ধ্রবতারা
গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)
প্রায় সপ্তাহ খানেক কেটে গেল.......
মেহমানরা সবাই চলে গেছে দু'দিন হলো।বাড়িটা একদম খালি খালি লাগে। তুর এর কিছুই ভালো লাগছে না।সবাই কে খুব মিস করে তার মধ্যে তন্নি আপুকে বেশি,সে তার কাজিন কম ফ্রেন্ড বেশি। একজন আর একজনকে সব কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না।
সে রাতের পর তুর আবারও ধ্রুবের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে।কেউ ধ্রুবের কোনো কাজ দিলে কৌশলে তা এরিয়ে যায়।
কিন্তু আরও একটা বিষয় আছে ,সে রাতের ঘটনার পর ধ্রুবর সামনে পড়লেই,কেমন যেন লজ্জা আর অভিমান মিশ্রিত এক অজানা অনুভূতি হয়,ধ্রুবর চোখের দিকে তাকালেই শরীরের সব লোম দাঁড়িয়ে যায়।
তবে এর কোনো ব্যাখ্যা তুর পাচ্ছে না।
তুরদের বাড়িটা বিশাল প্লোটের একটা দোতালা ডুপ্লেক্স বাড়ি,যেখানে ১০টা বেডরুম ওইথ ওয়াশরুম প্লাস দুইটা গ্যাস্টরুম আছে।
ম্যেইন দরজা দিয়ে ঢুকতেই লিভিং রুম যার ডান পাশে ড্রইংরুম মাঝখানে দোতলায় উঠার সিড়ি,বাম পাশে ডাইনিংরুম প্লাস বিশাল রান্না ঘর।সব বাচ্চাদের রুম ই দোতলায়,বড়রা নিচ তলায় থাকে,দোতলার সিড়ির পাশেই তুরের রুম তার পাশেই তুহিন আর তার পরই ধ্রুবের রুম।তো নিচে যেতে হলে করিডর ধরে তুরের রুমের সামনে দিয়ে ই যেতে হয় ,ছাদে যেতে হলেও ওই রুমের পাশ দিয়েই সিড়ি ধরে ওপরে যেতে হয়।
তুর আজকে ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরবে বলে ঠিক করেছে তাহলে যদি মনটা ফুরফুরে হয়।
তো সেই মোতাবেক।বড়ো আব্বুর অনুমতি নিয়ে রেখেছে,
বিকাল ৪টার দিকে বের হবে...... অরিন,আয়শা,তাসফি আর ফাহিম কে বলে রেখেছে।
বিকেলে ৪টা.....
একটা আসমানী কালার টপস, হোয়াইট লেডিস জিন্স প্যান্ট, গলায় হোয়াইট স্কার্ফ প্যাঁচানো,চুল গুলো মাথায় চুড়ো করে বাধা,চোখে রেগুলারে মতো গাঢ় করে কাজল টানা আর ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি লিপগ্লোস,পায়ে হোয়াইট স্নিকারস,পিঠে
ছোট্ট একটা পিংক কালারের ব্যাগপ্যাক নিয়ে রেডি সে।
পুরাই হার্ট কিলার লুক....
সিড়ি দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে মনের সুখে নিচে নামছে।নামতেই দেখলো... ধ্রুব লিভিংরুমের সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছে।তাই চুপচাপ শব্দ না করে সিড়ির পাশে দাঁড়িয়ে আছে ফাহিমের অপেক্ষায়।
(উফফ.... শালা.... ছেলে না হয়ে মেয়ে হলে ভালো হতো।একে তো ভাইয়ের মতো ধলা ইন্দুর তার আবার সাজা ও লাগে এতোক্ষণ ধরে।মন চায় ইচ্ছা মতো ধরে থাপড়াইতে।আমাকে ওয়েটিংয়ে রাখা,কত সাহস বেড়েছে পাঠাটার ,সব হচ্ছে ওই পাজি লোকটার জন্য, এটার জন্য ওই পাঠাটাকে পেঁদাতে ও পারি না।কিন্তু আজকে তো বাইরে যাবো... এতো দিনের সব আজকে উশুল করবো,আজকে তোকে জনমের পেঁদান
পেঁদাবো,শালা কাইল্লা না থুক্কু ধইল্লা পাঠা নাম তাড়াতাড়ি,ওয়েট করানোর মজা টের পাবি )
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ফাহিমের দেখা নেই।তুরের পা ব্যথা হয়ে গেছে,উফফ এই অসভ্য লোকটার জন্য বসতে ও পারছি না!!!আড় চোখে তাকাতেই দেখলো ,উনি ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।দু'জনেই থতমত খেয়ে গেছে.....
