ধ্রবতারা
গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)
কবির আর জহির দুই ভাই ই দুজনের দিকে তাকালো।বাড়ির বউরা ও জিসানের বাবার প্রস্তাবে হতোবাক,ওনাকে কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না।কবির:আসলে ভাই সাহেব মেয়ে আমার এখনো ছোট,আর সামনে ই এইচএসসি পরীক্ষা।এখনি এসব ভাবিনি.... আরো বছর দুইয়েক পরে মেয়ের পড়া কিছুটা আগালে তখন বিয়ের কথা চিন্তা করবো..।
জহির : আপনাদের ফেমিলির প্রতি যথেষ্ট সম্মান রেখে বলছি।আমরা জানি আপনাদের ফেমিলি কতো টা ভালো কিন্তু মেয়ে তো এখনো ছোটো।আর একটু বড় থাকতো তাহলে.....
জিসানের বাবা:আমি তো এখনি বিয়ে করিয়ে নিয়ে যেতে বলছি না,সব ঠিক ঠাক হলে ওদের আকদ করিয়ে রাখলাম পরে না হয় এক বছর পর অনুষ্ঠান করে উঠিয়ে নিয়ে যাব।
জহির,কবির এবং তাদের বউদের ও মতামত নিতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।
(ফজিলাতুন্নেছা) দাদি : শোনো আব্বারা মেয়ে যখন হইয়া জনমাইছে পরের ঘরে তো যাওন ওই লাগবো,আইজ না হয় কাইল।আর তুরে বড় ওইছে না কেডা কইছে ওর বয়সে আমার পরথম পোলা জহির হইছে।আর মাইয়া গো অতো পড়াশুনা কইরায়া কি হইবো আমরা কি ওরে দিয়া কাম কইরা খামু?দেখতে তো মাশাল্লাহ সুন্দর আছে আইজ কালকার যুগ ভালা না একটা কিছু হইলে কি করবা,হাতের লক্ষি পায়ে ঠেল্লো না।পোলা যেহেতু দেখতে হুনতে ভালা জানা শুনার মধ্যে আছে তো অমত কইরা কি করবা,দেহো চিন্তা কইরা তোমারা কি করবা আমার মতামত কইলাম....
জিসানের বাবা:খালাম্মার কথাটা ভেবে দেখেন আপনারা,আর পড়াশোনাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। যতোটুকু পড়তে চাইবে ততোই পড়তে পারবে।আমাদের বা জিসানের কোনো আপত্তি নেই।
জিসান : আঙ্কেল আমরা ওঠি আজকে...
ধ্রুবর ফেমেলি ডিনার না করিয়ে কিছুতেই ছাড়বে না ডিনার করিয়ে তবে ই ছাড়ে,আর ওনাদের ডিসিশন পরে জানাবে আশ্বাস দেন।
ওই দিকে ধ্রুব ওদের নিয়ে রাত দশটায় বাড়ি ফিরে,ততোখনে তুহিন গাড়ি তেই ঘুমিয়ে পড়ে,ঘুমিয়ে পড়ে তুর ও....
ধ্রুব বাড়ির সামনে এসে তুর কে ডেকে তুহিন কে কোলে নিলো,উপরে তুহিনের রুমে দিয়ে তারপর নিজের রুমে যায়।সে রাতে কারো সাথে কোনো কথা হয়নি।
শুক্রবার দিন তাই তুরের বাবা কবির সাহেব বাসায়ই আছেন এই একটা দিন ই অবসর সময় কাটান।উনি ভার্সিটির একজন বাংলা বিষয়ক প্রফেসর।পারিবারিক ব্যবসায় ওনার মন বসতো না সুযোগ পেলেই সাহিত্য চর্চা করতেন,কবিতা উপন্যাসের লিখা ও পড়ার প্রতি খুব আগ্রহী ছিলেন।বড়ো ভাই জহির বিষয়টি বুঝতে পেরে সবাই কে রাজি করান,আর সকল ধরনের সাপোর্ট করেন।আজ কবির রায়হানের লিখা অনেক উপন্যাস কবিতার বই আছে।এ ক্ষেত্রে তিনি খুব সুনাম অর্জন করেছেন।
ওনাদের ছোটো ভাই সমির সাহেব ভার্সিটিতে পড়া কালিন আর্মি অফিসার পোস্টে ট্রাই করেন কাউকে না জানিয়ে,ভাবেন কোনো প্রস্তুতি ছাড়া কিছুই হবে না।কিন্তু ওনার ভাবনা ভুল প্রমান করে ওনার বাসায় পোস্ট ম্যান জয়েনিং লেটার নিয়ে হাজির হয়।সবাই জানা জানি হয়,তখন কবির জহির দুই ভাই ম্যানেজ করে।বর্তমানে উনি একজন মেজর চাকরি সুএে সিলেটে থাকতে হয় পরিবার নিয়ে।আর বড়ো ভাই জহির উনি একমাত্র জান প্রাণ দিয়ে পারিবারিক ব্যবসা টা ধরে রেখেছেন।নিজের ছেলেকে ও ভিরাতে পারেননি।তবে তাদের বাড়ির খুব ই নাম ডাক আছে।
ছুটির দিন হলে সবাই বাড়িতে থাকেন।নাস্তার পরে লিভিং রুমে আলোচনা হচ্ছে।টপিক জিসান.....
