ধ্রবতারাগল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)
রায়লা : কি....রে....
(দু'জনে ই দূরে সরে )
-কিছু না চাচি ,ওই.... তুর ভয় পাচ্ছিল তো তাই আর কি.....আমি যাই।
(তুর রাগে ফুসছে ,মুখ টা রাগে লাল হয়ে গেছে )
-নিজের চুল নিজে ই ছিড়তে মন চাচ্ছে। উফফ!!!! এতো বোকা আমি, এই হতচ্ছাড়া পাইলট আমাকে এই ভাবে মুরগী বানালো এসেই ,এর একটা বিহিত না করে আমার শান্তি হবে না।
-এই মেয়ে.... কি বিরবির করছিস,যা জামা পালটে আয়।কি একটা অবস্থা এই রাত দুপুরে বাসা ভর্তি মেহমান এ।যা.......
সকালেই শুরু ওর নাটক
রান্না ঘরে ,এক বার বড় মা তো এক বার ছোট মার কাছে যায়
আবার দাদির কাছে ,ফুপির কাছে গিয়ে পেনপেনানি করছে.... "যে...... ওকে কেউ...... "
(বাকিটা কেউ শুনছে ই না সবাই কাজে ব্যস্ত,এত দিন পর বাড়ির ছেলে বাড়ি এসেছে তাই ওর পছন্দের সব খাবার রান্না হচ্ছে )
সকাল ৮টা
সবাই নাস্তা করতে টেবিলে হাজির।বাড়ির পুরুষ ও বাচ্চারা খাওয়ার পরে মহিলারা খায় এমনকি দাদি ও,সবাই কে সার্ভ করে দেয় ওনারা....
বাড়িতে সবার মাঝে
একমাত্র মেয়ে (তুরিন রায়হান )আদর করে সবাই ডাকে তুর,বয়স(১৮+)।লম্বা ৫ফিট৩"আর সব চেয়ে আকর্ষণীয় তার চুল একদম কোমর ছাড়িয়ে হাটুর কাছে প্রায়,এগুলোর যত্নে ও তার মা আর বড় চাচির অবদান ,ও একদম অগোছালো ,চুলটা পর্যন্ত আচরাতে চায় না,না পেরে কোন রকম ,ওর মা আর বড় চাচি(ধ্রুবর মা) ই তেল দেওয়া ,শ্যাম্পু করা ,আচরে দেওয়া এগুলো করে।না হয় অলস তুর কোনোমতে চুলটা পেঁচিয়ে তাতে একটা কাঠি গুজে দিবে আর যদি তাও হাতের কাছে না পায় তো একটা কলম গুজে দিবে। তুর আর ধ্রুবর ছোট ভাই ফাহিম (১৮) দুইজন একি কলেজে পড়ে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার প্রিয় হবি গান আর নাচ দুইটা ই শুনতে ও করতে পচ্ছন্দ করে।ঝাল -টক-চকলেট -আইসক্রিম-ফুচকা এই গুলো ওর প্রিয় খাবার।চাচাতো ভাই বোনদের মধ্যে শুধু তুর ই একটি মেয়ে ,তাই আদরের শেষ নেই।
ওর বাবা চাচার মাঝে বসে খায়,দুই জনের মাঝের চেয়ার টা ওর জন্য বরাদ্দ।ওর সকল বায়না তারা পূরণ করার চেষ্টা করে ,ওর মা ছাড়া সবাই ই ওকে মাথায় করে রাখে। ওর মার ধারণা সবাই আশকারা দিয়ে দিয়ে ওকে এমন বাদর বানিয়েছে।কখনো টেবিলে বাবার হাতে কখনো বড় আব্বুর হাতে খাওয়ার বায়না ধরে। হাজার ব্যস্ততায় তারা ও ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।কখনও এটা খাবে না তো কখনও ওটা খাবে না।কখনও তার এটা চাই তো কখনও ওটা। সবাই হাসি মুখে মেয়ের সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করে।
ছোটবেলায় খেলনা প্লেন চালাতে চালাতে শখ হয় বড় হয়ে পাইলট হবে। প্লেন নিয়ে নীল আকাশ আর মেঘের রাজ্যে পাড়ি জমাবে।ভিডিও গেমসের অথবা হলিউড মুভির রোমাঞ্চকর পাইলটদের ফ্লাইং দেখে নিজেকেও একদিন ঐ জায়গায় দেখার স্বপ্ন দেখত,আজকে স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত।
২৮বছর বয়সি ধ্রুব রায়হান বর্তমানে" বাংলাদেশ বিমান "এর একজন(F O) পাইলট (ফাস্ট অফিসার )৫ফিট৮"লম্বার অধিকারি ,আকর্ষণীয় বডি ফিটনেস ।মান্থলি দের লক্ষ টাকা আয় তার।শান্ত সভাবের ধ্রুবর হঠাৎ করে রেগে যাওয়ার সভাব।কিন্তু রেগে গেলে ঠান্ডা মেজাজে রাগ দেখায়।
ধ্রুব বসে খাওয়া শুরুর সাথে সাথেই.....
