই বিষন্ন মন নিয়ে ই পড়তে বসেছে।পরীক্ষা ও যে মাছের কাটার মতো গলায় আটকে আছে।কবে যে শেষ হবে।টানা এক ঘন্টা পড়ে।পড়তে পড়তে আর ভালো লাগছে না।ভাবছে বাবার লেখা আন পাবলিসড একটা বই নিয়ে পড়বে।পরে বাবাকে বলবে যে তোমার এখানে ভুল হয়েছে,ওখানে ভুল হয়েছে। যেই ভাবা সেই কাজ।নিচে মা বাবার রুমে যায়।রুমের এক পাশে বুক সেলফ আর কাবার্ড।অন্য পাশে সোফা আর একটা টেবিল।বাবা এখানে বসে স্টাডি করে।আর অপর দিকে বিছানা ড্রেসিং টেবিল টুকটাক এটা সেটা। তুর টেবিলে খোঁজে।আন কমপ্লিট একটা ডায়েরি পায়।নাহ কমপ্লিট একটা ডায়েরি নিবে যেটা বই হিসেবে পাবলিশ করবে।নাহ..পুরো টেবিল জুড়ে শুধু সাহিত্য চর্চার বই।সেলফে তাকায় সব নতুন পুরাতন বই।ভাবে কাবার্ডে থাকতে পারে। বাবার কাগজ পত্র রাখা কাবার্ডের ড্রয়ারে দেখে।হুম এই তো একটা ডায়েরি আছে।ডায়েরি টা হাতে নেয়।কাবার্ডের পার্টটা চাপিয়ে দেয়। অমনি হাত থেকে পরে যায় ডায়েরী টা। ভিতর থেকে কয়েক টা ছবি আর কাগজ বের হয়। দ্রুত বসে কাগজ ও ছবি গুলো তুলে হাতে নেয় এলোমেলো ভাবে।সব গুলো একসাথে গুছাতে থাকে। একটা ছবি তে একটা ফরেনারদের মতো দেখতে মহিলাকে দেখতে পায়।হয়ত বাবার লেখার কাজে লাগবে তাই রাখা। নিচের কাগজ গুলো নেয়,দেখে উপরে এডপ্ট পেপার টাইপ কিছু লিখা।সমভবতো কোনো এডপ্ট পেপার।সাথে একটা বার্থ সার্টিফিকেট। এগুলো কার হতে পারে।এগুলো তো বাবার লেখার কাজের মনে হচ্ছে না।অরিজিনাল ফর্ম মনে হচ্ছে। ছবি গুলো এক হাতে কাগজ গুলো অন্য হাতে নিয়ে ডায়েরি নিচে রেখে ই উঠে দাড়ায়। বিছানায় বসে এডপ্ট পেপার টায় চোখ রাখতেই 'কবির রায়হান'বাবার নাম টা চোখে লাগে... অমনি কেউ ছো মেরে কাগজ গুলো নিয়ে নেয়। তাকিয়ে দেখে ওর মা....
চলবে.....