আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্বঃ ২০.১)

কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,ধারাবাহিক গল্প,প্রেম কাহিনি,বাংলা গল্প,রোমান্টিক গল্প,bangla romantik story,bangla golpo
Estimated read time: 7 min
কৃষ্ণবেণী- নন্দিনী নীলা (পর্বঃ ২০.১)

কৃষ্ণবেণী
পর্ব ২০(১)


জায়ান একটা মেয়ে ঠিক করেছে যে বাসায় এসে তৃষ্ণাকে দুই ঘণ্টা করে পড়াবে প্রতিদিন। তৃষ্ণার জন্য যাবতীয় বই পত্র খাতা-কলম সবকিছুই কিনে আনা হয়েছে। তৃষ্ণা যেহেতু একেবারেই পড়ালেখা করেনি। ওর একেবারে প্রথম থেকে সব কিছু পড়তে হবে একদম অ, আ থেকে। তৃষ্ণা বইয়ে তাকের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে এই সব বই নাকি ওকে পড়তে হবে। দুই তিনটা বই এনে উল্টাপাল্টা দেখছে।

জায়ান গভীর চিন্তায় বিভোর হয়ে আছে। তৃষ্ণা আড়চোখে জায়ান তাকিয়ে দেখছে। এত গভীর মনোযোগ দিয়ে কি ভাবছে?

জিজ্ঞেস করার সাহস পাচ্ছে না বলে এদিক ওদিক ঘুরছে তৃষ্ণা। নিজের মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করে তৃষ্ণার দিকে তাকিয়ে জায়ান গম্ভীর গলায় বললেন,,"আমাকে না দেখে ব‌ই এনে পড়তে বসো।"

তৃষ্ণা থতমত খেয়ে বলল,"আপনি কিভাবে বুঝলেন আমি আপনাকে দেখছিলাম।আপনি তো একবার ও আমার দিকে তাকাননি।"

"তোমার গতি বিধি বুঝতে আমার তোমার দিকে তাকাতে হয় না।"

"আমি কেন আপনাকে তাকিয়ে ও বুঝতে পারি না?"

" আমি তোমাকে যতটুকু ভালোবাসি। তুমি তার এক বিন্দু ও আমাকে ভালোবাসো না তাই।"

তৃষ্ণা চোখ বড়ো বড়ো করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। এটা কি বললেন উনি। আমি উনাকে ভালোবাসি না?

তৃষ্ণা জায়ানের দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বলল," এসব কি বলতেছেন। আমি আপনারে অনেক ভালোবাসি সত্যি।"

জায়ান দুই হাত আড়াআড়ি ভাবে ভাঁজ করে হাসি হাসি মুখ করে বলল,," রিয়েলি? তাহলে তোমাকে আমি যতটা বুঝি তুমি আমাকে বুঝনা কেন?"

তৃষ্ণা এবার চুপ মেরে গেল সত্যি তো ও তো জায়ানকে একদমই বুঝতে পারে না। বোঝার চেষ্টা করলে তালগোল পাকিয়ে, মাথা খারাপ হয়ে যায়। মানুষটা কেমন জটিল লাগে, তাকে বোঝাবার ক্ষমতা যেন নাই‌ ওর। ও চোখ ছোটো ছোটো করে তাকিয়ে আছে।

জায়ানের ঠোঁটের কোনে হাসি তৃষ্ণা বোকা চাহনি দেখে আরো প্রশস্ত হলো। তৃষ্ণা মাথা নিচু করে বলল," তার মানে আমি আপনারে ভালোবাসি না। কিন্তু বিশ্বাস করেন আমি তো আপনারে অনেক ভালোবাসতাম এটাই সত্যি ছিল কিন্তু আমার ভালোবাসাটা যে হয়নি আমি তো বুঝতে পারি নাই। কি করলে আমি আপনারে আপনার থেকেও বেশি ভালোবাসতে পারব বলেন তো?"

"যেদিন তুমি আমার দিকে তাকিয়ে আমার মনের খবর ধরে ফেলতে পারবে সেদিনই বুঝতে পারবে তুমি আমাকে ভালোবাসো‌। আর এখন যেটা ভাবছো সেইটা ভালোবাসা না আমি তোমার হাজব্যান্ড এ জন্যই তুমি ভাবো তুমি আমাকে ভালোবাসো। এটা হচ্ছে পরিস্থিতিতে পরে ভালোবাসা। কিন্তু যেদিন সত্যি ভালোবাসবে আমাকে। সেদিন তোমাকে বুঝাতে হবে না, মুখে ও বলতে হবে না ভালোবাসো তা তোমার ওই চোখের ভাষায় থাকবে। যেটা আমি এক পলক দেখলেই বুঝতে পারবো।"

জায়ানের রচনা সমান এতো কথা তৃষ্ণার মস্তিষ্কে কতটুকু ঢুকলো জায়ান বুঝলো না কিন্তু নিজের কথা শেষ করে বিছানায় বসে তৃষ্ণাকে আদেশ সুরে বললেন,"ওইখান থেকে ওই নীল কালার বইটা নিয়ে আসো।"

তৃষ্ণা হাঁ করে জায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিল। জায়ানের ধমক শুনে দৌড়ে বইয়ের তাকের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

জায়ানের ইশারা করা বইটা বের করে এগিয়ে আসলো।

"দাড়িয়ে না থেকে আমার সামনে এসে বসো।"

" ক্যান?"

