আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-০৬

Estimated read time: 7 min

ধ্রবতারা 
গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম) 



পরের দিন সকাল বেলা,
নাস্তার টেবিলে সবাই বসেছে শুধু তুর ছাড়া..... গতকাল ও দুপুরে খায়নি রাতে রুমে খাবে বায়না করে খেয়ে নেয়।যদি রুম থেকে বের হলে ধ্রুবর সামনে পড়ে....এই মুখ কিভাবে দেখাবে।
জহির:কি গো ধ্রুবর মা,তুর কই কাল থেকে দেখা নেই?? 
শাহানা:ওর নাকি শরীর ভালো না ওপরে খাবে। 
জহির :আচ্ছা... তো খাইয়ে দিয়ে আসছো তো নাকি? খেয়াল রেখো বেশি খারাপ হলে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাব।
শাহানা :ঠিক আছে। 
ধ্রুব :বাবা আপনাকে কিছু বলার ছিল। 
জহির :বলো...। 
ধ্রুব :আসলে ইমপর্টেন্ট কথা,খাওয়া শেষ হলে বলি।
জহির :ঠিক আছে।
খাওয়া শেষে সকলেই যার যার কাজে চলে গেছে.... 
লিভিং রুমে শুধু ধ্রুবর বাবা আর ধ্রুব মহিলারা সব রান্না ঘরে ব্যস্ত হয়ে গেছে...। 
ধ্রুব :বাবা আমার(Biman Bangladesh Airlines)এ জয়েনিং আর ২২দিন পরে,জানেনি তো!!! তখন আমি খেয়াল খুশি মতো আসতে পারবো না। সপ্তাহে এক কি দুই দিন আসা যাবে।আর টাইম শিডিউল যখন খুশি চেন্জ হতে পারে তাই এয়ারপোর্টের কাছে থাকাই সুবিধাজনক এদিক থেকে প্রচুর জ্যাম থাকে। তাই টাইমলি পৌঁছাতে পারবো না... 
জহির:তাহলে কি তুমি আলাদা থাকতে চাইছো?
ধ্রুব :কাজের সুত্রে নিতে হচ্ছে.... কি করবো এখন  বাবা আপনি ই বলেন?(অনুনয়ের সুরে)
জহির :(ধ্রুবর পিঠ চাপড়ে)আ'ম প্রাউড অফ ইউ বাপ।তোর জন্য আমি প্রাউড ফিল করি... 
এতো ভালো কোয়ালিফিকেশন থাকতে বাইরের দেশের এতো ভালো ভালো অফার থাকতে এখানে তোর দেশে চলে এসেছিস।মানুষ তো এখন বাইরের দেশে পিএইচডি করতে গিয়ে ওখানে ওই দেশের কাজে লাগে।কিন্তু আমি বুক ফুলিয়ে বলতে পারবো আমার ছেলে মালেশিয়ান(US Bangla Airlines)এর জব ছেড়ে দেশের টানে চলে এসেছে......। 
তোমার কাজের সুত্রে যদি তোমাকে আলাদা থাকতে হয় আমার কোনো রকম প্রবলেম নেই।তুমি দেশে আছো তোমার সাথে সপ্তাহে এক দুই দিন দেখা হবে সেটা ও অনেক...।
ধ্রুব :(বাবার হাতের ওপর হাত রেখে,চিন্তা মুক্ত হয়ে)ধন্যবাদ বাবা.... দোয়া করবেন যেন,আপনাদের ছেলে আরো সুনাম অর্জন করতে পারে।
জহির :(মাথায় হাত বুলিয়ে )দোয়া করি তুই তোর সকল স্বপ্নে জয়ী হো...।
(এমন সময় মোবাইল বেজে ওঠে জহির রায়হানের )
জহির : ওয়ালাইকুমুস সালাম,কে?...জি বাবা বলো....
---: -----
জহির : জিসান ,হ্যা আলহামদুলিল্লাহ। 
তুমি কেমন আছ?হ্যা হ্যা সবাই ভালো। তোমার বাসায় সবাই ভালো তো?
-----------
জহির : অনেক দিন হোলো আসো না...হুম.... 
হুম ......আচ্ছা ঠিক আছে আসো তাদের নিয়ে আসো প্রায় দু তিন বছর হোলো দেখিনা তোমায়।
আচ্ছা ,আচ্ছা ওয়ালাইকুমুস সালাম।
 
