ধ্রবতারা
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)
হাস'পা'তালে এসেছে দুই দিন হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু তুরকে কেউ জো'র করেও বাসায় নিতে পারছে না।বেশি জো'র করলে যাই একটু না খাওয়ার মতো মুখে তু'লছে,সেটা ও মুখে নিবে না বলছে।
সকলে ওর জে'দের কাছে হা'র মেনে ওকে রেখে যেতে বা'ধ্য হয়।তবে সাথে শাহানা বেগম,ফাহিম।অথবা ,ওর মা মনির এরা থাকে।হাস'পাতা'লের ক'তৃ'প'ক্ষের সাথে কথা বলে একটা কেবিন নেয় ওদের জন্য।তুর সারাদিন চাতক পাখির নেয় আই'সি'ইউর দরজা সামনে বসে থাকে।একটু পরপর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে সে'ন্স ফিরলো কি না।
মনির বলেছে আজকে হাস'পা'তালে এসে,ড'ক্ট'ররের সাথে কথা বলে আই'সি'ইউর ভিতরে নিয়ে যাবে।
এদিকে ড'ক্ট'ররা টেনশনে আছে।৭২ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৭০ঘন্টা ওভা'র হয়ে যাচ্ছে।কিন্তু কোনো আশার আলো দেখতে পাচ্ছে না।অপর দিকে ধ্রুবর সাথে যিনি ছিলেন,সিনি'য়র অফি'সা'র পাই'ল'ট।তিনি ওর চেয়ে ব'য়'স্ক।৪৮ঘন্টার মধ্যেই তার জ্ঞা'ন ফিরে যায়।তবে, ধ্রুবর মাথার ইন'জু'রিটা বাকিদের চেয়ে বেশি গ'ভী'র।
মনির ড'ক্ট'র' কে বলেন ভিতরে যাওয়ার কথা।
ড'ক্ট'র' জানায় এখন উনাদের রা'উ'ন্ড টাইম।একটু পরে বলবে যেতে পারবে কি না।
ড'ক্ট'রা ভি'তরে যায় শেষ চেষ্টা করতে।৭২ঘন্টার আর কিছু সময় বাকি।ওনারা একটা ইন'জে'ক'শন পু'শ করবে।যেটা দেয়ার ফলে হয় ওর জ্ঞা'ন ফিরবে নয়তো একেবারে কো'মা'য় চলে যাবে।আর কো'মা'য় যাওয়া মানে জী'ব'ন্ত লা'শ।
এ ভ'য়া'ব'হ অ'বস্থা,তুর ছাড়া বাকি সবাই জানে।
বাহিরে থাকা তুর অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছে।ওর বিশ্বা'স ধ্রুবর কিছু হবে না।
ড'ক্ট'র ইন'জে'ক'শন পু'শ করে।ঘড়ি ধ'রে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে যে কোনো একটা কিছু হবে।প্রায় দশ মিনিট পর ধ্রুবর বি'পি খুব দ্রুত কমতে থাকে।খুব জো'রে জো'রে নি'শ্বা'স নিতে থাকে।ড'ক্ট'ররা কিছুটা ভ'রকে যায়। বুকে বারবার জো'রে জো'রে প্রে'স করছে।
এই দৃ'শ্য দেখে তুর হাউমাউ করে কেঁদে দেয়।তুরকে দ্রু'ত সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।বাকিরা ও ধ্রুবর ম''র্মা'ন্তি'ক অব"স্থা দেখে কেঁদে ফেলে।আর আল্লাহ আল্লাহ করতে থাকে।এভাবে প্রায় পনেরো মিনিট চলার পর ধ্রুবর জ্ঞা'ন ফিরে।চোখ মেলে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে,আবার ব'ন্ধ করে ফেলে।সব কিছু সা'ভা'বি'ক ভাবে চলাচল করছে।ড'ক্ট'ররা টেনশন মু'ক্ত হন।
সকলের উদ্দেশ্য বলে"রোগি এখন বি"প"দ মু'ক্ত।চিন্তার কারন নেই।ইম'প্রু'ভ'মে'ন্ট দেখে দুই একদিনের মধ্যে কে'বি'নে শি'ফট করা হবে।"
সকলে আল্লাহর কাছে শু'ক্রি'য়া জানায়।
জ্ঞা'ন ফিরলে ও ভিতরে যাওয়ার অ'নু'ম'তি নেই দূর থেকে ই সবাইকে দেখতে হবে।
তুর বার বার ভিতরে যাওয়ার বা'য়'না করে।কিন্তু কেউ যেতে দেয় না।যে দু'র্ব'ল মেয়ে,দেখা গেছে ভিতরে গিয়ে ধ্রুব কে দেখে কান্না কাটি শুরু করে দিবে।আর ধ্রুব ও চোখ মেলে উ'ত্তে'জি'ত হয়ে পড়বে।তাই না না অজু'হাতে আ'ট'কে রাখে।
এভাবে আরো দুই দিন অতি'ক্র'ম' হওয়ার পর ধ্রুবকে কে'বি'নে শি'ফট করা হয়।
তুর ছাড়া একে একে সবাই ধ্রুবর কাছে যায়। ধ্রুব সবাই কে দেখে অ'সু'স্থ'তা নিয়ে ও মুচকি হাসি দেয়।বোঝায় সে ঠিক আছে।সবাই দেখা করে চলে যায়।
অ'সু'স্থ ধ্রুবর মন যে,তার প্রেয়সীকে দেখার তৃ'ষ্ণা'য় তৃ'ষ্ণা'র্থ হয়ে আছে।ফাহিমকে ঈ'শা'রা'য় থাকতে বলে।
ভাইয়ের মনের কথা ফাহিম বুঝতে পারে।কাছে যায়,"জি ভাইয়া বলো।
"ও কই?আসেনি?"
