আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-২২

Estimated read time: 7 min

ধ্রবতারা 
লেখিকাঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)



রাত ৩টায় ধ্রুব বাড়ি ফিরে।
তুর চোখ ডলতে ডলতে কোনোরকমে দরজা খুলে।

এলোমেলো চুল,পড়নের জামা কুচকে আলুথালু হয়ে আছে।পাজামার এক পায়ের কাপড় ওপরে অন্যটা নিচে।ঘুমের তোড়ে গায়ে উড়না জড়াতে ও ভুলে গেছে।

প্রেয়সীর ঘুম ঘুম মিষ্টি মুখশ্রী দেখে এক মুহূর্তে সারাদিনের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেছে।তুর দরজা খুলে ঢুলতে ঢুলতে রুমের দিকে হাটা ধরে।

ধ্রুব দরজা লাগিয়ে তুরকে ডাকে "তুর... "
"হুম …"
"খেয়েছিলি?"

ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বলে "মনে নেই। "

ধ্রুব হেসে দেয় "নিজের পেটের খবর জানিস না?হাত মুখ ধুয়ে আয়,খাবি আমার সাথে।"

"আমি এখন ঘুমোবো।"

"আগে খাবি পরে ঘুমোবি।"

"খিদে নেই তো। প্লিজ এমন করবেন না,ঘুমোতে দিন।"

"না করলাম কখন।খেয়ে তারপর ঘুমোবি সিম্পল।এমন বাচ্চাদের মতো করছিস কেন? যা....।"

বাধ্য হয়ে কোনো মতে চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে আসে।

"ফ্রিজ থেকে খাবার বের করে গরম কর আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।"

তুরের ঘুম যেন ফুরুত করে উড়াল দিয়েছে।বড়বড় করে ধ্রুবর যাওয়ার পানে চেয়ে আছে।

"এই রাত দুপুরে আমাকে অর্ডার দিচ্ছে।কি দিন এলো তোর।অবশ্য উনার বাসায় থাকছি খাচ্ছি এটুকু তো করতে ই হবে।"

ধ্রুব গোসল করে ফ্রেশ হয়ে এসেছে।এসে দেখে মেডাম খাবার গরম করে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।"সার্ফ কর।নাকি তাকিয়ে থাকলে তোর পেট ভরবে?"

তুর মুখ ফুলিয়ে খাবার বেরে দিচ্ছে।কথা বাড়াতে চায় না তাই নিজের জন্য ও নিয়েছে।একে তো ঘুমের বারোটা বাজিয়েছে।তার উপর অর্ডার।মেজাজটা ই খারাপ করে দিয়েছে।

চুপচাপ দুজনে খাওয়া শেষ করে।

"সারাদিন কেঁদে চোখ মুখের কি অবস্থা করেছিস?এমন করলে কিন্তু এখানে থাকা যাবে না।এখানে থাকতে হলে আমার কথা মতো থাকতে হবে।সব কিছুতে নিয়মিত হতে হবে।ওকে..."

আবারও সব কিছু মনে পড়ে যায়।মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় "আচ্ছা "

"কালকে তোকে নিয়ে শপিং এ যাবো।সকালে রেডি হয়ে থাকিস।"
_________

সকাল ১১টা,
ধ্রুব রেডি হয়ে লিভিং রুমে বসে টিভি দেখছে আর অপেক্ষা করছে। তুর রেডি হচ্ছে।এমন সময় কলিং বেল বেজে ওঠে।ধ্রুব ওঠে দরজা খুলে দেয়।

দরজা খুলে তো অবাক।মা,মেজ চাচি,ছোট চাচি,দাদি এসেছে সাথে ফাহিম ও আছে।সকলে হুরমুর করে ভিতরে ঢুকে।

রায়লা বেগম : কই...আমার মেয়েটা।কই রে বাবা ডাক ওকে।

"বসেন চাচি অস্থির হবেন না।তুর......।"

ফজিলাতুন্নেছা বসেননি।উনি তরতর করে কোন রুমে তুর আছে সে সন্ধানে গেছে।সরাসরি ধ্রুবর রুমে গিয়ে ঢুকে।দেখে ধ্রুবর রুমে তুর রেডি হচ্ছে।উনার মাথায় যেন বাজ পড়ে।বিশ্রী রকম রাগ উঠে তুরের উপর।রুমে ডুকে তুরের পিছনে দাড়ায়।

"তুই এইহানে আইসা,এই ঘরে থাকতাছোস?"

