“রুশী! একটু ভালোবাসবি আমায়? প্লিজ!”
অয়নের এমন আকুল আবেদনে রুশী স্তব্ধ হয়ে গেল। তিন বছরের বন্ধুত্ব তাদের। অথচ রুশী কোনোদিন ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, তার সর্ব-প্রিয় বন্ধুটা তাকে নিয়ে মনে মনে এই চিন্তা করে। মুহূর্তেই রুশীর গা ঘিনঘিন করে উঠল।
তীব্র ক্রোধ সংযত করতে না পেরে খানিকটা চেঁচিয়েই বলল, “মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? পাগল হয়ে গেছিস?”
চারিপাশের সবাই ওদের দিকে তাকাল। রুশী খানিকটা অপ্রস্তুত হলো। চাপা স্বরে পুনরায় অয়নের উদ্দেশ্যে একই কথা বলল, “পাগল হয়েছিস? কী বলছিস এসব?”
সবাই আবারও নিজেদের কাজে মনোযোগী হলো। বেপরোয়া অয়ন খপ করে রুশীর এক হাত নিজের দু'হাতের মাঝে চেপে ধরে বলল, “হ্যাঁ, হয়েছি। আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি, রুশী।”
রুশী অয়নের হাত থেকে তৎক্ষণাৎ নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল। কিছুক্ষণ অয়নের সেই গভীর-বিধ্বস্ত নয়ন জোড়ায় তাকিয়ে সবটা বুঝে ওঠার চেষ্টা করল। তার বিশ্বাস হচ্ছে না কিছুই। এতদিনের বন্ধুত্ব! আর তার প্রিয় বন্ধুটা তাকে অন্য চোখে দেখে! রুশীর চোখ জোড়া ছলছল করতে লাগল। বিশ্বাস করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে তার। সত্যিই, ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
অয়নের চোখে চোখ রেখে রুশী বলল, “ফর গড'স সেক! ডোন্ট টাচ মি, অয়ন!”
অয়ন দু'হাত সামনে তুলে বলল, “ছুঁব না, ছুঁব না।”
রুশী সামান্য সময় নিয়ে নিজেকে খানিকটা সামলে নিল। দৃষ্টি নত করে জিজ্ঞেস করল, “কবে থেকে?”
অয়ন মিনমিনে কণ্ঠে তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল, “২৮ আগস্ট ২০১৯, নবীন বরণের দিন থেকেই।”
রুশী চকিতে অয়নের পানে তাকাল। সেদিনই তো অয়নের সাথে রুশীর প্রথম দেখা হয়েছিল, এরপর পরিচয়, অতঃপর বন্ধুত্ব; যা আজ প্রণয়ে রূপ নিল। রুশীর ভাবনার বাইরে ছিল এই বিষয়টা। ক্যাম্পাসের প্রথম দিনই সিনিয়রদের কাছ থেকে হ্যারাস হতে হতে বেঁচেছে অয়নের জন্য। তারপর থেকে একের পর এক বিপদে অয়ন তার ঢাল হয়ে ছিল। মন ভালো করার সবচেয়ে ভালো ঔষধ হয়ে উদাসী রুশীর সর্বক্ষণের সঙ্গী হয়ে ছিল অয়ন জুবায়ের। কিন্তু রুশীর চক্ষুগোচর ছিল এই গল্পের শুরুটাই।
নবীণ বরণের দিন, ল্যাভেন্ডার কালার তাঁতের শাড়ি পরিহিতা শুভ্র-গাত্র রঙা গোলগাল মুখশ্রীতে কাজল কালো বড়ো বড়ো অক্ষিদুটিতে দৃষ্টি থমকে যায় অয়নের। বুকের মাঝের প্রেম-সমুদ্রে উথাল-পাতাল শুরু হয়ে গিয়েছিল। অয়ন কখনোই কোনো রমণীকে দেখে এমন অনুভব করেনি। কিন্তু রুশী! তাকে দেখে অয়নের এমন লাগল কেন?