(সিড়ি দিয়ে নামার সময়ই তুরের এই হার্ট কিলার লুক দেখে ধ্রুবোর অ্যাটাক হওয়ার অবস্থা।খুব কষ্টে টিভিতে মনোযোগ দিল....কিন্তু মন তার যুদ্ধ ঘোষণা করেছে।ইচ্ছে করছে একখনি এই মনোহরিণী কে বুকে জড়িয়ে নিতে।এমন পাগল করা রুপে কে জানে আর কতো জনকে ঘায়েল করবে,......আমার মনের ভার্জিনিটি তো,তুই নষ্ট করে দিয়েছিস।এখন ক্যারেক্টরের সার্টিফিকেট দেওয়া বাকি।)
ধ্রুব : (তুরের উদ্দেশ্যে)সোফায় কি জায়গা কম পড়েছে নাকি,পড়লে.... ফ্লোরে ও বসা যায় ,কোনো ব্যাপার না....শুধু শুধু পা খুইয়ে লাভ আছে....?
তুর মাথা ডান দিকে ঘুড়িয়ে তাকালো,চোখে চোখ পড়তেই..... কেমন যেন ঝিম ধরে গেল,
না চাইতে ই মাথা থেকে পা পর্যন্ত চোখ বুলালো এ্যশ কালারের শর্টস আর কালো হাতা কাটা টিশার্ট পরে পা এর ওপর পা তুলে সোফার দু'পাশে দু'হাত ছড়িয়ে বসেছে...এই লোকের এমন বেহায়া লুক দেখে লজ্জায় মাথা নুয়িয়ে রেখেছে।সাথে শরীরে শিরশিরানি ভাব যোগ হয়েছে......।
চুপকরে সোফায় এক কোণে বসেছে.... এখন কোনো জামেলা চায় না।এর মধ্যে ধ্রুব ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেটা ও বুঝতে পারছে কিন্তু ধ্রুবোর দিকে তাকাতে পারছে না।
কিছুক্ষণের মধ্যে ই ফাহিম হাজির কড়া গেট আপ নিয়ে.... তুর হলো তোর আমি রেডি....
তুর ফাহিমের দিকে বড়ো বড়ো করে তাকাল দাঁত কিরমির করে ওঠে.....সোজা ফহিমের কলারে ধরে পেটে দুম করে একটা ঘুষি মেরে.....শালা!!মেয়েদের মতো দেড় ঘন্টা লাগিয়ে রেডি হোস...,তারপর,আমাকে বলিস রেডি কিনা? ওই.. ওই...কাইল্লা.... না... ধইল্লা পাঠা তোর সাহস কেমনে হয় এতোক্ষণ আমারে ওয়েট করানোর হুম...(এলোপাতাড়ি দুমদাম পেটে পিঠে মারছে )দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার নিরোপরাধ পা দুটোকে কি শাস্তি টা ই না পেতে হলো....
ধ্রুব তুরের আরো একটা রুপ দেখে আরো একবার মুগ্ধ হলো....আর খুব হসি ও পেলো কিন্তু তা চেপে রেখে ধমকে বললো-স্টপ...... কি বাচ্চামো শুরু করেছিস?আজব!!!ভাবা যায় এরা নাকি এইচএসসি স্টুডেন্ট... প্লে নার্সারির বাচ্চারা ও এমন করে না।তার ওপর আমাকে কি চোখে লাগে না।বেয়াদব কোথাকার।
দু'জনেই চুপ করে দাড়ায়,তুর পিছন দিকে ফাহিমের বাহুতে চিমটি মারে যার অর্থ (চল যাওয়া যাক)।ফাহিম আও করে চেঁচিয়ে উঠলো
ধ্রুব -........(কিছু বলবে তার আগেই তুর এর ইশারায় )
ফাহিম -ভাইয়া লেট হয়ে যাচ্ছে ,আসি।
-এমন মান্জা মেরে দু'জন যাচ্ছিস কোথায়?