-বড় আব্বু.... উঙ.... উঙ......
উহঙ.....উঙ......এ্য..... এ্যা......
-কি হইয়েছে মামুণি.....কাঁদছিস কেন?
ওর মা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েছে ,নিষেধ করছে সকাল সকাল তামাশা না করতে।
কিন্তু তুর তো তুর ই,সে পণ করেছে ওকে কথা শুনিয়ে ছাড়বে।
-এ্যা..... এ্য.... এ্যা...বাবা....
-কি হইয়েছে বল না... মা?
-কালকে আমি যে ভয় পেয়ে মরতে বসেছি ,জানো কার জন্য??
বড়োরা সব জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে
আর ছোট রা ভয়ে খাবারের বদলে ঢোক গিলছে।ধ্রুব ডোন্ট কেয়ার ভাবে আছে,এক মনে খেয়ে যাচ্ছে। তুর ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে......
শাহানা:কি রে কার জন্য আবার কি তুই না ভূত দেখে ভয় পেলি!!!!
রায়লা :কি আবার সকাল সকাল নাটক শুরু করেছে ,এই নেকামি বাদ দিয়ে চুপচাপ খা, এমন বাদর মেয়ে জীবনে দেখিনি ,এর চেয়ে ঢের ভালো আমার ছেলে গুলো।
সমির(ছোট চাচা ): কি মা... কি হয়েছে কার জন্য ভয় পেয়েছিস আবার ,রাত করে আর হরর মুভি দেখবি না বুঝলি।তাহলে আর ভয় ও পাবি না.....।
-ছোট আব্বু.........
এই ধ্রুব ভাইয়া আমাকে ভয় দেখিয়েছে (কাঁদো কাঁদো হয়ে পিছন থেকে মাক্সটা বের করে)এই দেখ গতকাল ওনি কোমরে গুঁজে রেখেছিল আমি হাতে নাতে ধরেছি।
(সবাই ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে আছে, ধ্রুবর কোনো হেল দোল নেই )
-আমি যদি হার্ট এ্যটাক করে মরে যেতাম কোথায় পেতে এই তুর কে হুম... বল? তোমারাই বল?আমার মত এমন দুর্বল মনের মেয়েকে কি কষ্ট টা ই না দিল?(কাঁদোকাঁদো হয়ে )
চাচারা সব ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে
জহির (ধ্রুবর বাবা ) :কি ব্যাপার ধ্রুব? সত্যি?
-.....................
(ঠাণ্ডা সরে খেতে খেতে )জি...।
জহির :কেন ভয় দেখালে....? কি অবস্থাটাই না হয়ে ছিল.... যদি আরো বেশি কিছু হতো!
-আমি ওকে নিষেধ করেছিলাম ,আমার কথা শুনেনি ,আমাকে পাত্তা পর্যন্ত দেয়নি ,বেয়াদবি করেছে,আমি ওর বড় ও আমাকে ইগনোর করেছে তাই..... ।
জহির :তাই বলে এই ভাবে .......... আগে ছোটো ছিলে তখন ওর পিছনে লাগতে বুঝলাম ,কিন্তু এখন তো বড় হয়েছো এখন....
আর এতো দিন পরে বাড়ি এসেছো ,কোথায় শান্তি বজায় রাখবে ,না উল্টো ওকে ভয় দেখিয়েছো,
আমার মা টা....
কাঁদে না......খাও.....খাওতো
দেখি কোন হতচ্ছাড়া আমার মেয়ে কে ভয় দেখায়।সবকটাকে বাড়ি থেকে বের করে দিব.....