রুশীর রূপে তেমন কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া ছিল না। মেকআপের ভারি আস্তরণ ছিল না। নিষ্পাপ সেই মুখশ্রীতে কেবল ছিল সরলতা, একরাশ মুগ্ধতা। সেদিন রাতে আর বাড়ি ফিরে ঘুমোতে পারেনি অয়ন। মস্তিষ্কে সারাটাক্ষণ রুশীর বিচরণ ছিল।
পরের দিন থেকে রুশীকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করল। ধীরে ধীরে বন্ধুত্ব করল। এই বন্ধুত্বের পরিণয় যে প্রণয় হবে; তা বোধহয় রুশী না জানলেও অয়ন বেশ জানত। তাই, আজ ২৮ আগস্ট, ২০২২ খ্রিস্টাব্দেই, অয়ন রুশীকে একটা স্পেশাল ট্রিট-এর কথা বলে ক্যাফেটেরিয়াতে এনেছিল। ট্রিট তো বাহানা, অয়নের উদ্দেশ্য তো ছিল কেবলই তার লাভ কনফেস করা।
রুশীকে চুপ থাকতে দেখে অয়ন বলল, “আমাকে ভালোবাসবি, রুশী?”
রুশী গম্ভীর, থমথমে গলায় খানিকটা জোর খাটিয়ে উত্তর দিল, “না।”
অয়নের মুখটা কালো হয়ে গেল। সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলল, “সময় নে, না! একটু ভাব। এতদিন তো আমাকে দেখলি। আমাকে চিনিস তো! ভেবে উত্তর দে।”
“ভাবাভাবির সময় কিংবা ইচ্ছে, কোনোটাই নেই।”
“কেন? আমি কি খারাপ? না কি তোর দায়িত্ব নিতে পারব না?”
রুশী এতে নিরুত্তর রইল। কথা খুঁজে পেল না। অয়ন হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “আমাকে ভালোবাসলে কি ক্ষতি হবে তোর?”
রুশীকে এবারও চুপ থাকতে দেখে অয়ন আবারও বলল, “কী? ক্ষতি হবে?”
রাগে রুশীর সমগ্র মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “হ্যাঁ। ক্ষতি হবে। অনেক বড়ো ক্ষতি হয়ে যাবে।”
“কী ক্ষতি হবে তোর? আমি সব ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি। শুধু তোকে লাগবে আমার।”
রুশী ক্ষোভ মিশ্রিত কিছু বাক্য ছুড়ে দিল অয়নের দিকে, “কেন? দুনিয়াতে কি মেয়ে মানুষের অভাব পড়ে গেছে? না কি আমার মতো ‘ইজি টু গেট’ কাউকে পাসনি বলে? হ্যাঁ? তবে বলে দিচ্ছি, আমি এতটাও সহজলভ্য নই।”
অয়ন ধমকে থামিয়ে দিল, “চুপ! কী সব আজেবাজে কথা বলছিস? তুই আমার কাছে মোটেও সহজলভ্য নোস। অনেক সাধনার প্রিয় নারী আমার; যাকে পাবার সাধনা আমি এখনও করে যাচ্ছি।”
রুশী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল, “তার মানে আমাদের ফ্রেন্ডশিপ! পুরোটাই তোর আমাকে পাবার একটা নাটক ছিল, তাই কি?”
“রুশী! দ্যাখ! তুই আমাকে ভুল বুঝছিস। আমি মোটেও সেভাবে বলিনি। তুই আমার কথার ডাবল মিনিং বের করছিস।”
“ওহ্! জানিস, অয়ন? মা'র পর যাকে সবচেয়ে বেশি ভরসা করতাম, যার কাছে নিজেকে সুরক্ষিত মনে করতাম, আজ সেই মানুষটাই আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিল।”
“আমি তোর বিশ্বাস ভাঙ্গিনি।”
“ওহ্, রিয়েলি? দেন, নাও, ইন দিস মোমেন্ট, যা যা হচ্ছে, এসব কেন আমার আউট অব্ ইমাজিনেশন ছিল?”
“রুশী! তুই আমাকে ভালোবাসিস না? একটুও না? এ্যাই! আমার চোখে চোখ রেখে বল, না!”
রুশী অয়নের চোখে নিজের ছলছল দৃষ্টি স্থির করে বলল, “অ্যাজ অ্যা ফ্রেন্ড, আমি তোকে খুব ভালোবাসতাম।”
“ভালোবাসতাম? এখন বাসিস না?”
