আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

আগুন পাখির রহস্য (১৯৯৪) পর্ব-৩

Estimated read time: 9 min

আগুন পাখির রহস্য (১৯৯৪) পর্ব-৩
লেখকঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়



বিকেলবেলা কাকাবাবু সন্তুকে কোচবিহার শহরটা ঘুরিয়ে দেখালেন।
এককালে শহরটি যে বেশ সুন্দর ছিল, তা এখনও বোঝা যায়। সোজা, টানা-টানা রাস্তা, মাঝে-মাঝে একটা দিঘি, পুরনো আমলের কিছু-কিছু বাড়ি দেখলে রাজা-রানিদের আমলের কথা মনে পড়ে। আর রাজবাড়িটা তো রূপকথার রাজাদের বাড়ির মতন। একটু দূরে দাঁড়িয়ে সন্তুর মনে হল, যেন একপাল হাতির পিঠে চড়ে চলেছেন রাজার পাত্রমিত্র, একেবারে প্রথম হাতির ওপর বসে আছেন মহারাজ, মাথায় সোনার মুকুট, তাঁর কোমরে তলোয়ারের খাপে হিরে বসানো, পদাতিকরা কাড়া-নাকাড়া আর ভেঁপু বাজাচ্ছে। ইস, সন্তু কেন সেই যুগে জন্মাল না!


সন্ধেবেলা সার্কিট হাউসে ফেরার পথে কাকাবাবু বললেন, দ্যাখ সন্তু, ওকে একটু দূরে-দূরে রাখতে হবে। সর্বক্ষণ একজন পুলিশের কত্তা সঙ্গে থাকলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করা যায় না।
পরদিন সকালে কাকাবাবুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা হওয়ার পর অনির্বাণ নিয়ে এল জিপের বদলে একটা সাদা রঙের গাড়ি, সে নিজেও পুলিশের পোশাক পরেনি, বডিগার্ডও আনেনি সঙ্গে। যেন সে ছুটি নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছে।


বনবাজিতপুর গ্রামটার নাম কোনও ম্যাপে না থাকলেও জায়গাটা হেলাফেলা করার মতন নয়। জঙ্গলের ধারে বেশ পুরনো একটি গ্রাম, অনেক পাকা বাড়ি আছে, তার মধ্যে কয়েকটি একেবারে ভাঙা। একসময় কিছু অবস্থাপন্ন লোকের বাস ছিল এখানে। রাস্তাটাস্তা যথেষ্ট পরিষ্কার। একটা ইস্কুল আছে।


গ্রামের কাছে পৌঁছে অনির্বাণ বলল, এখানকার ইস্কুলের হেডমাস্টারের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে। চলুন আগে তাঁর কাছে যাই, অনেক কিছু শোনা যাবে। আজ ছুটির দিন, বাড়িতেও পাওয়া যাবে তাঁকে।
হেডমাস্টারের নাম অমিয়ভূষণ দাস, তাঁর বাড়িটি কাঠের তৈরি দোতলা, সামনে ফুলের বাগান। পুলিশের বড়কতাকে দেখে তিনি একেবারে বিগলিত হয়ে গেলেন। কাকাবাবু আর সন্তুর নাম উনি আগে শোনেননি, ওঁদের বিষয়ে কিছু জানেন না।


দোতলার ওপর অর্ধেকটা চাঁদের মতন বারান্দা, সেখানে নিয়ে গিয়ে তিনি বসালেন অতিথিদের। বারান্দায় অনেক বেতের চেয়ার ছড়ানো, মাঝখানে একটা শ্বেতপাথরের টেবিল, তার পায়াগুলো দেখে সন্তু চমকে উঠল। সেগুলো সব আসল হাতির পা। সন্তুর মনোেযোগ দেখে অমিয়ভূষণ বললেন, আমার ছোটভাই চা বাগানে কাজ করে, সে ওই টেবিলটা পাঠিয়েছে।