শাহানা( ধ্রুবর মা): বিয়ে কারালে বাচ্চা কাচ্চার বাপ হয়ে যাবে এখনো বাদরামি গেল না।
(তুর মনে মনে খুব খুশি : দেখ কেমন লাগে কথা শুনতে)
কবির :হয়েছে হয়েছে আর বকো না,ধ্রুব বাবা আর ভয় দেখিও না তো আমার মামুণি কে।আসো মা খাইয়ে দেই।তুমি ও..খাও.....বাবা।
রায়লা : ছেলে টা আমার কত দিন পরে এসেছে এই পাজি মেয়ের জন্য ওকে কথা শুনতে হচ্ছে।ওর দিকে ভালো করে দেখতেই পারছি না।ভাইজান -ভাবি ওকে ছেড়ে ধ্রুবর দিকে ধ্যান দিন তো ,কত দিন পরে ছেলে টা বাড়ি ফিরেছে ,ওই মেয়ে দিন কে দিন যাচ্ছে তাই হচ্ছে। খাও বাবা তুমি মনোযোগ দিয়ে খাও।(মাথায় হাত বুলিয়ে )
সব ধ্রুবর পছন্দের খাবার রান্না হয়েছে আজকে,খাবারে ও বেশি ঝাল খাতে পারে না তাই সব খাবারে আজকে কম ঝাল দেওয়া হয়েছে।
বাবার হাত থেকে এক লোকমা খেয়ে ই:-মা খাবার এমন লাগছে কেন একদম ই ঝাল নেই।
রিনা (ছোট চাচি):আরে ধ্রুব তো বেশি ঝাল খেতে পারে না তাই ,এটা ও জানো না বোকা মেয়ে।
:উনি কি বাচ্চা নাকি যে ঝাল খেতে পারে না।(আমার শাস্তি তো বাকি ই আছে চান্দু)ঠিক আছে আজকে কষ্ট করে খেয়ে নিলাম পরে আর পারব না,মা তোমার বাচ্চা ছেলের জন্য আলাদা সুজি ,খিচুরি আর জাও ভাত রান্না করো।
রায়লা:দেখলে দেখলে ,কেমন পাকাপাকা কথা বলল মুখের ওপর ,আদরে আদরে একটা মাথা মোটা বাদর হয়েছে। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার।কাকে কি বলতে হবে এটা ও বোঝে না।
ধ্রুব :(এতখন ধরে সব চুপচাপ হজম করছি এর মজা পরে টের পাবি কালিতারা,,আমাকে কথা শুনানো ,তোর নেকামি ছুটাবো দাড়া)
সবার খাওয়া শেষে চলে গেলে ,মহিলা রা বসেছে ,
সেই সুযোগে......
চাচি.... মা....দাদি.....ওই মেয়ে কে নিষেধ করেছিলাম তবু্ও কেন দেখল,আমার কথা শুনেনি না শুনলে এমনই হবে,ও যদি এমনই করে আমি কিন্তু বাড়ি ফিরব না। (বলেই চলে গেল )
দাদি:আরে.. আরে....কয় কি!!!ওই ধ্রুব... ধ্রুব.... দাদাভাই.... এইগুলান কি কথা!!!!!!! ওই বউমা... দাদায় এইগুলোন কি কয় হ্যা,ওই ছেড়ি রে কইয়া দিও এমন যেন না করে,ভাই ডা আমার কত দিন পরে আইছে.....
শাহানা:আম্মা আপনি চিন্তা করবেন না কিছু হবে না খেয়ে নিন।
রায়লা :চিন্তা করবেন না আম্মা আমি তুর কে বুঝিয়ে বলব ,যেন ধ্রুবর সাথে কোনো রকম বেয়াদবি না করে।
বিকালে সবাই ছাদে আড্ডা দিচ্ছে
তখনই ধ্রুবর আগমন..... সবাই প্ল্যান করছে হাতিরঝিল ঘুরতে যাবে।ফুচকা পানিপুড়ি খাবে,সে মোতাবেক তারা রেডি হতে যাবে ,তো তন্নি ধ্রুব কে ও যেতে বললো।
-আমি যাব?