"আসেনি কি বলো!সেই যে কদিন হলো হাস'পা'তালে এসেছে, কেউ ওকে এখান থেকে নিতে পারেনি।সারাদিন কান্না কাটি করছে।নাওয়া খাওয়া ছে'ড়ে এখানেই পড়ে আছে।"
"কোথায় এখন?আসছে কেন তাহলে?ভিতরে আসতে বল।"
"হুম"
এদিকে তুর ভাবছে,যদি ভিতরে গিয়ে ধ্রুবর সামনে গিয়ে কেঁদে ফেলে।আর ধ্রুবর কোন স'ম'স্যা হয়।সেই ভ'য়ে যেতে চাইছে না।তবে মন যে মানতে না'রা'জ।
ফাহিম কে'বি'ন থেকে বেরিয়ে তুরের সামনে দাঁড়ায়।
" ভাবি.... আপনার ভাই না কি হয়,সে আপনার জন্য ওয়েট করছেন।যেতে ল'জ্জা পাচ্ছেন নাকি? ভাই তো আমার ঔ'ষ'ধ চাচ্ছেন। যান....আপনাকে দেখে সু'স্থ হবেন।"
তুর ফাহিমের কথায় ল'জ্জা পায়।মনকে শ'ক্ত করে,উঠে দাঁড়ায়।নিচের দিকে তাকিয়ে ভেতরে ঢোকে।
দূর থেকে ধ্রুব এক দৃ'ষ্টিতে তাকিয়ে আছে।তুরের চোখ মুখ ফু'লে আছে।মেয়েটা কিভাবে এতো কাঁদতে পারে।
কতো শত প্ল্যা'ন করে রেখে ছিলো।আর এটা কি হলো।প্লেন ক্রা'শ হওয়ার আগে ও মনটা ভী'ষ'ণ উ'ত্তে'জি'ত ছিলো। ব'ধূ সাজে প্রে'য়'সীকে দেখবে।ল'ম্বা ঘো'মটা টেনে বা'স'র ঘরে ওর জন্য অ'পে'ক্ষা করবে।আর হানি'মু'ন,হানি'মু'ন নিয়ে ও কত প্ল্যা'ন।
কিন্তু প্লেন ক্রা'শ হওয়ার আগ মু'হূ'র্তে মনে হয়েছে,পরিবারের সাথে আর কখনো দেখা হবে না।আর এই প্রিয় মুখটা,এ মুখটা আর কখনো দেখতে পরবে না।নিজের করে পাওয়া হবে না।
বারবার উপর'ওয়া'লার কাছে একটা ই চাওয়া ছিলো," সবাই কে বাঁ'চি'য়ে,এই মায়াবিনীর জন্য যেন ফিরতে পারে।দয়া করে ফিরিয়ে দেও।কেউ যে এক আকাশ অভি'মা'ন নিয়ে বসে আছে।এখনো যে সব বো'ঝা প'ড়া হয়নি তার সাথে।তার রঙিন জী'ব'নটা যে সাদা কালো হয়ে যাবে।"
" তাকাবি না।এখনো রা"গ করে থাকবি?"
