আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্ব ১৩)

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ১৩ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 6 min
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্ব ১৩)


"আপনার না কাজ আছে? আপনি কাজ রেখে এখানে কি করছেন?" ঢোক গিলে বলল তৃষ্ণা।
জায়ান কপালে হাত বুলিয়ে রাগী চক্ষে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা থেকে থেকে শুকনো ঢোক গিলছে।

জায়ান শক্ত গলায় বলে," এই মেয়ে তোমার প্রবলেম কি?"
তৃষ্ণা ভয়ে শাড়ির আঁচল শক্ত করে চেপে ধরে বলল," আপনি কি বেশি ব্যথা পাইছেন? আমি না আসলে ভূত ভেবে চামচের বারি মেরে ভূত তাড়া চ্ছিলাম।"

"আমাকে তোমার ভূত মনে হলো!" ভ্রু কুঁচকে বলল।

" না মানে আসলে ভুলে আর ভয়ে উল্টোপাল্টা ভেবেছি। ক্ষমা করেদিন।" অসহায় মুখ করে বলল তৃষ্ণা।
জায়ান আগুন চক্ষু মেলে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। ওর রোমান্টিকতার বারোটা বাজিয়ে এখন ক্ষমা চাওয়া হচ্ছে। ফাজিল মেয়ে।

"কফি দাও।"ধমক দিয়ে বলে উঠল জায়ান।

তৃষ্ণা ধমক খেয়ে থতমত খেয়ে গেল। আর এলোমেলো হাত মেলে তাড়াতাড়ি মগে কফি ঢালতে গিয়ে নিজের পায়ে গরম কফি ফেলে দিল।

কেবল চুলায় থেকে নামিয়ে ছিল আগুন গরম কফি। কফি পায়ে পরতেই তৃষ্ণা মৃদু আর্তনাদ করে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল। জায়ান তৃষ্ণার এমন বেখেয়ালি পনা দেখে রাগান্বিত চক্ষে একবার তৃষ্ণা মুখশ্রী দেখে পায়ের দিকে তাকাল। ফর্সা পায়ে গরম কফি পরতেই লাল বর্ণ ধারণ করেছে।
 
জায়ান বিড়বিড় করতে লাগল,"এ কাকে আমি কফি করার জন্য পাঠিয়ে ছিলাম! এ আমার সেবা করতে এসে নিজেই রোগী হয়ে গেল!!"

নিজের কপালে এখন নিজেই বারি মারতে ইচ্ছে করছে জায়ান এর।


"একটা কাজও ঠিকমতো করতে পারো না! তোমাকে কাজ দেওয়াটাই আমার ভুল হয়েছে। দিলে তো নিজের পা পুড়িয়ে।"

তৃষ্ণা দাঁতে দাঁত চেপে নিজের ব্যথা সহ্য করার আপ্রান চেষ্টা করছে। কাঁপা কাঁপা হাতে কফির মগ জায়ানের দিকে বারিয়ে দিল তবুও। জায়ান তৃষ্ণার হাত থেকে কফি না নিয়ে তৃষ্ণা কে পাঁজকোলে তুলে নেয়। হকচকিয়ে তৃষ্ণা কফির মগ দ্রুত পাশে রাখে। আতংকে উঠা গলায় বলে উঠে," আপনি কি পাগল আমাকে পুড়িয়ে মারতে এভাবে কোলে নিতে আসছেন?"

" নিজের ভুলে পা পুড়িয়েছো আমি না হয় গা পুড়িয়ে দিব। সমস্যা কি সেই এক‌ই কষ্ট পাবে‌।"
" নামান আমাকে আমি আপনার কোলে থাকব না।"

" আর আমি নামাবো না।"

" আপনি সব কিছুতে জোর করেন কেন?"

" তুমি করতে পারো না তাই !"

তৃষ্ণা গাল ফুলিয়ে চুপ করে র‌ইল। জায়ান তৃষ্ণাকে কফির মগ হাতে নিতে বলে রুমের দিকে পা বাড়াল।


আয়ান আজ সারাদিন বাসার বাইরে ছিল। আজ বাসায় আসার ইচ্ছাই ছিল না কিন্তু জেসমিন বেগম এর কল এ অতিষ্ঠ হয়ে বাসায় এসেছে। ড্রয়িং রুমে পা রাখতেই জায়ানের কোলে তৃষ্ণা কে দেখে ওর মেজাজ টাই খারাপ হয়ে যায়। আয়ান সোফার হাতল ধরে রাগ কিড়মিড় করতে লাগে।

ভাই তো দূরে ছিল তৃষ্ণার থেকে তাহলে এসব কি দুজনে এতো ঘনিষ্ঠ হয়ে আছে কেন? আর ভাই তৃষ্ণা কে নিজের রুমে নিয়ে যাচ্ছে কেন? কথা তো ছিল আলাদা রুমে থাকবে দুজন। কি হচ্ছে এসব?