তুর পিছনে ঘুরে দাদিকে দেখে চমকে যায়।দু এক দিন পরে না,মনে হচ্ছে দু এক বছর পর দেখছে।মনে প্রশান্তি অনুভব করছে।

"কেমন আছো দাদি?"

"ভালা আর থাকতে দিলি কই মান সম্মান তো সব ডুবাই দিছোছ।কেম্নে ভালা থাকমু।"

সেদিনের পর তুর বুঝতে পেরেছে ওর দাদি কোনো কারণে ওকে পছন্দ করে না।এতো দিন বুঝে নি। ওনার আলাদা চোখে দেখা  সাভাবিক বলে মনে করেছে।তবে এখন ব্যাপারটা চোখে লাগছে।কিন্তু ও ওর দাদিকে খুব ভালোবাসে।

"আমার জন্য মান সম্মান যাবে কেন দাদি।আমি তো পালিয়ে যায় নি।আর আমি তো তোমাদের কেউ না।"

"এডা আমি মানতে পারলে ও আমার পোলারা মানতে পারে নাই।পুরা বাড়ির শান্তি নষ্ট কইরা এইহানে একলা এক জোয়ান পোলার ঘরে আইসা উঠছোস।"

"আমি কেন শান্তি নষ্ট করবো। নষ্ট যেন না হয় তাই তো চলে এসেছি।আর দাদি তুমি এভাবে বলছো কেন?ধ্রুব ভাইয়া কি অচেনা কেউ নাকি?"

"হ এডাই তো চিন্তার বিষয় ।জোয়ান পোলা ওর চোখে আমি অন্য কিছু দেখছি।কি আর কমু,যেমন মায়ের জন্ম তেমনই তো হবি।বাপ মায়ের ঠিক নাই। দয়া কইরা আমার পোলা পরিচয় দিছে। না হয় রাস্তায় থাকতি।আর আজকে আমার বাড়ির মান নষ্ট করতাছোস।তোর লেইগা মানুষ আঙুল তুইল্লা কথা কইতে পারছে।আর অহন আমার নাতির বদনাম করতে এহানে আইছোছ।এতো দিন কিছু কইতে পারি নাই।আইজ তোর লেইগা আমার পোলার চোখেও আমি খারাপ হইছি।আর চুপ কইরা থাকমু না।তোর লেইগা বাড়ির সবাই এতো দিন অনেক মাইনসের অনেক কথা শুনছে আর না।তোর মতো অপয়া বেজন্মা সন্তান যার ঘরে থাকবো কুনো দিন শান্তি হইবো না।কুনো দিন না।আল্লার দোহাই তোরে আমার নাতির বদনাম করছিস না।এহান থেইকা চইলা যা।কি পরিচয় থাকবি তুই এনে হের ঘরে।সুন্দরী জোয়ান মাইয়া তুই,এই রূপ দিয়া ওই বিদেশিনীর মতো আর মুখ পোড়াইচ না।তোর কালা ছায়া আমার নাতির উপরেত্তে সরাইনে ।চইলা যা এহান থেইকা।আমার পরিবার থেইকা।তোর জন্যে ছোড বেলা থেইকা বাপ মায়ের সন্তান হইয়া ও তুহিন বঞ্চিতো হইছে।আদর ভালোবাসা সব কিছু থাইকা।এতোদিন আমার পরিবার তোরে পাইলা বড়ো করছে।তার কৃতজ্ঞতা সরূপ তুই আমার কথাডা রাখ।তোর কাছে একটা ই দাবি চইলা যা আমার পরিবার থেইকা দূরে।"

এ সব কথা শুনে তুর হুহু করে কেঁদে উঠে।

এক পর্যায়ে চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করে।বেঁচে থাকার ইচ্ছে টা যে একটু একটু করে শেষ হয়ে যাচ্ছে।কিভাবে কাছের মানুষ গুলো এমন ভাবে বলতে পারে।কেমন করে মানুষের মনে এক মুখে এক থাকতে পারে।কিভাবে পারবে সবাই কে ছেড়ে থাকতে।আর পারছে না এই ছোট্ট হৃদয় এতো দহন সহ্য করতে।

