আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-৩৪

Estimated read time: 6 min

ধ্রবতারা 
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)



মনির আর জিসান ধ্রুবর বাসায় ওদের না পেয়ে,বাং'লা'দে'শ বিমান এয়ার'লাইন'সের অফিসে যো'গা'যো'গ করে।

তখন সেখান থেকে জানায় ,"ল্যা'ন্ডিং এর সময়,ল্যা'ন্ড করার আগে কিছু অ'গ্যত কারণ ব'শ'ত প্লেনে কিছু প্রব'লে'ম ক্রি'য়ে'ট হয়।যার ফলে প্লেন যে কোনো সময় ক্রা'শ হওয়ার পরি'স্থি'তির সৃ'ষ্টি হয়।ল্যা'ন্ডিং এর পূর্বে আকাশে থাকা কালিন হওয়ার স'ম্ভা'বনা ছিলো। যদি আকাশেই ক্রা'শ হতো তাহলে,প্লেনের যা'ত্রী'দের বাঁ'চানো প'সি'বল হতো না।কিন্তু পাই'লটদের অত'ন্ত্য  সুদ'ক্ষ'তার কারনে।অনেক চে'ষ্টায় সেটা রান'ও'য়েতে আনতে স'ক্ষ'ম হয়। তাই সবাই কে কিছুটা কম ইন'জু'রিতে বের করা প'সি'ব'ল হয়।
শুধু পাই'ল'টদের দুজন ও কে'বি'ন ক্রু'দের মধ্যে একজন খুব বেশি ক্ষ'তি'গ্র'স্ত হয়।ধ্রুব রায়হান স্যারের বাসার এ'ড্রেস ফোন না'ম্বার মিলাতে পারছিলাম না আমরা। তাই  জানাতে পারিনি।কিন্তু টিভিতে নি'উ'জে সেটা জানানো  হয়েছে।আমরা ভেবেছিলাম সেটা দেখে ওনার ফেমিলি  যো'গা'যো'গ করতে আসবে।
আজকে সকালে ওনার ভাই আসেন।আমরা ওনাকে জানাই।ধ্রুব স্যার এখন ---হা'স'পা'তালে আছেন।আই'সি'ইউ তে। সময় মতো জানাতে পারিনি বলে আমরা আ'ন্ত'রি'ক ভাবে দুঃ'খীত।"

 বিয়ে বাড়ির আনন্দে সবাই এতো মেতে ছিল,কেউ টিভি ছেড়ে দেখার প্রয়ো'জন মনে করেনি।ঘুম থেকে ওঠে ফাহিম মোবাইল হাতে নিয়ে একটা প্লেন ক্রা'শের নি'উ'জ দেখে।আর সেই সকাল বেলায়ই  দু'শ'চি'ন্তা আর অজা'না ভ'য় নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় ।বের হওয়ার আগে সবাই জিজ্ঞেস করলে টেন'শন না দেয়ার জন্য বলে,"ভাইয়া কি জন্য যেন রা''গ করে আছে,তাই আসছে না।আমি গিয়ে নিয়ে আসছি।"

এদিকে বাবার মুখ থেকে ধ্রুবর কথা শুনে তুর সে'ন্স'লে'স হয়ে যাওয়ার পর,দ্রুত ওকে ওর রুমে সি'ফ'ট করা হয়।তুরের অব'স্থা দেখে আবারও বাড়িতে কান্নার রো'ল পড়ে যায়।বাড়িতে তুরের মা,দাদি,রেহেনা বেগম, তুরের ফুপু  কিছু নিকট আ'ত্মীয় ওনারা থেকে যায়।সেলিম চৌধুরী,বাবা, চাচা,ধ্রুবর ফ্রেন্ড সবাই হাস'পা'তালে ছুটে যায়।

হাস'পা'তালে যেয়ে দেখে ফাহিমের চোখ লাল হয়ে আছে,পুরো কাঁদো কাঁদো অব'স্থা ।সবাই কে এক সাথে দেখে,অ'স'হা'য় বো'ধ করা ফাহিম কেঁদে ফেলে। 