" মূর্খ থেকে শিক্ষিত বানাবো তোমায়।"

" আমি পড়ালেখা করুম না। অনেক কষ্ট পড়ালেখা করতে আমাগো এলাকায় যারা করতো আমি দেখছি। ছোট কালে আম্মায় স্কুলে যাইতে ক‌ইয়া বলতো পড়ালেখা করলে নাকি অনেক বড় ঘরে বিয়া হয় সুন্দর সোয়ামি হয়। আমাগো ওতো টাকা পয়সা ছিল না এজন্য পড়ালেখা করতে পারি নাই। কিন্তু তাও দেখেন আমার কত সুন্দর সোয়ামি হইছে। আমার কপাল অনেক ভালো সবাই কয়। আমি এহন আর কষ্ট ক‌ইরা পড়তে পারমু না। আমি শুধু স্বামী সন্তান নিয়া সংসার করমু। "

বলেই তৃষ্ণা লজ্জা লাল হতে লাগল। জায়ান মাথায় হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে তৃষ্ণার দিকে। শেষের কথা শুনে হাহা‌ করে হেসে উঠল।

"জায়ান আহনাফের বউ হয়েছো তোমাকে তো শিক্ষিত উপযুক্ত হতেই হবে। সুন্দর স্বামী পেয়েছো বড়লোক স্বামীর বাড়ি পেয়েছো লেখাপড়া ছাড়াই। কিন্তু এখন তোমাকে লেখাপড়া করে শিক্ষিত হতে হবে। স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার তুমি করবে কিন্তু আগে লেখাপড়া করে নিজেকে উপযুক্ত করে তুলবে এরপরই তোমার সকল ইচ্ছে পূরণ হবে।"

"আপনি দেহি অনেক কিপ্টে লোক। আমারে লেখাপড়া করাইয়া কি চাকরি-বাকরি করাইবেন? আপনেরা কত বড়লোক! আমার লেখাপড়া করে লাভ কি? মানুষ তো লেখাপড়া করে বড়লোক হওয়ার জন্য। টাকা পয়সা ইনকাম করতে। আমার তো এসব দরকার নাই আমি ক্যান সংসার বাদ দিয়া এহন স্কুল,কলেজ যামু?"

" আমার যা আছে তাতে আমার সন্তান এবং তার সন্তানেরাও বসে খেতে পারবে কিন্তু তবুও তোমাকে লেখাপড়া করতে হবে আর এত যুক্তি দেখিয়ে লাভ নাই আমি কৃপণ নাকি সেটা দেখতেই পাবে। কিন্তু তোমাকে লেখাপড়া করে চালাক চতুর একজন স্বনির্ভর নারী হতে হবে। আমি যদি না থাকি তখন যাতে তোমাকে আমার অবর্তমানে কেউ কষ্ট দিতে না পারে। ঠকাতে না পারে। তুমি যদি এমন বোকা থাকো তাহলে তোমার স্বামীর এতো টাকা পয়সা ও তুমি ভোগ করতে পারবেনা। সবাই তোমাকে ঠকিয়ে দিবে। নিজেকে এমন ভাবে তৈরি করতে হবে তোমায় যাতে আমার অবর্তমানে তুমি সব দিক নিজে সামলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারো। কেউ যেন তোমাকে ঠকানোর সাহস অব্দি না করতে পারে।"

"আমাকে ছেড়ে আপনি কোথায় যাবেন?"ছলছল চোখে বলল তৃষ্ণা।

জায়ান তৃষ্ণার দুই গালে হাত রেখে চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল," পাগলি, এতো মিষ্টি একটা ব‌উ রেখে আমি কোথায় যাবো?"

"তাহলে ক্যান বললেন আপনার অবর্তমানে আমাকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে?"

" ধরো হুট করে তোমার এই বরটা মরে গেল তখন তোমাকে কি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে না?"

মরার কথা শুনেই তৃষ্ণা ফ্যাস ফ্যাস করে কেঁদে উঠল। নাকের জল চোখের জলে এক করে কাঁদছে জায়ানের হাত গাল থেকে ছাড়িয়ে জায়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। নাক মুখ জায়ানের শার্ট এ ঠলছে। জায়ান পরলো বিপাকে একে কি বুঝাতে এলো আর এ কি বুঝলো বাচ্চার মত কাঁদছে। বাচ্চা বউ বিয়ে করা যে কি জ্বালা তা ও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।

জায়ান আর কি করবে তার বাচ্চা বউ এর কান্না থামানোর জন্য মাথায় হাত বুলিয়ে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে।

"ব‌উ, সরি ব‌উ। আমি কোনদিন মরব না তোমাকে ছেড়ে। মরতে গেলেও তোমাকে সাথে নিয়ে যাবো। কান্না থামাও প্লিজ। আমার ব‌উ কে রেখে আমি একা কোথাও যাব না।"

স্বামীর আহ্লাদি কথা, ভালোবাসা দেখে তৃষ্ণার কান্নার গতি কমে এলো।

তৃষ্ণার কান্না থেমে এসেছে দেখে জায়ান এবার বলে উঠল,"কাল তোমার মাস্টার আসবে যে তোমাকে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা করে পড়াবে। সে যেভাবে পড়ায় যা বলে তাই শুনবে বাধ্য মেয়ের মত বুঝতে পেরেছ?"

