আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা পর্বঃ ১১ (বর্ধিতাংশ)

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ১১ (বর্ধিতাংশ) -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 6 min

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা পর্বঃ ১১ (বর্ধিতাংশ)


জায়ান তৃষ্ণার হাত ছেড়ে দিল।

আয়েশ ভঙ্গিতে বসল খাটে। তৃষ্ণা তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে। জায়ান ওর দিকে চাইতেই চোখাচোখি হলো। তৃষ্ণা দৃষ্টি সরিয়ে ফেলল। জায়ান আদেশ সুরে বললেন," পিচ্চি ব‌উ যাও আমার জন্য ব্ল্যাক কফি নিয়ে আসো। নিজের হাতে করবে‌।"

তৃষ্ণা অবুঝ নয়নে তাকাল জায়ানের দিকে। জায়ান  তৃষ্ণার মুখশ্রী দেখেই ধরে ফেলেছে তৃষ্ণা বুঝতে পারেনি। জায়ান বিরক্তি হলো। জানত এই এক জ্বালা হবে। এই মেয়েকে বিয়ে করে মন শান্তি পেলেও কথা বলে শান্তি নাই। একে লেখাপড়া করাতে শিখাতে হবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলল।

" তুমি পারবে না জানি। লিয়াকে বলো ও তোমাকে হেল্প করবে। কিন্তু ভুল করেও ওকে দিয়ে বানিয়ে আনবে না। আমি আমার ব‌উয়ের হাতের বানানো কফি খেতে চাই।


তৃষ্ণা ঘাড় কাত করে আচ্ছা বলে বেরিয়ে এলো। রান্নাঘরে ঢুকে লিয়াকে পেল না। ও লিয়ার রুমে চলে গেল। 

লিয়া তৃষ্ণাকে দেখেই জিজ্ঞেস করল , " কি হয়েছে?"

" উনি কফি চাইল। আমারে বানাইয়া নিয়া যাইতে বলল। আমি তো বুঝি না আমারে একটু দেখাইয়া দাও।"

লিয়া তৃষ্ণাকে কিচেনে নিয়ে আসলো। কফি বানানোর উপকরণ বের করে বুঝিয়ে দিল কিভাবে বানাতে হয়। গ্যাস জ্বালিয়ে দিয়ে চলে গেল। তৃষ্ণা আল্লাহর নাম নিয়ে কাজ শুরু করে দিল। প্রথম এই বাসায় কোন কাজের হাত দিয়েছে। এই অদ্ভুত চুলায়। ওদের বাড়িতে মাটির চুলা কিন্তু এখানে অন্যরকম। তাই কিছুই বুঝে না ও। লিয়ার কথা অনুসরণ করে কফি করল, কফি মগ‌ এ ঢেলে তৃষ্ণা এখন কোন দিকে মোচড় দিয়ে চুলা অফ করবে ভুলে গেছে। দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।‌ ঢোক গিলে একদিকে মোচড় দিল সাথে সাথে আগুন আরও বেড়ে গেল। ভয়ে অপরদিকে মোচড় দিতে আগুন কমে এলো। 

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বুকে হাত দিয়ে ফু দিতে লাগল। কফির মগ হাতে রুমের দিকে এগুতে লাগল। হঠাৎ সামনে পরল উষসী। সে তৃষ্ণাকে দেখে জিজ্ঞেস করল।


"তোমার হাতে কি?"

"কফি উনার জন্য।"

" আমিও কফি করতে যাচ্ছি। ভাসুর ও দেখছি ব‌উকে দিয়ে কফি বানিয়ে আনে!"