অনির্বাণ জিজ্ঞেস করল, বলুন অমিয়বাবু, এখানকার নতুন খবর কী?
অমিয়ভূষণ বললেন, এখানকার থানার দারোগা কাল এসে বলে গেল, রাত্তিরবেলা যে-জিনিসটা এখানকার আকাশে ঘুরপাক খায়, সেটা নাকি হেলিকপটার? গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করছে না। হেলিকপটার তো অনেকেই আগে দেখেছে। এখানে যেটা আসে সেটা থেকে আগুনের ফুলকি বেরোয়। তারপর হঠাৎ এক সময় অদৃশ্য হয়ে যায়।
অনিবার্ণ বলল, গ্রামের লোকরা যাই বলুক, আপনার কী মনে হয়?


অমিয়ভূষণ বললেন, আমার অনিদ্রা রোগ আছে, তাই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমোতে হয়। আমি বার দু-এক দেখেছি। আমি কিন্তু জিনিসটা না দেখার আগে হেলিকপটারের কথাই ভেবেছিলাম। কিন্তু চোখে দেখলাম অন্যরকম। যেন একটা উড়ন্ত হাঙর সারা গায়ে আলো ঝলসাচ্ছে, আর মাথা ও লেজের কাছ থেকে বেরোচ্ছে ফোয়ারার মতন আগুনের ফুলকি। হেলিকপটার তো এরকম হয় না।


অনিবার্ণ বলল, জিনিসটা এখানে তিন রাত্তির এসেছে। এখানকার আর্মির একজন কর্নেল সেই তিনবারই হেলিকপটার নিয়ে এখানে এসেছেন, সেটা আমি চেক করেছি।


অমিয়ভূষণ ভুরু কুঁচকে বললেন, তিনবার? না তো, অন্তত পাঁচ-ছবার এসেছে। হ্যাঁ, পাঁচবার তো নিশ্চয়ই।
কাকাবাবু বললেন, আর্মির হেলিকপটার ছাড়াও আবার অন্য কিছু আসে নাকি?


অনির্বাণ বলল, তা সম্ভব নয়। এঁদের ভুল হচ্ছে, তিনবারই এসেছে। মাস্টারমশাই, টোবি দত্তর খবর কী? ওর ছাদে এখনও সেই নীল আলো জ্বলে?


অমিয়ভূষণ বললেন, তা জ্বলে। আমার মনে হয় কী জানেন, টোবি দত্ত কোনও বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করে। অন্য কোনও গ্রহের প্রাণীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায়।


অনির্বাণ জিজ্ঞেস করল, অন্য কোনও গ্রহে প্রাণী আছে তা হলে?
অমিয়ভূষণ বললেন, নেই? সে কি মশাই? আকাশে লক্ষ-কোটি গ্রহ-নক্ষত্র আছে। তার আর কোথাও মানুষ নেই কিংবা অন্য প্রাণী নেই, শুধু পৃথিবীতেই আছে?
অনির্বাণ তাড়াতাড়ি ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল, না, না, আমি তা বলিনি। এত গ্রহ-নক্ষত্রের মধ্যে অনেক রকম প্রাণী তো থাকতেই পারে। কিন্তু এ-পর্যন্ত পৃথিবীর আর কোনও বৈজ্ঞানিক কোনও সন্ধান পাননি, টোবি দত্ত জেনে গেল? আলো জ্বালিয়ে তাদের ডাকছে?
অমিয়ভূষণ বললেন, হতেও তো পারে। একটা কথা ভাবুন তো, টোবি দত্ত যদি সত্যিই এটা আবিষ্কার করে ফেলতে পারে, তা হলে আমাদের কোচবিহারের কত নাম হয়ে যাবে। সারা পৃথিবীর বড় বড় বৈজ্ঞানিকরা এখানে ছুটে আসবেন!


এই সময় একজন কাজের লোক বাড়ির ভেতর থেকে নারকোল গুঁড়ো দিয়ে চিড়েভাজা মাখা আর চা নিয়ে এল।


কাকাবাবু চামচে করে খানিকটা চিঁড়েভাজা মুখে দিয়ে বললেন, বাঃ, দিব্যি খেতে তো! অমিয়বাবু, আপনার বাড়িতে আর কে কে আছেন?