ফাহিম-বন্ধুদের সাথে একটু ঘুরাঘুরি আর ওই একটু শপিং করবো.. ইয়ে... মানে আমি না তুর করবে।
(এ্যাহ...আসাছে আমার..... উনাকে বলে যেতে হবে কোথায় যাচ্ছি )
-হুম বুঝলাম.... তা যাচ্ছিস তো যাচ্ছিস নিজের ইমেজ নষ্ট করার জন্য সাথে করে,কালিতারার মত দেখতে এক পেত্নী কে নিয়ে যাচ্ছিস???
(বাঁকা হেসে)দেখিস রাস্তায় আবার কেউ যেন সেন্সলেস না হয়ে যায়। আর দেখিস একে সাথে নিয়ে গেলে কেউ না তোর গেট আপের দিকে ফিরে ও তাকাবে না .....
-এই আপনার কোন পাকা ধানে মই দিয়েছি ,হ্যা... (কোমরের দুপাশে দুই হাত দিয়ে খেপে ধ্রুবের সামনে দাঁড়িয়ে )কোন আজব কিসিমের লোক আপনি!!!!হুদাই আমার পিছে লাগেন!!!ভাবা যায় একটা লোক কেমনে এমন কিউট একটা মেয়েকে কালিতারা পেত্নী বলে....কতো ছেলেদের ক্রাশ আমি জানেন ,লাইন লেগে আছে... ভালো মেয়ে দেখে আমি এসবে জড়াই না....আর রাস্তায় মানুষ সেন্সলেস হলে ও আপনাকে ডাক....(বলার মাঝখানে ধ্রুব দাঁড়িয়ে গেলো,একদম মুখোমুখি তুর এর মাথাটা ধ্রুবোর বুক বরাবর হওয়ায় মাথাটা উঠিয়ে তাকিয়েছে আর তুরের কথা মুখেই আটকে গেছে)
(উফফ লোকটার এই বেহায়া লুকটা আমার নিশ্বাস বন্ধ করে দিবে)
-(মুচকি হাসি দিয়ে )চুপ কেন.... হুম.... কি যেন বলছিলি..... বল....।ছেলেদের লাইন না,দেখাচ্ছি ছেলেদের লাইন ,বাবা কে বলছি তুই পেকে গেছিস!!!
-কি.ক... কি...কিছু না... (তড়িঘড়ি করে হাটা ধরেছে)ফাহিম চল তাড়াতাড়ি....
(তুর চলে গেল কিন্তু পিছনে রেখে গেল ঘায়েল হওয়া এক পুরুষ কে.....)
সব বন্ধুদের সাথে যমুনা ফিউচার পার্ক শপিং মলে শপিং করতে গেছে সবাই যার যার ইচ্ছে মত শপিং শেষে রেষ্টুরেন্টের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে.... হঠাৎ করে সামনে থেকে কেউ তুরিন বলে ডেকে ওঠেছে...
সবাই সে ডাকের মালিকের তাকিয়েছে।
-আসসালামু ওয়ালাইকুম,ভাইয়া কেমন আছেন?
জিসান -আলহামদুলিল্লাহ,তোমাকে দেখার পর তো আরো ভালো লাগছে।শপিং করতে এসেছো বুঝি?
-জি ভাইয়া।
জিসান -ফাহিম ও দেখি তোমার সাথে..... !!!
ফাহিম -জি ভাইয়া,তুর আমার চেয়ে মাত্র দু মাসের বড় তাই একি ব্যাচে একি কলেজে দু'জন পড়ি।
জিসান-আই সি.....,ওরা কে....? ফ্রেন্ড?
ফাহিম -হ্যা,বেস্ট ফ্রেন্ড।তা ভাইয়া আপনার না বাসায় আসার কথা ছিল?এলেন না তো.....
জিসান -একটু বিজি ছিলাম,অবশ্যই আসবো....আমারো যে মন ছটফটাচ্ছে...।(তুর এর দিকে তাকিয়ে )তুরিন আজকে তোমাকে এবং তোমার ফ্রেন্ডদের কে আমি খাওয়াবো না করা যাবে না.... কিন্তু।
হ্যালো,গাইজ!!তোমাদের আপত্তি নেই তো?
