ধ্রবতারা গল্প কন্যা (ছদ্ম নাম)
উউফ....
ছাড়ুন.....
উফ........ ব্যথা পাচ্ছি তো!
আমি কিন্তু বড়ো আব্বুকে ডাকব....
ছাড়ুন বলছি.........
প্লিজ..................
খুব ব্যথা পাচ্ছি..... ভেঙে যাবে..তো.... প্লিজ ভাইয়া...(চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গাল বেয়ে পরছে।হাত মুচড়ে পিছনে দিকে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলছে )
-আমার কথা শুনিস নি কেন? হুম?
এত সাহস কোথায় পেলি?কেন ওর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলেছিস?যেখানে আমি ছিলাম।ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে,রুপ দেখাতে খুব ভালো লাগে তাই না..কই আমার সাথে তো জীবনে ভালো করে কথা বলতে দেখলাম না....হুম ..হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই তো গলায় ঝুলে পড়তে চাস,তোর চরিত্র যে এমন হয়ে গেছে তা তো জানতাম না!!!নিজেকে কি ভাবিস রাণী ক্লিউ-পেট্রা? আমার কথা না শুনলে এমন শাস্তি অহরহ পেতে হবে,শোন আমি তোর বাবা চাচা দের ভয় পাই না তাদের হুমকি দেখিয়ে লাভ নেই।উল্টো তোর কার্যকলাপ তাদের জনাব। এখন তো শুধু হাতে ব্যথা পাচ্ছিস নেক্সটে কোথায় দিব নিজেও জানি না।
-কিন্তু ,আমি.... কি করে..ছি..... (হাত ছেড়ে চলে গেল)
কিছু ক্ষণ আগে
ওরা হাতিরঝিল ঘুরে ফুচকা খেতে যাবে........ তখনই ,ওদের সামনে একটা গাড়ি থামল আর ফরমাল ড্রেসে হাসি মুখে একজন সুদর্শন যুবক বের হলো। অবাক করে দিয়ে ছেলে টি ধ্রুব কে জরিয়ে ধরলো। উনি ধ্রুবোর ফ্রেন্ড জিসান। একটা মাল্টিনেশনাল কম্পানির ফাস্ট ক্লাস অফিসার।অনেক দিন পর দেখা দুজনের।খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড ,,কিন্তু কাজের সুত্রে ধ্রুব কে বাহিরের দেশে অনেক দিন প্রায় তিন বছর থাকতে হয়েছে তাই সব ফ্রেন্ডদের সাথেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন।কিছুক্ষণ দুজনে কথা বার্তা চালালো।পূর্ব পরিচিত থাকায় সবার সাথে ই হাই হ্যালো করলো।
তুর এর উদ্দেশ্য "আরেহ...তুরিন তুমি তো দেখি অনেক বড় হয়ে গেছো!!বিয়ে দিয়ে শশুর বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে দেখছি!!কি দেখবো নাকি???? হা..হা..হা...
(সবাই উনার সাথে হেসে উঠে )
-কি যে বলেন ভাইয়া,কোথায় বড়ো হলাম,এতো তাড়াতাড়ি বিদায় করতে চাচ্ছেন?
জিসান-সত্যি বলছি!! অনেক সুন্দরী হয়ে গেছো!আমি তো ক্রাশ খেয়ে গেলাম! কতো ছোট দেখেছিলাম ,অবাক লাগছে!!! এই ক'দিনে কত বড় হয়ে গেছো!!!!
-প্রায় তিন বছর ভাইয়া ,ক'দিন কোথায়?ভাইয়া নেই দেখে ,আপনি তো আর আসেন ই না!!! আমাদের তো একদম ভুলে ই গেছেন??
জিসান-এখন থেকে আর চাইলে ও ভুলতে পারবো না....
-কেন?
জিসান-সময়ই বলে দেবে.... তো গাইস কোথাও যাওয়ার প্ল্যান আছে ,না থাকলে চলো কোথাও বসি,কিরে ধ্রুব....?