“বললাম না, ‘অ্যাজ অ্যা ফ্রেন্ড’! কিন্তু তুই তো আমাদের ফ্রেন্ডশিপটাই ব্রেক করে দিলি।”
“এখানে ফ্রেন্ডশিপ ব্রেকআপের কী আছে? ভুলে গেছিস, ফ্রেন্ডশিপ ইজ দ্যা ফার্স্ট স্টেট অব্ লাভ?”
“ভুলিনি। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ আমাদের জন্য হলেও, ভালোবাসাটা আমার জন্য নয়।”
“রুশী, তুই বাড়াবাড়ি করছিস। আচ্ছা! দু'জন ফ্রেন্ডের মাঝে কখনোই প্রেমের সম্পর্ক হয় না, নাকি? কত হচ্ছে!”
“অয়ন! সবার সাথে কম্পেয়ার করছিস আমাকে? ইউ নো, না? আমি বিয়েতে ইন্টারেস্টেড নই। আমার মা আর ছোটো দুটো বোনের আমি ছাড়া কেউ নেই। তাকে ফেলে রেখে আমি ভুলেও অন্য কারো সংসারে যেতে পারব না। আর বিয়ে ছাড়া কোনো রিলেশনে আমি জড়াতে পারব না।”
“আন্টি, ঐশী, নিশী আমাদের সাথেই থাকবে।”
“আমি বলছি না? বিয়ে করব না আমি! তবুও এত বাড়াবাড়ি করছিস কেন?”
“আচ্ছা, রুশী! তোর কাছে কি আমার ভালোবাসার বিন্দুমাত্র ভ্যালুও নেই?”
“না, নেই।”
“আমার রুশী পাষাণ ছিল না, বড্ড কোমল ছিল। কিন্তু তুই! তুই বড্ড সেলফিশ।”
“হ্যাঁ। আর ভবিষ্যতে আমার সামনে আসবি না তুই। আমি সেলফিশ, বুঝলাম। আর তুইও জেনে নে, তুই একটা বিচ্ছিরি রকমের চিটার।”
অয়ন চুপ থাকল। রুশী হাতের ব্যাগটা কাঁধে চেপে ফেরার রাস্তা ধরল। একটা ছেলে কখনোই একটা মেয়ের বন্ধু হতে পারে না। শেক্সপিয়ারের কথাটা মনে হতেই রুশী চাপা শ্বাস ফেলল। সে নিজেও যে অয়নের প্রতি বন্ধুত্ব ব্যতীত অন্য কারণে ভীষণ দুর্বল, তা স্বীকার করতে রুশী নারাজ।
২.
রুশী ক্যাফেটেরিয়া থেকে বেরিয়ে সোজা ক্যাম্পাসের পেছনের বকুল গাছ তলায় এসে দাঁড়াল। বুকের ভেতরের তাণ্ডব যে কী করে এতক্ষণ লুকিয়ে রেখেছিল! বুঝে উঠতে পারল না। মুখে হাত রেখে খানিকটা সময়েই ডুকরে কেঁদে উঠল। তার ভাগ্যে ভালোবাসা নেই। তার তো কেবল দায়িত্ব আছে। প্রচুর দায়িত্ব। মেয়ে হয়ে জন্মেও তার মায়ের ছেলের অভাব ঘুচানোর দায়িত্ব। ছোটো দুটো বোনের শখ-আহ্লাদ পূরণের দায়িত্ব। মা পরপর তিনবার মেয়ে সন্তান প্রসবের জন্য, মাকে ডিভোর্স দিয়ে বাবা অন্যত্র বিয়ে করেছে। মা সেদিন নিজেকে কথা দিয়েছিল, এই মেয়েই তার দায়িত্ব নেবে; মায়ের সেই কথা রাখার দায়িত্ব। একটা মেয়েও যে পরিবারের বোঝা কাঁধে তুলতে পারে, বাবাকে সেটা দেখিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব। যেখানে এত সব দায়িত্ব সেই ১৬ বছর বয়স থেকে নিয়ে ঘুরছে, সেখানে বিয়ে করার মতো বিলাসিতা রুশী করবে কী করে?