 তৃষ্ণা লজ্জা পেয়ে হাসলো।

উষসী আবার বলল," দুজন টুইন তো। এজন্য স্বভাব চরিত্র ও এক‌।"

বলেই হাসতে হাসতে চলে গেল উষসী। তৃষ্ণা অবাক চক্ষে তাকিয়ে র‌ইল। মুহূর্তে ওর সামনে আয়ানের অসভ্যতামি সরণে এলো। রাগে মুখটা শক্ত হয়ে গেল।

বিড়বিড় করল," ওমন চরিত্রের আমার স্বামী হবে না ইনশাআল্লাহ। তিনি ভালো। রাগী হলেও খুব ভালো। তার মন এতো নিচু,নোংরা নয়। এমন নোংরা চরিত্রের লোকের সাথে আমার স্বামীর তুলনা করা অন্যায়।"

তৃষ্ণা মুখশ্রী শক্ত করে রুমে আসলো। ঘৃণায় ওর মুখটা বিতৃষ্ণা হয়ে আছে। এখনো এর কোন কিছু করতে পারে নি। আর না জায়ান কে সাহস করে বলতে পেরেছে।


জায়ান তৃষ্ণা কে চিন্তিত গম্ভীর মুখশ্রী করে রুমে আসতে দেখে অবাক হলো। ও ভাবছে তার পিচ্চি ব‌উ কি কাজ করে ক্ষেপে গেল নাকি?

তৃষ্ণা কফির মগ জায়ানের দিকে বারিয়ে দিল।

জায়ান কফির মগ হাতে নিল।

"নিজে বানিয়েছ তো?"

তৃষ্ণা চিন্তিত চক্ষু দুটো অন্যদিকে দৃষ্টি রেখেই বলল,"হ্যাঁ!"

"কি ভাবছো? চিন্তিত লাগছে কেন?"

তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলল,"কিছু না!"

"সিউর?"

তৃষ্ণা উত্তর দিল না। জায়ানের থেকে সরে আসতে চাইল।

জায়ান চট করে তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে ধরল। আর এক হাতে টেনে নিজের কোলের উপরে বসিয়ে দিল তৃষ্ণাকে। তৃষ্ণা থতমত খেয়ে গেল। বিস্মিত চক্ষে ঘাড় বাঁকিয়ে জায়ানের দিকে তাকাল। জায়ান সাথে সাথে একটা অভাবনীয় কাজ করে বসল। তৃষ্ণা তাকাতেই জায়ান তৃষ্ণার ডান গালে অধর স্পর্শ করে বসল‌। তৃষ্ণা কেঁপে উঠে চোখ খিচে তাকিয়ে র‌ইল। 

"কথা মনের ভেতর লুকিয়ে না রেখে প্রকাশ করে দাও। তোমার জীবনের প্রত্যেকটা কথা জানার অধিকার আমার। নিজের মধ্যে লুকিয়ে রেখে পিচ্চি মানুষ পাগল হয়ে যেও না। আমাদের বাসায় যে পাগল আছে না তার মত কিন্তু তোমায় ও তখন ঘরবন্দি করে রাখা হবে।"

 তৃষ্ণা তখন অবুঝ গলায় প্রশ্ন করল,"সে পাগলটা কি অনেক চিন্তা করতো?"

"হ্যাঁ এই যে তুমি এখন কি যেন চিন্তা করে অন্যমনস্ক হয়ে আছ‌। সেও এমন কথা নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখতো চিন্তা করতো। বোকা ছিল।"

তৃষ্ণা কথা বলতে পারল না নীরব হয়ে গেল। ওর মাথায় এখন একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে। তার মানে পাগল টার সাথে ওর মতন কিছু ঘটেছিল সেই জন্য বলতে পারেনি। নাকি আরো ভয়ংকর কিছু যেটা বলার মতো ছিল না। ইশ পাগলটার সাথে একবার দেখা করতে পারলে ভালো হতো‌।

জায়ান মগ সাইটে রেখে তৃষ্ণাকে দুহাতে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,"এই পিচ্চি বউ। না বলে আবার চিন্তায় ডুবলে নাকি? তোমার তো দেখি পাগল হওয়ার খুব শখ।"

"আমি পাগল হলে আপনি আমার সাথে কি আর সংসার করবেন না?"

