আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৭ -নন্দিনী নীলা

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৭ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 5 min



কৃষ্ণবেণী

পর্ব ৭

নন্দিনী নীলা


উর্মির সামনে দাঁড়িয়ে আছে জোভান। জোভানের হাতে পানির বোতল। 

জোভান ঘুমঘুম গলায় বলল," তুমি বাইরে থেকে আসলে কেন? এতো রাতে কোথায় গিয়েছিলে?"

উর্মি জোভানকে দেখেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। ভয়ে ওর আত্মা বের হয়ে আসছিল। জোভান বাদে যদি অন্য কেউ হতো! তাহলে কি সর্বনাশ‌ হতো!

ও ছুটে এসে জোভানের মুখ চেপে ধরে বলল,"ভাই আমার চুপ যা। বাসার কেউ জানতে পারলে আমার সর্বনাশ হবে। তুই যে কাজে নিচে এসেছিস সেই কাজে যা। তারপর রুমে যেয়ে ঘুমা। যা বলার কালকে বলব।"

জোভান কে রেখে ছুটে পালালো উর্মি। নিজের রুমে এসে স্বস্তি পেল। হঠাৎ করে লাইট জ্বালানোর জন্য ও তো খুব ভয় পেয়ে গেছিল। আজকে না ধরা পরে যায়। কিন্তু খুব জোর বেঁচে গেছে। জোভান বাদে অন্য কেউ আসেনি।

উর্মি রুমে এসে একটা টেক্সট করে দিল অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে। সে ব্যক্তিটা স্বস্তি পেয়ে চলে গেল।


তৃষ্ণা ঘুমের ঘোরে দেখতে পাচ্ছে। কেউ ওর গলা চেপে ধরেছে। হঠাৎ একটা ভয়ংকর হাসি দিল মহিলাটি। মহিলাটি একটা পাগল। আর সেই পাগল ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। তার দু'হাতে ওর গলা টিপে ধরেছে। ওকে হত্যা করার চেষ্টা করছে। ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে। চক্ষুদ্বয় ঘোলা হয়ে আসছে ও নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য ছটফট করছে। কিন্তু মহিলাটির শরীরে এতটাই শক্তি যে ও পেরে উঠছে না। তাই আস্তে আস্তে নিজের সব ছটফটানি থামিয়ে দিল। তখনি ও চিৎকার করে নিজের ও জায়ানের ঘুম ভাঙিয়ে দিল।

তৃষ্ণার চিৎকারে জায়ান ও চমকে উঠে বসেছে‌। টেবিল লাইট জ্বালিয়ে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে দেখে তৃষ্ণা ভয়ে কাঁপছে। শরীরে ঘাম ছেড়ে দিয়েছে। ঘুমের মধ্যে এমন ভয় কেন পেল? জায়ান বুঝে উঠতে পারছে না‌। ও প্রশ্নবোধক চক্ষে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার পানে। অতঃপর কি যেন ভেবে বিছানা থেকে উঠে এক গ্লাস পানি এনে দিল তৃষ্ণার দিকে। তৃষ্ণা পানি পেয়ে গপাগপ পানি খেয়ে নিল। যেন কত জনমের তৃষ্ণার্ত ছিল।

"হোয়াটস হ্যাপেন্ড?"

তৃষ্ণা জায়ানের কথা শুনল বা বুঝল কিনা বুঝা গেল না। 

তৃষ্ণা নিজে থেকে কাঁপা গলায় বলল,," ওই পাগলটা আমাকে মেরে ফেলবে। কি ভয়ংকর শক্তি তার। অনেক জোরে আমার গলা চেপে ধরেছিল। আমাকে বাঁচাও আব্বা, আম্মা কোথায় তোমরা।"

আর্তনাদ করে উঠল তৃষ্ণা। 

জায়ান চট করেই ধরে ফেলল তৃষ্ণা স্বপ্ন দেখেছে। ও বড় লাইট জ্বালিয়ে রুমে আলোকিত করে ফেলল।


আর তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বলেন," তৃষ্ণা এখানে কোনো পাগল নেই। তুমি খারাপ স্বপ্ন দেখেছ!"

