আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৬ -নন্দিনী নীলা

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৬ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 6 min



কৃষ্ণবেণী

পর্ব ৬

নন্দিনী নীলা


আল্লাহ রক্ষা করেছে সুজন ভাইকে। তিনি বেঁচে আছেন। তৃষ্ণা তো খুব ভয় পেয়ে গেছিল। তবুও বাসা থেকে বের হয়ে খোঁজ নিতে পারছিল না। কারণ জায়ান ওকে নজরে নজরে রাখছিল।

আগেই সে বলেছে, ওইসব লোকের কোন খোঁজ নেওয়ার দরকার নাই।

কিন্তু পরে খবরটা নিতে পেরেছে বকুলের কাছ থেকে।

ও এসে বলল,"বুবু, সুজন ভাইকে নিজাম কাকা পানি থেকে উঠিয়েছে।"

তৃষ্ণা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তার ব্যবহারে তাকে ঘৃণা করলেও চায় না তিনি মরে যাক। তিনি সুস্থ থাকুক। ভালো থাকুক। এটাই কামনা করে।

তৃষ্ণা জায়ানের জন্য জগ ভর্তি পানি নিয়ে আসলো। জায়ান একটু পরপর পানি চাচ্ছে শুধু। এজন্য জগ ভর্তি পানি আনতে গেছিল নিজের রুমে রাখবে বলে। পানি নিয়ে আসতেই জায়ান শোয়া থেকে উঠে বসল।


তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে বললেন,," রেডি হয়ে নাও। একটু পর আমাদের ফিরতে হবে।"

জায়ানের কথা শুনে তৃষ্ণা চমকে পেছনে ঘুরে তাকাল। জায়ান তৎক্ষণাৎ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। মানিব্যাগ বের করে রেখেছিল। ঘড়ি, সানগ্লাস সব খুলে রেখেছিল। সেইসব পরে রেডি হয়ে নিচ্ছে।

তৃষ্ণা চমকানো গলায় বলল,," কি বললেন?"

" রেডি হ‌ও ফিরতে হবে।"

" আজব কি বলছেন? আজ ফিরব কেন?"

" তো কবে ফিরতে চাও?" প্রশ্ন করল জায়ান।

" আজ আসলাম আর আজকেই চলে যাব? কয়দিন থাকব না?"

" নাহ। তোমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে। বাবার বাড়ি কয়দিন থাকতে চাও? দেখা করানোর জন্য নিয়ে এসেছিলাম। এখন ফিরব‌।"

বলেই জায়ান বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তৃষ্ণা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জায়ানের শক্ত কন্ঠের কথা শুনে ও হতভম্ব। 


দরজায় দাঁড়িয়ে দেখল ওর বাবার সাথে জায়ান কিছু নিয়ে কথা বলছে। তৃষ্ণা শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। জায়ান বাইরে থেকে শক্ত গলায় ডেকে উঠল। ও রুমে ঢুকে খাটের উপর বসে র‌ইল। ওর চক্ষু ছল ছল করছে। একদিন ও থাকতে দেবে না। এতো পাষাণ একটা লোকের সাথে ওর বিয়ে কেন হলো?

তৃষ্ণার মা এসে মেয়েকে বললেন," জামাই বাবাজি রে আজকে অন্তত থাকতে বল। এতো দূরে থেকে আসলি একদিন‌ও থাকবি না?"

তৃষ্ণার গলায় কান্না এসে আটকে আছে। তৃষ্ণা কান্না গিলে বলল,," তোমাগো ওই বড়লোক জামাই এই গরীব ঘরে থাকতে পারবে না। তাই জোর করো না। সুখে থাকতে বিয়ে দিয়েছ এখানে থেকে আর দুঃখে ভাসবো কেন?"

তিনি আর কথা বললেন না। মেয়ে ভুল কিছু বলেনি জামাই এই ঘরে থাকতে পারবে না। লেখিকা নন্দিনী নীলা দুপুরে খাওয়ার সময় ও দুই লোকমা খেয়ে উঠে গেছে। 

তৃষ্ণা আজকে আর রাগ করে গেল না। মা কে জড়িয়ে ধরে বলল," আম্মা আমার জন্য দোয়া করিও। ঐ বাড়িতে আমার খুব একা লাগে জানো। ঐ বাড়িতে অনেক মানুষ কিন্তু সেখানে আমি খুব একা। একটা রুমের ভেতর থাকতে হয় আমাকে। দম বন্ধ হয়ে আসে।"

"শশুর শাশুড়ির খেদমত করিস। জামাই বাবাজি যা বলব তাই করবি। তার কথার অমান্য করবি না এখনো। সেই তোর অভিভাবক।"

তৃষ্ণা বিরবির করে বলল,

"শশুর মশাইরে তো দেখলামই না আর শাশুড়িকে নজর দেখতে পেয়েছিলাম। তোমার জামাই বাবাজির দর্শন ঐ বাড়িতে গেলে পাওয়া মুশকিল।"

" কিছু বললি?"

