আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা ( পর্ব-০৮ )

গল্প কন্যার ধারাবাহিক রোমান্টিক গল্পঃ ' এক গুচ্ছ মাধবীলতা ' পর্ব-০৮,এক গুচ্ছ মাধবীলতা,গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম),প্রেম কাহিনী,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 4 min
এক গুচ্ছ মাধবীলতা- গল্প কন্যা ( পর্ব-০৮ )

৮.
মাঠের ভেতরের দিকে যেতেই খেয়াল করলো সকালের দুইটা ছেলে মেয়ে,সেই মেয়েটা ও আছে।
ওদেরকে দেখে সবাই হাসি থামিয়ে নেয়।মধু আর কড়ি দ্রুতগতিতে মাথায় কাপড় তুলে নেয়।

"আসসালামু ওয়ালাইকুম চাচা।"
"ওয়ালাইকুম...

তুমি রহমতের মাইয়াডা না...!"

নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। সঙ্গে থাকা সকালের সেই আগু'ন্তকঃ কে চেয়ারম্যানের সাথে দেখে ভয় লাগছে।যদি চু'রি আর ধ্বা'ক্কা লাগার বিষয়টা বলে দেয়। তাহলে

নাক কান কাটা যাবে।এসব ভাবনা ভাবার মাঝেই আজমল শেখ প্রশ্ন করে,"তুমার নাম কি ? "

মধু মুখ খোলার আগেই হাসিব বলে উঠে,"মধু ওর নাম আব্বা...!"হাসিবের ঠোঁটের কোণে লেগে আছে মুচকি হাসি।

এদিকে পুনরায় এই মেয়েকে দেখে,এই মেয়ের মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানানোর ভ'ঙ্গিমা, মো'হনিয় কন্ঠস্বর,তার আকর্ষ'ণীয় নাম,বাড়ির প্রবেশদ্বার আর মাধবীলতা ফুল।এই সব কিছু কেমন যেন মনোমুগ্ধকর।যা প্রবল ভাবে পুরো স্বত্ত্বাকে গ্রা'স করছে।গলা শুকিয়ে আসছে।

মেয়েটির মুখের দিকে আবার তাকালো।রূপের ঝলকে চোখ যেন ঝ'লসে যাচ্ছে।তাকিয়ে থাকা দায় হয়ে পড়েছে।বুকের ভেতর থাকা হৃদয'ন্ত্রটা অসাভাবিক গ'তিতে ছুটছে।

মনে মনে ভাবছে,"হৃদপিন্ডটা কি বেনা'মি হয়ে গেলো নাকি!ওর কথা শুনছেই না! হুটহাট কেমন লাফালাফি করছে।শুধু কি আমার ই এমন লাগছে নাকি ওদের ও এমন হচ্ছে?"

আজমল শেখ মেয়েটির প্রতি হাসিবের অতি আগ্রহ আর আগ বাড়িয়ে কথা বলার ধরন দেখে,মেয়েটির দিকে ভালো করে দেখে।

মনে মনে ভাবে"সত্যি মাইয়াডা অনেক সুন্দরী।অসম্ভব রূপবতীই বলা চলে।এর লেইগ্যা ই আমার পোলাডা পাগলামি করে।এমন মাইয়্যা তো আমিই আমার বাপের জন্মে দেহি নাই,হের কি দো'ষ। "ভাবনা বাদ দিয়া নিজের ছেলের দিকে তাকায়।

আবারও ভাবনায় মশগুল হয়,"কোনো ভাবেই এই মাইয়্যা আমার পোলার মতো এমন গাধার সাথে যায় না।"পাশে দাঁড়ানো স্নিগ্ধর দিকে চোখ পড়তেই ভাবে,"হের লগে বেশ মানাইতো।বিদেশে থাইকা পুরাই বিদেশি গো মতন হইয়া আইছে।নাহ!!!কারো নজর পড়ার আগে যে করেই হোক আমার পোলারে দিয়া ই ঘরে তুলতে হইবো।এমন রূপসী পোলার বউ ঘরে থাকা ও সুনামের ব্যপার।"স্নিগ্ধর কথায় আজমল শেখের ভাবনায় ছেদ পড়ে।


"চাচা... এখন তাহলে যাওয়া যাক।"
"হ... বাজান চলো..."