অমিয়ভূষণ বললেন, এখন বাড়ি প্রায় খালি। আমার স্ত্রী স্বর্গে গেছেন। আমার ছোট ভাইয়ের কথা তো বললাম, চা বাগানে কাজ করে। এখন আমার সঙ্গে থাকে শুধু আমার ছোট মেয়ে মণিকা।


কাকাবাবু বললেন, ভারী সুন্দর বাড়িটা আপনার। আপনাদের গ্রামটাও নিরিবিলি, ছিমছাম, আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। ইচ্ছে করছে, এখানে তিন-চারদিন থেকে যাই। গ্রামে থাকার তো সুযোগ হয় না। এখানে হোটেল কিংবা ডাকবাংলোও নেই। আপনার বাড়িতে একখানা ঘর পেতে পারি কয়েক দিনের জন্য? কিছু ভাড়াও অবশ্যই দেব।


অমিয়ভূষণ জিভ কেটে বললেন, ছি ছি ছি, ভাড়ার কথা তুলছেন কেন? আপনারা অতিথি হয়ে থাকবেন। আমাদের গ্রামে যে থাকতে চাইছেন, এটাই
তো আমাদের সৌভাগ্য!


কাকাবাবু অনিবাণের দিকে ফিরে বললেন, তা হলে আমাদের সুটকেসদুটো সার্কিট হাউস থেকে আনাতে হবে যে!


অনির্বাণ বলল, সে আমি ফিরে গিয়ে পাঠিয়ে দেব। তা হলে এখন চলুন, টোবি দত্তর বাড়ির চারপাশটা একবার ঘুরে দেখি। তারপর সমর চৌধুরীর সঙ্গেও আপনার আলাপ করিয়ে দেব। বিকেলবেলা এখানে চলে আসবেন।


কাকাবাবুরা তখনকার মতন বিদায় নিলেন অমিয়ভূষণের কাছ থেকে।
গাড়িতে উঠে কাকাবাবু বললেন, আসবার সময় একটা ব্রিজ পার হয়ে এসেছি। এই গ্রামের পাশে একটা নদী আছে। চলো, সেই নদীটার ধারে গিয়ে একটু বসি।
অনির্বাণ জিজ্ঞেস করল, টোবি দত্তর বাড়ি দেখতে যাবেন না?


কাকাবাবু বললেন, না। শুধু-শুধু বাড়িটা দেখে কী হবে? রাত্তিরবেলা আলোটা দেখব।


নদীর ধারে গিয়ে কী করবেন?


কিছু করব না। নদীটা দেখব। সব সময়েই কিছু না কিছু করতে হবে নাকি?


গাড়িটা নিয়ে আসা হল নদীর ধারে। সরু নদী, দুপাশে বড় বড় পাথর, মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে স্বচ্ছ জল। স্রোত আছে। সন্তু কাছে গিয়ে এক আঁজলা জল তুলে নিয়ে দেখল বেশ ঠাণ্ডা।


কাকাবাবু একটা পাথরের ওপর বসে ক্রাচ দুটো নামিয়ে রেখে বললেন, আমাদের ছোট নদী চলে আঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে। এর পরের লাইনগুলো কী বলো তো অনির্বাণ?


অনির্বাণ বলল, এই রে, আমি তো বাংলা কবিতা পড়িনি। আমার ইংলিশ মিডিয়াম ছিল।


কাকাবাবু বললেন, বাঙালির ছেলে হয়ে তুমি এই কবিতাটাও জানো না? সন্তু, তুই বলতে পারবি?


সন্তু বলল, হ্যাঁ, পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি..


কাকাবাবু বললেন, ওই দ্যাখ তো, এখন কে নদী পার হচ্ছে?