(ধ্রুবর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল জিসানের ফোন করার কারণটা ওর অজানা না,বাকি কথা আর বলা হলো না)
জহির :জিসান,তোমার ফ্রেন্ড আছে না ও ওর ফেমেলি নিয়ে আসবে বিকালে।তোমার মা কে বলে দেও আমি ওঠি অফিসে যেতে হবে।
(ধ্রুব তাৎক্ষণাৎ ওঠে চলে গেল তুহিনের কাছে। তুহিন স্কুলে যাবার জন্য রেডি হচ্ছে )
-কিরে স্কুল যাচ্ছিস.... 
তুহিন - হ্যা... ভাইয়া কিছু বলবে?
-হ্যা,আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
তুহিন - কি কাজ? ভাইয়া আমি তো স্কুলে চলে যাচ্ছি এসে করে দিব ওকে...
-না আজকে স্কুলে যাবি না। 
-কিন্তু কেন? তুমি না বলো ভালো করে পড়াশোনা করতে, না করলে তো তোমার মতো আকাশে উড়তে পারবো না!!!
-আরে একদিন বন্ধ করলে তোর পাইলট হওয়া আটকাবে না।
-না ভাইয়া প্রমিজ এসে তোমার সব কাজ করে দিব
-শোন ওইদিন যে তোরা সবকটা মিলে জোর করে তুরের ঘরে পাঠিয়েছিস ভয় দেখানোর জন্য সেটা কিন্তু এখনো কেউ জানে না,আর এখন সবাই চলে গেছে বাড়িতে তুই আর ফাহিম ছাড়া কেউ নেই তো জানাজানি হলে বাড়ির সবাই তোদের কি হাল করবে বুঝতে পারছিস!!!তার চেয়ে ভালো না আমার কথা শুনবি।
-ভাইয়া তুমি আমাকে ব্ল্যাকমেল করছো আর কি এমন কাজ যার জন্য আমার স্কুল বন্ধ করতে বলছ ব্ল্যাকমেল করছো।
-তোর বেশি কিছু করতে হবে না আমার কথা মতো দুই একটা কাজ করলেই হবে.....না হয় কিন্তু.... 
-ঠিক আছে ভাইয়া করবো তুমি কাউকে বলো না প্লিজ!!! 
-দুর বোকা তুই আমার ভাই না আমি কি কখনো এমন করতে পারি বল?(তুহিনের চুলে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে )শোন তুই এখন স্কুল ড্রেস চেন্জ ফেল আর সবাইকে বল যে তুই ঘুড়তে যাবি রাজি না হলে কাঁদতে থাকবি।বাকি কাজ পড়ে বলবো..... ওকে।
-ইয়া.....হু......... কিন্তু ভাইয়া আমাকে নিয়ে যাবে কে ফাহিম ভাইয়া তো নেই বাসায়.... 
-আরে টেনশন করিস না আমি আছি না ম্যানেজ করে নেবো যেটা বলেছি সেটা কর... 
-কিন্তু ভাইয়া আমি এটা বুঝলাম না এ সব করে তোমার লাভটা কি!!!
-(রাগি সরে)তুহিন........ 
-ঠিক আছে ভাইয়া আমি যাচ্ছি....তো........ 
(তুহিন  কাপড়  চেন্জ করে রান্না ঘরে গিয়ে বলছে)
তুহিন-মা আমি ঘুরতে যাব.....
রায়লা : কিরে তোর না স্কুলে যাওয়ার সময় তুই রেডি হোসনি কেন?
তুহিন - আজকে স্কুলে যেতে ভালো লাগছে না,আমি ঘুরতে যাবো মা... 
রায়লা : যা স্কুলে যা.. না হয় মাইর লাগাবো!! 
তুহিন : কেন মা যাই না,একদিন ই তো প্রতিদিন তো স্কুলে যাই ই,ও দাদি বলো না.... আজকে আমি ঘুরতে যাব.... (কাঁদার অভিনয় করে )
দাদি: আইচ্ছা যাবি কাঁন্দিস না ভাই,ও মেজ বউ ওর আইজকা ইসকুলে যাওন লাগদো না..কই যাবার চায় দেও যাইতে। 
রায়লা :কিন্তু আম্মা.....! 
দাদি : কোনো কিন্তু না দেও।
শাহানা: যাক না আজকে ও তো কখনো  স্কুল বন্ধ করে না।
রায়লা :যাবে কার সাথে বাড়িতে কেউ নেই তো...ভাবি.?
(ধ্রুব এতোক্ষণ লিভিং রুমে শুধু শুধু ফোন কানে ঘুর ঘুর করছিল তো ওওর মা ওকে দেখে ডাকল)
শাহানা:ধ্রুব.. এদিকে আসো তো।
