***********
কিছুদিন পরেই আমার বিয়ে।
হবু বরকে মনে ধরছিল প্রথম দেখার দিন।
যাইহোক তারে নিয়ে কত কল্পনা জল্পনার পানশী ভাসাইলাম মনে মনে। কিন্তু ফোনে কথা বলার সময় হইলোডা কি?
বর সাহেব ভীষণ লাজুক। কথায় কথায় যাহ বলার স্বভাব উনার। লজ্জা নারীর ভূষণ। পুরুষ মানুষ কেন লজ্জা পাইবো?
কিছু ঘটনা শেয়ার করি, উনাকে কথায় কথায় একদিন জিজ্ঞেস করলাম, জীবনে কখনো প্রেম করেছেন?
উনি সেটা শোনার সাথে সাথে ফোন কেটে দিলেন আচমকা। প্রথম তাই তেমন পাত্তা দিলাম না। ওমা! দেখলাম উনি মেসেজ করেছে হোয়াটসঅ্যাপে। তাতে লিখা ছিল
যাহ, ওসব আজেবাজে কাজ আমি কখনো করিনি। আমাকে ওসব প্রশ্ন করে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবেন না সন্ধ্যা ।
আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম
আচ্ছা কয় বাচ্চাকাচ্চার বাপ হওয়ার মতলব আছে কন দেখি।
উনি সেটা শুনে ফোনের ওপাশে খুকখুক করে কেশে উঠলেন। হালকা ধমক দিয়ে বললেন
এই মেয়ে আপনি এত ঠোঁটকাঁটা কেন? হ্যা? ফোন রাখেন। কথা বলার মুডটাই নষ্ট করে দিলেন।
ওমা! গরম দেখিয়ে ফোনটা কেটে দিল। হাসতে হাসতে আমার পেটে ব্যাথা হয়ে গেল সেদিন। মা বাবা হয়ত আমার হাসি শুনে বলছে বিয়ের খুশিতে মেয়ে পাগল হলো নাকি?
আরেকদিন ফোনে কথা বলছিলাম বরাবরের মতো। বিয়ের মাত্র কটা দিন বাকি৷ ওনাকে বললাম
আপনাকে আমি বিয়ে করতে পারব না। আমার অন্য কোথাও জামাই ঠিক আছে। মানে বয়ফেরেন্ড আছে।
উনি একদম স্বাভাবিক গলায় বললেন
যাহ। এসব বলতে লজ্জা করেনা আপনার? যা তা কথা বলেন।
আমি বোকাবনে গেলাম। বেডারে কি উপাধি দেব সেটা নিয়ে কনফিউজড হয়ে আধমরা হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকলাম।
,,তারপর
গায়ে হলুদের দিন তোলা ছবিগুলো পাঠিয়ে বললাম
আমার ছবি পাঠিয়েছি আপনাকে৷ আপনার ছবি পাঠান তো।
উনি বললেন
যাহ কি বলেন? ছবি পাঠাতে হবে কেন? আপনি ছবি পাঠিয়েছেন কেন? আমার বন্ধুরা দেখলে কি বলবে?
আমি থ বনে গেলাম।
বিয়ের দিন আমাকে উনার পাশে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে দিল সবাই। আমি উনার দিকে চোখ তুলে তাকালাম। সামনাসামনি লজ্জায় ফেলে দেওয়ার জন্য বললাম
আপনাকে তো দেখছি হেব্বি লাগছে ইঞ্জিনিয়ার সাহেব । সুপার ডুপার লাগছে।
আহা! উনি আমার দিকে ভুলেও তাকালেন না। শুধু বিড়বিড় করলেন
যাহহ এমন পরিবেশে এসব বলবেন না৷
আমার পেট চেপে ধরে হাসতে ইচ্ছে করলো। কিন্তু বউ বলে কথা। তাই সব ধামাচাপা দিলাম।
বিয়ে টিয়ে চুকিয়ে শ্বশুর বাড়ি এলাম। বাসর রাতে উনাকে দেখে আমার ভীষণ লজ্জা করছিল। কিন্তু আমি সেটা দেখাতে প্রস্তুত না৷ তাই মুখটা স্বাভাবিক করে রাখলাম।
উনি হাতের ঘড়ি খোলার চেষ্টায় ব্যস্ত। আমার দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে বললেন
আপনার না বয়ফ্রেন্ড আছে। বিয়েটা তো শেষমেশ করলেন।
আমি মজা করে উনাকে বললাম
ছিল তো। কিন্তু সে মহাবদমাশ৷ আপনার মতো অত ভালো নয়। মিষ্টি নয়। সুন্দর নয়৷ আপনি তো দশে এগারো। ভালো আম না কিনে কাউকে পঁচা আম কিনতে কখনো দেখেছেন?
বলেই হাসলাম।
উনি ঘড়িটা হাতের কব্জি থেকে যেন একপ্রকার টেনে খুললেন৷ বললেন,
যাহহ, এভাবে বলছেন কেন? মানুষ কোন কথায় লজ্জা পায় সেটা জানেন না?
কিসের বাসর ঘর, ফাসর ঘর? পেট থেকে গুলগুলিয়ে হাসি বের হয়ে এল সাবান ফেনার মতো। উনি কাছে এসে আমার মুখ চেপে ধরলেন। বললেন
যাহ আপনি এসময় এভাবে হাসছেন কেন? সবাই ভাববে আমি আপনাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছি।
সমাপ্ত
#রম্যগল্প