ধ্রুব -আসলে....(মুখের কথা কেরে নিয়ে তুর বলল)
-ভাইয়া চলেন আমাদের সাথে আমরা ফুচকা খেতে যাচ্ছি? না কিন্তু শুনবো না....।
(ধ্রুব ওদের এতোক্ষণের কথা তে যতোটুকু বিরক্ত হয়েছে তুর আগে আগে এই কথা বলায় তার চেয়ে হাজার গুণ রেগে গেছে এই মুহূর্তে। রাগে মুখে লালআভা দেখা দিয়েছে,তবু ও দাঁতে দাঁত চেপে কনট্রোল করে আছে।)
ধ্রুব -(নিরুপায় হয়ে )হ্যা ,চল আমাদের সাথে।
জিসান-চল তাহলে....এমন সুন্দরীর প্রস্তাব কি প্রত্যাখ্যান করা যায় নাকি ... কি বলিস....হুম।
(সবাই এক সাথে হেসে উঠে )
সবাই রোড সাইড ফুচকা খাবে ধ্রুব একবার না করলেও সবার আগ্রহ দেখে মেনে নিল।একটা স্টলে বসলো কে কি খাবে অর্ডার করলো ধ্রুব ও সবার দেখা দেখি নিল কিন্তু ঝাল কম দিয়ে। তন্নি আর তুর বলেছে ওদেরটায় ঝাল দিতে।তুর তন্নির সাথে বাজি ধরতে গিয়ে বললো ওরটায় বম্বে মরিচ দিয়ে বেশি ঝাল দিতে।তো যার যার টা তার হাতে পেয়েই খাওয়া শুরু হলো।সবার খাওয়া ই সাভাবিক ভাবে এগোচ্ছে...। হঠাৎ ,,ফাহিম বলছে -কিরে তুর তোর নাক মুখ এমন লাল হয়ে আছে কেন?ঝাল কি বেশি লাগছে? পানি....( বোতল এগিয়ে দিয়ে ),নে...পানি... খা.........।
(ঝালের জন্য মুখে দিয়ে কথা বলতে পারছে না,ঠোঁট গোল চৌখা করে নিশ্বাস নিচ্ছে ,মুখ পুড়ে যাচ্ছে মনে হচ্ছে,ঠোঁটটা একদম লাল হয়ে আছে ,চোখ দিয়ে পানি পরে চোখের নিচে কাজল ছড়িয়ে গেছে।)
সবার দৃষ্টি ওর দিকে।
হালকা বাতাস বইছে ,যার ফলে কিছু চুল ওর মুখে গলায় লেপ্টে আছে,বিরক্ত হয়ে বার বার সরানোর চেষ্টা করছে।
(ঝালে লাল হওয়া বিরক্তিকর মুখ ,লাল হয়ে যাওয়া ঠোঁট জোড়া দিয়ে এমনভাবে নিশ্বাস নেওয়া,লেপ্টে যাওয়া কাজল চোখের টলমলে চাহনি ,এলোমেলো খোলা চুল,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।)
এমন ভয়ংকর রুপ দেখে ধ্রুবর কয়েক টা হার্ট বিট মিস হয়ে গেল ,এই মেয়ে কি আজকে আমাকে মেরে ফেলবে নাকি!!!!!
এই দিকে জিসান এইরূপ দেখে হতভাক,ওর প্রেমে পড়ে গেছে ,এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওহ...মাই....গড....এমন পাগল করা রুপ..... (ধ্রুবকে)দোস্ত -আমি তো ফিদা ,এই মায়াবিনী কে আমার চাই,না পেলে জীবন বৃথা হয়ে যাবে,দমবন্ধ হয়ে মরে যাব ,দোস্ত প্লিজ আমাকে সাহায্য কর ,দিয়ে দে না তোর বোনটিকে প্লিজ।কি নজর কারা মনোমুগ্ধকর রুপ!!! কি অমায়িক তার কথার বলার ধরন!!! পাগল করা হাসি!!!তোর বোন কে আমার বউ বানিয়ে দে দোস্ত..... (ধ্রুবর কথার উত্তরের অপেক্ষা না করে এগিয়ে তুর এর কাছে গেল )গিয়ে -তুরিন? বেশি ঝাল লাগাছে? আইসক্রিম আনবো? নিয়ে আসছি দাড়াও খেলে ঝাল কমে যাবে........