-জি মা বলো।
শাহানা:বাবা তুমি কি ফ্রী আছো?
-জি ,আছি তো আজকে ফ্রী, আপাতত সারাদিন কোনো কাজ নেই ,ওই বিকালের দিকে জিসান আসবে ফেমিলি নিয়ে,সেই জন্য রেডি থাকবো আরকি।
শাহানা: ওহ তাই নাকি!
 সেটা ও তো দেরি আছে ওরা আসার আগে ই আসতে পারবে ,বাসায় কেউ নেই আর তুহিন বায়না ধরেছে ঘুরতে যাবে ,এদিকের সব আমি তোমার চাচি দেখে নিব ,যা..না... বাপ আমার।
রায়লা : কেমন লাগে বলোতো বাসায় মেহমান আসবে আর এর জন্য..... না থাক বাবা যেতে হবে না,মন চায় এটারে ধরে আছাড় মারি দোনোটা ছেলে মেয়ে হইছে বান্দর ,সময় বুঝে না খালি একটা আবদার করে বসে।
-আরে চাচি কি বলো....! প্রবলেম নাই।আমার ভাইকে আমি নিয়ে যাবো না তো, কে নিয়ে  যাবে....! চল তুহিন ,আমরা আজকে খুব মজা করবো।(কোলে তুলে তুহিনের রুমে নিয়ে নামায়।)
ধ্রুব -শোন এখন তুই তুর কে গিয়ে বলবি ,তোর সাথে ঘুরতে যেতে আমার সাথে যাবি এই কথা বলবি না,বলবি তুই গোলাপ গ্রাম দেখতে যাবি তোর সাথে যেতে ,আর তুই ড্রাইভার চাচার সাথে যাবি.... 
তুহিন:আসলে ভাইয়া তুমি চাইছোটা কি!!!
-(ধমকে)যা বলছি তাই কর না হলে কিন্তু.... 
তুহিন : যাচ্ছি তো..... আমি কি না করেছি নাকি?খালি ভয় দেখায়.... 
পড়তে বসেছে তুর আজকে কোচিং নেই আর কিছু দিন বাকি,একমাস ও নেই পরীক্ষার তাই পড়ছে।আর ঘরে বসে থাকতে থাকতে ও বোরিং লাগছে।
তুহিন তুরের রুমে এসে -আপু কি করিস...
-দেখছিস না কি করছি,এমন দাঁত বের করে কেলাচ্ছিস কেন?মতলব কি... বলে ফেল... 
তুহিন : ------
- স্কুলে যাসনি কেন আজকে....? অফ ডে..?.হুম...? চুপ কেন?কি... কিছু বলবি?
তুহিন :আপু....আপু....  আমি না তোমার ছোট ভাই.... তুমি না আমাকে কতো ভালো বাসো.....(দাঁত কেলিয়ে )
-কি ধান্দা তোর এতো পাম মারছিস কেন? 
তুহিন : আপু একটা কথা বলি রাখবি বল?
-কি কথা হুম? এমন করে গুজামিল দিয়ে তো বলিস না কখনো!!!
তুহিন : তেমন কিছু না ,বল রাখবি.... না করবি না.... প্রমিজ কর রাখবি? 
-কি এমন কথা যে প্রমিজ নিয়ে বলতে হবে বল শুনি? 
তুহিন : বল,না... করবি না.।
-প্রমিজ করতেই হবে না হলে বলা যাবে না!!!
তুহিন : না...... বল
-ঠিক আছে যা রাখার মতো হলে না করবো না।
তুহিন : আপু আমার না গোলাপ গ্রাম দেখার খুব ইচ্ছে সবাই যায় আর গল্প বলে ,তাই আমার ও ইচ্ছে যাব।
-তো যাবি... এটা আর এমন কি বাবা কে বলব নিয়ে যেতে,আমি ভাবলাম কি না কি!যা... এখান থেকে পড়ছি পড়ে আসিস।
তুহিন : না আপু আজকে এক্ষুণি যাবো... চল যাই তুই আর আমি.... 
-কি বলিস এখন কি ভাবে.... 
তুহিন : আপু তুই কিন্তু বলেছিস না করবি না.... আমার এই আবদার টা রাখবি না...???
-কিন্তু অনুমতি নিতে হবে আবার সাথে কে যাবে ফাহিম তো নেই..... 
তুহিন : সে গুলো সব ঠিক করে রেখেছি তুই শুধু রেডি হ..ড্রাইভার চাচা নিয়ে যাবেন নিয়ে আসবেন কোনো রকম জামেলা নেই,আর ওনার সাথে আগে কতো চিড়িয়াখানায় গিয়েছি মনে নেই তোর।
-তুই ঠিক বলছিস?
তুহিন : 100% বলছি তাহলে তুই রেডি হো আমিও রেডি হচ্ছি খুব ঘুরবো আজকে....ইয়য়্যাহু.....