পাশেই একটা নদী বয়ে চলেছিল। রুশী কান্না থামিয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইল। আচ্ছা! তার জীবনটা কি আর পাঁচটা মেয়েদের মতো হতে পারত না? অন্য সব মেয়েদের মতো তার বাবা তাকে ভালোবাসলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যেত? যেই বয়সে মেয়েরা স্বপ্ন বুনতে থাকে, সেই বয়সে কেন তাকে অন্যের ইচ্ছে-আকাঙ্ক্ষার জন্য নিজের সাধ-সবের কবর দিতে হলো? বুঝে উঠতে পারে না রুশী। সে তো কখনোই কারোর ক্ষতি করেনি, তবে কেন তাকে কারো ভালোবাসার বলিদান করতে হলো? অয়নকে তো এত কষ্ট ও দিতেই চায়নি।
হঠাৎ কাঁধে কারো ছোঁয়া পেয়ে ও ঈষৎ চমকে উঠল। তড়িঘড়ি করে অশ্রু কণা মুছে পিছে মুড়তে মুড়তে বলল, “আম স্যরি, অয়ন! রিয়েলি ভেরি স্যরি! আমি সত্যিই তোকে হার্ট করতে চাইনি। হয়ে গেছে। অয়ন, প্লি..”
রুশী থেমে গেল তার পাশের এই মেয়েটিকে দেখে। বীনি চোখ-মুখে প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রুশী আবারও তার চোখের কোণ ঘেঁষে লেপটে থাকা অশ্রুবিন্দু মুছে নিল।
বীনি আতঙ্কিত ভঙ্গিমায় জিজ্ঞেস করল, ‘কী হয়েছে? আমাকে বল। কী হয়েছে?’
“ক-কী হবে? কিছু না রে।”
“সত্যি বল। বেঁচে যাবি। নয়তো মার খাবি। বল।”
অগত্যা রুশী সবটা খুলে বলল বীনিকে। সবটা শুনে বীনি কিছুক্ষণ হা হয়ে তাকিয়ে রইল। তারপরই রুশীকে মারতে লাগল। মারতে মারতে কিছু অশ্রাব্য গালিও দিল।
রুশী থামানোর চেষ্টা করতেই বীনি প্রায় চিৎকার করে উঠল, “মানুষ ভালোবাসা পায় না, আর তুই পেয়েও পায়ে ঠুকরে দিচ্ছিস?”
রুশী উদাস গলায় বলল, “আর কী করার আছে আমার? আমার এমন একটা জীবনে আমি ওঁকে জড়াতে চাই না।”
বীনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুশীকে নিয়ে গাছের নিচেই বসে পড়ল। তারপর বলল, “আমরা মানুষ না! বড্ড অদ্ভুত। ভুল মানুষকে ভালোবাসি। অথচ সত্যিকারের ভালোবাসার মূল্য দিই না। আচ্ছা! তুই যে আন্টি, ঐশী আর নিশীর কথা ভাবছিস। ওদের জন্য বিয়ে করতে চাচ্ছিস না। এগুলো যে কতটা অযৌক্তিক, বুঝিসনি? তুই কি সত্যিই অবুঝ?”
“মানে?”
“এই ধর, আল্লাহ না করুক, তোর কিছু হয়ে গেল, তখন তাদের কী হবে?”
“এভাবে বলিস না, প্লিজ। আমি নিজের জন্য না, কেবল তাদের জন্যই বাঁচতে চাই।”
“শোন, সবার ভাগ্য আগে থেকেই ঠিক করা আছে। তোর মৃত্যু আজ লেখা থাকলে, কেউ আটকাতে পারবে না। কিছুদিন তোর ফ্যামিলি শোক পালন করবে। তারপর আবারও সব আগের মতোই হয়ে যাবে।”
“কিচ্ছু আগের মতো হবে না। তুই ভালো করেই জানিস বীনু, আমি আমার ফ্যামিলির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।”
“সেই তো! তোর বাবার চলে যাবার আগে তো তোদের ফ্যামিলিতে কেবল তোর বাবাই রোজগার করত। এরপর...”
“তুই কী বলতে চাইছিস? আমি যেই সিচুয়েশন ফেইস করেছি, সেম সিচুয়েশন ঐশী কিংবা নিশীও করুক?”
