আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৯ -নন্দিনী নীলা

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৯ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 6 min



কৃষ্ণবেণী

পর্ব ৯

নন্দিনী নীলা


রাত বাজে ১০ টার উপরে। বাইরের মেঘের গর্জন। আকাশ কাঁপিয়ে বজ্রপাত হচ্ছে। বৃষ্টির দমকা হাওয়া। বৃষ্টির ফোঁটা খোলা জানালা ছাড়িয়ে ভেতরে চলে আসছে। ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে বৃষ্টির পানিতে। খোলা জানালার সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে তৃষ্ণা। বৃষ্টির জলে তৃষ্ণার শরীর ভিজে যাচ্ছে। তৃষ্ণা ইচ্ছাকৃত বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছে। গায়ের পাতলা শাড়ি ভিজে লেপ্টে যাচ্ছে গায়ে। রাত বিধায় শীতল হয়ে উঠছে ওর গা। কেঁপে কেঁপে উঠছে তৃষ্ণা। এই বাসায় আসার পর থেকে প্রকৃতির জ্ঞান পায় না। আজ বৃষ্টি পেয়ে এই উপায়ে নিজেকে শান্ত করছে।  চোখ দুটো বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করছে সাথে ও গভীর চিন্তায় মগ্ন। সেইদিন যে ছেলেটাকে মেরেছিল আয়ান ভাইয়া আজ তার সাথে উর্মির বিয়ে দেবে বলে ঠিক করেছে জায়ান। বাসার সবাই এই বিয়েতে অমত। কিন্তু জায়ানের তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নাই। তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল। তৃষ্ণা ছিল নির্বাক ব্যক্তি। সকলের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে তাদের তর্কবিতর্ক দেখেছিল। বুঝতে না পেরে লিয়া কে জিজ্ঞেস করেছিল। লিয়া তৃষ্ণাকে হালকা বিবরণ করে বলেছে সব। এতো কিছুর মাঝে সবচেয়ে খুশি উর্মি। জায়ান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছে। খুশিতে ও পারে না নাচানাচি করে। 

জায়ান উর্মি কে বলেছে, মিহিরকে পরিবার নিয়ে আসতে। উর্মি তখন মুখ কালো করে ফেলেছিল। কারণটা বুঝলাম না।

তৃষ্ণা দেখেছে আয়ান রাগে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে গেছে তখন। জায়ান ও নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। উর্মি একমাত্র চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে।


হঠাৎ তৃষ্ণা অপরিচিত পুরুষালী হাতের স্পর্শ পেয়ে চট করেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। সাথে সাথে তৃষ্ণা কেঁপে উঠে চোখ মেলে তাকায় তড়াক করে। এক জোড়া হাত ওর কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছে ও তার বুকের সাথে মিশে গেল সেকেন্ডে। তৃষ্ণার শরীর ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে উঠছে। তৃষ্ণা কাঁপা গলায় কথা বলতে চাইলো। কিন্তু পারল না লোকটা ও কাঁধে নিজের ঠোঁট চেপে ধরেছে। 

ও ঠোঁট কামড়ে ধরে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। বাইরে বজ্রপাত হলো তখনি সাথে সাথে চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করছিল তৃষ্ণা। অন্ধকার ছাপিয়ে বজ্রপাতের আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়ে গেল।

অপরিচিত লোকটা কাঁধ থেকে মুখ তুলে ফেলেছে। তৃষ্ণা ঘাড় বাঁকিয়ে লোকটার দিকে তাকাতেই ওর বুকটা ধক করে উঠে। 

একটা পরিচিত মুখের আড়ালে অপরিচিত মানুষ। 

বজ্রপাতের আলোয় সামনে জায়ানের জমজ ভাই আয়ান কে দেখতে পায় তৃষ্ণা। তৃষ্ণা বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ানের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে তৃষ্ণা শীতল কাঁধে।

