
তিন্নির ওপর আজকাল খুব রাগ হয় রাইএর। বিয়ে বাড়ি থেকে অবশ্য ওভাবে ওকে বকাঝকা করে নিয়ে বেরিয়ে আসা ঠিক হয়নি ওর। তনু বারবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে ওর বন্ধুর মতো মিশতে হবে ওকে। রাই তনুর সব কথাই শোনে শোনার চেষ্টা করে। তনু শুধুই ওর বান্ধবী বা প্রিয় বান্ধবী নয়, তারচেয়ে বেশি কিছু। এখন ওর একমাত্র কাছের মানুষ। কিন্তু রাই তনুকে বলতে পারলো কেন আজ ওরকম করলো। লোকজন ভাবলো রাই এভাবে চলে এলো কারণ ও চাইতো তনুর বিয়েটা হোক ওর দাদার সাথে।
চাইবে না কেন রাই সেটা। তনু কি শুধুমাত্র ওর প্রিয় বান্ধবী ! তারচেয়ে আরো বেশি কিছু তনু রাইএর কাছে। শুভদ্বীপ যখন মারা গেলো তখন ওর ননদের কাছে কথা শুনতে শুনতে ওর জীবন অতিষ্ট হয়ে ওঠে ছিলো। যদিও রাজা ওকে তখন বিয়ে করতে চেয়েছিলো। কিন্তু রাই তিন্নি আর শুভদ্বীপের চাকুরীটার জন্য বিয়েটা করলো না। সেইদিন ওর সিদ্ধান্ত ঠিক ও নিয়েছিলো। আজ ও একা হলেও স্বাধীন।
কিন্তু ওর অসময়ে ওর পাশে ছিলো ওর প্রিয় বান্ধবী তনু। রাইএরে ওর বাবা মায়ের কাছে যাবার পথ ছিলো না প্রথম দিকে। কারণ ঐ পরিবারে বিয়ে দিতে আপত্তি ছিলো ওর দাদা বাবা মা সবার। শেষে ও পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। এক পাড়াতে শ্বশুর বাড়ি হলেও , শুভদ্বীপের মৃত্যুর পর ও বাড়ি থেকে কেউ আসেনি সে দিন।
কিন্তু এই কঠিন সময় ওর পাশে ছিলো তনু। তনু ওকে নিজের বাড়ির নিচের তলাটায় থাকতে দিলো। এ সময় তনুর সাথে ওর দাদার সম্পর্কটা ভেঙে গেলো। যদিও তনু বলে ” না না তেমন কিছু না তোর দাদা বিদেশে চাকরি ছাড়বে না। তাই আমি ওকে ছেড়ে দিলাম।”
তনু শুভদ্বীপের স্কুলেই চাকুরী করে। ওর তৎপরতায় চাকুরীটা হলো তাড়াতাড়ি রাইয়ের। তিন্নি বড় দুষ্টু। রাই এ পাড়ার মেয়ে এ পাড়ার বৌও তবু লোকজনের সাথে মেলামেশা করে না। কিন্তু তিন্নি শুধু সুধা দিকে জ্বালায় না। সারা পাড়ায় সব বাড়ি চষে বাড়ায় রাইয়ের অনুপস্থিতিতে। না না তিন্নি স্কুলে যায় পড়াশোনা করে ভালোই। তনু ওকে পড়াশুনা করায়। এক থেকে দশের মধ্যে থাকে। তিন্নির ওপর তনুর অনেকটা অধিকার আছে তাই রাই ওকে শাসন করে না বা সুযোগ পায় না হয়তো। কারণ চাকুরীতে পদোন্নতি করার জন্য ও পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। তিন্নির কোনকিছু দেখার সময় নেই। তনু এখন ওর সব কিছু।
তিন্নির জন্যই এতো বছর পরে ও ওর দাদা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারলো। পাড়ার সব বাড়িতেই ছোট্ট তিন্নির আসা যাওয়া । পাড়ার সবাই দুষ্টু তিন্নিকে ভালোবাসে। তাই তিন্নির জন্যই আজ ওদের সম্পর্কটা ঠিক হয়ে গেছে। যদিও ওর দাদা কাকে বিয়ে করছে সেটা ওর জানার সুযোগ হয়নি। ও আর পাঁচটা অতিথির মতো নিমন্ত্রণ খেতেই গেছে । কিন্তু বিয়েতে সে কেন থাকলো না সেটা একমাত্র ও জানে।
কারণটা ওর একসময়ের প্রিয় বান্ধবী তানিয়া। তানিয়া খুব সুন্দরী ছিলো মুম্বাই ওর আলাপ ইমরানের সাথে। কিন্তু ইমরান বিধর্মী ছিলো বলে বাড়ির লোকজন এর আপত্তি থাকলেও পরে ইমরানকে মেনে নেয় ওর বাড়ির লোকজন। কিন্তু ইমরানের আরো দুটো বৌ আছে এটা জানতে পেরে তানিয়া মানসিক ভারসাম্য হারায়। শুভদ্বীপ ওর দুরসম্পর্কের দাদা হিসেবে তখন ওর পাশে ছিলো। প্রতিবারের মতো রাই আবারও মৃত সন্তানকে জন্ম দিলো। কিন্তু তানিয়াকে বাবা মা বললো ও মৃত সন্তানকে জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তানিয়া তো জানতো ওর মেয়ে হয়েছিল।
কিন্তু তানিয়া হয়তো সেইদিন চুপ করে গিয়েছিল কারণ পিতৃপরিচয়হীন একটি মেয়ে মানুষ করা হয়তো ওর পক্ষে কঠিন হবে। কিন্তু আজতো ওর দিন বদলেছে। ওর দাদা অনেক উদার আর প্রগতিশীল মানুষ। যখন বাড়ির কেউ ওর সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইতো না তখনো রাই এর মানসিকতাকেই সমর্থন করতো ওর দাদা। ওর দাদা তানিয়ার সবকিছু জেনে বিয়ে করেছে। তিন্নি যে তানিয়ার সন্তান সেটাও ও জানে। তাই আজ এক সময়ের প্রিয় বান্ধবী তানিয়া আজ ওর সবচেয়ে বড়ো শত্রুতে পরিনত হয়েছে।
ও যে ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো। তানিয়া এসে হাজির হলো সকাল বেলায়। তানিয়ার আসতে তনু বেশ খুশি। রাইতো খুশি হতে পারলো না। তানিয়া বললো ” কি করে প্রিয় বান্ধবীকে দেখে খুশি না হয়ে ভয় পেয়ে গলি যে। আমি আজো তোর প্রিয় বান্ধবী তোর থেকে কিছু কেড়ে নেবো না। তাছাড়া তনুকে আমি আর বেশি কষ্ট দিতে পারবোনা। “
তনু বললো ” ছোট বেলায় তুই তোর প্রিয় পুতুল টা আমাকে দিয়েছিলি। সে হিসাবে না হয় বুবাইকে নিয়েছিস ওতে আমার কোন কষ্ট নেই। তবে তিন্নিকে ভালোবাসতে পারিস কিন্তু কেড়ে নিস না কখনো , এই টুকু অনুরোধ প্রিয় বান্ধবী হিসেবে।”
© কালেক্টেড