তৃষ্ণা ভয়ার্ত চক্ষু মেলে জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল," আপনি আমার রুমে কি করছেন?"

জায়ান গ্লাস গ্লাসের জায়গায় রেখে এসে বললেন," আমি তোমার রুমে না। তুমি আমার রুমে আছ।"

তৃষ্ণা চক্ষু কপালে তুলে এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,"আমি আপনার রুমে কেন? আমি তো গাড়িতে ছিলাম। বাড়ি আসলাম কখন?"

"বাসায় সময় মতোই এসেছি। কিন্তু তোমার ঘুমটা অসময় চলে এসেছিল। এজন্য আর ডাকিনি।"

"ডাকেন নাই ক্যান? আপনি আমায় বাসার ভেতরে কী করে নিয়ে আসলেন? আর যে ভাবেই নিয়ে আসুন না কেন! আমার রুমে না দিয়ে নিজের রুমে নিয়ে এসেছেন কেন?"

"ঘুমন্ত অর্ধমৃত ব্যক্তিকে একলা রুমে রাখতে ইচ্ছে হলো না। এখন মনে হচ্ছে না রেখেই ভালো করেছিলাম। মাঝরাতে যেভাবে চেঁচামেচি, কাঁপা কাঁপি করলে। আশেপাশে কেউ না থাকলে মনে হয় হার্ট অ্যাটাক করে মরে যেতে।"

" আপনাদের বাসাটা অদ্ভুত। এই বাসায় আসার পর থেকে আমি রাতে ঘুমাতে পারছি না। আমি রাতভর বাজে স্বপ্ন দেখি। আর ভয়ে আমি মাঝ রাত থেকে জেগে থাকি। "

জায়ান তৃষ্ণার কথা শুনে হাহাহা করে হাসতে লাগল। তৃষ্ণা ভ্রু কুটি করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। ও ভয় পাচ্ছে আর লোকটা কি না ওকে নিয়ে মজা নিচ্ছে? ভীষণ খারাপ এই লোকটা!

তৃষ্ণা গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে জায়ানের দিকে।

জায়ান হাসি থামিয়ে বললেন,," এমন হয় কেন জানো?"


তৃষ্ণা বোকা চক্ষে মাথা নাড়িয়ে না বলে।

জায়ান ঠোঁট কামড়ে হাসি আটকে বলেন,"‌ স্বামীর সোহাগ বিহীন রাতে ঘুমিয়ে পরো। এজন্য শয়তান তোমাকে উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখিয়ে মাঝ রাতে জাগ্রত করে দেয়। যাতে তুমি তোমার ভুলটা বুঝতে পার। কিন্তু তুমি তো গাধী কিছু বুঝতে পার না‌। উল্টো বাসার দোষ দিচ্ছো।"

তৃষ্ণা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলল," আমি যাই আমার রুমে।"

জায়ান তৃষ্ণাকে ডেকে উঠলেন। আর বললেন,"কোথাও যাবে না তুমি। আজ এখানেই থাকবে। কাল থেকে না চাইলেও তোমাকে ঐ রুমেই থাকতে হবে। আর আজকে অনিচ্ছা নিয়েই আমার সাথেই থাকতে হবে।"

তৃষ্ণা স্তম্ভিত হয়ে তাকাল জায়ানের দিকে। সাথে সাথে ওর মাথায় হাজারো প্রশ্ন এসে ভিড় করল। ও জায়ানের দিকে প্রশ্নবোধক চক্ষে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,,"একটা সত্যি কথা বলুন তো। আপনি আমাকে আলাদা রুমে রেখেছেন কেন?"

"কেন হাজব্যান্ডকে ছাড়া বুঝি রাতে ঘুম হয় না?"

তৃষ্ণা কান গরম হয়ে উঠল। জায়ানের কথা শুনে খুব লজ্জা পেল। তবুও শক্ত হয়ে ফের প্রশ্ন করল,,"কথা ঘুরাবেন না। সত্যি করে বলুন।"

"আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই। আসলে আমি নিজের রুম কারো সাথে শেয়ার করতে পারি না। এজন্য বউকে আলাদা একটা রুম দিয়েছি। এতে তোমারও ভালো হয়েছে। আমারও ভালো হয়েছে। যে যার ইচ্ছে মত নিজের রুমে থাকতে পারব। আবার যখন মন চাইবে তখন নাহয় বউয়ের কাছে গিয়ে থাকব। নাহলে তোমাকে আমার কাছে নিয়ে আসব আজকের মত। বুদ্ধিটা খুব ভালো তাই না?"