"পাগলের সাথে সংসার করে কে পাগল হতে চায়?"

"আপনি দেখি সুবিধাভোগী মানুষ। সুস্থ মানুষ নিয়ে সংসার করবেন। কিন্তু পাগল হলে দূরে ছুড়ে মারবেন।"

" হুম তা বটেই। এবার ফটাফট বলো কি নিয়ে চিন্তিত?"


তৃষ্ণা শক্ত হয়ে রইল উত্তর দিল না। জায়ান তৃষ্ণাকে ছেড়ে দিতেই তৃষ্ণা লাফিয়ে উঠে পরল। বক্ষস্থল মাত্রাতিরিক্ত ওঠানামা করছে। জায়ান কফি হাতে তৃষ্ণা দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তৃষ্ণা জায়ানের সেই রাগী চক্ষের দিকে তাকাতে কেঁপে ওঠে। রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে চক্ষুদ্বয়। ঢোক গিলে দৌড়ে গিয়ে দরজার সিটকারি আটকে আসে কিন্তু ও বুঝতেই পারে না বাইরে থেকে জায়ান লক করে গেছে। লিয়াকে চাবি দিয়ে চলে যায়।

___________________


মধ্যরাত তৃষ্ণা তন্দ্রাচ্ছন্ন। চারপাশে অন্ধকার। একা একটা বিছানায় শুয়ে আছে তৃষ্ণা। হঠাৎও টের পায় এক জোড়া হাত ওর গায়ে বিচরণ করছে। গায়ে বলতে তৃষ্ণার মাথা চুলে বিচরণ করছে। অস্বস্তিতে তৃষ্ণা অপর কাত হয় ঘুমায়। মুখে তীব্র বিরক্তির ছাপ। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে আছে। আস্তে আস্তে হাতটা গাল ছুঁয়ে গলার দিকে অগ্রসর হয়। ভয় তৃষ্ণার শরীরের ঘাম ছেড়ে দিয়েছে। তখনি মানুষটার হাত ধরে আটকাতে চেয়ে চিৎকার করে উঠে বসে।

ডিম লাইটের আলো। ও দৌড়ে গিয়ে রুমের বড় লাইট জ্বালায়। ঝলমল করে ওঠে চারপাশ রুমটা সম্পূর্ণ ফাঁকা ও ছাড়া আর কেউ নাই। ভয়ে ওর গা হাত-পা কাঁপছে অস্বাভাবিক মাত্রায়। প্রথমে ভূত বলে মনে হলেও পরে আয়ানের কথা মনে পরে। ওই হাত জোড়ার মালিক আয়ান নয়তো! এত দ্রুত পালালো কিভাবে? এই রুমে এখন একা থাকতে ওর ভয় লাগছে। ঘড়ি দিকে তাকাতে দেখতে পায় তিনটা বাজে। দরজা খুলে কোন দিক না তাকিয়ে দৌড়ে জায়ানের রুমে চলে যায়।

জায়ানের রুমের দরজার সামনে এসে তৃষ্ণা একাধারে দরজা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। জায়ান কেবল ঘন্টাখানেক আগে এসে বিছানায় চিৎ হয়ে  শুয়েছিল। গায়ের পোশাক অব্দি চেঞ্জ করে নি। ক্লান্তিতে ওইভাবে ঘুমিয়ে পরেছিল। ক্লান্তিতে তার চোখ ভর্তি ঘুম এসে নেমেছিল। এই কাঁচা ঘুমটা কে ভাঙালো? ভেবে  রাগে গজগজ করে দরজা ঠাস করে খুলল।

গম্ভীর গলায় একটা ধমক দিতে যাবে তার আগে একটা নরম শরীর ওর গায়ের সাথে মিশে গেল। নরম তুলতুলে বস্তুটা আর কেউ নয় তৃষ্ণা। যে দরজা খুলতেই হামলে পরেছে জায়ানের বক্ষস্থলে।


" হোয়াট হ্যাপেন্ড?"

