আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-০৭

ধ্রবতারা 
গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)



গাড়ি চলছে.... তো চলছেই। 
এদিকে তুর হতোবাক...!!!
পালাতে পালাতে বাঘের খাঁচায় এসে পড়েছে.....!!!উফফ!!!! এটা কি হলো.....!!!!
মাথা ঘুরিয়ে তুহিনের দিকে তাকিয়েছে.....বড়ো বড়ো করে...... দাঁত কিরমির করছে.....

(তুহিন ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে বলছে আপু তোমাকে ছাড়া একা একা ঘুরতে ভালো লাগবে না তাই ,প্লিজ ডোন্ট মাইন্ড মুচকি হাসি দিয়ে ,আসল ঘটনা তো আর সে জানে না)

মন চাচ্ছে চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে.... উফফ.... আল্লাহ.... আল্লাহ.... আমি এখন কি করবো বলো তুমি ই বলো আমাকে... না হয় এখান থেকে এই মুহূর্তে আমাকে ওধাও করে দেও.....
ও.... মাগো... আমি কেন এলাম এই শয়তান টার কথায়..... 
তুহিনের হাতে খামচে ধরেছে,তুহিন ব্যাথায় চেঁচাচ্ছে.....

 ধ্রুব গাড়ি সাইড করে থামিয়েছে।পিছনে ঘুরে.... কি হয়েছে.... এমন করছিস কেন?( তাকিয়ে দেখে )কি করছিস....!ছাড় ওকে....! ব্যাথা পাচ্ছে তো...!

(আরো জোরে ধরেছে.... তুহিন চিৎকার করছে আর বলছে... ছাড় আপু.... ছেড়ে দে..... ব্যাথা পাচ্ছি )
ধ্রুব গাড়ি থেকে নেমে পিছনের দরজা  খুলে তুরের পাশে যেয়ে জোর করে হাত ছাড়ায়....
তুহিন : ওরে কালিতারা পেত্নী....আমার হাতের সব মাংস আলাদা করে দিছে....রে....আজ থেকে তুই আমার  বোন না... তোকে আপু ডাকবো না....এই জন্যই বলি তোকে বাবা পেয়ে আনছে....এ্যা.... এ্যা...
ধ্রুব :(রাগী সরে)এসব কি কথা!!! 
তোমার মুখে যেন দ্বিতীয় বার এই রকম কথা না শুনি...তুহিন!!!! 
(আদুরে সরে) তোর প্রিয় খেলনা কিনে দিব ভাই আমার... কাঁদিস না প্লিজ..।(আদুরে কথা শুনে তুহিন থেমে গেছে )তোর আপু কে আমি বকে দিচ্ছি.... তুই একটু গাড়ি থেকে নেমে ,সাইডে দাড়া.... ৫ মিনিট ওকে। 

তুহিন : ওকে ভাইয়া......সুন্দর করে নেমে সে রাস্তার সাইডে দাড়িয়ে গুন গুন করে গান গাচ্ছে আর ব্যথা পাওয়া স্থানে হাত বুলাচ্ছে। 
ধ্রুব : গুড বয়।
(তুরের দিকে ফিরে দেখে  চোখ বন্ধ করে আছে।বিপরীত পাশের সিটে গিয়ে বসে,ডাকছে.... সফ্টলি)তুর... তুর.. তাকা আমার দিকে.... 
তুর তো তুহিন চলে যাওয়াতে আরো বেশি আনইজি ফিল করছে হাজারটা বকা দিচ্ছে,আর এমন আদুরে সুরে জীবনের প্রথম ধ্রুব কথা বলছে ,তার ওপর এতো কাছে, যার ফলে ওর শরীরে কাঁপুনি ধরে গেছে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে রেখেছে ,মাথা নিচু করে শরীর কুঁকড়িয়ে রেখেছে তবুও কাঁপুনি দিচ্ছে , নড়তে ও পারছে না শরীর অবশ হয়ে গেছে ,আজ বুঝি মরেই যাবে। 
ধ্রুব : কি হয়েছে কথা বলছিস না কেন?কাল থেকে ঘরে বসে আছিস  বের হচ্ছিস না,এখন কথার জবাব দিচ্ছিস না?কি হলো এমন ঝিম ধরে আছিস কেন?তুহিনের সাথে এমন করলি কেন ছোট মানুষ তোকে সাথে নিয়ে ঘুরতে চেয়েছে...কি ব্যাথাটাই না দিলি...আর একটু হলে তো রক্ত বের হয়ে যেতো। 