(সবাই মাথা নাড়িয়ে হ্যা জানালো তাদের আপত্তি নেই,এমন সেধে কেউ খাওয়াতে আসলে কি না করা যায়)
তুর-কিন্তু,ভাইয়া....
জিসান -কোনো কিন্তু না...... সবাই রাজি সো তুমিও....
আয়শা-তুরের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে কিরে ব্যাটা কি পছন্দ টছন্দ করে নাকি?
তুর-কি বলিস এগুলো!!!শুনলে কি ভাববে বল তো!!
আয়শা-না,জানু চাহনি ই বলে দিচ্ছে গো....তবে ব্যাটা স্মার্ট আছে হলে খারাপ হবে না কিন্তু....
তুর-ধ্যাত....কি ভুজুংভাজুং বলছিস!!!!
ফাহিমের মাথায় একটা চাপড় মেরে -ওই..... শালা পাঠা.....না করতে পারলি না.... কবাব মে হাড্ডি বানিয়েছিস... কই নিজেদের মতো ঘুরতে এসেছি এখন ওই ব্যাটার সাথে যেতে হচ্ছে, ফ্রিতে খাবার কথা শুনলে ব্যাঙের মত লাফাতে থাকিস,যত্তসব আদেখলাপনা।
রেষ্টুরেন্টে সবাই একটা বড় গোল টেবিলে বসেছে।জিসান তুরের পাশের চেয়ারে বসেছে,বসে ওকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে.... মেয়েটা এত সুন্দরী কেন!!!! সামনে এলেই পাগল করে দেয়....!!!!
জিসান-তুরিন!!!! আজকে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে!!!!
-থ্যাংকস ভাইয়া.....
সবার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করেছে।জিসান বার বার তুরের দিকে তাকাচ্ছে মন ভরে দেখছে।
ফাহিম বিষয় টা খেয়াল করল যে তুর ওনার তাকানোতে আনইজি ফিল করছে ,তাই-ভাইয়া এখানে কি শপিং এ এসে ছিলেন....?
জিসান-নাহ একটা ক্লাইন্টের সাথে মিটিং ছিল,শেষ করে বের হয়ে দেখি তোমরা...।
ফাহিম -ওহ!!!আচ্ছা...!!!
জিসান-আংকেলের নাম্বার টা দেও তো ওনার সাথে কথা আছে ,ধ্রবকে ওই দিন কল করে দিতে বলাম,আংকেলের নতুন নাম্বার নেই বললো।
তোমার কাছ আছে বোধহয় দেও তো,খুব ইমার্জেন্সি!!!
ফাহিম -ওকে,0175………
খাবার চলে আসে টেবিলে ,অরিন দাঁড়িয়ে সবাইকে নিয়ে টেবিলের সাজানো খাবার সমেত সেলফি তুলে।
(সবার আগে গল্প পড়তে চাইলে গল্প কন্যার "কল্পকথা" পেজ এ জয়েন করেন)
খাবার পর,সবাই পার্ক এরিয়ায় প্রচুর এনজয় করেছে।জিসান অবশ্য খাওয়ার পর পরই বিদায় নিয়ে চলে গেছে।
তুর রাতে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে তোলা ছবি গুলো দেখছে... আর হাসছে খুব মজা হয়েছে আজকে,রাইডিংয়ে ওঠে তো তাসফি ভয়ে... মা গো বাবা গো বলে চিল্লাতে চিল্লাতে সেন্সলেন্স হয়েগেছে...হা....হা.....হা....ছেলেদের এমন ভিতু হতে কখনো দেখেনি,এমন সময় মোবাইলে একটা নোটিফিকেশন আসে ওপেন করতেই দেখে,অরিন ওদের সবার এক সাথে খাওয়া-ঘুরার কিছু ছবি আপলোড দিয়েছে ট্যাগ দিয়েছে ওকে,
"ক্যাপশনে লিখেছে বেষ্টুর মন ভালো করতে - মাস্তি❤️❤️❤️,প্রচুর মাস্তি,❤️❤️❤️ফিলিং সো হেপি জানু❤️❤️❤️আর ইউ ফিলিং সো গু.....ড????😀😀😀😀😀😀😀😀😀😀😀🥲🥲"।
চলবে.....