ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-১৭

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-১৭,প্রেম কাহিনী,ধ্রুব তারা,গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম),

ধ্রবতারা
লিখিকাঃ গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)

বিছানায় বসে এডপ্ট পেপার টায় চোখ রাখতেই 'কবির রায়হান'বাবার নাম টা চোখে লাগে... অমনি কেউ ছো মেরে কাগজ গুলো নিয়ে নেয়।তাকিয়ে দেখে ওর মা.... রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। "তুই এখানে কি করছিস?" "বাবার লেখা আন পাবলিসড বই নিতে এসেছি,মা।আমি সবার আগে পড়বো।" "তাই বলে কাবার্ডে ধরবি?আমাকে ডাকতি?" "কেন মা?আমি তো শুধু বই নিব,টাকা পয়সা না।তাই ডাকি নি।" "জানিস না এখানে তোর বাবার দরকারি কাগজ পত্র আছে।যেখানেরটা সেখানে না পেলে,হারিয়ে গেলে রাগ করবে।" "হ্যা মা জানি তো।কিন্তু আমি কোনো কিছু ঘাটাঘাটি করিনি।শুধু এই ডায়েরি টা আলগোছে তুলে নিয়েছি।আচ্ছা মা ছবির এই ফরেনার মহিলা টি কে?আর এখানে এগুলো কিসের এডপ্ট পেপার?পেপারে বাবার নাম লেখা আছে কেন?" তুরের মা তুরকে জোরে ধমকে ওঠে "চুপ...একদম চুপ... আর একটা ও কথা বলবি না।আর কখনো কোনো কাগজ পত্রে হাত লাগাবি না।যা এখান থেকে।"ধমকে ওঠে ঠিকি কিন্তু ওনার চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।ভর করেছে এর আতংক। তুর অবাক হয়,একটা প্রশ্ন করায় মা রেগে গেলো।নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।"কিন্তু মা ওখানে বাবার নাম লেখা কেন? বাবা কি কাউকে এডপ্ট ক..."আর বলতে পারলো না তার আগেই গালে ঠাস করে একটা চড় পড়ল। তুর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে এইটুকু কথার জন্য ওর মা ওকে মারলো,বিশ্বাস করতে পারছে না।ছোট থেকে কখনো কেউ ওকে মারেনি।এমনকি মা ওনা।আর এটুকুর জন্য তো প্রশ্নই আসে না।তুরের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কাঁদতে কাঁদতে বলছে"মা আমি কি এমন বলেছি যে,তুমি আমাকে মারলে।আমি তো ওখানে বাবার নাম দেখে....."এবার এলোপাথারি মারা শুরু করে।তুর জোরে কান্না করে দেয়। রান্না ঘর আর লিভিং রুমের সবাই,ছুটে রুমে আসে।(শাহানা বেগম)ধ্রুবর মা রায়লা বেগমের কাছ থেকে তুরকে ছাড়ায়।ছাড়িয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়,পিঠে মাথায় হাত বুলায়।মেয়ে কে মেরে রায়লা বেগম ও কাঁদছে। রিনা বেগম,দাদি,কাজের মেয়ে রাইমা ওর মা ফরিদা দাঁড়িয়ে আছে। শাহানা বেগম:কি হয়েছে...পাগল হয়েছিস...এতো বড়ো মেয়েকে কেউ মারে।তুই এটা কিভাবে করলি? জীবনে কোনো দিন কেউ ওর গায়ে হাত তুলেছে। রায়লা বেগম : ------ দাদি : এমন বিয়ার আনতাজ মাইয়ারে কেউ মারে।কিগো বউ এমন করলা ক্যান?ওর বাপ চাচারা তো শুনলে রাগ করবো। রায়লা বেগম : ------ রিনা বেগম : তুর কি এমন করেছে যে তুমি ওকে মারলে? রায়লা বেগম এক হাতের কাগজ পেছনে লুকিয়ে আর এক হাতে মুখে আঁচল চেপে কাঁদছে।