তুর:( চোখ খিচে বন্ধ করে চুপ করে আছে )

ধ্রুব : দেখ কালকে যেটা হয়েছে তার জন্য আমি সরি...আমি ইচ্ছে করে করিনি।প্লিজ এমন করে থাকিস না.... শুনছিস আমার কথা..চোখ বন্ধ করে রেখেছিস কেন? আশ্চর্য.... কথা বল মেজাজ কিন্তু খারাপ হচ্ছে... 

তুর:(চোখ বন্ধ রেখে ই )আমি বাড়ি যাব....!!!

(ধ্রুবর খুব মায়া লাগল ওর এই ভয় লজ্জা মিশ্রিত মুখ টা দেখে আর মাত্র বলা কথাটা শুনে খুব হাসি পেলো)
ধ্রুব : যাবি..... আগে চোখ খোল ,সরি তো.... হুম.... 
(তুরের ডান হাতটা দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে) তুই কি কিছুই বুঝিস না....!!
তুর:(চোখ খুলে তাকায় ওর হাতের দিকে )প্লিজ বাড়ি চলেন.....
ধ্রুব : বোকা মেয়ে ঘুরতে যাব না আমারা... ওখান থেকে তো বাড়িই ফিরবো,তুই এভাবে থাকিস না ,আমি কি কাউকে কিছু বলেছি নাকি।
(তুর ধ্রুবর শেষ কথা টা শুনে আবারও চোখ বন্ধ করে ফেললো )
ধ্রুব : ওরে আল্লাহ রে...... (বিরবির করে)কিছু বলাই যায় না এই মেয়ে কে,এইটুকু তে এই অবস্থা বিয়ে হলে না জানি কি হবে....। 
হয়েছে..... হয়েছে.... আর কিচ্ছু বলবো না,চোখ খোল না হয় কিন্তু হাত ছাড়বো না।

তুর চোখ খুলে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ,ধ্রুব সামনে চলে যায় তুহিন ও রাগ করে ধ্রুবর পাশের সিটে বসে ,দুই ভাই বোনের কান্ড দেখে ধ্রুব মুচকি হাসি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয় চলতে শুরু করে গন্তব্যে......

গাড়ি ছুটছে তো ছুটছে তুর বাহিরে তাকিয়ে ভাবছে... 
কয়েক দিন ধরে কি হচ্ছে ওর সাথে... উনি কেন বার বার কোনো না কোনো ভাবে আমার কাছে এভাবে চলে আসছেন আর এলেই বা কেন এমন লাগে আমার? কেন আমি নিজের মধ্যে থাকি না?তখন কি বুঝার কথা বলল...?আমি কি বুঝি না....? 

এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল....

চোখ মেলে দেখে গাড়ি তে কেউ নেই ,তুর গাড়ি থেকে নামলো নেমে দেখে যে নদীর পাড়ের একটা বাজারের মতো জায়গায় ওদের গাড়িটা সাইট করে রাখা আছে ,,ধ্রবকে একটা লোকের সাথে কথা বলতে  দেখা যাচ্ছে।