তুর মুখ তুলে চায়। ব্যা'ন্ডে'জে মু'ড়া'নো শ'রী'রটা দেখে,বুক ফে'টে যাচ্ছে।কিছু ক্ষণ আগে মনকে করা সব সা'ব'ধা'ন'তা ভু'লে,অ'বা'ধ্য চোখে জল ঝ'ড়'তে থাকে।
এক পা দু পা করে সামনে এগিয়ে যায়। ডান দিকে বেডের পাশে দাঁড়ায়।ধ্রুবর ডান হাতে প্লা'স্টা'র করা।না'ড়া'চা'ড়া করতে পারে না।ক্যা'নে'ল করা বা হাতে স্যা'লা'ই'ন চলছে। ধ্রুব বা দিকে যেতে ঈ'শা'রা করে। তুর ঘুরে সেখানে যায়।তুর চেয়ার টেনে বা পাশে বেডের কাছে বসে।ধ্রুবর সারা শ'রী'রে চোখ বুলায়।
চোখ বেয়ে শ্রাবণের ধা'রা বইছে।ভিতরের অ'বা'ধ্য অ'নু'ভূ'তি আ'ট'কা'তে না পেরে ফুঁ'পি'য়ে উঠে।
প্রেয়সীর চোখে নিজেকে হা'রা'নো'র ভ'য়,দেখতে বুঝি সব প্রেমিক পু'রু'ষের খুব ভালো লাগে।খুব ইচ্ছে করছে শ'ক্ত করে জ'ড়ি'য়ে ধ'রে সব ব্য'থা ভু'লে যেতে।কিন্তু দুঃ'খের বি'ষ'য় হচ্ছে ,ঠিক মতো ন'ড়তেও পারছে না।মনে মনে ভাবছে,"তোমার কাঁদার দিন শে'ষ জান।তোমার মুখে শুধু মু'ক্ত ঝ'ড়া হাসি থাকবে।"
তুরের কান্নার গ'তি বাড়ছে।তুরকে থা'মা'তে ধ্রুব ঈশা'রা'য় বা হাতটা ধ'রতে বলে।।তুর বা'ধ্য মেয়ের মতো কাঁ'পা'কাঁ'পা হাতে আলতো করে ধ'রে।একটু জো'রে ধ'র'লেই যেন ধ্রব ব্য'থা পাবে।
প্রেয়সীর স্প'র্শে মু'হূ'র্তে ধ্রুবর সকল ব্য'থা,য'ন্ত্র'না' দূর হয়ে গেছে।তুরের চোখের দিকে তাকিয়ে মনের সব ব্য'থা বুঝতে পারছে।শ'রী'রের যতটা শ'ক্তি আছে তা দিয়ে তুরের হাতটা জো'রে চে'পে ধ'রে।হঠাত নিজের হাতকে শ'ক্ত হাতের মু'ঠো'য় দেখে ভ'র'কে যায়।কিন্তু পর'ক্ষ'ণে বুঝতে পারে,তার ধ্রুব ভাইয়া তাকে বোঝাতে চাইছে,সে ভালো আছে।তুর আবারও হু'হু করে কেঁদে দেয়।ধ্রুব দু''র্ব'ল' হাতটা কোনো রকমে উঁ'চি'য়ে' চোখ টা মুছে দেয়।
"কাঁদিস না পা'গ'লি।আমি ঠিক আছি তো।আজকে বাড়ি যাবি।আর রে'স্ট নিয়ে কালকে আসবি।তা না হলে,আমি সু'স্থ হতে হতে তুই নিজেই অ'সু'স্থ হয়ে পড়বি।"
"যাবো না কোথাও।জো'র করে পা'ঠা'লে আর এমু'খো হবো না।এখানেই থাকবো।"
তুরের এই অধি'কা'র খা'টা'নো দেখে ধ্রুবর খুব ভালো লাগছে।
"একটা দিন বাড়ি থেকে রে'স্ট নিলে হতো না....।"
---------
"ঠিক আছে।না যেতে চাইলে থাক,যেতে হবে না।"
---------
"এবার তো একেবারে যেতে বলিনি।যাবি... ফ্রেশ হয়ে আবার এসে পড়বি,কেমন।আমার কথা না শুনলে কিন্তু, নে'ক্স'ট টা'ই'ম আর ফিরবো না।"
তুরের চোখ বেয়ে আবারও পানি পড়ছে।
"কথা বলতে ক'ষ্ট হচ্ছে কিন্তু।"
"ক'ষ্ট করে আর কথা বলতে হবে না।বাসায় যাবো।তবে,আবার এসে পড়বো।কিন্তু আপনাকে কথা দিতে হবে এসব কথা আর কখনো বলবেন না।"
"হুম...বলবো না...।ক'ষ্ট হয় আমার জন্য?"