তুর ও মায়ের এ রুপ দেখে হিচকি তুলে কাঁদছে।কিছুই বুঝতে পারছে না।ওর মা কেন ওর সাথে এমন করলো?মা ও যে খুব কষ্ট পেয়ে কাঁদছে,মেয়ে হয়ে তুর এটা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছে।কিন্তু কষ্ট দেয়ার মতো কি করেছে?ভেবে কোনো কুল পাচ্ছে না। এই প্রথম মাকে চোখের সামনে কাঁদতে দেখছে।না জেনে মাকে কষ্ট দেয়ার জন্য,ওর খুব কষ্ট হচ্ছে তাই আরো বেশি কাঁদছে। শাহানা বেগম : তুর তুই কি করেছিস মা?কেন মারলো বলতো আমাকে.... হিচকির চোটে কথা বলতে পারছে না। তবু ভেঙে ভেঙে বলে"আমি তো শুধু বাবার ডায়েরি থেকে পাওয়া ছবির ফরেনার মেয়েটি কে জিজ্ঞেস করেছি। আর ঐ এডপ্ট পেপার টায় বাবার নাম কেন জানতে চেয়েছি।তাই মা আমাকে মেরেছে।আমি যদি জানতাম এটা জিজ্ঞেস করলে মা কষ্ট পাবে তাহলে কোনো দিন এটা জিজ্ঞেস করতাম না।বড়ো মা...তুমি মাকে কাঁদতে নিষেধ করো।আমি আর কোনো দিন কিচ্ছু জিজ্ঞেস করবো না।তুমি মাকে কাঁদতে নিষেধ করো....বড়ো মা।"বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। তুরের কথা শুনে রায়লা বেগম শাহনা বেগমের বুক থেকে টেনে নেয় মেয়েকে। নিজের বুকে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে থাকে।মাথায় পিঠে হাত বুলিয়ে কপালে চুমু খেয়ে কাঁদতে শুরু করে।তুর ও মাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। উপস্থিত বাকি সদস্যরা শুধু একজন আর একজনের দিকে তাকাচ্ছে আর ওদের দেখছে।মা মেয়ের কান্না দেখে শাহানা বেগমের চোখে ও পানি এসেগেছে ।রাইমা আর ওর মায়ের চোখে ও পানি।শুধু দাদি আর রিনা বেগম শুকনো চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।রুম জুড়ে মা মেয়ের কান্নার শব্দ ছাড়া কোনো শব্দ নেই।কেউ কোনো শব্দ করছে না। সবাই যেন ঝড়ের পূর্ব মুহূর্তের মতো স্তব্ধ হয়ে আছে।সকলের চেহারায় ফুটে উঠে এক চিন্তার ছাপ। রইমা বলে ওঠে"মাইঝা আম্মা,ওই গুলান কিয়ের কাগজ?এডপ কি কোনো দামি কিছু যার লেগগা আফনে এমন চেইততা গেছেন?" তুরের মা ভয়ার্ত চোখে শাহানা বেগমের দিকে তাকায়।শাহানা বেগম ওনার বিচলিত হওয়ার কারণ বুঝতে পারছে।তাই চোখে আশ্বাস দেয়।আর রাইমার উদ্দেশ্যে বলে"ও তুই বুঝবি না।যা কাজ কর গিয়ে।" সবাই চলে যায় ফজিলাতুন্নেছা(দাদি) ও রিনা বেগম যাওয়ার সময় কি যেন বলতে বলতে যাচ্ছেন। শাহানা বেগম তুরের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে "কান্না বন্ধ কর।এমনি অসুস্থ,এখনো শরীর ঠিক হয়নি।কাঁদলে আরো অসুস্থ পড়বি।" রায়লা বেগম ওকে ছেড়ে দাড়ায়।হাতের কগজপত্র গুলো নিচ থেকে তুলে গুছিয়ে রাখে।তুরের দিকে তাকায়।ওনি জানে মেয়ে যতোই মায়ের চোখের পানি দেখে না বলুক।মনে ঠিকই একটা কিন্তু থেকে যাবে।