সে তো জানে কতো প্র'তি'ক্ষা পর,ভাইয়ের কা'ঙ্ক্ষি'ত শুভ দিন এসেছে।কোথায় আজ তার ভাইয়ের সেরো'য়া'নি তে আ'বৃ'ত হয়ে,ফুলের বা'স'রে যাওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু আ'বৃ'ত' হয়ে আছে সা'দা বিছানায় সা'দা চাদরে।কতোগুলো মে'শি'নের ভিরে।

ফাহিম বাবাকে জ'ড়িয়ে ধ'রে কেঁদে দেয়।"ভাইয়ার সাথে তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না।এটা কি হয়ে গেল বাবা।তোমার কথা তো ভাইয়া শোনে।কিছু বলো না ওকে। এমন সময় কেন এটা করলো।বাড়িতে যে তুর ওর অপে'ক্ষা'য় বসে আছে।"
মনির জিসান সবাই ফাহিমাকে জহির সাহেবের কাছ থেকে দূরে সরায়।উনি ছেলের চি'ন্তায় অ'সু'স্থ হয়ে পড়ছেন।

ধ্রুবর মা কাঁদতে কাঁদতে দু'র্ব'ল হয়ে পড়েছেন।সেলিম সাহেব কবির সাহেব ধ্রুবর সাথে সাথে মেয়ের কথা ভেবে দি'শে'হা'রা।

ডা'ক্তা'র জানিয়েছেন ,"ধ্রবর ডান হাত ভে'ঙে গেছে।পায়ের দিকে ও একপাশের 'মাং'স থে'ত'লে গেছে।মাথার চো'ট'টা খুব গ'ভী'র ।তাছাড়া শ'রী'রের এখানে ওখানে আরো অসং'খ্য ইন'জু'রি রয়েছে।প্র'চু'র' ব্লা'ড ল'স হয়েছে। ৭২ঘন্টার মধ্যে যদি সে'ন্স না আসে তাহলে কো'মা'য় চলে যাওয়ার স'ম্ভা'বনা রয়েছে।আল্লাহ কে ডাকুন।সব কিছু ওনার হাতে।"

ডা'ক্তা'রের কথা শুনে সকলে আল্লাহকে স্ম'র''ণ করছে।আই'সিই'উর সামনে সকলে হা'পি'ত্যে'শ করে বসে আছে।

তুরের সে'ন্স ফিরলে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে ওর মা ওর সি'ও'রে বসে কাঁদছে।

সব কথা মনে পড়ে। বালিশ থেকে মাথা তুলে মায়ের হাটু জ'ড়ি'য়ে কান্না জু'ড়ে দেয়।রায়লা বেগম মেয়ের মাথায় হাত রেখে আ'দ'র করছেন আর আর চোখের পানি ফেলছেন।মেয়েটার জী'বনে কেন বারবার এতো দুঃ'খ আসে?কেন বা'চ্চা মেয়েটার চোখের পানি ঝ'রছে?

"কাঁদিস না মা.... আল্লাহ কে ডাক।আল্লাহ যেন সহি'সা'লা'মতে মানিক টাকে ফিরিয়ে দেন।"
তুর হুহু করে কাঁদছে আর মুখে যা আসছে আ'বোল'তা'বোল বলছে।

"কেন আমার সাথে সব সময় এমন হয়,মা।আমার জীবনে কি সুখের মুখ দেখা বা'র'ণ।কেন একের পর দুঃখ এসে আমাকে গু'ড়ি'য়ে দেয়।আজকে আমার ক'পা'লের সাথে ওনি জু'ড়ে'ছেন দেখে ওনার এমন হয়েছে।তা না হলে ওনার কিছু হতো না।আমাকে কেন নিয়ে নিলেন না।ওনাকে কেন এতো ক'ষ্ট দিলেন।"

"এসব কথা বলিস না,আল্লাহ না'রা'জ হবেন।ওনি প'রী'ক্ষা করছেন।ধৈ'র্য ধ'র মা।আল্লাহর উপর ভ'র'সা রাখ।"

"কিভাবে  মা..... আমি যে ওনাকে এতো দিন এ'ড়িয়ে চলেছি,অনেক ক'ষ্ট দিয়েছি।আমার ও যে অনেক ভু'ল জ'মা হয়ে গেছে।ওনি যে আমাকে ভু'ল বুঝে আছে।আমার সাথে রা''গ করে আছে।একটা বার কি আমাকে আমার কথা গুলো বলার সু'যো'গ দিবে না।আমার কি স্ব'প্ন দেখা বা'র'ণ।আমি যে নতুন করে স্ব'প্ন বুন'ছি'লাম।কি হবে সেগুলোর।আমাকে তো আবারও এ'কা করে দিয়েছে।"