অনির্বাণ চমকে উঠে বলল, ওই তো টোবি দত্ত।
নদীতে হাঁটু জলের বেশি নেই, হেঁটে নদী পার হয়ে আসছে একজন লম্বা মতন মানুষ, গায়ের রং কালো, মাথার চুল কাঁচা-পাকা। জিসের ওপর লাল রঙের গেঞ্জি পরা। হাতের মাল দেখলেই বোঝা যায়, লোকটির গায়ে প্রচুর শক্তি আছে।


লোকটির সঙ্গে একটি কুকুর। খুব বড় নয়, মাঝারি, কান দুটো ঝোলা, গায়ে প্রচুর চকোলেট রঙের লোম। কুকুরটা মহা আনন্দে জলের ওপর দিয়ে লাফাচ্ছে, ঝাঁপাচ্ছে।


টোবি দত্ত কাকাবাবুদের বেশ কাছাকাছিই এপারে এসে উঠল। এঁদের দিকে তাকাল না একবারও। এখানে যে কয়েকজন মানুষ রয়েছে, তা যেন গ্রাহ্যই করছে না সে। তার খালি পা, প্যান্ট হাঁটু পর্যন্ত গোটানো, কাঁধে ঝুলছে একটা ব্যাগ।


টোবি দত্ত ডান দিকে গিয়ে হাঁটতে লাগল নদীর ধার দিয়েই। কুকুরটাও সঙ্গে-সঙ্গে গেল খানিকটা, তারপর হঠাৎ ফিরে এল। জলের ধারে দাঁড়িয়ে আছে সন্তু, কুকুরটা হিংস্রভাবে ডাকতে ডাকতে তেড়ে গেল সন্তুর দিকে।


সন্তু প্রথমটা বুঝতে পারেনি, হাসিমুখেই তাকিয়ে ছিল কুকুরটার দিকে। হাত বাড়িয়েছিল আদর করার জন্য। কিন্তু কুকুরটা ঝাঁপিয়ে পড়ে কামড়াতে গেল তাকে।
সন্তু এক ঝটকায় ঠেলে দিল কুকুরটাকে।


সেটা একবার উলটে ডিগবাজি দিয়েই আবার উঠে সন্তুর বুকের দিকে এক লাফ দিল।
অনির্বাণ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, এ কী, কুকুরটা পাগল হয়ে গেল নাকি?
টোবি দত্তও থমকে গিয়ে ফিরে দাঁড়িয়েছে।
অনির্বাণ চেঁচিয়ে বলল, ও মশাই, আপনার কুকুর সামলান। ছেলেটাকে কামড়ে দেবে যে!
সন্তুর সঙ্গে কুকুরটার রীতিমত লড়াই শুরু হয়ে গেছে। কুকুরটা যাতে দাঁত বসাতে না পারে, সেজন্য ওর পেটে ঘুসি মেরে-মেরে দূরে ঠেলে দিচ্ছে, কুকুরটাও ফিরে আসছে সঙ্গে সঙ্গে। সন্তুর হাত বা পায়ে নয়, মুখেই কামড়ে দিতে চায় কুকুরটা।


কাকাবাবু প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে সোজা হয়ে বসে আছেন। একবার টোবি দত্তর সঙ্গে তাঁর চোখাচোখি হল। কী অসম্ভব ঠাণ্ডা আর স্থির সেই দৃষ্টি। চোখের যেন পলক পড়ে না।
টোবি দত্ত দুবার শিস দিল। তারপর ডাকল, ডন, ডন, কাম হিয়ার!


কুকুরটা তাতে ভ্রূক্ষেপও করল না।
অনির্বাণ একটা বড় পাথর তুলে নিয়েও ছুড়ে মারতে ভয় পাচ্ছে। যদি সন্তুর মাথায় লাগে।
সন্তু একবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে জলের মধ্যে হাঁচড়-পাঁচড় করে সরে যাওয়ার চেষ্টা করল। কুকুরটা এক লাফে উঠে পড়েছে সন্তুর ঘাড়ে।


সঙ্গে-সঙ্গে পর-পর দুবার গুলির শব্দ হল। কুকুরটা ছিটকে পড়ে গেল বেশ খানিকটা দূরে।
অনির্বাণ ঘুরে দেখল টোবির দিকে। কিন্তু গুলি সে করেনি। কাকাবাবুর হাতে রিভলভার। তাঁর নিশানা অব্যর্থ।