আর সেটা মনে মনে চিন্তা করতে করতে আকাশ পাতাল কিছু বানাবে। শাহানা বেগমের সামনেই বলছে"আমি জানি তোর মনে এটা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে যাবে।কিন্তু জিজ্ঞেস করবি না।আমি তোকে যা বলবো শুধু শুনবি কোনো প্রশ্ন করবি না।এসম্পর্কে দ্বিতীয় বার কারো কাছে জানতে চাইবি না। আর কেউ যেন এ কথা না জানতে পারে।" শাহনা বেগম "কি বলছিস পাগলের মত।" তুর আজকে শুধু অবাক হচ্ছে। রায়লা বেগম বলতে শুরু করেন। "তোর জন্মের পরে আমাদের আর কোনো সন্তান হচ্ছিলো না।তাই তোর বাবা তুহিন কে এডপ্ট করে।আর ওই ছবি টা তোর বাবার কোনো পরিচিতার।আমি চাই না এ বিষয়ে তুহিন কিছু জানুক।আর ওর ছোট্ট মনটা ভেঙে যাক।আমার কাছে আমার দুই সন্তান ই সমান আমার কলিজা।আমরা চাইতাম না এটা কেউ জানোক আর বাচ্চাদের দিকে আঙুল তুলুক।আশা করি এটা জানার পর তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার ভালোবাসা একি থাকবে।"কথা গুলো বলতে বলতে ওনার চোখ বেয়ে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। তুর অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আজকে অবাকের পর অবাক হচ্ছে।ওর কলিজার টুকরো ভাই আর ও একি মা বাবার ঔরসজাত সন্তান না।কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না।কিন্তু মা তো আর মিথ্যা বলে এভাবে কাঁদছে না। "যাই হয়ে থাকুক মা। তুহিন আমার ভাই আমার ও কলিজা।কোনো ভাবে এ সব জেনে ওকে কষ্ট পেতে দিব না। আমি ও যে ওকে অনেক ভালোবাসি মা...।আমি কিভাবে ওকে আলাদা দেখবো। আমার মনে যদি কোনোদিন ওর প্রতি এমন কোনো ধারণা আসে আল্লাহ যেন সেদিন দুনিয়া থেকে আমাকে নিয়ে যায়।"বলে চলে যায়। শাহানা বেগম :কি করলি এটা... রায়লা বেগম : আর কি বা করার আছে...কিছু তো একটা বলতে হতো। সেই ঘটনার পরে তুর তুহিনের সাথে আর ঝগড়া করে না, মারামারি করে না।এক্সট্রা কেয়ার করে।ভাইয়ের দিকে তাকলে ওর মায়া লাগে চোখে পানি চলে আসে।ছোট্ট তুহিন বোনের এতো কেয়ারিং দেখে নিজেও বোনের প্রতি কেয়ারিং হয়।বিষয় টা বড়দের চোখে পরে।আর ওর মা নিশ্চিন্ত হয়।এ দুটো যে রায়ালা বেগমের চোখের মণি কলিজার টুকরো। কেটে গেছে সপ্তাহ খানেক, এর মধ্যে তুরের এর পরীক্ষার রুটিন এডমিট সব সংগ্রহ করা হয়ে গেছে।পুরো দমে পড়ছে।ধ্রুবর যাওয়ার সময় ও ঘনিয়ে এসেছে।আজকে বাড়ি থেকে ওর মা,বড়ো মা,ছোট মা সবাই ধ্রুবর ফ্ল্যাট টা দেখতে যাবে।তুর যেতে চাইছিল না,কিন্তু শাহানা বেগমের জোরাজোরিতে যেতে হয়। ধ্রুবর আশেপাশে এই কদিন তুর ভিরেনি।সামনে পড়ে গেলে ও মাথা নিচু করে এড়িয়ে গেছে।ধ্রুবও এই কদিনে কোনো ভাবে সুযোগ পায়নি প্রেয়সীর ভুল ভাঙানোর। আজকে ধ্রব গাড়ি চালাচ্ছে।পিছনে বড়রা সবাই এক সাথে বসেছে তাই তুরকে সামনে বসতে হয় ধ্রুবর পাশে। সারা রাস্তায় ধ্রুব আর চোখে দেখতে দেখতে এসেছে।আর মনে মনে ভাবছে "তোর সব কিছুই এতো প্রচন্ড কেন?অভিমান করলেও প্রচন্ড অভিমান করিস।ভালোবাসলেও প্রচন্ড ভালোবাসিস।আর লজ্জা পেলে ও প্রচন্ড লজ্জা পাস।