ব্ল্যাক শার্ট, এ্যাস কালার প্যান্ট,শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গুটানো,ফর্সা হাতে কালো ব্যাল্টের ঘড়ি ,চোখে রোদ চশমা।ঘড়ি পড়া ডান হাতটি নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে,কোনো কারণে হয়তো বিরক্ত তাই কপালে কুচি জমে আছে,জাম রাঙা ঠোঁট দুটি নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে।তুর ওকে স্ক্যান করছে...লোকটা এতোটা পারফ্যাক্ট না হলেও পারতো...
একটু পরেই ধ্রুব তুরের কাছে এলো আর তুর অন্য দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সংযোত করার চেষ্টায়।
ধ্রুব : কি রে ঘুম ভাঙলো!
তুর :......... জি। 
ধ্রুব : ভালো,তো খুদা আছে পেটে না কি না খেলেও চলবে..? 
তুহিন:ভাইয়া আমার খুব খুদা লেগেছে চলো তাড়াতাড়ি..... 
ধ্রুব : চল....
তুর:কিন্তু আমরা এটা কোথায় এসেছি!!এটা কোথায় গোলাপ গ্রাম?এখানে তো ফুলের কোনো চিহ্ন ই নেই!!
ধ্রুব : হ্যা,আমরা এখন মাওয়া ঘাটে আছি,পদ্মার পাড়ে। 
তুর ::কিন্তু এখানে কেন? যেখানে যাওয়ার কথা ছিলো সেখানে না গিয়ে এখানে কি জন্য এসেছি?
ধ্রুব : এতো কথা না বলে চলতো....

মাওয়া ঘাট অনেক আগে থেকেই বিখ্যাত ইলিশ মাছ ভাজা এবং পদ্মার পাড়ে বসেই পদ্মার তাজা মাছ খাওয়ার জন্য,ইলিশ মাছ খাওয়ার জন্য যেতে হবে শিমুলিয়া ঘাট বা মাওয়া মাছ বাজারের পিছনে।সেখানে পচ্ছন্দসই ইলিশ মাছ টুকরো করে কেটে ভেজে দেয়।
ধ্রুব বাজারের পিছনে দিকে গিয়ে পছন্দসই মাছ কিনে রেষ্টুরেন্টে ইলিশ মাছ ভাজা, লেজ ভর্তা আরো কয়েক টা আইটেম রেডি করতে বলে,তো দোকানি অর্ডার মতো ওদের সামনে ধ্রুতই সব করে দেয় ,ইলিশ মাছের আইটেম এর সাথে নানা পদের ভর্তা ,বেগুন ভাজা আরো কিছু আইটেম অর্ডার করে,সাথে মাওয়ার বিখ্যাত রসগোল্লা ও আছে।তো তিন জনে ই খেতে বসে তুর নিচের দিকে তাকিয়ে ই পুরোটা সময় খায়,সব গুলো খাবার ই মুখে লেগে থাকার মতো টেস্টি।তুর ভর্তা গুলো খুব এনজয় করে ধ্রুব না থাকলে আরো একটু সস্থি নিয়ে খেতে পারতো।রসগোল্লাটা ও খুবই মজাদার তুহিনের নাকি খুবই ভালো লেগেছে বাড়ি ফেরার সময় নিয়ে যাবে....।
 তিন জনের  খাওয়া শেষে ওরা ঘাটে যায় ,সেখানে ধ্রুব আগেই একটা মাঝারি ট্রলার ঠিক করে ঘন্টা প্রতি ১১০০টাকা,সেটাতে ওঠে পরে.....শাড়ির জন্য ওঠতে  খুব প্রবলেম হয় কিন্তু ধ্রুবর হেল্প নিয়ে ওঠে যায়,যাই হোক ও খুব খুশি এমন নতুন অভিজ্ঞতার জন্য। নৌকা ছাড়ে উদ্দেশ্য লৌহজংএর মৃধা বাড়ি....যেতে যেতে পদ্মায় জেগে ওঠা অনেক চড় আছে সেগুলো ও দেখা হয়ে যাবে,তুর খুব খুশি খুশিটা ওর চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে ,যার ফলে সব ভুলে পদ্মার পানিতেই হারিয়ে যাচ্ছে,খুব ইচ্ছে ছিল নৌকায় চড়ে নদীর বুকে ভাসবে,কি সুন্দর দৃশ্য জীবনের প্রথম নৌকায় ওঠেছে দুই ভাই বোন,তাই খুব খুশি।তুহিন খুশিতে ওর আপুকে জড়িয়ে ধরেছে আপুকে ছেড়ে ভাইয়াকে ধরছে খুশিতে লাফালাফি করছে,কি করবে ভেবে পাচ্ছে না,ধ্রুবো ও তুহিনের খুশিতে মনে এক অন্য রকম প্রশান্তি পাচ্ছে। তুহিনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে ওর প্রেয়সির দিকে তাকিয়েছে...বাতাসের তোড়ে খোলা চুল গুলো এলোমেলো উড়ছে....চোখ মুখে ছড়িয়ে পড়েছে..... ডান হাত দিয়ে চুল গুলো বারবার সড়িয়ে দিচ্ছে চুড়ি গুলো রিনিঝিনি শব্দ তুলছে,মুগ্ধ হয়ে দেখছে প্রকৃতি ,গাঢ় কাজল কালো চোখে উপচে পড়া উচ্ছ্বাসতা চিলিক দিচ্ছে,পড়নের শাড়ি টা বাতাসের তোড়ে অগোছালো হয়ে গেছে বেশ অনেকটা ই অগোছালো ,ঠিক করতে বলতে হবে হয়তো খেয়াল নেই।
সামনে এগিয়ে যায়... ঠিক তুরের সামনে গিয়ে দাড়ায়....তাকায় ওর চোখের দিকে,
তুর ও না চাইতে তাকায় ধ্রুবোর চোখের দিকে,
দুজনেই তাকিয়ে আছে... ডুবে গেছে এক ঘোরে...
ডান হাত উচিয়ে মুখের ওপরের এলো চুল গুলো কানের পিছনে গুজে দেয়.... প্রেয়সীর চোখের মাঝে ডুবে যায়....আপনা আপনি ই মুখ দিয়ে বের হয়... 
      