এতোক্ষণে ধ্রুবর মাথায় জিসানের কথা গুলো নাড়া দিল, মুহূর্তে ই তুরের প্রতি কিছুখন আগের রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো ,মন চাচ্ছে জিসান কে তুলে আছাড় মারতে আর বলতে এটা আমার জিনিস শালা নজর সরা,আর তোর ই বা কেন ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে হবে,কই আমার সাথে তো বলিস না!আর কেন ঝাল খেয়ে এমন ভয়ংকর রুপ ধারণ করবি তাও বাইরের একটা ছেলের সামনে ,সময় এসে গেছে..... আরও একটা স্বপ্ন পূরণের ,দ্রুত ই আমার জিনিস আমার করে নিতে হবে কারো নজর লাগার আগে ,কিন্তু মুখে কিছু বললো না।
তুর জিসানের দেওয়া আইসক্রিম খাচ্ছে ,এখন একটু ঝাল টা কম লাগছে -থ্যাংক্স ভাইয়া।
জিসান-ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম কিউটি বিউটি গার্ল,এখন একটু ভালো লাগছে?
-জি ভাইয়া......
(জিসানের আর তুর এর এইসব কথোপকথন আদেখলাপনা মনে হচ্ছে ,ওর আইসক্রিম কেন খাবে,নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না)
ধ্রুব -যেটা পারিস না সেটা করিস কেন?সব সময় খালি পাকনামি করতে থাকিস!!
(তুর এমনেই ঝালে নাজেহাল তার ওপর ধ্রুবোর
এমন বিহ্যাবে কাঁদো কাঁদো ভাব)
তন্নি-ভাইয়া আসলে.......
-তুই চুপ থাক।এবার উঠা যাক, চল সবাই.......
তো জিসান আসি ,টাইম নিয়ে বাসায় আসিস......
জিসান-যেতে তো হবেই(বাঁকা হেসে ),তোর সাথে তো তুই আমার প্রান পাখি টা ই নিয়ে যাচ্ছিস দোস্ত, আসবো...অবশ্যই ,,আর তা অতি শীঘ্ররই।
ধ্রুব ছাড়া কেউ ই এই কথার মানে বুঝতে পারেনি।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ৮টা বেজে গেছে।রাতে আর কেউ ই ডিনার করেনি ,দাদির রুমে আড্ডায় মেতেছে...
রাত প্রায় ১১টা তখন সবাই ঘুমাতে যায়।
রুমে ঢুকতেই তুরের মনে হয় অন্য কেউ আছে রুমে।তাই তাড়াতাড়ি লাইটের সুইচ অন করে ঘুরতেই খপ করে ওর বা হাতটা চেপে ধরেছে কে যেন ,ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকতে ই দেখে ধ্রুব,এক হাতে দরজা ধাক্কা দিয়ে চাপিয়ে দিয়েছে ,দরজার নবটা আটকে গেছে।
-আপনি আমার ঘরে কি করছেন এত রাত করে!!!দরজা লাগিয়ে ছেন কেন??? আমার হাত ছাড়ুন.... এভাবে ধরেছেন কেন লাগছে তো!!!!(ছাড়ানোর চেষ্টা করে)কি ধরনের অসভ্যতা শুরু করেছেন !!!! ছাড়ুন বলছি..... আর দরজা চাপালেন কেন!!!কেউ দেখলে কি ভাববে,ছাড়ুন..... আর যান এখান থেকে,আপনার মতো অসভ্য লোকের কথা আমি শুনব না।
-তো কার কথা শুনবি.....ওই জিসানের??