(তুহিন কিন্তু মনে মনে খুব খুশি ই হয়েছে )

এক ঘন্টা পরে

 তুর রেডি হয়ে নিচে নামে ওখানে আগে থেকেই তুহিন ছিল। তুর শাড়ি পড়েছে বড় মা পড়িয়ে দিয়েছে পাতলা ধরনের হলাকা ডিজাইনের শাড়ি সাদা রং এর,বেশি ভারি না তাই ওর তেমন কষ্ট হচ্ছে না কমফোর্ট ই ফিল করছে,অনেক ছবি তুলবে কয়েক টা ভিডিও বানাবে সেগুলো ফেসবুকে আপলোড করবে সবাই দেয় ও ও দিবে। যাক ঘরে বসে থেকে খুব বোর হচ্ছিলো তুহিন একটা কাজের কাজ করেছে।মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ দিচ্ছে... 
গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায় তুহিন আগেই ভতরে গিয়ে বসেছে ড্রাইভার চাচা ও নাকি ভিতরে,তুর গাড়ির গ্লাসে নিজেকে আর একটু দেখে নিচ্ছে মনে হচ্ছে সিড়ি দিয়ে নেমে কুচিগুলো একটু অগোছালো হয়ে গেছে তো হাত দিয়ে ঠিক করছে.... 
কিন্তু গাড়ির ভিতর থেকে এক মানব তব্দা খেয়ে তাকিয়ে আছে.... 
এটা কে......কোনো মানুষ বলে তো মনে হচ্ছে না আসমান থেকে নেমে আসা পরি মনে হচ্ছে,একটা মানুষ কিভাবে এতো সুন্দর হতে পারে....উফফ। 
পাহাড়ি ঝর্ণার মতো সাদা শাড়ি,কানে বড়ো বড়ো ঝুমকো,গাঢ় কাজল কালো চোখ ,দু হাত ভর্তি চুড়ি সেই চুড়ির রিনিঝিনি শব্দ, ঘন কালো খোলা চুলে এক মায়াবিনী কুচি ঠিক করছে।এক প্রমিক পুরুষের কাছে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি হতে পারে.... 
তুর শাড়ি ঠিক করে গাড়ির পিছনের দরজা খুলে ভিতর রে বসে শাড়ি গুছিয়ে বোসে ,দরজা টেনে লক করেছে.... গাড়ি স্টার্ট হয়েছে তুর ঠিকঠাক মতো বসে সামনে তাকিয়েছে..... 
তাকিয়ে দেখে...... ধ্রুব..... 



চলবে.....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.