আমি যাই এটা তো আর সবাই চায় না।(আড়চোখে তুরকে দেখে )
তুহিন মাহিন:না ভাইয়া আমরা সবাই চাই ,চলো না যাই ,আমরা সবাই চাই তোমার সাথে যেতে ,কতদিন তোমার সাথে ঘুরতে যাইনা( দুজন দুই হাতে ধরে ঝাকিয়ে ঝাকিয়ে বলছে )চলো না ভাইয়া... চলো না...এই তুর আপু বল না....
(সবাই বলছে যেতে তাই তুর ও বললো :-আমি কি না করেছি নাকি? আজব!!!!)
-ঠিক আছে......
চল তাহলে......
তুর একটা কলো থ্রি পিস পরেছে ,কানে কালো ঝুমকা ,চুল গুলো ছেড়ে রেখেছে বা হাতে কয়েকটা কালো রেশমি চুরি ,চিকন গোলাপি ঠোঁটে লাল লিপস্টিক।গোলাপি ফর্সা গায়ে কালো রংটা একদম ফুটন্ত লাগছে ,যে তাকাবে চোখই সরাতে পারবেনা।
আর এই দিকে ধ্রুব কালো জিন্স এর সাথে সাদা টিশার্ট পরেছে। জিম করা এই বডির জন্য ই মনে হয় টিশার্টা বানানো হয়েছে । দুই হাতের মাসলস গুলো দেখা যাচ্ছে। ফর্সা শরীরে একদম পারফেক্ট লাগছে।হাতে ব্ল্যাক স্মার্ট ওয়াচ
চোখের( রে-বেন )ব্ল্যাক সানগ্লাস টা টিশার্টের বুকের কাছে ঝুলছে.... পুরাই.... ডেশিং লুক।
সবাই রেডি হয়ে নিচে নেমেছে। ধ্রুব নিচের দিকে তাকিয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছিল হটাৎ ই গাড়ির দিকে তাকিয়ে গ্লাসে চোখ আটকে গেল। বের না হয়ে ম্যাইন দরজায় দাঁড়িয়ে ই পিছনে ফিরে তাকলো পুরো থ........হয়ে গেল ।লিভিং রুমে তুর দাঁড়িয়ে ওর বড়ো মার সাথে কথা বলছে.... কোনো দিকে খেয়াল নেই।এই দিকে ধ্রুব হা করে তাকিয়ে ই আছে পেছনে সবাই যে গাড়ি তে গিয়ে বসেছে সে খেয়াল ই নেই। তুর ওর কথা শেষে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে যে ধ্রুব কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে,ওর অসস্তি লাগছে। তাই ও ওর মত পাশকাটিয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসেছে। ধ্রুব এর দাদি এই ভাবে ওর তাকানো টা খেয়াল করল।আর উহুম....উহুম করে কেঁশে ওঠল।কাশির শব্দে ধ্রুব নিজের মধ্যে ফিরল আর দ্রুত গিয়ে গাড়ি তে ওঠল।
ড্রাইভিং সিটে মনির আর পাশের সিটে ধ্রুব মাঝ সারিতে তুর ,তন্নি ,শাহিন আর পিছনের সিটে ফাহিম ,মাহিন ও তুহিন বসেছে। গাড়ি তে বসেও ফর্ন্ট মিররে শুধু তুর কে ই একটু পর পর লুকিয়ে দেখে যাচ্ছে ওর দিক থেকে কিছুতেই চোখ সরাতে পারছে না,দেখছে আর ভাবছে-
"তুই কবে এত বড় হলি,কেন এই রূপে সামনে এলি আমার হৃদয় হরণ করতে ,যদি কোনো ভুল করে ফেলি তার দায় কি তুই নিবি"(ফর্ন্ট মিররে তাকিয়ে )।
বিষয়টা তুর তন্নি দুজনেরই চোখে পড়েছে।ধরা পরে ধ্রুব আনইজি ফিল করছে। তাই চোখ ঘুরাতে তাড়াতাড়ি FMঅন করে দিয়েছে.. তখনই বেজে ওঠে গান-..............
তোকে একারে দেখার লুকিয়ে কী মজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানেনা..........
তোকে চাওয়ারা পাওয়ারা নয় রে সোজা
সে তো আমি ছাড়া কেউ জানেনা.........।
চলবে....