কাকাবাবু খানিকটা আফসোসের সুরে বললেন, কুকুর মারতে আমার খুব খারাপ লাগে। কিন্তু পাগল হয়ে গেলে না মেরে তো উপায় নেই।
টোবি দত্ত নদীতে নেমে গিয়ে মৃত কুকুরটাকে তুলে নিয়ে এল দু হাতে। কাকাবাবুর সামনে এসে দাঁড়াল।
অনির্বাণ কিছু বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই সে কাকাবাবুর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলল, আপনি ঠিক কাজই করেছেন। দু-তিনদিন ধরে আমার এই কুকুরটা অদ্ভুত ব্যবহার করছিল। সম্ভবত ওকে কেউ বিষ খাইয়েছে। ছেলেটিকে কামড়ে দিলে খুব খারাপ হত। আমার কুকুর আগে কখনও কাউকে এইভাবে কামড়াতে যেত না।


কাকাবাবু বললেন, এত সুন্দর দেখতে কুকুরটা! আমি খুব দুঃখিত।
টোবি দত্ত আর কোনও কথা না বলে সেই মরা কুকুর কোলে নিয়ে চলে গেল।
সও উঠে এসেছে জল থেকে। কাকাবাবু বললেন, দাঁতটাঁত বসাতে পারেনি তো? শরীরের কোথাও রক্ত বেরিয়েছে?


সন্তু বলল, না, সেসব কিছু হয়নি।
অনির্বাণ বলল, তবু একবার ডাক্তার দেখানো দরকার। পাগলা কুকুরের জিভের লালা লাগলেও মহা বিপদ হতে পারে। সন্তু, তোমাকে ইঞ্জেকশন নিতে হবে চোদ্দটা!


কাকাবাবু বললেন, আজকাল চারটে নিলেও চলে। একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই উচিত। কী ঝামেলা বলো তো, এমন চমৎকার নদীর ধারে বসে আছি, এমন সময় একটা পাগলা কুকুর এসে উপদ্রব শুরু করল!


সন্তুর জামা প্যান্ট সব জলে ভিজে গেছে। সে মুখে আর গায়ে হাত বুলিয়ে দেখছে, কোথাও কুকুরটা আঁচড়ে দিয়েছে কি না।
অনির্বাণ বলল, আমি তো দারুণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কুকুরটা যদি সন্তুকে কামড়ে শেষ করে দিত? টোবি দত্ত একটা পাগলা কুকুর সঙ্গে নিয়ে ঘুরছে!
কাকাবাবু বললেন, এই ব্যাপারে অন্তত আমি ওকে দোষ দিতে পারি না। পাগলা কুকুর তো মনিবকেও কামড়ে দেয়। ও নিশ্চয়ই জানত না কুকুরটা সত্যি পাগল হয়ে গেছে। ওর ধারণা, কুকুরটাকে কেউ বিষ খাইয়েছে।


অনিবার্ণ বলল, ওর কুকুরকে কে বিষ খাওয়াবে?
কাকাবাবু বললেন, তা আমি কী করে জানব! যাই হোক, চলো আগে কোনও ডাক্তারের কাছে যাই।
কোচবিহার শহরের দিকে না গিয়ে গাড়ি ছুটল অন্যদিকে। হাইওয়ের পাশেই এক জায়গায় সেনাবাহিনীর বিশাল ছাউনি। সেখানে ওদের নিজস্ব পোস্ট অফিস, হাসপাতাল সব আছে।
সেই হাসপাতালের ডাক্তার শৈবাল দাশগুপ্তের সঙ্গে অনির্বাণের অনেকদিনের চেনা। হাসপাতালে না গিয়ে শৈবাল দাশগুপ্তের বাড়িতে যাওয়া হল। সেখানে গিয়ে শোনা গেল, তিনি জলপাইগুঁড়ি শহরে গেছেন, একটু পরেই ফিরবেন।


শৈবাল দাশগুপ্তের স্ত্রী মালবিকাও ডাক্তার। তিনি বাড়িতেই রয়েছেন। খবর পেয়ে তিনি এসে সন্তুকে পরীক্ষা করলেন ভাল করে। তারপর বললেন, দেখুন, যতদূর মনে হচ্ছে, ছেলেটির কোনও বিপদ হবে না, ইঞ্জেকশনের দরকার নেই। তবে, আমি তো এই রোগের চিকিৎসা করি না, উনি এসে আর একবার দেখবেন। আপনারা বসুন না!