লাল নিল বাতি ও ফুল দিয়ে সাজানো পুরো নি'স্ত'ব্ধ'ত বাড়িতে,তুরের কান্নার আ'ও'য়া'জ কেমন যেন বাতাসে শো'কে'র ছা'য়া নামিয়ে দিয়েছে।

"মা আমাকে একবার ওনার কাছে নিয়ে যাও মা।আমি যাবো ওনার কাছে । বাবাকে ডাকো,বলো আমাকে নিয়ে যেতে।মা।মা... প্লিজ।"

"কিভাবে যাবি মা,বাড়িতে তো পু'রু'ষ মানুষ কেউ নেই। এমনকি কোনো গাড়ি ও নেই। ধৈ'র্য ধ'র মা।আমি তোর বাবাকে বলছি,পরি'স্থি'তি সাভাবিক হলে তোকে নিয়ে যাবে।"

"আমি আর এক মু'হূ'র্ত ও থাকতে পারবো না।এ'ক্ষু'নি না নিয়ে গেলে,আমি একা চলে যাবো।আমার খুব ক'ষ্ট হচ্ছে মা।বলো তুমি বাবাকে..।আমাকে নিয়ে যাও তোমরা।পায়ে ধ'রি ,শুধু একটা বার দেখতে চাই।"

মেয়েটা যে হা'রে পা'গ'লা'মো করছে না নিয়ে গিয়ে উ'পা'য় নেই। বাড়ির ছেলে মানুষ কেউ নেই।না বাড়ির কোনো গাড়ি আছে।কি করবে এখন।অব'শে'ষে সি'দ্ধা'ন্ত নেয় একটা সি এন জি দিয়ে চলে যাবে।

লিভিং রুমে রিনা বেগম,ফজিলাতুন্নেছা,রাইসা,রিয়া,নানি আরো কয়েকজন বসে আছে।এতক্ষ'ণ নিচে বসে এরাও তুরের কান্নার আ'ও'য়া'জ পেয়েছে।সকলের চোখে মুখে হ'তা'শা'র ছা'প স্প'ষ্ট।তুর আর ওর মাকে নিচে নামতে দেখে ফজিলাতুন্নেছা এগিয়ে আসে।

"কই যাও তোমরা?হাস'পা'তা'লে বুঝি।"

"জি আম্মা।দেখেন কোনো ভাবেই কান্না থামাতে পারছি না মেয়েটার।কেমন ছ'ট'ফ'ট করছে।তাই নিয়ে যাবো।"

তুরের দাদি তুরের মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়।মেয়েটার জী'বনে এমনি দু্ঃখ ক'ষ্টের শেষ নেই।তার ওপর নিজে ও যে কতটা ক'ষ্ট দিয়েছে।এসব ভেবে কেঁদে ফেলেন।

তুর ওর দাদির হাতে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে,"দাদি আমার প্রতি কোনো রা'গ থাকলে আমাকে ক্ষ*মা করে দেও।তবু আর অভি'শা'প দিও না।একটু সুখের মুখ যেন দেখতে পারি সেজন্য দোয়া কোরো।তোমার বং'শে'র  তোমার এই নাতিটা যে আমার সুখের কারণ।তোমার নাতির কিছু হলে,আমি ও তার সাথে শে'ষ হয়ে যাবো।সবাই কে বোলো, আমার প্রতি কোনো অভি'যো'গ থাকলে ক্ষ'মা করে দিতে। আমার সুখের জন্য সবাই যেন একটু দোয়া করে।"

তুরের কথায় আর কান্নায় সবাই আ'বে'গ'প্র'ব'ণ হয়ে পড়ে।
রাইসা বলে,"আন্টি আমি ও আসি আপনি একা ওকে সা'ম'লাতে পারবেন না।"

"আসবে.... আসো।"