" নাহ।"


বাইরে থেকে জায়ানের কন্ঠস্বর ভেসে আসলো।

তৃষ্ণাকে ডাকছে। তৃষ্ণা বেরিয়ে এলো। বকুল দাড়িয়ে কাঁদছে ভেবেছিল তৃষ্ণা রা দুইদিন থাকবে কত ভালো হবে। কিন্তু একদিন ও থাকবে না চলে যাবে এখনি। সেই দুঃখে ও নাকের জল চোখের জল এক করে কাঁদছে।

সবাই মন খারাপ করে তৃষ্ণাকে বিদায় দিল। তৃষ্ণা গাড়িতে বসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। 

জায়ান বিরক্তিকর গলায় বললেন," কান্না অফ করো।"

তৃষ্ণা নাক টেনে বলল,"আমার জায়গায় থাকলে বুঝতেন। আজ যদি মেয়েদের বদলে ছেলেদের এভাবে নিজের পরিবার ছেড়ে অন্যের বাড়িতে গিয়ে থাকতে হতো তাহলে বুঝতেন। আমার কত কষ্ট হচ্ছে। তাহলে আপনি এরকম ভাবে আমাকে নিয়ে যেতে পারতেন না।"

"সেটা যেহেতু হবে না। তাই সেই কষ্ট বোঝার চেষ্টা করে লাভ নাই।"

"সত্যি করে বলুন আপনি কি সুজন ভাইয়ের জন্য আমাকে এভাবে নিয়ে যাচ্ছেন? আসার সময় তো বললেন না এই একটুখানি সময়ের জন্য যাচ্ছেন!"

"ওই ছেলেকে আমি ভয় পাই নাকি? যে ঐ ছেলের ভয়ে আমি তোমাকে নিয়ে শহরে পাড়ি জমাবো?

"শশুর বাড়ি এসে যেহেতু থাকতেই পারবেন না। আপনার এতোই অস্বস্তি? তাহলে এমন বাড়ির মেয়েকে বিয়ে করলেন কেন? আপনার আমার বাড়িতে গিয়ে খারাপ লাগতেই পারে কিন্তু আমার যে কত ভালো লাগছিল। আপনি আমার দিকটা ভাবলেন না!"

"এখানে থাকার চেয়ে তুমি আমার কাছে বেশি ভালো থাকবে। তাই এখানে রাখার চেয়ে বাসায় নিয়ে যাওয়াটাই ভালো মনে করেছি।"


তৃষ্ণা কথা বলল না। জায়ান কাউকে কল করে কথা বলল। তারপর কল কেটে তৃষ্ণার দিকে তাকাল। মেয়েটা এখনো কাঁদছে ও এগিয়ে এসে তৃষ্ণা কাঁধ ধরে টেনে নিজের হাতে মিশিয়ে নিল। তৃষ্ণা কান্না থামিয়ে অবাক চক্ষে তাকাল জায়ানের দিকে। জায়ান তৃষ্ণার মাথা বক্ষে চেপে ধরে বললেন," ঘুমাও কষ্ট কমে যাবে।"

" আপনি খুব নিষ্ঠুর। কষ্ট বেদনা বুঝেন না। কত আশা করে এসেছিলাম আজ থাকব। কয়েকদিন থাকব। কিন্তু সব আশা ভেঙে দিলেন।"

জায়ান তৃষ্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন," ঘুমাও। জেগে থাকলে আরো কষ্ট হবে। এসব ভুলে ঘুমাও।"

" এতোই সহজ পরিবারকে ভুলে যাওয়া? আপনি পারবেন?"

" আমি তো ভুলেই গেছি। এবার তোমার পালা।"

তৃষ্ণা চমকে তড়াক করে জায়ানের বক্ষ থেকে মাথা উঠিয়ে ফেলল। ঢোক গিলে বলল,' কি বললেন আপনি?"