অশ্রু'স'জ'ল চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে হুম বলে।"খুব ক'ষ্ট হয়।সেই আগের মতই,আগে যেমন হতো তার চেয়েও বেশি হয় এখন।" কাঁদতে কাঁদতে মাথা নিচু করে বেডের সাথে লাগিয়ে ফেলে।
ধ্রুব তুরের হাতে পুন'রা'য় ধ'রে বলে "আমি ঠিক আছি তুর,বাড়ি যা।"
ধ্রুবর কথা শুনে বাড়ি যায় ঠিকি,কিন্তু কোনো রক''ম ফ্রেশ হয়ে নাকে মুখে দু দ'লা ভাত তুলে বেরিয়ে আসে। ঘাড়'ত্যা'ড়া মেয়েকে কেউ আ'ট'কা'নোর সা'হ'স পায় না।
___________
সপ্তাহ খানিক পেরিয়ে গেছে।
ধ্রুব এখন অনেকটা সু'স্থ। নিজে নিজে এখন উঠে বসতে পারে,ন'ড়াচ'ড়াও করতে পারে।
দুপুরে ঘুম থেকে উঠে দেখে,তুর চেয়ারে বসে পায়ের কাছে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে।
ক্লা'ন্ত শা'ন্ত ঘুম'ন্ত মেয়েটাকে দেখে ধ্রুবর খুব মা'য়া লাগছে।উঠে বসে,বা হাতে তুরের মাথায় হাত বু'লিয়ে দেয়।
মেয়েটার চোখের নিচে কা'লি জ'মে গেছে।কি সুন্দর চক'চকে মুখটায় ম'লি'ন'তার ছা'প পড়েছে।এই কয়টা দিন ধ'রে কি যাচ্ছে মেয়েটার উপর দিয়ে।
মুখে না বললেও ধ্রুব বুঝে গেছে, তুর ধ্রুব কে কতটা ভালোবাসে।মনের সব দ্বি'ধা দ্ব'ন্দ্ব,মা'ন অভি'মা'ন দূরে সড়িয়ে সবটা দিয়ে ধ্রুবের সে'বা করছে।ধ্রুবর সাথে সাথে পরিবার,বন্ধু,আ'ত্মি'য় স্ব'জ'নরা সবাইও বুঝে গেছে। ধ্রুব তো এখন শুধু সু'স্থ হওয়ার অ'পে'ক্ষা'য় আছে ।
এই কদিন ধ'রে,
ধ্রুবর খাওয়া-দাওয়া,ঔ'ষু'ধ-প'ত্র সব তুর একাই করছে।ধ্রুব ঘুমের মধ্যে হাত না'ড়িয়ে যদি ব্য'থা পায়,তাই সারা রাত জেগে বসে কা'টি'য়েছে। এই কেবিনের সোফায় নি'দ্রা'য় অ'নি'দ্রা'য়' রাত পার করেছে।এখান থেকে স'রা'নোর জো নেই। শুধু ধ্রবর হাত পা শ''রী'র' মু'ছা'নো এগুলো শাহানা বেগম,ফাহিম করে দিয়েছে।
প্রথম দিন ওয়াশ রুমে যাওয়া নিয়ে ধ্রুব পড়েছিলো বি'পা'কে।তুরকে বলে হে'ল্প করতে।বে'চা'রা তুর ওকে ধ'র'বে কি।তার আগেই,ওর সা'রা শ'রী'র কাঁ'পা'কাঁ'পি লেগে গেছে।আর সু'সা'স্থ্যে'র অধি'কা'রী ধ্রবকে টে'নে নিয়ে যাও'য়া'র শক্'তি ,তুরের মতো পু'চ''কে মেয়ের নেই।অ'গা'ত্য ফাহিমকে ডাকে।সে এসে নিয়ে যায়।আর বাকি সব কাজ তুর একা একাই করার চে'ষ্টা করেছে,এখনো করছে।
হাস'পা'তা'ল থেকে আজকে রি'লি'জ দিয়ে দিবে।মাথার সে'লা'ই গু'লো খুলে ফেলেছে।শ'রী'রের ক্ষ'ত গু'লো টা'ন ধ'রে'ছে।ড'ক্ট'র বলেছেন দ্রুত সে'ড়ে উঠবে।কিন্তু হাত ঠিক হতে সময় লাগবে, প্রায় তিন মাসের মতো।
চলবে......