আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৮ -নন্দিনী নীলা

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৮ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 5 min



কৃষ্ণবেণী

পর্ব ৮

নন্দিনী নীলা


পরদিন সকালে তৃষ্ণা এক আশ্চর্যজনক ঘটনার সম্মুখীন হলো। সকালে তৃষ্ণা ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে  বিছানায় নিজেকে একাই পায়। তৃষ্ণা রুমটা চক্ষু বুলিয়ে রাতের কথা ভাবে। জায়ান ওকে ভয় দেখিয়ে জড়িয়ে ধরেছিল কিন্তু দুই মিনিটের মাথায় ছেড়ে দিয়ে সরে ও গিয়েছিল। তারপর তৃষ্ণা ঘুমিয়ে যায়। 

তৃষ্ণা জায়ানের রুমে বড় বেলকনিতে যেতেই ভয়ে পিছিয়ে আসে। রেলিং ছাড়া বারান্দা। ও নিচে তাকাতেই ভয়ে আঁতকে উঠে। গা শিরশির করে উঠে। 

চলে‌ আসতে গিয়ে দেখতে পায় নিচে বাগানে দাঁড়িয়ে আছে উর্মি। তিনি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সেখানে জায়ান ও আছে। তৃষ্ণা একে তো এখানে এসে ভয়ে কাঁপছে তার মধ্যে আবার বাগানে এসব দেখে চমকায়। কপালে চিন্তার ভাঁজ পরে ওখানে কি হচ্ছে?


বাগানে একটা ছেলেকে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলে রাখা হয়েছে। তার কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কাঁদছে উর্মি। ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আয়ান ( জায়ানের জমজ ভাই) যাকে তৃষ্ণা উপর থেকে দেখে জায়ান ভেবেছে।

জেসমিন বেগম এগিয়ে এসে মেয়ের গালে ঠাস করে চর মেরে বসলেন।

আর হুংকার দিয়ে বললেন," তোমার সাহস দেখে আমি অবাক হয়। এই ফকিন্নির বাচ্চা কে তুমি আমাদের বাসায় এনে প্রেম করো?"

উর্মি কেঁদে উঠে বলে," আম্মু আমি ওকে এজন্য ডাকিনি বিলিভ করো। ও একটা সাহায্যের জন্য এসেছিল। ওকে ছেড়ে দাও। দেখো কি অবস্থা করেছ। ও মরে যাবে।"

আয়ান বলল," এই ছেলেকে তুমি চেনো উর্মি?"

" ভাই ও আমার ফ্রেন্ড।"

" কোন ফ্রেন্ড এতো রাতে দেখা করতে আসে?

" ভাই ও এসেছিল দরকারে।"

" কি এমন দরকার যে এতো রাতে আসতে হলো?"

" ওর মা হসপিটালে কিছু টাকা লাগত। ওর কাছে টাকা নাই এজন্য আমার কাছে থেকে হাউলাদ নিতে এসেছিল পরে দিয়ে দেবে।"

" দিনের বেলা কেন এলো না?"

" ভাই ও নিজেই জানত না টাকা লাগবে আর ও দশটার পর আমাকে জানিয়েছে। তখন তোমাদের বললেও শুনতে না। তোমরা আমাকে অতিরিক্ত সন্দেহ করো। যেখানে দিনের বেলা আমাকে কোনো ছেলের সাথে কন্টাক্ট করতে দাও না। সেখানে রাতের বেলায় কেউ নিজের প্রয়োজনে আসবে সেটা তোমরা মেনে নিতে না। এজন্য আমি ঝামেলা করতে চাইনি। ওকে শুধু সাহায্য করতে চাইছিলাম।"

আয়ান মায়ের দিকে তাকাল। জেসমিন বেগম বললেন," ওর কথা আমি বিশ্বাস করি না। এই ছেলের সাথে ওর কোনো এফেয়ার চলছে আমি সিউর। যেখানে ওকে কোনো ছেলের সাথে মেলামেশা করতে দেওয়া হয় না। সেখানে এই ছেলের সাথে বন্ধুত্ব করল কিভাবে?"


আয়ান মায়ের বাধ্য ছেলে। মা যা বলল তাতে সে  যুক্তি খুঁজে পেল। 

উর্মির দিকে ও রাগান্বিত চক্ষে তাকিয়ে বলল,," উর্মি  মিথ্যা বলো না সত্যি কথা বলো?"