অনির্বাণ বলল, কর্নেল সমর চৌধুরীকে একবার খবর দেওয়া দরকার। আপনার বাড়ি থেকে টেলিফোন করা যায় না?
মালবিকা বললেন, হ্যাঁ, কেন যাবে না! আপনিই ফোন করুন।


এর মধ্যেই এসে পড়লেন ডাক্তার শৈবাল দাশগুপ্ত। ফরসা, পাতলা চেহারা, হাসিখুশি মানুষ। সব ব্যাপারটা শুনে তিনি সন্তুকে বললেন, জামা খুলে শুয়ে পড়ো। আমি আর-একবার দেখি!


তিনি সন্তুকে পরীক্ষা করে দেখতে-দেখতেই একটা ফোন এল। সেই ফোনে কথা বলে এসে তিনি জানালেন, যাক, ভালই হয়েছে। এই ঘটনাটা বনবাজিতপুরে ঘটেছে তো? সেখানকার টোবি দত্ত নামে একজন তোক একটা কুকুরের মাথা কেটে নিয়ে এসে হাসপাতালে জমা দিয়েছেন। কুকুরটা পাগল হয়েছিল কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে চান। হাসপাতাল থেকে আমাকে জানাল। টোবি দত্ত ঠিক কাজই করেছেন। কুকুর হঠাৎ পাগল হয়ে গেলে সেবাড়ির প্রত্যেকটি লোকের ইঞ্জেকশন নেওয়া দরকার। কাউকে আদর করে চেটে দিলেও তার জলাতঙ্ক রোগ হতে পারে।


কাকাবাবু বললেন, আপনি যে খুব ভয় দেখাতে শুরু করলেন।
ডাক্তার বললেন, না, না, সেরকম ভয়ের কিছু নেই। কালকেই কুকুরের মাথাটা টেস্ট করে জানা যাবে। আজ আমি একে অন্য একটা ইঞ্জেকশান দিয়ে দিচ্ছি।
এই ডাক্তার-দম্পতির এক ছেলে দার্জিলিংয়ে পড়ে। সন্তুরই সমবয়েসী। মালবিকা দাশগুপ্ত সন্তুর ভিজে জামা-প্যান্ট ছাড়িয়ে জোর করে নিজের ছেলের প্যান্ট, শার্ট পরিয়ে দিলেন। সন্তুর গায়ে দিব্যি ফিট করে গেল। তবে অন্য লোকের জামাটামা পরলে নিজেকেও অন্যরকম মনে হয়।


অনির্বাণ এর মধ্যে ফোন করল কর্নেল সমর চৌধুরীকে। তিনি সবাইকে অনুরোধ করলেন তাঁর বাড়িতে চলে আসতে। ওখানেই দুপুরের খাওয়াদাওয়া হবে।


ডাক্তার-দম্পতি সেখানে যেতে চান না। তাঁদের অন্য কাজ আছে। সমর চৌধুরী টেলিফোনে ওঁদের সঙ্গেও কথা বললেন, তবু মাপ চেয়ে নিলেন ওঁরা।
একটু পরেই আর-একটা ফোন এল। রিসিভার তুলে একটুক্ষণ কথা বলেই রেখে দিলেন শৈবাল দাশগুপ্ত। মুখটা বিকৃত করে বললেন, আবার একটা খুনের কেস এসেছে হাসপাতালে। একজন লোককে গলা মুচড়ে মেরে ফেলা হয়েছে।


অনিবার্ণ বলল, তৃতীয় খুন!


1 comment

  1. second ago
    test
অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.