"এম্নে কাইনদা কি প্রমাণ করতে চাছ,তোর সকলের প্রতি অনেক ভালোবাসা।যদি সত্যিই ভালোবাসোছ তাইলে চইলা যা।এগুলা যেন কেউ না জানে। আমি তোরে ভুল কিছু কই নাই।তোরে খাওয়ায় পড়ায় বড়ো কইরা দিছে এহন নিজের জীবন গইড়ানে।আমার পরিবার থেইকা সইরা দাড়া।"

তুরের চিৎকার করে কাঁদার শব্দ সবাই এসে শেষ কথা গুলো শুনে ফেলে। ধ্রুব রেগে ধমকে ওঠে "দাদি........ "

ফজিলাতুন্নেছা ঘুরে দেখেন পিছনে সবাই দাঁড়িয়ে আছে।উনি একটু ও বিচলিত না হয়ে সাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন।

"কি সব বলছো তুমি ওকে? "

"আরো আগে যা বলা উচিত আছিলো তা এতো দিনে বলছি।ওর জায়গা ডা ওরে চিনাই দিছি।"

"ছিহ...ভাবতে ও কষ্ট হচ্ছে তুমি এভাবে ওকে বলছো।"

শাহানা বেগম তুরকে জড়িয়ে ধরে আদর করে "কাঁদিস না মা,বাড়ি চল।নিজের কি হাল করেছিস।দেখ তো তোর মায়ের মুখখানি চেয়ে। কারো কথায় কোনো আসে যায় না আমাদের ।তুই আমাদের সকলের নয়নের মণি। চল মা।আর কাঁদিস না।"

তুরের চোখের পানির বাধ মানছে না।জোরে জোরে কাঁদছে।"চলে যাও তোমরা।আমি তোমাদের কেউ না।চলে যাও।আমার কেউ নেই। বাবা মা কেউ নেই।আমি রাস্তার মানুষ।চলে যাও না হয় আমি আত্মহত্যা করবো।যাও তোমরা আমি আর কারো দয়া চাই না।আমার ছায়া তোমাদের উপর পড়বে না।"

শাহনা বেগম "মা এমন করিস না দেখ তোর মায়ের দিকে চেয়ে। তোর বাবা তো কিছু বলতে ও পারছে না।যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছে। মা গো আমার,দাদি বুড়া মানুষ ওনার কথা ধরিস না। চল মা আমার।তোকে ছাড়া পুরো বাড়ি যে খা খা করছে।"

তুর কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।শাহানা বেগম  ধরে রাখতে পারছে না।কাঁদতে কাঁদতে বলে"আমি যাবো না।আমি কেউ না তোমাদের চলে যাও আর দয়া দেখি ও না।এক্ষুনি না গেলে  সত্যি সত্যিই মরে যাবো।ভাবো তোমাদের জন্য আমি মরে গেছি। চলে যাও।না হয় আমি এখান থেকে ও চলে যাব।"

রায়লা বেগমের চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। মেয়ের এতো কষ্ট যে চোখে দেখতে পারছে না।ননির পুতুলের মতো আগলে রাখা মেয়েটার আজ কি অবস্থা হয়েছে।শাশুড়ীর প্রতি ক্ষেপে যায়।প্রচন্ডভাবে উত্তেজিত হয়ে পড়েন"আমি এটা জানতাম যে আপনি ওকে বাড়িতে আনা থেকে ই পছন্দ করতেন না।তাই বলে এভাবে আমার মেয়েকে কষ্ট  দিবেন ভাবিনি।আপনার কাছে যা ই হোক না কেন।ও আমার প্রথম সন্তান।আমার কলিজা।আমার অমূল্য রত্ন।আপনি কি সব জানেন না?কিভাবে পারলেন একজন মা হয়ে আর একজন মায়ের বুক খালি করতে।আমি আপনাকে কোনো দিন ক্ষমা করবো না।"

তুরের পাগলের মতো প্রলাপ করা,ছটফটানি ধ্রুব আর সহ্য করতে পারছে না।ইচ্ছে করছে এক্ষুনি বুকে জড়িয়ে বলতে কাঁদিস না,আমি সব ঠিক করে দিব।তোর সব কষ্ট আমার।কিন্তু পারছে না।হৃদয় টা যে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।