আয়ানের ডান ভ্রুয়ের উপর একটা লাল তিল আছে। কিন্তু জায়ানের নাই। সেদিন আয়ানের কাছে তৃষ্ণা ধমক খেয়ে রুমে বসে ছিল লজ্জায়। লজ্জায় রুমের বাইরে আসতে পারছিল না। এই লজ্জার কথা কাকে বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উর্মি কে জানাবে এই একজন মানুষ কেই নিজের আপন বলে ভাবে। উর্মি ছাড়া কেউ ওকে সাহায্য করবে না। তৃষ্ণা রাত জেগে অপেক্ষা করে উর্মির দেখা পেল না। পরদিন দেখল উর্মি আর জায়ান বাসায় ঢুকছে। তৃষ্ণা উর্মির রুমে গেল। উর্মি ওকে বলল," ভাবি আমি খুব টায়ার্ড। তোমার সাথে আমি দুই ঘন্টা পর কথা বলি প্লিজ একটু ঘুমাব।"

তৃষ্ণা আচ্ছা বলে চলে আসে। 


পরে উর্মি সত্যি দুই ঘন্টা পর ওর রুমে আসে। 

আর এসেই বলে," ভাবি কেমন আছ?"

" আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কাল রাতে কোথায় ছিলে উনার সাথে?"

" হসপিটালে!"

তৃষ্ণা আতংকিত গলায় বলে," কার কি হয়েছে আপু? তুমি ঠিক আছ?"

" আমি একদম ঠিক আছি ভাবি।"

" তাহলে? উনি ঠিক আছেন ত?"

" উনিটা কি জায়ান ভাইয়া?"

 তৃষ্ণা লজ্জিত মুখে বলল," হুম।"

" ভাইয়া ও ঠিক আছে। আমি আর ভাইয়া মিহির কে নিয়ে গেছিলাম। আয়ান ভাইয়া ওকে অনেক বেশি মেরেছিল। আয়ান ভাইয়া খুব হিংস্র। জায়ান ভাইয়া আর আয়ান ভাইয়া জমজ হলেও দুজনের স্বভাব আলাদা। জায়ান ভাইয়া হিংস্র হলেও এতোটা না। খুব নরম মনের। একটু ভালোবাসা পেলেই তাকে মাথায় করে রাখে। আর পরিবারের সবাইকে খুব বেশি ভালোবাসে। আমাকে তো জান দিয়ে ভালোবাসে। দেখ না আমার এক কথায় মম আর ভাইকে উপেক্ষা করে মিহিরকে হসপিটালে নিয়ে গেল। কিন্তু আয়ান ভাইয়া একটুও দয়া দেখালো না।"

তৃষ্ণা খুব মনোযোগ দিয়ে উর্মির কথা শুনছে। নিজের স্বামীকে নিয়ে ভালো মন্তব্য শুনতে ওর ভালোই লাগছে সাথে গর্ব ও হচ্ছে। যে সবাই যেমনি হোক। যত পাষাণ হোক ওর স্বামী ওতো খারাপ না। উপরে রাগী দেখালেও ভেতরটা নরম মাটি।

ও নিজের স্বামীকে নিয়ে বলা সব প্রশংসা শুনল। 

তারপর ইতস্তত করে বলল," আপু একটা কথা জানার ছিল। হাসবে না প্লিজ।"

" বলো ভাবি কি জানতে চাও।"

" আমি না উনাকে আর আয়ান ভাইকে চিনতে পারি না। গুলিয়ে ফেলি বারবার। একবার এজন্য উনাকে ভুল ও বুঝেছিলাম।"

" ও আচ্ছা। এমনটা হয়‌, যারা‌ই প্রথম দুজনের সান্নিধ্যে আসে এমনি করে। আয়ান ভাইয়ের বউ উষসী ভাবিও প্রথম গুলিয়ে ফেলত কিন্তু পরে আর এমন হয়নি। কারণ আয়ান ভাইয়ার ডান ভ্রুয়ের উপরে একটা লাল তিল আছে। আর জায়ান ভাইয়ার ফেস এ কোন তিল বা দাগ নাই। এটা লক্ষ্য করলেই দুজন কে চিহ্নিত করা যায়।"

তৃষ্ণাকে আর আলাদা করে জানতে চাইতে হলো না। উর্মি নিজেই গরগর করে সব বলে দিল। তৃষ্ণা কথাটা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নিয়েছিল। তারপর এক সপ্তাহ আর জায়ান ওর ধারের কাছেও আসে নাই। ও দূর থেকে ড্রয়িং রুমে থাকা জায়ান আয়ান কে লক্ষ্য করত। আর জায়ানের মুখ চেক দিত আসলেই জায়ানের মুখ খুব‌ই মসৃণ কোন দাগ নাই। মেয়েদের ত্বকের থেকেও বেশি ক্লিন। আর আয়ানের নজর কাড়া তিল‌‌।