তৃষ্ণা জায়ানকে ছেড়ে উঠে বসলো। জায়ান তৃষ্ণার কপালে একটা চুমু দিয়ে বলল,"বুঝতে পেরেছ?"

"সত্যি আমার পড়তেই হবে? আমাকে কি স্কুলেও যেতে হবে?"

"না তুমি তো কিছুই পারো না তোমাকে কি এখন ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করব? তুমি এখন বাসায় পড়বে আর মাস্টার এসে বাসায় তোমার পরীক্ষা নেবে। বয়স অনুযায়ী এবার তুমি মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে। একমাস উনি তোমাকে একবার পড়াবে তারপর আরেকটা মাস্টার রেখে দেবো তারপর তোমাকে দুবেলা পড়ানো হবে। তোমাকে তাড়াতাড়ি সবকিছু আয়ত্ত করে নিতে হবে। আমার সাথে কোথাও বেড়াতে গেলেও তোমাকে আমার উপযুক্ত হতে হবে তুমি চাকরি না কর আমার উপযুক্ত হওয়ার জন্য হলেও শিক্ষিত হওয়ার চেষ্টাটুকু অবধি কর প্লিজ।"

"আমি যদি শিক্ষিত না হই তাহলে কি আপনি আবার আরেকটা শিক্ষিত বউ বিয়ে করে নিয়ে আসবেন নাকি?"

জায়ান‌ তৃষ্ণা কথায় হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না এতোটা সরল কেউ হয়? এভাবে কেউ তার স্বামীকে আরেকটা বিয়ে করে আনবে কিনা কেউ জিজ্ঞেস করে!

"বোকা বউ আমার!"

জায়ান নিজের বউকে নিজেই প্রথম পড়তে বসালো। অ আ বলে দেবে কি আর তৃষ্ণা নিজেই বলে দিল।

জায়ান বলল ,"তুমি এগুলো আবার শিখলে কোথায় তুমি তো স্কুলের গণ্ডি অব্দি কখনো পেরাওনি!"

তৃষ্ণা গর্বিত গলায় বলল,"স্কুলে যায়নি তো কি হয়েছে এমন অনেক পড়াই আমি পারি। এগুলো শেখার জন্য আমার স্কুলে যেতে দরকার হয়নি আমাদের ওখানে এক মাস্টার থাকতো সে প্রতিদিন বিকেলে অনেক কে পড়াতো আমাদের এলাকার সবাই তার কাছে পড়তো। আমিও সেখানে গিয়ে বসে সবার পড়া দেখতাম। মাস্টার তো অনেক ভালো ছিল সে আমাকে ডেকে ক্লাসে নিয়ে বসাতো সবার পড়া শুনতে শুনতে আমি অনেক কিছুই শিখে ছিলাম।"

" ভেরি গুড।"

দুজনে মাস্টার, নিয়ে কথা বলছিল বলার ছলে হঠাৎ তৃষ্ণা বলে উঠল,"জানেন মাস্টার টা না খুব ভালো ছিল। আমাকে অনেক পড়া শেখাইতো কিন্তু আম্মায় না আমারে যেতে দিত না বেশি। খালি বকতো। বলতো, পোলা মাইনষের কাছে কিসের যাওয়া। সে তো আমার উপকার ই করছে তাই না তাও আম্মায় আমারে যাইতে দিতো না। আমায় যদি মানা না করতো তাইলে আমি অনেক পড়া শিখতে পারতাম।"

"তোমার ওই মাস্টার টা ইয়াং ছেলে ছিল?"

"ইয়ং আবার কি?"

"কথা বুঝনা? সে কি অবিবাহিত ছিল?"

"হ আমাগো মাস্টার তো বিয়া করে নাই। তিনি তো শহরের মানুষ আমাদের ওইখানে স্কুলে চাকরি করতো। আর...

"শুধুই কি পড়তে যেতে নাকি আবার ওই মাস্টারের সাথে তোমার কোন রিলেশন ছিল?" গরম চোখে তাকিয়ে বলল জায়ান। তৃষ্ণা জায়ানের মুখের ভঙ্গি পরিবর্তন হতে দেখে শুকনো ঢোক গিলল। জায়ান শক্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তৃষ্ণা কিছু বুঝতে পারছে না হঠাৎ করে জায়ান রেগে গেল কেন? মাস্টার এর কথা শুনে আবার তিনিও কি আম্মার মতো আমাকে বকবে নাকি। ভয়ে তৃষ্ণার মুখটা একটু খানি হয়ে গেছে। বেশি কথা বলে আবার নিজের বিপদ ডেকে আনলো নাকি ভাবছে‌।


#চলবে....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.