আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

হীরক রহস্য (পর্ব-০২) - শার্লক হোমস সিরিজ

“হ্যাঁ, হ্যাঁ।' হোমস্ উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'এবং পরিণতি যদি তাইই হয়, তাই খুনীর নাম আর ঠিকানা। তোমায় জানিয়ে দিচ্ছি ।
হীরক রহস্য (পর্ব-০২) - শার্লক হোমস সিরিজ



দি কেস বুক অব শার্লক হোমস
গল্পঃ হীরক রহস্য
পর্ব-০২
মূল লেখকঃ স্যার আর্থার কোনান ডয়েল
অনুবাদ-সম্পাদনা-ভূমিকা
মিলন রায়

হোমস বললেন, 'রসিকতার বোধ আমার অত্যন্ত সীমিত। কিন্তু তাহলেও এর থেকে ভালো রসিকতা আমি করতে পারি । যাইহোক এরইমধ্যে তো একটু আরাম করা যাক, কী বলো? বলো, মদ চলবে? সিগারেট- টিগারেটগুলোও সব যথাস্থানেই পাবে। তোমার অভ্যস্ত আরাম চেয়ারে বসো, আবার দেখি তোমায় । আশা করি আমার পাইপকে আর বাজে তামাককে তুমি ঘৃণা করতে শুরু কর নি। কী জানো, খাদ্যের বদলে আজকাল এই বস্তুই সেবন করছি আমি।'

ওয়াটসন বললেন, 'কেন, খাচ্ছ না কেন?' 

হোমস গভীর স্বরে বললেন, 'মানে উপোস করলে বুদ্ধিবৃত্তিগুলো প্রচুর তীক্ষ্ণতা লাভ করে । কেন ওয়াটসন ডাক্তার হিসেবে তুমি নিশ্চয়ই মানবে খাদ্য হজমের ফলে রক্ত সরবরাহে যেটুকু সাশ্রয় হয় ঠিক ততোটাই মগজের লোকসান হয় । আমি মানুষটা আর নিছক মগজ ছাড়া আর কী? আমার বাকিটা বলতে গেলে বাহুল্য। সুতরাং আমার ভাবনা একমাত্র আমার মগজ নিয়ে ।

“কিন্তু বিপদের কথা যে কী বলছিলে?' ওয়াটসনের কৌতূহল । 
“হ্যাঁ, হ্যাঁ।' হোমস্ উত্তেজিত হয়ে বললেন, 'এবং পরিণতি যদি তাইই হয়, তাই খুনীর নাম আর ঠিকানা। তোমায় জানিয়ে দিচ্ছি । সেটা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে জানিয়ে দিও। নামটা হল সিলভিয়া—কাউন্ট নেগ্রেটো সিলভিয়াস। ঠিকানাটা লিখে রাখো- ১৩৬, মুরসাইড গার্ডেনস্, এন ডব্লিউ । লিখলে?? 

ওয়াটসনের সরল মুখে দুশ্চিন্তার রেখা ফুটে উঠল । তিনি ভালো করেই বুঝতে পারলেন, কী সাঙ্ঘাতিক বিপদের ঝুঁকি হোমস নিয়েছেন। মানে হোমস যা বলেছেন তা আসল ভয়ের থেকে বরং কম করেই বলেছেন, এতোটুকু বাড়িয়ে বলছেন না। করিৎকর্মা মানুষ ওয়াটসন, সঙ্গে সঙ্গে সজাগ হয়ে উঠলেন। বললেন, 'আমায় কাজে লাগাতে পারো হোম্স্ – দু-একটা দিনের জন্যে আপাতত আমার হাত খালি ।

হোম্‌স্-এর উত্তর— একজন অতি ব্যস্ত ডাক্তারের চিহ্ন তোমার মধ্যে অত্যন্ত স্পষ্ট।

ওয়াটসনের চটপট জবাব, 'না, মানে, তেমন জরুরি কাজ কিছু হাতে নেই আর কি। তা, লোকটাকে কি পাকড়াও করতে পারো না?'