" ঐ রুমে আমার একা থাকতে ভয় করে। আমি আর একা থাকতে পারব না। আমি আপনার সাথে এই রুমে থাকতে চাই।" কাঁপা কাঁপা গলায় বলল তৃষ্ণা।

জায়ানের মন ক্লান্তিতে, অবিশ্রান্ত। কাঁচা ঘুম ভেঙে যাওয়ায় মুখশ্রী রাগান্বিত হয়ে আছে। 

তৃষ্ণার বাহু ধরে টেনে নিজের থেকে সরিয়ে এনে শক্ত গলায় বলে,"মাঝরাতে আমার ঘুম নষ্ট করে কি নাটক শুরু করেছ? কি হয়েছে তোমার? জ্বালিয়ে মারছো কেন? পিচ্ছি মেয়েকে বিয়ে করে এখন দেখছি আমার জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করে মরে যেতে হবে।"

তৃষ্ণা ছল ছল চক্ষে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়ান তৃষ্ণার অশ্রুসিক্ত নয়ন দেখে থমকে যায়। ওর রাগ পরে যায়। দরজা আটকে তৃষ্ণাকে ভেতরে এনে তৃষ্ণার নরম দুগালে হাত রেখে নরম সুরে বলে," কি হয়েছে জান কাঁদছ কেন?"

অভিমানী ভরপুর মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় তৃষ্ণা। জায়ান তৃষ্ণার মুখটা নিজের দিকে টেনে বলে," একা থাকতে ভয় পাও?"

তৃষ্ণা কথা বলে না। 

"জান কথা বলো। আই এ্যাম সরি। আর ধমক দেব না।"

তৃষ্ণা হুহু করে কেঁদে ওঠে। খুব কষ্ট হচ্ছে ওর। এ কেমন স্বামী যে নিজের সাথে রাখতে চায় না। উল্টো ধমক দেয়। এমন মানুষের সাথে কেন আমায় জুড়ে দিলে আল্লাহ। 

জায়ান তৃষ্ণার কান্না মাখা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে। ওর ভেতরটা হাহাকার করছে। জায়ান তৃষ্ণার মুখটা নিজের দিকে টেনে বলে, " তুমি আমার সাথেই থাকবে। আমি তোমার ভালোর জন্য তোমাকে আলাদা রুমে রেখেছিলাম। আমি যে খুব খারাপ। তোমাকে নিজের কাছে পেলে তো তোমাকে আপন করে নেওয়ার ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখতে পারব না। আমি তোমাকে সেই কষ্টটা এখনি দিতে চাইনি। তোমাকে বড় হওয়ার সুযোগ দিচ্ছিলাম। তুমি আমার সাথে আমার পাশেই থাকবে। আমি নিজেকে যথাসম্ভব চেষ্টা করব আটকাতে। আমি কি করবো বলো? তুমি অল্প বয়সী হলেও আমিও ছোট্ট নয়। আমার তো বউকে আদর করতে মন চায়। আমার মনটা তো দৈহিক সুখের জন্য পাগল প্রায় হয়ে থাকে। তোমাকে দেখলেই নিজের ভেতরটা পুড়ে ছারখার হয়ে যায় কাছে পাবার তৃষ্ণায়। আমি যে তোমাকে কাছে পাবার তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি।"


তৃষ্ণা জায়ানের সব কথা বুঝল না। ও ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কান্না থামিয়ে আবার ফুঁপিয়ে বলল," আমি আলাদা থেকে নিজের ভালো চাই না। আমি আপনার সাথেই থাকতে চাই।"

"আচ্ছা তাই হবে।"

তৃষ্ণা জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল," আপনি জুতা পরেই ঘুমিয়েছিলেন?"

" ক্লান্তিতে এসব খোলার টাইম ছিল না।"

তৃষ্ণা নিচু হয়ে জায়ানের জুতা খুলে দিল। 


#চলবে........

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.