একদিন দুইদিন এখন থেকে কি তাহলে দুজনে এক রুমে এক বিছানায় থাকবে পার্মানেন্টলি?

আয়ান নিজের রুমে এসে দেখে উষসী ফোনে ভিডিও কলে কথা বলছে নিজের ফ্রেন্ড সার্কেলের সাথে। উষসী আয়ান কে দেখে ফট করেই কল কেটে দেয়।

আর আহ্লাদ গলায় এগিয়ে এসে বলে,"তুমি তো আজ আসবে না বলেছিলে!"

" কেন এসে তোমায় বিপদে ফেলে দিলাম মনে হয়!"

" কি বলছো বিপদে ফেলবে কেন? আমি তো তোমাকে আসতেই বলছিলাম তুমিই তো আসবে না বললে। তুমি আসছো আমি কত খুশি হয়েছি জানো?"

" সরো তো তোমার ন্যাকামি বিরক্তকর লাগছে।"

"কার রূপে আবার ফাসলে যে আমাকে বিরক্ত লাগছে!"

আয়ান সরে আসতে চাইলে উষসী আয়ানের হাত ধরে আটকে বলে,"সেদিনের ব্যবহার কিন্তু আমি এখনো ভুলিনি আয়ান। তুমি আমায় আঘাত করেছিলে। এখনো আমি কাউকে কিছু জানায়নি। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিলে এসব তোমার মাকে জানাতে বাধ্য হব।"

"তুমি আমাকে থ্রেট দিচ্ছো?"

"সাবধান করছি। আমায় ঠকানোর চেষ্টা করো না। না হলে তোমার সর্বনাশ করতে আমি দুইবার ভাববো না।"

"তোমারে ধমকিতে আমি আয়ান ভয় পাবো! ভাবলে কি করে? যা খুশি করে নাও। তোমাকে বিয়ে করেছি এই বেশি। এছাড়াও আমার ব‌উ হওয়ার কোনো যোগ্যতা নাই তোমার।"

"আমি তোমার মত একটা ছেলেকে বিয়ে করছি এটাই তোমার সাত কপালের ভাগ্য। না হলে কে বিয়ে করতো তোমার মতো চরিত্রহীন লম্পট ছেলেকে? আর তুমি আমায় বাধ্য হয়ে না নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য বিয়ে করেছো। আমার বাবা তোমাদের পাশে না থাকে তোমরা কবে মাটির সাথে মিশে যেতে। জায়ানের উপায় দুর্বল ছিলাম আমি জায়ান এর কাছে পাত্তা না পেয়ে আমি তোমায় বিয়ে করেছি। শুধু ওর মত দেখতে বলে। না হলে তোমার কোন যোগ্যতাই ছিল না আমার পাশে দাঁড়ানোর। আজ তুমি জায়ানের মতো চেহারা পেয়েছো বলেই আমাকে বিয়ে করতে পেরেছো। তোমার তো কোনো যোগ্যতাই নাই নিজে কিছু করার শুধু আছে মেয়েদের দিকে নিকৃষ্ট নজর দেওয়া আর তাদের ভোগের বস্তু ভাবা।"
রাগে আয়ান উষসী'র গাল চেপে ধরল। উষসী ধাক্কা দিয়ে আয়ান কে নিজের থেকে সরিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল।


"এখনো পুরানো নাগরের প্রতি তোর টান যায়নি। তুই আমার সামনে জায়ানের গুন গান গাইছিস! তোকে তো আজ আমি মেরেই ফেলব।"

এগিয়ে ধরতে যাবে তখনি রুমে প্রবেশ করে জেসমিন বেগম দুজনের এমন রেষারেষি দেখে তাড়াতাড়ি এসে আয়ানকে ধমক দেয়।

আয়ান রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বাথরুমে ঢুকে যায়।

জেসমিন বেগম উষসীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে? উষসী কিছু না বলে বিছানায় শুয়ে পরে।

আয়ান বেরিয়ে আসতেই জেসমিন বেগম তাকে তার রুমে যেতে বলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আয়ান নিজেও একটু পর মায়ের রুমে এসে উপস্থিত হয়।


