ধ্রবতারা
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)
বাড়ি ফিরার পর ,
তুর প্রতিদিনকার মতোই ছিলো।কিন্তু ধ্রুব বাড়ি ফিরে রাত দশটায়।তখন সবাই যার যার রুমে।ধ্রুব সোজা তুরের রুমে যায়।মাত্র রাতে শোয়ার পোশাক পরিধান করে ঘুমোনোর প্র'স্তু'তি নিচ্ছে তুর।
অমনি হু'র'মু'র করে ধ্রুব ঢোকে।সোজা তুরের পড়ার টেবিলে বই ঘা'টতে শুরু করে।তুর এমন আক'স্মি'ক'তায় পুরো কিং'কর্তব্য'বি'মু'ঢ় হয়ে যায়।হঠাত চিঠির কথা মনে পড়ে।ছু'টে ধ্রুবর কাছে যেয়ে ধ্রুবর হাতে ধ'রে।
"ভাইয়া কি হয়েছে কি খুঁজছ।"ধ্রুব এক ধা'ক্কা দিয়ে সরি'য়ে দেয়।
"কি হলো ভাইয়া?এমন করছো কেন?কি খুঁজছ? বলো আমাকে। "
কোনো জবাব নেই ও ওর মতো বই ঘা'টা'ঘা'টিতে ব্যস্ত।
তুর ভি'ষ'ণ ভাবনায় পড়ে ধ্রুবর এমন অ'দ্ভুত আ'চ'র'ণে।
ধ্রুব সব বই খাতা ঘা'টতে থাকে।হঠাত কি মনে করে ব্যাগে থাকা সব বই টেবিলে ঢালে।আর মোটা বইটা দেখতে পেয়ে হাতে তুলে নেয়।তুর তখনই ছো মে'রে বইটা হাতে নিয়ে নেয়।ধ্রুব প্র'চ'ন্ড রে'গে যায়।
"তোর সা'হ'স তো কম না।"
জো'র করে ওর কাছ থেকে বইটা নিতে চায়।কিন্তু তুর সব শ'ক্তি দিয়ে ধ'রে রা'খার চে'ষ্টা করে।
"কি আছে এই বইয়ের মধ্যে যে এমন জা'ন জী'বন লাগিয়ে দিচ্ছিস?"
ধ্রুব তুরের আচ'র'ণে অবাক।কতটা কি হলে ও আমার সাথে এমন শ'ক্তি লা'গাচ্ছে।নিশ্চয়ই কিছু আছে।যে করেই হোক দেখবো আমি।ওই ছেলের সাথে কি সম্পর্ক।
প্রচ'ন্ড রাগে তুরের গালে একটা চ'ড় বসিয়ে দেয়।শ'ক্ত হাতের চ'ড়ে তুর খাটের সাথে বা'রি লেগে নিচে পড়ে যায়।
ধ্রুব নিচ থেকে বইটা তুলে বইয়ের ভিতর থেকে চিঠিটা পেয়ে যায়।
এদিকে খাটের সাথে লেগে তুরের মাথা ফে'টে গেছে।ব্য'থার চো'টে মাথা ঝিম'ঝিম করছে।কপাল বে'য়ে র'ক্ত প'ড়'ছে।ধ্রুবর হাতে চিঠিটা দেখে রাশেদের কথা মনে পড়ে যায়।কতো সুন্দর করে বোন ডেকে বলেছে পৌঁছে দিতে যো'গা'যো'গ না হলে ম'রে যাবে।আসার সময় ফিরতি চিঠি ও নিয়ে আসতে বলেছে।আপুর ফোনটা ও নাকি নিয়ে নিয়েছে।কিন্তু ভাইয়ার হাতে পড়লে সেটা আর হওয়ার স'ম্ভা'বনা নেই।
এসব মনে হতেই ব্য'থা ভু'লে দ্রুত ওঠে,ধ্রুবর হাত থেকে চিঠিটা নিতে চাইছে।ততক্ষণে ধ্রুব চিঠির কয়েক লাইন পড়ে ফেলেছে।তুর আবারও চেষ্টা করছে চিঠিটা নেয়ার।তখনই রা'গে'র মাথায় ফ'ট করে তুরের চু'লের মু'ঠি ধ'রে।
"ভাবতে পারছি না, তুই সবার আ'ড়া'লে এসব করে বেড়া'চ্ছিস।"
তুরকে বিছা'না'য় ছু'ড়ে ফেলে।ওর চোখে যেন আজ তুরের র'ক্ত ও ধ'রা পড়ছে না।তুরের চোখের পানি ও যেন আজ ধ্রুবর মন ছুঁ'তে পারছে না।ধ্রুবর কোন হু'শ নেই পা'গ'লের মতো ছ'ট'ফ'ট করছে,আর জো'রে জো'রে নি'শ্বা'স নিচ্ছে।