“হ্যাঁ, ওয়াটসন পারি । আর সেটাই হচ্ছে মুশকিল – হোমস বললেন। সঙ্গে সঙ্গে ওয়াটসনের জবাব, তাই যদি পারো তাহলে করছ না কেন?

হোমস বললেন, 'আমি জানি না হীরেটা কোথায়?”

ও. বিলি বলছিল বটে—সেই মুকুটের হারানো হীরেটা, ওয়াটসনের কৌতূহল

হ্যাঁ, হ্যাঁ—হোমস। হ্যাঁ, সেই মস্ত ম্যাজারিন হীরেটা। জাল আমি ফেলেছি, মাছকে জালে আটকিয়েছি। কিন্তু হীরেটা পাই নি, তাই তাদের ধরে আর লাভ কী? অবশ্য তাদের ধরলে অনেকের উপকার হবে, কিন্তু আপাতত তো আমার কাজ তা নয়, আমার চাই হীরেটা।

আর এই কাউন্ট সিলভিয়াসই বুঝি তোমার সেই মাছ—ওয়াটসনের প্রশ্ন।

হোমস বললেন—আজ সারাটা সকাল আমি তাঁর পায়ে পায়ে ঘুরেছি। বৃদ্ধার সাজে তুমি আমায় আগেও দেখেছো ওয়াটমসন। আজ সকালে আমার ছদ্মবেশ হয়েছিল আরও নিখুঁত । ছাতাটা ফেলে দিয়েছিলাম, তুলে দিয়েছিলেন পর্যন্ত— 'যদি কিছু মনে না করেন, মাদাম, তুলে দিচ্ছি ছাতাটা। উচ্চারণটা খানিকটা ইতালীয় ধরনের। মিনোরিজ-এর স্ট্রবেজির কারখানা পর্যন্ত গিয়েছিলাম তাঁর পিছু নিয়ে। এয়ারগান তৈরি করে ওরা—চমৎকার তাদের কাজ । এবং আমার ধারণা ওটা এখন আমাদের উল্টো দিকের বাড়িটায় আছে। মূর্তিটা দেখেছো নিশ্চয়ই, বিলি দেখিয়ে থাকবে সম্ভবত। মনে রেখো, যে-কোনো মুহূর্তে ওই মূর্তির সুন্দর মাথা ভেদ করে একটা গুলি বেরিয়ে যেতে পারে।

হঠাৎ ট্রের ওপর একটা কার্ড নিয়ে বিলি হাজির হল। ভু কপালে তুলে এমনভাবে হোম্‌স্‌ সেটার দিকে তাকালেন, যেন খুব মজা পেয়েছেন। মুখে বললেন, স্বয়ং এসেছেন ভদ্রলোক। এতোটা কিন্তু আমি একেবারেই আশা করতে পারিনি ওয়াটসন। স্নায়ুর ওপর অসাধারণ দখল ভদ্রলোকের । হিংস্র জন্তু শিকারে ওঁর সুনামের কথা তুমি নিশ্চয়ই শুনে থাকবে। এবং তার ওপর আবার যদি আমাকেও তাঁর শিকারের তালিকাভুক্ত করতে পারেন তো শিকারি জীবনের পরিণতি লাভ করবেন ভদ্রলোক।

ও নিজে আসাতে প্রমাণ হচ্ছে যে, আমি যে পিছু নিয়ে খুব কাছাকাছি থাকছি এ তিনি জানতে পেরেছেন।

ওয়াটসন বললেন, 'পুলিশের খবর দাও বন্ধু।

হোমস গম্ভীরস্বরে বললেন, 'হয়তো দেব, কিন্তু এই মুহূর্তে নয়। সাবধানে জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে লক্ষ করো দেখি রাস্তায় কেউ ঘুরঘুর করছে কি না!'