   শোনো কাজল চোখের মেয়ে 
       আমার দিবস কাটে 
              বিবস হয়ে 
       তোমার চোখে চেয়ে... 

চারিদিকে বাতাসের শব্দ,নদীর কলধ্বনি,সামনে মাতাল করা রুপে এক রমনী তার কাছে ধরা না দিয়ে উপায় আছে.... 
আর অপর দিকে ওই সুদর্শন মাতাল পুরুষের হাস্কি সরে নিসৃত শব্দ ধ্বনি যে এই রমনীর ভেতর উলোটপালোট করে দিয়েছে.... ঢেউ তো তার মানে বইছে.... শরীরের রক্ত গুলো ছোটাছুটি করছে..... আবার ফিরে এসেছে সেই অনুভূতি যে অনুভূতি তার শরীরে মনে কাঁপুনি ধরিয়ে দেয়।

তাকিয়েই আছে দুজন দুজনের দিকে কারো চোখ সরানোর কোনো তাড়া নেই,এ যেন জীবনের প্রথম নতুন করে দেখা.. সারাজীবন দেখে ও এ দেখার শেষ হবে না....

তুহিন :ভাইয়া..... মৃধা বাড়ি কি? ওখানে কি আছে? 

দুজনের ঘোর কাটে ফিরে আসে নিজেদের মধ্যে।হঠাৎ ই ধ্রুব  তুরের কানের কাছে ঝুকে আসে,তুর চোখ বন্ধ করে ফেলে বুকের ভেতর থেকে হার্ট টা মনে হয় লাফিয়ে বের হয়ে যাবে....নিশ্বাসের গতিবেড়ে গেছে... 

ধ্রুব : ফিসফিসিয়ে বললো... শাড়িটা ঠিক করো...
আমি চাই না একজনের আমানত অন্য কেউ দেখোক........


চলবে....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.