"আমি সত্যি বলছি ভাইয়া। ওকে ছেড়ে দাও। ওর মায়ের কি অবস্থা কে জানে! তার মধ্যে ছেলেটার কি অবস্থা করে দিলে তোমরা! কেন আমি ওর কথায় রাজি হয়েছিলাম! উপকার করতে গিয়ে আরো অপকার করে দিলাম!"

"সত্যি কথা না বললে এই ছেলেটাকে এখনি মেরে পুঁতে দেব।"চিৎকার করে বললেন জেসমিন।

'বড় ভাইকে ডাকো। জায়ান ভাই আমাকে বিশ্বাস করবে আমি জানি।"

"ভাই বাসায় নাই। তিনি ভোরেই চলে গেছে।"বলল আয়ান।

উর্মি থপ করে ঘাসের উপর বসে পরল। রক্তাক্ত মিহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা যেন নির্জীব হয়ে গেছে। ও এই ছেলেটাকে ভালোবাসে পাগলের মতো কিন্তু তাকে আজ ওর জন্য এই বিপদে পরতে হলো। কিভাবে বাঁচাবে নিজের ভালোবাসা কে?


জায়ানের ফোন অফ। এজন্য তাকে হাজার কল করেও জোভান বা উর্মি পাচ্ছে না।

তৃষ্ণা দৌড়ে বাইরে চলে এসেছে। রক্তাক্ত এক ছেলেকে ঘাসের উপর পরে থাকতে দেখে মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে।

এতো মার যে আয়ান মেরেছে ও বুঝতে পেরেছে ওর হাতের লাঠি দেখে। 

তৃষ্ণা কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কেন মারছে এই লোকটাকে? কি করেছে তিনি? আর উর্মি আপু কাঁদছে কেন?

তৃষ্ণা একবার জেসমিনের দিকে তাকিয়ে উর্মির কাছে গিয়ে বসে ফিসফিস করে বলল," আপু কি হয়েছে? উনি ওই ছেলেকে মারছে কেন? আর তুমি কাঁদছ কেন?"

উর্মি বলল," ভাবি ভাই মিহির কে মেরেই ফেলবে। ও সত্যি আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। ওকে আমি ভালোবাসলে ও আমাকে ভালোবাসে না।"

" জায়ান এতো ভয়ংকর কেন? কেমন নির্দয় এর মতো মারছে‌।"

উর্মি কাঁদছে। উর্মি এটাও বলতে পারল না এটা জায়ান নয় আয়ান।

আয়ান উর্মির বলা ভালোবাসে কথাটা শুনে ফেলেছে। ও চিৎকার করে উঠল," উর্মি, মম ঠিক বলেছে তাহলে তুমি এই ছেলেকে ভালোবাসো? আমাকে মিথ্যা বললে এতোক্ষণ?"

"আমি মিথ্যা বলিনি ভাই! আমি মিহির কে ভালো বাসলেও মিহির আমাকে ভালোবাসে না। আর ও এটা জানেও না।"

"কাহিনী বানিও না। তোমরা দুজনেই জানো আর দুজনে ইচ্ছে করে রাতে দেখা করেছ। এর শাস্তি শুধু ওই ছেলেটা একা নয় তুমিও পাবে।"

"আমাকে শাস্তি দাও কিন্তু ওকে ছেড়ে দাও। আমি তোমার পা ধরে ক্ষমা চাচ্ছি ওকে ক্ষমা করে দাও। আমি আর জীবনে ওর সাথে কন্টাক্ট করব না।"


এমন দৃশ্য দেখে তৃষ্ণা ঘৃণার চক্ষে তাকিয়ে আছে আয়ানের দিকে। ও এগিয়ে এসে উর্মি কে টেনে সরিয়ে এনে বলল," এসব কি করছো আপু? উনার পা ধরছো কেন?"

"ভাবি তুমি ভেতরে যাও আমাকে কথা বলতে দাও!"