ওরা সি'এন'জি নিয়ে হা'স'পা'তালে পৌঁছে।তুরের চোখের পানি যেন কোনোভাবেই ব'ন্ধ হচ্ছে না।
গাড়ি থেকে নেমে  দৌ'ড়ে ভিতরে ঢুকে।রি'সি'প'শন থেকে আই'সি'ইউ কোন দিকে জেনে আবারও ছু'ট লা'গায়।ওর মা রায়সা কেউ ধ'র'তে পারে না।ওরা ও ওর পিছু পিছু যায়।

আই'সি'ইউর সামনে সবাই বসে আছে।তুর ছু'টে সামনে বসে থাকা ফাহিমের কাছে যায়।ফাহিম তুরের বি'ধ্ব'স্ত চে'হা'রা দেখে কাঁদোকাঁদো যায় ।মনির ফাহিমের কাছ থেকে তুরকে টে'নে এনে বসতে বলে।কিন্তু তুরের কি আর বসার অ'ব'স্থা আছে।সে আ''র্ত'না'দ করে উঠে মনির কে জ'ড়ি'য়ে ধ'রে।

"ভাইয়া আমাকে একটু দেখাও না,ওই পা'জি  লোকটা কোথায় আছে।আমার বিয়ে ন'ষ্ট করে কোথায় নি'শ্চি'ন্তে পড়ে আছে। সে কি জানতো না আজ তাকে ফিরতে হবে। আমি জানি ভাইয়া,আমার সাথে রা''গ করে সে এমন করেছে।আমাকে একটু দেখতে দেও ওনাকে।"

তুরের কান্নায় সবাই কেঁদে ফেলে।সবাই ভালো করে বুঝতে পারছে,তুর কতটা ভালোবাসে ধ্রুবকে। 

"কাঁদিস না বোন,আল্লাহ কে ডাক।আর হা'স'পা'তা'লে এভাবে কান্না কাটি ক'তৃ'প'ক্ষ এ'লা'উ করবে না।আই'সি'ই'উর সামনে এমন করলে,উনারা তোকে থাকতে দিবে না।আর মামা মামিদের দিকে তাকিয়ে দেখ তো।তুই এমন করলে উনারা তো আরো ভে'ঙে পড়বে।আল্লাহ সব ঠিক করে দিবেন।তুই কান্না ব'ন্ধ কর।আমি ভাইয়াকে দেখাচ্ছি।"

থাকতে দিবে না শুনে তুর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।কিন্তু চোখ বেয়ে পানি পড়ছেই।

আই'সি'ই'উর বাহির থেকে কাঁ'চের দরজা দিয়ে তুরকে দেখায়।কিন্তু অ'তি'রি'ক্ত কান্নার ফলে তুর সব ঝা'প'সা দেখছে।তার উপর সব কিছু ই সা'দা মুখটা ভালো করে বো'ঝা যাচ্ছে না।

"ভাইয়া আমি তো ঠিক মতো দেখতে পারছি না। সাদা ব্যা'ন্ডে'জ ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।"

মনির বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে ,"ওর মাথায় ব্যা'ন্ডে'জ করা হয়েছে তাই এমন দেখতে পারছিস।"
"কি হয়েছে ভাইয়া ওনার?আমাকে একটু বলো না।এভাবে চুপ'চা'প শু'য়ে আছে কেন?বাড়ি ফিরবে কখন।"

জানি না রে বোন।ডা'ক্তা'র বলেছেন ৭২ঘন্টার মধ্যে জ্ঞা'ন না ফিরলে কো'মা'য় চলে যাওয়ার 'স'ম্ভা'বনা আছে।

এটা শুনে তুর আবারও সে'ন্স'লে'স হয়ে যায়।সবাই আবারও কান্না কাটি শুরু করে।ওকে একটা কেবিনে নেয়া হয়।ডা'ক্তারে'র বিভিন্ন প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর।ঘুমের ইন'জে'ক'শ'ন দেয়,আপা'তত ঘুমানোর জন্য।

"অ'তি'রি'ক্ত চি'ন্তা'য় খুব'ই দু'র্ব'ল'  হয়ে পড়েছে।খেয়াল রাখবেন।আর কিছু খা'ওয়া'নোর ব্য'ব'স্থা করুন।"

এ দিকে ৬৮ঘন্টা ও'ভা'র হয়ে যায় কিন্তু এখনো ধ্রুবর জ্ঞা'ন ফিরার কোনো ল'ক্ষ্ম'ণ নেই।


চলবে.....

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.