ধ্রুব আবার পড়া শুরু করে।তুর চোখের পানি মুছে।হাতের উ'ল্টো পিঠে কপাল বেয়ে পড়া র'ক্ত মুছে উঠে দাঁড়ায়।
ধ্রুবর বা'হু'তে ধ'রে বলে,"ভাইয়া এমন করছো কেন?তোমাকে আমার বড্ড অ'চেনা লাগছে।প্লিজ ভাইয়া এমন কোরো না।অন্য কারো জিনিস ধ'র'তে হয় না ভাইয়া।এটা অন্য কারো আমা'ন'ত।প্লিজ ভাইয়া।আমার কথাটা শোনো একবার।"
ধ্রুব রে'গে ঠা'টি'য়ে আরেক চ'ড় বসায়।
"আমা'ন'ত নিতে শিখে গেছিস।আজ থেকে বুঝবি ধ্রুব কি জি'নি'স।কি করিনি তোর জন্য ,হুম।আর কতটা করলে তুই বুঝতি আমাকে।আমি ও দেখতে চাই কি আমা'ন'ত নিয়েছিস।কেন তোর এই আমা'ন'ত দেখতে,এতো বা'ধা দিচ্ছিস।"
তুর আবারও ধ্রুবর কাছে আসে। "ভাইয়া প্লিজ আমার কথাটা শোনো।তুমি যেম....ন..."
তুরের বা'হু'তে শ'ক্ত করে ধ'রে, ওর রুমের বারান্দায় রেখে দরজা আ'ট'কে দেয়।
তুর আর কিছু বলতে পারে না। রুমের জানালা দিয়ে শুধু ফে'ল'ফে'ল করে ওর নি'ষ্ঠু'র ধ্রুব ভাইয়াকে তাকিয়ে দেখছে।এই কি সেই ধ্রুব ভাইয়া,ওর চোখের পানি দেখলে যার বুকে ব্য'থা শুরু হয়ে যায়।নাহ...এতো অ'চে'না কেউ।তুর আরকিছু বলতে পারে না।এক আকাশ অভিমান জ'মা হয় মনে।একটা বার ওর কথাটা শুনলে কি হতো।
"আর কথা বলবো না আপনার সাথে।"মনের ব্য'থার চো'টে,শরী'রে'র ব্য'থার কথা টে'রই পাচ্ছে না।
ধ্রুব পুরো চিঠিটা পড়ে।
মাই প্রিন্সেস,
হৃ'দ'য় নিঙ'ড়া'নো অনেক অনেক ভালোবাসা নিও।জান তোমাকে না দেখে থাকতে আমার খুব ক'ষ্ট হচ্ছে।যেখানে একদিন না দেখলে মনে হয় পৃথি'বী'র সব অ'ক্সি'জেন আমার জন্য ফু'রি'য়ে গেছে।সেখানে কয়টা দিন তোমাকে দেখতে পারছি না।জান আমার মনে হচ্ছে আমার নি'শ্বা'স ব'ন্ধ হয়ে যাচ্ছে।আমি জানি তোমার মনের অ'ব'স্থা'টা কেমন।তুমি কোনো চিন্তা করো না।তোমার জন্য আমি সব করতে পারি।দরকার হলে সবার পায়ে ধ'র'বো।তোমার জন্য সবার সাথে যু'দ্ধ করতে ও প্র'স্তু'ত। তবু যদি রা'জি না হয় তোমাকে নিয়ে পা'লি'য়ে যাবো।অনেক ভালোবাসি ক'লিজা।তুমি শুধু এভাবেই পা'গ'লের মতো আমাকে ভালোবেসে যেও।তোমার ভালোবাসার জন্য ম'র'তে ও রা'জি।তোমাকে না পেলে এই দুনিয়া অর্থ'হী'ন হয়ে যাবে।তুমি আমার বাঁ'চা'র প্রে'র'ণা।আমার জীবনের আ'শা'র আলো।খুব শী'ঘ্রই দুজন মিলে সুন্দর একটা সংসার গ'ড়বো।আগামীকাল রাত দুইটায় তোমাদের বাড়ির পিছনে তোমার জন্য অ'পে'ক্ষা করবো।সা'ব'ধা'নে এসো জান।কতো কথা যে জ'মে আছে তা লিখে শে'ষ করতে পারবো না।কোনো এক রাতে এক বালিশে শুয়ে তোমাকে বুকে জ'ড়ি'য়ে সব শোনাবো।