জেসমিন বেগম ধমক দিল তৃষ্ণাকে। তৃষ্ণা ভয়ে ছুটে বাসার ভেতরে চলে এলো। ভয়ের মধ্যে ওর জায়ানের প্রতি তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হলো।

তৃষ্ণা বাসার ভেতরের যেতেই একটা গাড়ি এসে ঢুকল নিঝুম ভিলায়। জায়ান এগিয়ে আসলো। 

উর্মি জায়ান কে দেখেই দৌড়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরল।

আর বলল," ভাই প্লিজ মিহির কে বাঁচাও। আম্মু আর ছোট ভাই ওকে মেরেই ফেলবে। তুমি বিশ্বাস করো ওর সাথে আমার কোন রিলেশন নাই। ও শুধু আমার ফ্রেন্ড। ওকে আমি পছন্দ করলেও। ও আমাকে পছন্দ করেনা। আর এসব কিছু জানেও না। ও সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলে। আজ একটা বিপদে পড়েছে আর আমি একটি সচ্ছল ফ্যামিলির বলে ও আমার কাছে টাকা চাইছিল হাউলাদ হিসেবে। এছাড়া আর কিছুই না।"

"এত কিছু হয়ে গেল আর আমি কিছুই জানতে পারলাম না?"অবাক গলায় বলল জায়ান।

জেসমিন বেগম ছেলের দিকে এগিয়ে এসে বললেন,"এই ছেলেটাকে রাত এক টায় ধরা হয়েছে। তখনই আমাকে আর আয়ানকে খবর দেওয়া হয়।আর তোমার দরজায় আমি অনেকবার নক করেছি। তুমি জাগ্রত হওনি। বিয়ে করছ এখন তোমাকে কি আর ডাকলেই পাওয়া যাবে?"

"সবসময় এক কথা বলবেন না! বিয়ে করেছি। কারো গর্দান নেইনি। যে সারাদিন সেটা নিয়ে আমাকে কথা শোনাবেন।"

"বিয়ে না করে সেটা করলে মনে হয় শোনাতাম না।"

"এমন ভাবে বলছেন যেন আমি একাই বিয়ে করেছি! আয়ান ও তো বিয়ে করেছে ওকে তাহলে কেন কিছু বলছেন না?"

"ছোট হয়েও তোমার দুই বছর আগে বিয়ে করেছে। কিন্তু বিয়ে করে তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু তোমার মধ্যে পরিবর্তন চলে এসেছে ৫ দিনে।"

"বারবার পরিবর্তন নিয়ে কথা বললে আমি কিন্তু সত্যি পরিবর্তন হয়ে যাব।"


আর কোন কথা না বলে জায়ান মিহির কে ধরে হসপিটালে নিয়ে গেল। সাথে উর্মি ও জোভান গেল। আয়ান মায়ের দিকে তাকিয়ে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে গটগট করে বাসার‌ ভেতরে চলে গেল।

তৃষ্ণা আয়ান কে জায়ান ভেবে এগিয়ে এসে বলল," আপনি এতো খারাপ কেন বলুন তো? ওই লোকটাকে এমন নিষ্ঠুরের মতো মারলেন কেন? একটু দয়া মায়া নেই আপনার মধ্যে?"

আয়ান এমনিতেই জায়ানের উপর রেগে ছিল। আয়ান ওকে অবজ্ঞা করে চলে‌ গেছে।

জেসমিন বেগম সেখানে নিশ্চুপ ছিল। রাগে ওর মাথা দপদপ করছে সেখানে তৃষ্ণার মুখে খারাপ কথাটা শুনে আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না।

ধমকে উঠল। তৃষ্ণা ধমক খেয়ে ভয়ে পিছিয়ে গেল। আয়ান আঙুল তুলে বলল," আমার সাথে সাবধানে কথা বলবেন। আপনার হাজব্যান্ড আমাকে অবজ্ঞা করেছে। আর আপনি আমায় খারাপ বলতে আসছেন! ভাবি বলে ছেড়ে দিলাম। না হলে....

জেসমিন বেগম এগিয়ে আসছেন তা দেখে আয়ান চুপ করে রাগে গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। ঢোক গিলে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণা। ওর বুঝতে বাকি নাই এটা জায়ানের জমজ ভাই।

ভয়ে তৃষ্ণা কাঁপছে। চক্ষে অশ্রু চিকচিক করছে। সাথে লজ্জা ও পেয়েছে। দেবরের কাছে ধমক খেতে হলো ছিহ! আমি উনাকে চিনলাম না কেন?


#চলবে....

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.