সবাই ফিরতি পথ ধরলে মধু মাথা তুলে আড় চোখে স্নিগ্ধর দিকে তাকায়।অপর দিকে স্নিগ্ধ ও তখুনি মধুর দিকে তাকায়।

দুজনের চোখে চোখ পড়ে যায়।মধু ভয়ে ল'জ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।দৃষ্টিতে দৃষ্টি মেলাতে শুকনো ঢোক গিলে,স্নিগ্ধর গলা পুরোপুরি শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে।

গাড়ির কাছে গিয়ে চট করে ভিতরে প্রবেশ করে,আর ঢকঢক করে এক বোতল পানি খালি করে দেয়।
সকলে ভাবে এসিতে থেকে অভ্যাস খোলা জায়গায় অস্বস্থি হচ্ছে হয়তো।

আজমল শেখ :-স্নিগ্ধ বাবা তুমার কি খা'রাপ লাগতাছে?
"জি না চাচা।আর কোথায় ভালো জায়গা আছে চলেন দেখে আসি।"
"হ চলো...চলো..."


পুরো গ্রামের সব কিছু দেখে বিচ'ক্ষণ স্নিগ্ধ জহুরী চোখে।আজমল শেখ বেশ কয়েক বার জানতে চায় কোন জায়গা পছন্দ হয়েছে।স্নিগ্ধ নির্বিঘ্নে পরে জানাবে বলে দেয়।

আজমল শেখ চুপসে যায়।"ভাইয়ের সাথে টিকতে পারলে ও ধা'রালো মেধাবী ভাইপোর সাথে টিকা সম্ভব না।"
বাজারে একটা সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে গ্রামবাসী স্নিগ্ধকে স্বাগতম জানায়।কয়েকজন তো তাদের বাড়ি থেকে এটা ওটা নিয়ে এসেছে স্নিগ্ধর জন্য।

গ্রামের মানুষ গুলোর ভালোবাসা এমনই হয়, সহজ সরল প্রকৃতির।শহুরেদের মতো প্যাঁ'চ লাগানো ভে'জাল ক:ঠিন পাথরে মুঁ'ড়োনো না।বারবার স্নিগ্ধর বাবা আফজাল শেখের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সকলে।ঐ মানুষটার কাছ থেকে একজন ও বি'পদে খালি হাতে ফিরে নাই।বাবার প্রতি সকলের সহজ সরল মন্তব্যে,বাবার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দেখে স্নিগ্ধর গর্ব হচ্ছে।ভিষণ গর্ব হচ্ছে।এই মুহূর্তে একটি বার বাবা কে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।

সারাদিনের কা'র্যক্রম অতিক্রমের পর রাতে বাড়ি ফিরে।রাতের ভোজ সারতে খাবার টেবিলে বসে।আজমল শেখের স্ত্রী রাইতুন বেগম ও এক মাত্র কন্যা আরিশা শেখ অনেক স্নেহ যত্ন সহকারে নিজে হাতে স্নিগ্ধর জন্য অনেক কিছু রান্না করে।

হাঁসের মাংস,দেশি মুরগির ভুনা,কাতলা মাছের মুড়ি ঘন্ট,রুই মাছের কালিয়া,রুই মাছের দোপেঁয়াজা ও খাটি গরুর দুধের পায়েস,আরো বেশ কয়েকটা আইটেম।

এই সব দেশিও খাবার স্নিগ্ধর ভিষণ রকম পছন্দের।

কিন্তু দেশে ফেরার পর দেখে বাড়ির সবাই চাইনিজ,থাই,ইন্ডিয়ান খাবার খায়।বাড়িতে দেশি খাবারের গন্ধ ই নাই।

যেখানে চা'পা সভাবের স্নিগ্ধ দরকার ছাড়া কথাই বলে না।সেখানে মুখ ফুটে খাবারের কথা বলা তো প্রশ্ন ই উঠে না।

এতো খাবার দেখে স্নিগ্ধ চাচি আর বোন কে ধন্যবাদ জানায়।বহুদিন পর তৃপ্তি সহকারে খায়।