কাল কিন্তু তোমাকে অনেক আ'দ'র করবো সেদিনের মতো।কোনো বা'র'ণ শুনবো না।সেদিনের মতো তোমার ও'ষ্ঠে'র কো'ম'ল স্প'র্শ চাই।সেই গ'ভী'র স্প'র্শে সব ক'ষ্ট ভু'লে যেতে চাই। তোমাকে বুক জ'ড়ি'য়ে মনের সব জা'লা য'ন্ত্র'ণা মে'টা'বো। আর একটু মিস করো জান। এইতো আর বেশিক্ষ'ণ নেই।একদম কাঁদবে না কেমন।।আগামীকাল রাতে সব মন খা'রা'প একেবারে দূর করে দিব।আই মিস ইউ জান।আই লাভ ইউ সো মাচ।এ ডি'প কি'স ফর ইউ....।
তোমার হা'র্ট
রাশু
চিঠি টা পড়তে পড়তে ধ্রুব যেন আরো হিং'স্র হয়ে উঠছে।পড়া শেষে মনে হচ্ছে হৃ'দ'পি'ণ্ডটা কেউ খা'ম'চে টে'নে ধ'রে ছি'ড়ে ফে'লছে।মাথা ভ'ন'ভ'ন করছে।ল'জ্জা আর ঘৃ'ণা মি'শ্রি'ত অ'নু'ভূ'তি হচ্ছে।ভাবতে পারছে না।তুর অন্য পু'রু'ষের ছোঁ'য়া'য় অ'প'বি'ত্র হয়ে গেছে। ধ্রুবর চোখ র'ক্ত'ব'র্ণ ধা'র'ণ করেছে।চোখ ফে'টে যেন র'ক্ত' বের হবে।
"ছি'হ.. নিজের প্রতি ঘৃ'ণা লাগছে।একে ভালোবেসে দিন কা'টি'য়েছি।"
বারান্দার দরজা খুলে তুরের কাছে যায়।ডান হাতে শ'ক্ত' করে তুরের গালে চে'পে ধ'রে।দাঁ'তের সাথে লে'গে মুখের ভেতর এখানে ওখানে কে'টে যায়।মুখের ভেতর কিছুটা র'ক্ত'ও বের হয়ে গেছে ।প্রচ'ন্ড রা'গে ধ্রুবর কোনো হু'শ নেই।তুরের চোখ বে'য়ে পানি পড়ছে।
"কেন আমার ভালোবাসার দিকে তোর নজর পড়লো না?আমার মধ্যে কি কম'তি পেয়েছিস,যে অন্যতে ম'ত্ত হতে হলো?কেন আমার প্রতি তোর আ'ক'র্ষ'ণ অ'নু'ভ'ব হলো না?আমি ন'ষ্টা'মি করতে পারিনি বলে।তোর গা'য়ে হাত দিতে পারিনি বলে।সময় হতো বৈ'ধ ভাবেই তোর ইচ্ছে পূর'ণ করতাম।এই বয়সেই যখন এতো গা'য়ে'র জ্বা'লা।বলতি আমাকে।এখনি বিয়ে করে তোর জ্বা'লা মে'টা'তা'ম।তাই বলে, রাতের বেলা বাড়ির আঙ্গি'না'য় বে'শ্যা'গি'রি করবি।এতটুকু পর্যন্ত হলেও মানতাম।কিন্তু এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ও শুরু করেছিস।মা'ন স'ম্মা'ন সব নি'লা'মে উঠাতে চাইছিস তাই না?তোর মুখ দেখতে ও আমার ঘৃ'ণা লা'গছে।
ছি'হ...."
তুরকে ধা'ক্কা দিয়ে ,মাটিতে থু'থু ছি'টি'য়ে চলে গেছে।
ননির পুতুলের মতো আ'দ'রে গ'ড়া মেয়ে জী'ব'নের প্রথম এমন শ'ক্ত হাতের মা'র খে'য়ে এমন পরি'স্থি'তি'তে পড়ে জ্ঞা'ন হা'রা'য় আর ওখানেই লু'টি'য়ে পড়ে।পুরো শীতের রাত ফ্লো'রে পড়ে থাকে।
ধ্রুব রুম ছেড়ে বের হয়ে সবাইকে ডাকে।ডেকে বলে
"ফ্লাইং একাডেমিতে কিছু কাজ আছে। তাই কয়েক দিন আগে আগেই চলে যেতে বলেছে।আর আজকে এখনই চলে যেতে হবে ।"
সে রাতেই ধ্রুব ভু'ল বুঝে এক আকাশ ক'ষ্ট নিয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়।
চলবে....