তৃষ্ণা বিকৃত মুখ করে তাকিয়ে আছে। মুখে উচ্চারণ করল," অদ্ভুত মানুষ।"

" ঠিক বলেছ। আমি মানুষটা একটু বেশি‌ই অদ্ভুত।"

" যাই হোন আপনার আরেকটা ব‌উ নেই তাতে আমি রক্ষা পেয়েছি। অদ্ভুত হয়েছেন তাও ভালো। আমাকে সতীনের ঘরে আনেন নাই এটাই যথেষ্ট।"

জায়ান অবাক হয়ে তৃষ্ণার কথা শুনল।

অতঃপর বললেন," সতীনের ঘরে আনি নি তাই এতো খুশি? কিন্তু এখন তো আরেকটা সতীন আনতে পারি তাই না? ধরো একদিন হুট করেই আরেকটা ব‌উ নিয়ে বাড়ি আসলাম কি করবে তখন?"

" মাঝরাতে আপনি আমায় আরেকটা বিয়ে করবেন সেই গল্প শুনাচ্ছেন?"

" তুমি যেহেতু না ঘুমিয়ে জেগে দাঁড়িয়ে আছো তো গল্প করা ছাড়া কিছুই পাচ্ছি না।"

" তাই বলে সতীন আনার গল্প বলবেন?"

তৃষ্ণা আবার বিছানায় শুয়ে পরল। জায়ান তৃষ্ণার পাশে শুতে আসলে তৃষ্ণা লাফ দিয়ে উঠে পরে।

" আপনি আমার পাশে ঘুমাতে আসছেন কেন?"

" তো কোথায় ঘুমাবো?"

" জানি না আমার সাথে ঘুমাতে আসবেন না। আমি কোনো পুরুষ মানুষের সাথে ঘুমাবো না।"

" আমি কোনো পরপুরুষ না। তোমার হাজব্যান্ড। তাই তোমাকে আমার পাশেই ঘুমাতে হবে। তাই ঝামেলা না করে ঘুমাও। একটু আগের চার ঘন্টা তুমি আমার পাশেই ছিলে এখন দুই ঘন্টা নিয়ে আর নাটক করো না।"

"একটা মেয়ের ঘুমের সুযোগ নিয়ে আপনি তার সাথে শুয়ে পড়লেন? লজ্জা করল না?"

"লজ্জা করবে কেন? নিজের ওয়াইফের সাথে ঘুমিয়েছি এতে লজ্জা করবে কেন? আমি ভালো হাজবেন্ড বলে এখনো তেমন কিছু করিনি। শুধু শুয়ে ছিলাম। আমার জায়গায় অন্য কোনো ছেলে থাকলে অনেক কিছুই করে দিত।"

"একদম আমার সাথে বাজে কথা বলতে আসবেন না। আপনি কিছু করেননি তার প্রমাণ কি? এতো সাধু পুরুষ আপনি মনে হয় না তো!"

"যদি কিছু করেই থাকতাম তাহলে তুমি বুঝি এতো শান্তিতে ঘুমাতে পারতে?"


তৃষ্ণা কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। চাদর টেনে মুখ ঢেকে অন্যদিকে ঘুরে শুয়ে রইল। 

জায়ান চাদর টেনে নিজেও চাদরের ভেতরে ঢুকে তৃষ্ণাকে জড়িয়ে কাঁধে মুখ ঠেকিয়ে বললেন,"কিছু না করেই যদি প্রমাণ দিতে হয়। আসো কিছু করেই প্রমাণ দেই। করব নাকি?"

তৃষ্ণা ভয়ে আঁতকে উঠে বলল," আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমার কোনো প্রমাণ লাগবে না। আমি বিশ্বাস করছি আপনাকে।"


#চলবে.....

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.