তৃষ্ণাকে বিছানায় বসিয়ে জায়ান বরফ আনতে যায় একহাতে কফি নিয়েই।

ফিরে এসে তৃষ্ণার পা টেনে বরফ দিতে দিতে বলে,"তোমায় একটা কাজ দিলাম। উল্টো তুমি আমার দশটা কাজ বাড়িয়ে দিলে। কোথায় আমার হেল্প করবে আমার কাজ কমিয়ে দিবে। তা না ঝামেলায় ফেলে দিলে।"
তৃষ্ণা কাঁচুমাচু মুখ করে পা টেনে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। স্বামী হয়ে জায়ান ওর পা ধরেছে ও লজ্জায় পা টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে। জায়ান সেটা বুঝতে পেরে একটা ধমক মারলো। তৃষ্ণা কেঁপে উঠল।

"পা টানছো কেন? দেখছো না বরফ লাগাচ্ছি! এমনিতে আমার রোমান্টিকতার বারোটা বাজিয়েছো। এখন সেবা করতে ও দিবানা। পায়ে ফোসকা ফেলে আমাকে আরো ভোগান্তি করতে চাচ্ছো?"

" আমি ইচ্ছে করে আপনাকে আঘাত করিনি।"

"আমার গায়ে কেউ টোকা দেওয়ার সাহস করতে পারে না। আর তুমি আমায় যখন তখন মারার হুমকি দিচ্ছো এবং কি মেরেও দিচ্ছো!"

"ওসব তো ভুলে করেছি ইচ্ছে করে করে নি সত্যি।"

"তোমার সেবা যত্ন করতে করতে আমার কফি ঠান্ডা শরবত হয়ে গেছে। ওদিকে দেখো ১১:৪৫ বাজে এখন রাত জেগে আমার কাজ করতে হবে। বউয়ের সাথে যে একটু শান্তিতে ঘুমাবো সে উপায় ও রাখলে না।"

"এত রাত হয়ে গেছে? আপনি যদি সারারাত কাজ করেন তাহলে তো সারা রাতে ঘরে লাইট জ্বালানো থাকবে আমি ঘুমাবো কি করে?"

"এজন্যই তো তোমার জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ করেছিলাম। তুমি তো এখানে থাকার বায়না ধরলে।"

"রাতে কি কাজ করেন? আপনি কি চাকরি করেন?"

"সেসব তোমার না জানলেও চলবে। শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো আমি কাজ করি।"

" আমি ঘুমাতে পারব না।"

" তাহলে জেগে আমার সাথে প্রেম করো। করবে?"

তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেলল।
জায়ান ওর মাথায় টোকা মেরে নিজের জায়গায় গিয়ে বসল। তৃষ্ণা শুয়ে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে তার ফাঁকে ফাঁকে একটু পর পর তৃষ্ণার দিকে তাকাচ্ছে। যতবারই তাকিয়েছে ততবার দেখেছে তৃষ্ণা ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জায়ান চোখের ইশারার তৃষ্ণা কে ঘুমাতে বলছে অন্যদিকে ফিরতে বলছে তৃষ্ণা মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝে নি। ও এক‌ই ভাবে আছে।


জায়ান ফট করে দাঁড়িয়ে পরল। আর তৃষ্ণা দিকে এসে ঝুঁকে বলল, " কি হচ্ছে ডিস্টার্ব করছো কেন?"
তৃষ্ণা হকচকিয়ে বলে," কি?"

"বিরক্ত করছো কেন?"

"বিরক্ত কোথায় করলাম আমি তো শান্ত হয়ে শুয়ে আছি?"

" শান্ত হয়ে আছো রিয়েলি?"

" কি করেছি আমি বলুন আপনি!"

" আমার দিকে ওইভাবে তাকিয়ে আছো কেন? আমার সমস্যা হচ্ছে বুঝতে পারছো না? একদম ঐ ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে না। নাহলে একদম মেরে ফেলব। তোমার জন্য আমি মায়ের কাছে কথা শুনতে পারব না। আমার কাজ শেষ করতে দাও।"

" আমার ঘুম আসছে না। আমি দেখছি আপনার কাজ।"
জায়ান চাদর নিয়ে তৃষ্ণার মাথা ডেকে দিল।

" এবার ঘুমাও একদম মুখ খুলবে না।"



#চলবে....




পরবর্তী পর্ব পেতে চোখ রাখুন আমাদের সাইটে।

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.