খাবার এক পর্যায়ে হাসিব উত্তে'জনায় বলে,"ভাই জানো,এই সব কিছু ওই মধু গো বাড়ির।মধু যেমন ফ্রেশ আর সুন্দরী,ওগো বাড়ির মাছ,হাঁস,মুরগি আর গাভীর দুধ ও ফ্রেশ ভালো।কোনো ভে'জাল নাই।গ্রামের সবাই তো লাইন ধরে বাড়ি থেকে ই সব কিছু নিয়ে যায়।বাজারে নেওনের আগেই শেষ।"

হাসিবের কথায় মনক্ষু'ন্ন হয় স্নিগ্ধর।ওই মেয়ের প্রতি অতি আগ্রহের কারণ কিছুটা হলে স্নিগ্ধ বুঝতে সক্ষম হয়।

"খাবার কখনো মানুষের মতো ফ্রেশ হয় না,হাসিব।কথাটা কেমন শোনালো না!মানুষ মানুষের মতো আর খাবার খাবারের মতো,দুটোই আলাদা জিনিস।আমার মনে হয় তোমার কথা বলার ধরন ঠিক করা উচিত।"

টেবিলে উপস্থিত সকলে প্রথমে হাসিবের অতি আগ্রহে লা'গাম ছাড়া কথা,পরে স্নিগ্ধর চা'বুক মা'রা কথা শুনে হতভম্ব বনে যায়।

হাসিবের মেজা'জ খা'রা'প হয়ে যায়,আজমল শেখের দিকে বড়ো বড়ো করে তাকায়। চুপসানো মুখে পুনরায় খেতে আরম্ভ করে।টেবিলে পিনপতন নীরবতা।

আজমল শেখ ছেলের দিক থেকে চোখ সরিয়ে স্নিগ্ধর দিকে তাকায়।বলে,"বাজান...!খাবার গুলা ভালো হয় নাই?"


"জি চাচা,খুবই টেস্টি।"

"হ...,এহন তো ফর্মা'লিনের লেইগ্যা কোন কিছুই খাওয়ার লাইয়েক নাই।রহমতের বাড়ির কোনো কিছুতেই ফর্মা'লিন দেয় না।একদম তাজা তুজাই মানুষ স্বচোক্ষে ধইরা নিয়ে আসে।হেরে বইলা দিছি যতদিন তুমি আছো অতদিন হেয় হের ফার্ম থেইক্কা যেন সব পাঠায়।খাও খাও বেশি কইরা খাও শুকাই গেছো বিদেশের ঘাসপাতা খাইতে খাইতে।"(ঘাসপাতা বলতে সালাদ কে বোঝানো হয়েছে)


স্নিগ্ধর কোনো দিক দিয়ে ই মনে হয় না ও শুকিয়ে গেছে।মিথ্যা মিথ্যি এসব আলগা পিরিতি মা'র্কা কথা স্নিগ্ধর পছন্দ না।তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ খেয়ে উঠে যায়।

স্নিগ্ধ কয়েকদিন ধরে গ্রাম,উপজেলা,উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,বাজার ,রাস্তা-ঘাট,স্কুল সব কিছু ভালো করে দর্শন করে।বাজার পেরিয়েই ঝংঙ্গলের কাছেই যে জায়গাটা আছে সেটা ভালো লেগেছে।ঝংঙ্গলটা পরিষ্কার করে মোটামুটি বেশ জায়গা নিয়ে হাসপাতাল নির্মাণ করা যাবে।ঝংঙ্গল পেরিয়ে ই বাবার ফেক্টিরির কাজ শুরু হয়েছে।কাছাকাছি হওয়ায় ভালো ই হবে।


আজকে ও বের হয়েছিল ফেক্টিরির কাজ কেমন চলছে দেখার জন্য।ঝংঙ্গল পেরিয়ে পুরোনো নিমতলার কিছুটা দূরে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়িতে বসেই,বাবাকে ফোন করে সব কিছু আলোচনা করে।কথপোকথনের এক পর্যায়ে খেয়াল করে নিম তলার দিকে এতক্ষণ বসে থাকা হাসিব রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।সামনে দুটো মেয়ে। বাবার কথায় আর মনোযোগ দিতে পারছে না স্নিগ্ধ।মেয়ে দুটোকে চেনাচেনা মনে হচ্ছে।কোথাও দেখেছে...।কে হতে পারে...?



চলবে......

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.