পর্দার একপাশে গিয়ে ওয়াটসন সন্তর্পণে তাকালেন চারিদিকে। ফিসফিস করে বললেন, “হ্যাঁ, একটা গুন্ডা ধরনের লোককে দরজার কাছে পায়চারি করতে দেখছি।

‘ওই-ই তাহলে স্যাম মার্টন। ওঁর একান্ত বিশ্বস্ত অল্প বুদ্ধির লোকটা। কোথায় এই ভদ্রলোক বিলি?” এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন হোম্‌স্ ।

বিলি বলল, 'বাইরের ঘরে স্যার।'

হোম্‌স্ বিলিকে নির্দেশ দিল, 'ঘণ্টা বাজালে তখন ওঁকে নিয়ে আসবে।'

ওয়াটসন দেরি করলেন যতক্ষণ না দরোজাটা বন্ধ হল। তারপর অত্যন্ত ব্যাগ্রভাবে বন্ধুর দিকে তাকালেন । বললেন, 'দেখো, হোমস্, লোকটা বেপরোয়া, কোনো কিছু মানবে না। কে জানে, তোমায় হত্যা করবেই। বলেই এসেছে হয়তো । আমি বলছি, আমি এখন তোমার সঙ্গেই থাকব।

হোমস আপত্তি জানিয়ে বললেন, 'উঁহুঁ। কক্ষনো না। খুব অসুবিধা হবে তাহলে। তার চেয়ে শোনো, ক'লাইন খচখচ্ করে লিখে ওয়াটসনের হাতে দিয়ে বললেন, 'এই চিঠিটা নিয়ে তুমি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে যাও। একটা গাড়িভাড়া করে, সি. আই.ডি'র ইউঘালকে দেবে। একেবারে পুলিশ নিয়ে আসবে সঙ্গে করে। তারপর... তারপর যাবে কোথায় বাছাধন।

ওয়াটসন চলে গেলেন কর্তব্য পালন করতে।

হোমস এবার নিজের মনে বলতে লাগলেন, এর মধ্যে আমি নিশ্চয়ই হীরেটা আবিষ্কার করার সময় পাব। এবার ঘণ্টাটায় হাত দিলেন তিনি। নিজে মনে মনে স্থির করে নিলেন, শোবার ঘরের মধ্যে দিয়েই তিনি যাবেন। এই দ্বিতীয় পথটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হোমস চান, তিনি যেন সিলভিয়াসকে আগে দেখতে পান-সে তাঁকে দেখে ফেলার আগেই।

বিলি একটু পরে কর্নেল সিলভিয়াসকে নিয়ে গিয়ে বসাল। কেউ ছিল না সেখানে। বিখ্যাত শিকারিটি বিশাল দেহ, আলকাতরার মতো কালো গায়ের রঙ, চোখ কালো । সজারুর মতো গোঁফ। বাজপাখির ঠোঁটের মতো লম্বা বাঁকানো নাক । ভদ্রলোক অত্যন্ত সুসজ্জিত। রঙচঙে নেকটাই আর ঝলমলে নেকটাই-এর পিন, ঝকমকে আংটি দেখে মনে হয় যেন একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। দরোজাটা বন্ধ হতে তিনি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ সচকিতদৃষ্টিতে এমনভাবে তাকাতে লাগলেন চারিদিকে যেন প্রতি পদক্ষেপেই কোনো ফাঁদে পা দিতে চলেছেন। হঠাৎ জানলার কাছে চেয়ারের ওপর অভিব্যক্তিহীন মাথাটা আর ড্রেসিং গাউনের উপরটা তাঁর চোখে পড়ল। মুখে একটা ঝিলিক খেলে গেল তার। আরো একবার চারিদিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলেন কোনো সাক্ষী আছে কি না, তারপর পায়ের আঙুলে ভর করে দাঁড়িয়ে মোটা একটা বেত তুলে নির্বাক মূর্তিটার দিকে এগোলেন। মূর্তিটায় আঘাত করার জন্যে যেই না বেতটা তুলেছেন, ঠিক সেই মুহূর্তেই নিরুত্তাপ শেষ মিশ্রিত একটা কণ্ঠস্বর শোবার ঘরে দরোজা দিয়ে বলে উঠল, ভাঙবেন না কাউন্ট, ভাঙবেন না ওটা। মুহূর্তের জন্যে সিলিডিয়াস থমকে গেলেও, পরমুহূর্তেই কাউন্ট সিলভিয়াস আবার বেতটা উদ্যত করলেন, যেন মূর্তিটাকে ছেড়ে আসল লোকটিকেই আক্রমণ করতে চান। কিন্তু হোমসের ধূসর স্থির দৃষ্টি আর বিদ্রূপের হাসির মধ্যে এমন কিছু ছিল যার ফলে তাঁর হাত নেমে গেল ।