ধ্রুবকে জিজ্ঞেস করে এবিষয়ে তার মতামত কি? ধ্রুব: পড়াশোনা করছে করতে দেন এখনই বয়স হয়নি বিয়ের।ভালো ছেলের কি অভাব পড়েছে নাকি।
জহির : ওনারা এখনই ওঠিয়ে নিয়ে যাবেন বলছেন না।আকদ করিয়ে রাখবেন পরে অনুষ্ঠান করে তুলে নিয়ে যাবেন।কালকে তুমি থাকলে ডেট ঠিক করে যেতেন।আমাদের কাছে ভালো ই মনে হলো এখন তোমার ফ্রেন্ড তুমি ই ভালো জানো কেমন হবে প্রস্তাবটা।
ধ্রুব : আপনারা সবাই রাজি?
জহির ,কবির ,বাড়ির সবাই মোটামুটি হ্যা সুচক জবাব দেয়।
ধ্রুব :তুর ও কি জানে?ওর কি মতামত?
দাদি:মাইয়্যা মাইনসের আবার কিয়ের মত অমত!!
কবির: না মা আমি আমার মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কিছু চাপিয়ে দিব না।ওর কথা ই শেষ কথা।
জহির : রাইমা...... যা তো তুর কে ডেকে নিয়ে আয়।
(ধ্রুব জানতো এমন কিছুই হবে,অপেক্ষায় আছে তুরের এক্সপ্রেসনের)
তুর আসলে ওকে ওর বাবা ওনার কাছে বসান।মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেন : মামুণি তোমার কাউকে পছন্দ আছে?
তুর মুহূর্তে ই ধ্রুবর দিকে তাকায় ,,ধ্রুব আগে থেকেই তুরের দিকে তাকিয়ে ছিল দেখার জন্য বুঝার জন্য।
জহির : মা বলো কোনো ভয় নেই,পছন্দ থাকলে বলো?
তুর ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে ই মাথা নাড়িয়ে নেই বুঝায়।
জহির : আমি জানতাম এমনই হবে ,আমাদের মেয়ে না।
কবির:আমরা যদি তোমার বিয়ে ঠিক করি তোমার কোনো আপত্তি আছে।
তুর :বাবা আমি এখনই কোনো বিয়ের কথা ভাবছি না,পড়াশোনা করতে চাই,কিন্তু তোমাদের মতের বাইরে আমার কিছু বলার নেই তোমরা যেটা বলবে সেটাই হবে।
(ধ্রুব ওঠে চলে যায় )
সবাই সময় নিয়ে আরো একটু ভেবে দেখতে চায়।আর ধ্রুবর মতামতটা ও জানতে চায়।
সবাই আরো একটা বিষয় কথা বলে তা হলো প্রতি বছরে এক সময় সব ভাই বোনদের শশুর বাড়ি দাওয়াত করে সাথে কিছু আত্মীয় স্বজনরা ও উপস্থিত থাকেন।ধ্রুব বাড়ি থাকায় সেটা এখন হবে।সে মোতাবেক সবাইকে দাওয়াত করা হয়েগেছে।ফাহিম ওর নানা বাড়ি থেকে ওর নানু আর দুই তিন জন কাজিন কে আনতে গেছে।আজকে আসছে অলরেডি রওনা হয়ে গেছে।আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠান আর ধ্রুবকে অনেক দিন পর দেখবে,তাই ওর নানু সাথে কাজিনদের এক সপ্তাহ আগেই নিয়ে আসছে।
দুপুরের দিকে ফাহিম ওদেরকে নিয়ে উপস্থিত। ধ্রুবর নানু ধ্রুবর বড়ো মামার দুই মেয়ে রাইসা(অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে)রিয়া(এইচএসসি নিউ কামার),ছোট মামার ছেলে আবির ফাহিম তুরদের সমবয়সী ,তার ছোট বোন ঐশি এসেছে।
ওনারা আসার পরে সবাই দুপুরের খাবার খায়।অনেক দিন পর নাতি কে দেখে ধ্রুবর নানু খুশিতে কেঁদে দেয়।মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বলে এবার আমার ভাইরে বিয়া করাই দিমু তাইলে আর কুনো হানে যাইতো না বউয়ের টানে ঘরে ই থাকব।ধ্রুবর দাদিও তাতে সায় দেন।তুর ওদের কে সালাম দিয়ে নানুর সাথে কথা বলতে আসে।কিন্তু ওনি কোনো মতে সালামের উত্তর নেয় আর কপাল কুচকে রাখে।
তাই তুর আর কোনো কথা বলতে পারেনি। কাজিনদের সাথে টুকটাক কথা হয়।তুরের কেন যেন মনে হয় ধ্রুবর নানা বাড়ির সবাই ই কেমন করে যেন কথা বলে তুরের সাথে।তুরের মনে হয় তারা ওকে পছন্দ করে না।
তুরের নানা বাড়ির কিছু লোকজন এবং কিছু সংখ্যক আত্মীয় স্বজনরা ও ওকে পছন্দ করে না।তাদের ব্যবহারের মনে হয়। (কিন্তু পছন্দ না করার মতো কিছু ও করেনি তাই কোনো কারণ খুঁজে পায় না।তাই মনের ভুল বলে উড়িয়ে দেয়।)
রাইসা আপু দেখতে খুব সুন্দর তুর তাকে খুব পছন্দ করে কিন্তু কেন যেন তুরের সাথে মিশে না।এই সব ভাবছে রাইসার দিকে তাকিয়ে।
তুর ওর রুমে বসে পড়ছে তখনই ফাহিম এসে বলছে:কিরে তোর নাকি বিয়ে?