-আপনি কিন্তু বারাবাড়ি করছেন....
-আমি করলে সব বারাবাড়ি ,জিসানের বেলা আর নিজের বেলা সব ঠিক তাই না....
হাত ঘুড়িয়ে ধরেছে পিঠের দিকে,বুকের সাথে গিয়ে তুরের পিঠ ঠেকেছে...।
তুরের বুক ধরফর করছে...(এই লোকটা কাছে এলেই কেন এমন লাগে কই ফাহিমের সাথে তো কতো মারামারি করেছে এমন দম বন্ধকর অনুভূতি তো হয়নি)
ধ্রুবের শরীরের স্পর্শ অনুভব হতেই নিশ্বাসের গতি বেড়ে গেছে.....।
ধ্রুব ওর ছটফটানি বুঝতে পেরে
(বাঁকা হাসছে)ডোজটা আর একটু বাড়াতে আস্তে আস্তে কানের কাছে মুখ নিয়েছে.... আসলে তুরের এত কাছে এসে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না....অদ্ভুত এক নেশা গ্রাস করেছে.... নিজের অজান্তেই চোখ বন্ধ হয়ে গেছে...মুখটা আস্তে আস্তে তুরের কানের কাছে নিচ্ছে,ধ্রুবোর গরম নিশ্বাস ওর ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে তুরের শরীর কাঁপছে ছটফটানি আরো বেড়ে গেছে... ছুটার জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করেছে....
তুরের মোচড়ানোতে হঠাৎই ওর হুশ ফিরে..... (জিসানের ফোনের কথা মনে হয় ,আচ্ছা তুরের যদি অন্য কারো সাথে প্রণয় হয় তাহলে ,তাহলে সহ্য করতে পারবো আমি? নাহ!!!! কিছুতেই না...... )
মূহুর্তের মাঝে রাগটা ফিরে এসেছে....আর শিথিল করে ধরা হাতটা জোরে চেপে ধরেছে... তুর সাথে সাথেই ব্যথায় কুঁকিয়ে উঠে.......
উউফ....
ছাড়ুন.....
উফ........ ব্যথা পাচ্ছি তো!
আমি কিন্তু বড়ো আব্বুকে ডাকব....
ছাড়ুন বলছি.........
প্লিজ..................
খুব ব্যথা পাচ্ছি..... ভেঙে যাবে..তো.... প্লিজ ভাইয়া...(চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গাল বেয়ে পরছে।হাত মুচড়ে পিছনে দিকে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলছে )
-আমার কথা শুনিস নি কেন? হুম?
এত সাহস কোথায় পেলি?কেন ওর সাথে আগ বাড়িয়ে কথা বলেছিস?যেখানে আমি ছিলাম।ছেলেদের সাথে হেসে হেসে কথা বলতে, রুপ দেখাতে খুব ভালো লাগে তাই না...কই আমার সাথে তো জীবনে ভালো করে কথা বলতে দেখলাম না..হুম ..হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই তো গলায় ঝুলে পড়তে চাস,তোর চরিত্র যে এমন হয়ে গেছে তা তো জানতাম না!!!নিজেকে কি ভাবিস রাণী ক্লিউ-পেট্রা? আমার কথা না শুনলে এমন শাস্তি অহরহ পেতে হবে,শোন আমি তোর বাবা চাচা দের ভয় পাই না তাদের হুমকি দেখিয়ে লাভ নেই।উল্টো তোর কার্যকলাপ তাদের জনাব। এখন তো শুধু হাতে ব্যথা পাচ্ছিস নেক্সটে কোথায় দিব নিজেও জানি না।
-কিন্তু ,আমি... কি করে..ছি..... (হাত ছেড়ে চলে গেল)
চলবে.....