" উঠলে কেন?" রাগান্বিত স্বরে বললেন।

" আপনি ওটা কি বললেন? আমি আমার পরিবার কে ভুলে যাব? আর আপনি ভুলে গেছেন মানে কি?"

জায়ান তৃষ্ণার হাত ধরে টেনে আবার নিজের বক্ষে ওর মাথা চেপে ধরল। দু হাতে ওর ছোট শরীরটা আবদ্ধ করে বললেন,"ঘুমাও।"

তৃষ্ণা বুঝতে পারল। জায়ান উত্তর দেবে না। তাই অযথা উনাকে কোনো প্রশ্ন করে লাভ নেই। তৃষ্ণা শান্ত হয়ে জায়ানের বক্ষে মাথা ঠেকিয়ে রইল। এতো শক্ত করে ধরেছে ওর ঘাড় ব্যথা হয়ে আসছে।

ও মিন মিন করে বলল,"একটু হালকা করে ধরেন আমাকে তো চ্যাপ্টা করে দিলেন।"

জায়ান সঙ্গে সঙ্গে হাতের বাধন আলগা করে নিল। তৃষ্ণা কখন ওভাবে ঘুমিয়ে পরেছে নিজেও জানে না। 

জায়ান ঘুমন্ত তৃষ্ণাকে খুব যত্ন সহকারে নিয়ে আসলো বাসায়। গেটের ভেতরে এসে গাড়ি থামল। জায়ান তৃষ্ণার ঘুম ভাঙালো না। খুব সাবধানে ঘুমন্ত তৃষ্ণাকে পাঁজকোলে তুলে বাসার ভেতরে আসলো। সবাই ঘুমিয়ে পরলেও ড্রয়িং রুমে বসেছিল জায়ানের মা জেসমিন। তিনি জায়ানের কোলে তৃষ্ণাকে দেখে দাঁড়িয়ে পরলেন আর বললেন," এসব কি? এই মেয়ে কে তুমি এভাবে নিয়ে এসেছ কেন বাসায়?"

"সি ইজ মাই ওয়াইফ। তাকে যেভাবে খুশি সেভাবেই নিয়ে আসতে পারি। এতে আপনার কোন প্রবলেম?"

"প্রবলেম থাকলেই কি তুমি আমার কথা শুনবে?"

"যেহেতু জানেনই শুনব না। তাহলে জেগে বসে আছেন কেন?"

"তোমার সাথে আমার জরুরী কথা ছিল।"

"শ্বশুরবাড়ির জামাই আদর খেয়ে আমি এখন ক্লান্ত। এখন আমি বিশ্রাম নেব। কোনো কাজ করতে পারব না।"

'নিজের পছন্দে বিয়ে করেছ। বউ বাসায় এনেছ। সেখানে আবার গিয়েছ। আমরা কেউ বারণ করিনি। তোমার যা খুশি তাই করতে পারছ। তাহলে কাজে কেন এতো হেলাফেলা করছ?"

"আমি কাজে হেলাফেলা করছি? বিয়ে করেছি চারদিন হলো এখনো বউয়ের সাথে বসে দুটো প্রেমের বাক্য আওড়াতে পারলাম না। আপনি আমাকে কাজ করি না বলছেন?"

"কথাটা ওই ভাবে বলতে চাইনি। কিন্তু বিয়ে করার পর থেকে এই চার দিন তুমি কোন কাজ ঠিকমতো সম্পূর্ণ করতে পার নি। নিজেই একটু বসে ভেবো। তুমি কাজে মন দিতে পারছ না। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। এজন্য তোমাকে বিয়ে করতে মানা করেছিলাম। কিন্তু তুমি তো এই মেয়েকে দেখে পাগল হয়ে গেলে। সবার কথা কে অগ্রাহ্য করে বিয়েও করে নিয়ে আসলে। এখন অন্তত মনোযোগী হও। গুড নাইট।"

জেসমিন চলে গেল। জায়ান নিজের রুমে এসে তৃষ্ণা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।


উর্মি লুকিয়ে পা টিপে টিপে বাসার ভেতরে ঢুকছে। ভয়ে ওর হাত পা কাঁপছে ধরা পরলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। উর্মি সদর দরজা পেরিয়ে এক পা রাখতেই কেউ ড্রয়িংরুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়। ভয়ে ও সটান করে দাঁড়িয়ে যায়। 


#চলবে....


( সব প্রশ্নের জোট খুলবে ধৈর্য ধরে পড়তে থাকো। সামনে আরো ধামাকা নিয়ে আসছে তোমাদের প্রিয় জায়ান।)

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.