তৃষ্ণা আয়ানের কাজে থমকে গেছে। কোন সাহসে এই লোক ওর সাথে এতো ঘনিষ্ঠ হয়েছে? লজ্জা করল না? সম্পর্কে ও আয়ানের ভাবি। ভাবির সাথে অসভ্যতামি করছে ছিহ? ঘৃণায় ওর এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। থেকে থেকে বাজ পরছে। তৃষ্ণা দুহাতে আয়ানের বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে সরিয়ে দিতে চাইলো। আয়ান শক্ত পেশিবহুল হাতে ওর হাত দুটো ধরে ফিসফিস করে ধারালো গলায় বলল," ইউ সো হট। আই লাইক ইট।"

বলেই আরো ঘনিষ্ঠ হলো। তৃষ্ণা ভয়ে চিৎকার করে উঠল। কিন্তু মনে হয় না এই চিৎকারের আওয়াজ বেশি দূরে গেল। বাইরের বৃষ্টির আওয়াজ সাথে মেঘের গর্জন‌। রাত কয়টা বাজে এগারোটার উপরেই হবে সবাই হয়ত ঘুমিয়ে পরেছে। কে বাঁচাবে এই মানুষটার হাত থেকে?

তৃষ্ণা কান্না করে দিল। আর অনুরোধ গলায় বলল,," আমাকে ছাইড়া দেন দয়া ক‌ইরা। আমি আপনের ভাবি হ‌ই আমার লগে এমন করছেন ক্যান?"

" স্টপ বেবি। ইউ সো কিউট। আমাকে ভাই ভেবে কথা বলছিলে। তখনি তোমার উপর আমার নেশা ধরে গেছিল। ভাবি বলে কি পছন্দের মানুষটিকে একটু ছুঁতেও পারব না?"

" ছাইড়া দেন আমারে দয়া ক‌ইরা।"


আয়ান তৃষ্ণা ভেজা চুলে হাত ডুবিয়ে দেয়। তৃষ্ণার ঘাড় ধরে কাছে টেনে গভীর স্পর্শ দিতে চায়। তৃষ্ণা ছটফট করছে। চিৎকার করছে‌। দুজনের ঠোট স্পর্শ করবে ঠিক তখনি তৃষ্ণার রুমের দরজায় ধাক্কা পরে। চমকে উঠে আয়ান! কপাল কুঁচকে অন্ধকারেই দরজার দিকে তাকায়! ওর হাতের বাঁধন একটু আলগা হয়ে আসে ওপাশে জায়ানের আওয়াজ শুনে। তৃষ্ণা সেই সুযোগ কাজে লাগায়। জোরে ধাক্কা দিয়ে আয়ান কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয়।

আয়ান ছিটকে সরে যায়। সাথে পিচ্ছিল জায়গায় ঠাস করে পরে যায়। আয়ান তৃষ্ণা কে ধরতে চায় পরে গিয়েও কিন্তু পারে না‌। কারণ চারপাশ অন্ধকার। এখন আর বাজ পরছে না। তাই রুম টাতে অন্ধকার বিরাজ করছে। এই অন্ধকারে আয়ান তৃষ্ণার নাগাল পাচ্ছে না। এদিকে তৃষ্ণা ও দরজা খোঁজে পাচ্ছে না। ঘুরতে ঘুরতে তৃষ্ণা দেয়ালে গিয়ে ঠাস করে বারি খেল মাথায়। কপালে হাত দিয়ে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তৃষ্ণা হাঁটতে পারছে না ঠিকমতো। 

কীভাবে হাঁটবে? ওর শরীর ভেজা। ফ্লোর ভিজে পিচ্ছিল হয়ে আছে হাঁটতে গেলেই আছড়ে পরতে যায়। হঠাৎ করেই দরজা খুলে গেল। রুমের বাইরের লাইটের আলো রুমে এসে পরলো। তৃষ্ণা কাঁপা চক্ষে সেদিক পানে চেয়ে আছে। আস্তে করে রুমের চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল আয়ান তো রুমে আছে। 

জায়ান আয়ানকে দেখলে কি করবে? 

আয়ানকে এর শাস্তি দেবে নাকি ভাই বলে ছেড়ে দেবে?


#চলবে......

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.