নিজেকে সামলে পরিস্থিতি সামলাতে ,ধ্রুব রায়লা বেগম কে বলে"চাচি উত্তেজিত হবেন না।সব ঠিক হয়ে যাবে।ওকে আমি বুঝিয়ে সুজিয়ে নিয়ে আসবো বাড়িতে।ফাহিম চল সবাই কে নিয়ে।"

ফাহিম ভাইয়ের নির্দেশ মতো সবাই কে নিয়ে বাড়ি চলে যায়।সকলে বাধ্য হয়ে ফিরে যায়।

ফজিলাতুন্নেছা আর রিনা বেগম মনে মনে খুশি হন।এতো দিনে তুরকে সঠিক জায়গা দেখাতে পেরে।শুধু একটা ই চাওয়া এখান থেকে ও যেন বের হয়।

সবাই চলে যাওয়ার পর ধ্রুব রুমে যেয়ে দেখে,তুর ফ্লোরে শুয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে আর আল্লাহ কে ডাকছে।

ধ্রুব তুরের মাথায় হাত রাখে।তুর চোখ তুলে ধ্রুবর দিকে তাকায়।আদুরে স্পর্শে আবারও কাঁদতে শুরু করে।ধ্রুব মাথায় হাত বুলিয়ে কাঁদতে নিষেধ করে।

তুর কান্না বন্ধ করে দাড়ায় ওয়াসরুমে যাবে।দু কদম এগিয়ে যেতেই মাথা ঘুড়িয়ে পড়ে যায়।তাৎক্ষণাত ধ্রুব ধরে ফেলে।ততক্ষণে তুর সেন্সলেস। 

কোনো মতে বিছানায় শুয়ায়।চোখ মুখে পানি দেয়।হাত পা গুলো ঠান্ডা হয়ে আছে।হাতে পায়ে ঘষতে থাকে।কোনো ভাবে কিছু হচ্ছে না।

কেয়ার টেকার কে কল করে ডক্টর আনতে বলে।প্রায় ৩০মিনিট সময় লাগে ডক্টর আসতে।

তুরকে দেখে ডক্টর বলে"আপনার স্ত্রী খুবই দুর্বল। দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে খুব স্ট্রেসে আছে।পালসরেট  সাভাবিকের তুলনায় কমে গেছে।ইমিডিয়েটলি শরীরে স্যালাইন দিতে হবে।এভাবে পালসরেট কমে যাওয়া ভালো নয়।তাছাড়া এ বয়সেই এমন হলে ওনার হার্টের প্রবলেম হওয়ার রিস্ক আছে ।এক দিনে তো শরীরের এ অবস্থা হয়নি।খেয়াল রাখবেন না!এমন হলে তো যে কোনো সময় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতে পারে। আর উনি যদি এমন দুর্বল থাকে তাহলে বেবি কনসিব করবে কিভাবে।খুব রিস্ক হয়ে যাবে ব্যাপারটা।তখন খুব প্রবলেম ফেস করতে হবে।"

ধ্রুব পরেছে মহা বিপদে তুরকে ওর স্ত্রী ভেবে কি থেকে কি বলছে।তবে ডক্টরের কথা শুনে টেনশনে পড়েছে।"এমন এর আগে ও একবার হয়েছিল"

"তাই নাকি তাহলে তো ওনাকে পুরনো সেই ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতে হবে।কালকে একবার নিয়ে যাবেন।আর একটা কথা যতই ডক্টর দেখান। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া না করলে আর অতিরিক্ত টেনশন করলে আবারও এমন হবে।ডক্টর দেখিয়ে কাজ হবে না।"

তুরের স্যালাইন চলছে।একটু আগে চোখ মেলে তাকিয়েছিল।ওঠতে চেয়েছে ধ্রুব জোর করে শুয়িয়ে রেখেছে।শুয়ে থাকতে থাকতে আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে।পাশে বসে থেকে ধ্রুব ও ঘুমিয়ে পড়েছিলো।সন্ধ্যা ৭টায় ঘুম ভাঙে ,ওঠে শেষ হওয়া স্যালাইন খুলে ফেলে দেয়।তুরের জন্য খাবার ওষুধ ফলমূলের ব্যবস্থা করতে বের হয়।নিজেকে অনেকটা হাজবেন্ড হাজবেন্ড মনে হচ্ছে... 


চলবে........

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.