হাসতে হাসতেই হোমস বললেন, পাশের ঐ টেবিলে হ্যাটটা আর বেতটা রাখুন।

কাউণ্ট সিলভিয়াস মন্ত্রচালিতের মতো তাই-ই করল। হোম্‌স্ বললেন, বেশ। বসুন এবার। রিভলভারটাও রেখে দেবেন নাকি? বেশ, ঠিক আছে, ইচ্ছে করলে ওর ওপরেই বসতে পারেন। হ্যাঁ, ভাল, কথা। আপনি আজ খুব ভালো সময়েই এসেছেন, কারণ, আপনার সঙ্গে আমার কতকগুলি জরুরি কথা আছে।

কাউন্ট সিলভিয়াস আতঙ্কিত চোখে হোমসের দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিচ্ছিল। সেও কর্কশ স্বরে বলল—আমারও কয়েকটা কথা বলবার আছে আর সেই জন্যেই আমি এসেছি। অস্বীকার করব না, আমি আপনাকে তখন মারতেই উদ্যত হয়েছিলাম।

টেবিলের ধারে বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে হোম্‌স্‌ বললেন, আমি তো জানতাম অমন একটা মতলব নিয়েই আপনি এসেছেন। কিন্তু এই ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণটা কী?

কাউন্ট তীক্ষ্ণস্বরে বলল, 'আপনি আমায় বিরক্ত করছেন নিজের সীমা লঙ্ঘন করে। আপনি আপনার চরকে আমার পেছনে লাগিয়েছেন। ক্ষোভে ফেটে পড়ল সিলভিয়াস!'

হোমস অবাক হওয়ার ভান করে বললেন, আমার চর। না, কখনো না।

কাউন্ট রেগে গিয়ে বলল, 'ন্যাকামো ছাড়ন।'

হোমস সবিনয়ে বললেন, "একটা কথা আপনাকে বলা দরকার কাউন্ট সিলভিয়াস। আমার চরের ব্যাপারে আপনি যা শুনেছেন তা ঠিক নয়।

এ কথায় কাউণ্ট মসৃণ হাসি হেসে বলল, 'দেখুন, আপনার মতো অন্যদেরও পর্যবেক্ষণ শক্তি থাকতে পারে। কাল এসেছিল একজন শিকারি আর আজ একটা বুড়ি। সারাটা দিন তারা আমায় চোখে চোখে রেখেছে।

“বলতে কি কাউন্ট, আপনি কিন্তু এককথায় পরোক্ষভাবে আমারই প্রশংসা করলেন। মানে আপনি, আমাকে ছদ্মবেশগুলোরই প্রশংসা করে বসলেন।"

কাঁধে ঝাঁকুনি দিয়ে হোমস বললেন, 'ওই দেখুন সেই ছাতাটা যেটা আপনি অমন ভদ্রভাবে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তখনও আপনার মনে সন্দেহ জাগে নি ।


চলবে....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.