:কে বললো??
:কেন সবাই কে তো দাদি বললো।
::দাদি বললেই হবে নাকি বাবা বড়ো আব্বু তো বলেনি!!
:যাইহোক,তোকে একটা কথা বলি?
:বল।
:আচ্ছা রিয়া কে তোর কেমন লাগে?
:(অবাক হয়ে তাকিয়েছে)কি কছ তুই এগুলা!!!
:কি কইছি বইন আস্তে বল।
:তুই কি ওরে....
:আমি কি বলছি ওরে কিছু.... করি,দুই লাইন বেশি বুঝুছ কেন?শুধু কেমন লাগে এটা বল?
:হুম বুঝছি.... এটা ই সেটা হবে,ভালোই লাগে একটু বেশিই স্মার্ট,তবে তোর মতো পাঠার সাথে যায়।
:এভাবে বলিস না একটু স্টাইলিস আর কি? কিন্তু ভালো মেয়ে বল?
:হ্যা....অনেক ভালো......এখন আমার মাথা খাস না,
পড়তে দে।রুম থেকে বের হো।
:বের করে দিচ্ছিস...... আর আসব না।
:বেশি ভাব নেইস না ঠিকি আসতে হবে নোটস নিতে।
সন্ধ্যা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা পড়েছে। এখন খুব খুদা লেগেছে তাই নিচে গেল। সবাই টেবিলে খেতে বসে গেছে তুরের লেট হয়েছে আসতে।টেবিলে বসে ই বলছে : বড়ো আব্বু তোমার আর বাবার হাতে খাবো আমি খুব টায়ার্ড আজকে।
দুজনেই হাসি মুখে খাইয়ে দেয়,অর্ধেক বাবার অর্ধেক বড়ো আব্বুর প্লেট থেকে।
রাইসা রিয়া নানু অবাক হয়ে তাকিয়েছে একে তো এসেই দুজনের মাঝে বসেছে তার ওপর বায়না।
তুর জহির কবির দুজনের প্লেট থেকেই খেয়ে ওঠে গেল।কিন্তু ওই তিন জনের কাছে এই সব আদেখলাপনা ছাড়া কিছুই লাগছে না।তারা ভাবছে তুর প্রচন্ড রকম বেয়াদব।আর সবাই ওকে বেশিই লাই দিয়ে ফেলছে।
ডিনারের পর দাদির রুমে ই নাতি রা একটু গল্প গুজব করে ঘুমাতে যায়।সবাই মিলে নানা ধরনের কথা বলছে হাসাহাসি করছে নানু রাইসা রিয়া ঐশি ওরা ও আছে আর আজকে ওর নানুর কোলে ধ্রুব ও শুয়ে আছে।ও কিছু বলছে না তবে শুয়ে শুয়ে মোবাইল টিপছে।কথায় কথায় তুর আর ফাহিম আবার ধরাধরি মারামারি লেগে গেছে।এটা দেখে রিয়া রাইসা নানু সবাই রেগে গেলো।
রাইসা : কেমন মেয়ে হ্যা....! ছেলেদের সাথে মারামারি করে!
নানু:এ্যাই...ছেড়ি... এ্যাই...এই গুলান কি করছ হ্যাঁ...এমন যুবতি মাইয়া হইয়্যা...ছেড়াগো লগে হাতাহাতি.... থাম কইতাছি... (ধমকে)
মুহূর্তেই তুর থেমে গেল,মুখে নেমে এলো কালো আধার চোখ টলমল করছে।ফাহিম ধ্রুব সহ সবাই স্তব্ধ।
দাদি:ব্যেয়াইন ওরা তো ছোড বেলাততে এমনই কিছু মনে কইরেন না।
নানু:হ....কি আর মনে করমু, কি..যুগ যে আইলো... অহন বড়ো বড়ো ধাড়ি মাইয়্যারা ও পোলাপাইন গো মতো বায়ানা করে ফালাফালি করে। আর আপনে গো শহরের কতা তো আলাদা,আমগো দিকে মাইয়্যারা বিয়ার আনতাজ হইলে বাপ ভাইগোর কাছ থেইকা দূরে ই থাহে....
কিন্তু এই মাইয়্যা জানি একটু বেশি করে ,শরম কম....
তুরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।রুম ছেড়ে বের হয়ে গেছে......
চলবে....