কিভাবে পারিস?" ধ্রুবর এপার্টমেন্টে পৌঁছায়। চার তলায় ওর ফ্ল্যাট।ফ্ল্যাটে তিনটি বেডরুম ওইথ ওয়াশরুম আছে।দুইটা খোলা ব্যালকনি আছে। একটা ডাইনিং প্লাস ড্রাইং রুম আর রান্না ঘর আছে।সব কিছু একদম পরিপাটি গুছানো গুছানো।ধ্রুবর রুমটা ফ্ল্যাটের সবচেয়ে চেয়ে আর আকর্ষণীয়। মাস্টার বেডরুম যাকে বলে। দক্ষিণ দিকে যার ফলে খোলা বারান্দা দিয়ে হুরহুর করে বাতাস ঢুকে। সবাই সব কিছু দেখে পছন্দ করে।তুর ও দেখে আর ভাবে লোকটার রুচি আছে বলতে হবে। জ্যাম না থাকলে ওদের বাসা থেকে ধ্রুবর ফ্ল্যাটে আসতে পয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগে।জ্যামে পড়লে দের দুই ঘন্টা ও পার হয়ে যায়। ধ্রুবর মা চাচিরা ধ্রুবর রান্না ঘরে রান্নার যাবতীয় সব কিছু গুছিয়ে দিয়ে আসে।ছেলের যেন কোনো সমস্যা না হয় তাই।ওখান থেকে বের হয়ে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ সেরে সবাই বাড়ি ফিরে। তুহিন সন্ধ্যায় তুরের কাছে আসে বলে "আপু আমার না কিছু ভালো লাগছে না।চলো না আমরা কিছু করি।" "কি করবি সারাদিন না ঘুরে এলি।" "তাইতো আর কিছুতে মন বসছে না।আসো আমরা মুভি দেখি।" "হুম কাল বাদে পরশু আমার এক্সাম।এখন মুভি দেখলে বাড়ির সবাই পেদানি দিবে।" "কিচ্ছু করবে না আমি থাকতে কেউ তোমাকে মারতে পারবে না।" "ওলে বাবা লে...." "তুমি খালি পড়া পড়া করো।আর ওই দিকে ফাহিম ভাইয়া কি সুন্দর ফোন টিপছে খাচ্ছে আর ঘুমাচ্ছে।" তুহিনের চুল গুলো এলোমেলো করে দিয়ে "হুম অনেক বুঝ তুমি।এখন নিচে গিয়ে টিভি অন করলে সত্যি সত্যি বকবে এটা বুজো না।" "আরে না তোমার ভাই তোমাকে বকা খাওয়াবে বলো।আমার কাছে আছে নিন্জা টেকনিক।" "তাই নাকি দেখি আমার ভাইয়ের নিন্জা টেকনিক।" তুহিন দৌড়ে কোথাও যায় আর লেপটপ হাতে ফিরে আসে। "এটাতে দেখবো তাহলে আর নিচে যাওয়া লাগবে না।" "এটা ধ্রুব ভাইয়ার লেপটপ না..." মাথা নেড়ে বলে "হ্যা" "পারমিশন নিয়েছিস?" কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে"আরে ভাইয়া কিছু বলবে না" "কে বলেছে ? জানিস না অনুমতি না নিয়ে কারো পারসোনাল জিনিস ধরতে হয় না।উনাকে বলে আয় যা।" "ভাইয়া বাসায় নেই।আর কখনো কারোটা ধরবো না।কিন্তু বিশ্বাস করো ভাইয়া কিছু বলবে না।" "বলছিস।" "হ্যা তো।" "আচ্ছা কি মুভি দেখবি?" "চলো আমরা নতুন একটা এনিমেশন মুভি দেখি।" "হুম, কোনটা দেখা যায়।হ্যা পেয়েছি 'দা সি বিস্ট'মুভি।" তুর লেপটপ অন করে।স্ক্রিনে বাম পাশে উপরে অনেক গুলো ফাইল দেখে।সবার উপরের টাতে লেখা 'পোলস্টার'।নেটফ্লিক্সে ঢুকতে গিয়ে ও বের হয়ে যায়।কি আছে ওটার ভেতর।পোলস্টার মানে তো ধ্রুবতারা।আবার ওই ফাইলটার দিকে তাকায় তাকিয়ে থাকে।ক্লিক করবে কি করবে না কনফিউশান এ ভুগছে। এদিকে তুহিন তাড়া দিচ্ছে "আপু হলো..." আর কিছু না ভেবেই ক্লিক করে।ওপেন হতেই দেখে উপরে লেখা 'মাই পোলস্টার।' তারপর নিচে লেখা...... চলবে....