“আমি একদমই তা চাইছি না। আমি তোকে বোঝাতে চাইছি, সৃষ্টিকর্তা সবার ভাগ্য আগেই লিখে রেখেছেন। যার ভাগ্যে যতটুকু আছে, সে ততটুকু পাবেই। কম কিংবা বেশি নয়; একজ্যাক্ট অতটুকুই। তুই বিয়ে করলেও এতে কোনো চেঞ্জ আসবে না। তাছাড়া, প্রতিটি মানুষই এক সময় এসে ক্লান্ত হয়ে যায়, জীবনের ভার নিতে পারে না। তুইও পারবি না, তখন অয়নের কাছ থেকে তুই মেন্টালি সাপোর্ট পাবি।”
“কিন্তু...”
“আর কী কিন্তু আছে?”
“আমার মায়ের নিজেকে দেওয়া কথাটার কী হবে?”
“ধুর ছাগল! তোর মা কি তোকে একবারও বলেছে, বিয়ে না করতে? কী? বলেছে?”
“বলেনি।”
“তবে?”
“এ্যাই, বীনু! সত্যি বলছিস? বিয়ে করব?”
“দ্যাখ, রুশী! অয়নকে কষ্ট দিস না। ও খুব ভালো। এখন যদি তোর থেকে রিজেক্টে হয়ে ঐ হারামজাদা সুইসাইড করতে যায়?”
“এসব বলিস না, বীনু!”
“এসব সত্যি। ভালো সবাই বাসতে পারে না। যারা বাসতে পারে, তারা মূল্য পায় না। বুঝলি? প্রাকৃতিক নিয়ম এটা। তুই অন্তত এই নিয়মটা ভেঙে দে।”
রুশী অশ্রুসজল নয়নে বীনির দিকে তাকাল। তার ঠোটে মিশে আছে প্রাপ্তির হাসি।
৩.
মায়ের কাছে আচ্ছা বকুনি খেয়েছে রুশী, যখন তাকে সবটা জানাল। নিজেদের সুখের জন্য মেয়ের সাথে অবিচার কখনোই করতে পারেন না উনি। রাতের খাবার খেয়েই রুশী নিজের রুমে চলে গেল। নিজেদের বলতে এই বাড়িটা ছাড়া আর কিছুই নেই। তার নানাভাই মারা যাবার আগে এটা তার মায়ের নামে লিখে দিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই থাকে তারা।
রুমের জানালাটা খট করে খুলে ফেলল রুশী। ঝড়োয়া হাওয়া বইছে। এটাও যেন রুশীর আজ ভালো লাগছে ভীষন। নিকষ কালো অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশে হঠাৎ বজ্রপাত হলো। সেই আলোতে বাড়ির সামনের রাস্তার মাঝে একটা সাদা শার্ট পরিহিত সুঠাম দেহের পুরুষকে দেখে রুশী তব্দা খেল। অয়ন! বিধ্বস্ত, এলোমেলো হয়ে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। লালচে দৃষ্টি তার রুশীর ঘরের জানালার দিকে। রুশীকে নিজের দিকে তাকাতে দেখেই অয়ন হাসল। জোরে-সোরে বলল, “ভালোবাসি, রুশী।”
রুশী অবাক, স্তব্ধ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে তাকিয়ে রইল এই পাগল ছেলের দিকে। দ্রুত ফোন বের করে অয়নের নম্বর ডায়াল করল। অয়ন রিসিভ করতেই বলল, “কী সমস্যা তোর? এই ঝড়-বৃষ্টির সময় এখানে কী?”
অয়ন ওপাশ থেকে শুধু বলল, “ভালোবাসি।”
“অয়ন! বাড়ি ফিরে যা।”
“ভালোবাসি।”
“অয়ন! থাপ্পড় খাবি।”
“ভালোবাসি।”
“অয়ন! দ্যাখ! ভালো হচ্ছে না।”
“ভালোবাসি।”
“অয়ন!”
“ভালোবাসি।”
অতঃপর রুশীর দুচোখ বেয়ে সুখ-অশ্রু নামক কিছু জল ঝরতে লাগল। অয়নের দিকে ছলছল নয়নের তাকিয়ে ওষ্ঠে হাসির রেখা নিয়ে ফোন কানে রেখে বলল, “ভালোবাসি, অয়ন।”
সমাপ্ত