আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-২৩

Estimated read time: 4 min

ধ্রবতারা 
লেখিকাঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)



ধ্রুব খাবার ওষুধ সব রেডি করে তুরকে ডাকে।

চোখ মেলে দেখে ধ্রুব সব কিছু বিছানায় রেডি করেছে ।মাথায় ঘাড়ে প্রচন্ড ব্যথা।ধ্রুব বসতে সাহায্য করতে যায়।তুর বাধা দেয়।"এতোটা অসুস্থ হয়নি যে আমাকে রোগীর মত ট্রিট করতে হবে।"

এই মেয়ের কথা শুনে ধ্রুব চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে "যাহ বাবা,যার জন্য করলাম চুরি সে ই বলে চোর।ঠিক আছে,উঠে খেয়ে নে।ওষুধ খেতে হবে।শরীরের যে হাল। "

তুর আস্তে আস্তে উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে।কিন্তু ডান হাতে সূচ ফুটানোর জন্য হাতটা ইজিলি নাড়াতে পারছে না।

ধ্রুব ইতস্তত করে বলে "আমি খাইয়ে দেই?"বলে বোকার মত তাকিয়ে থাকে ।

তুর চেষ্টা করে দেখে হাতটা সামান্য ফুলে আছে উপায় নেই।মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।

ধ্রুব যেন এটার অপেক্ষায় ছিলো।ঝটপট প্লেট হাতে নিয়ে সুন্দর মত ভাত মাখিয়ে ছোট একটা দলা ওর মুখে পুরে দেয়।তুর বাধ্য বাচ্চাদের মতো মুখে নেয়।দ্বিতীয় দলা মুখে দিতেই গাল বেয়ে চোখের পানি পড়তে থাকে।

"আবার কি হলো? কাঁদছিস কেন?জানিস না খেতে বসে কাঁদতে নেই।"

এ কথা শোনার পর তুর আরো বেশি কেঁদে উঠে।
"কান্না বন্ধ কর"

"এটা কে বুঝি বলে রক্তের মিল।আপনার মাঝে ও আমি বাবার ছায়া দেখতে পাচ্ছি।বাবা ও খেতে বসে কাঁদলে এভাবে বলে আর মুখে তুলে খাইয়ে দেয়।"

"বোকা মেয়ে, তুই যে তোর বাবার কার্বন কপি।তাই তো এসব মনে রেখেছিস।এখন চুপ করে সবটা শেষ কর।আমার খুব খুদা পেয়েছে। দুপুরে খাওয়া হয়নি।"

তুর চুপচাপ খেতে থাকে।আর চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে। ওর বাবা বড়ো আব্বুর হাতে খেতে পারছে না,তাই দুদিন ধরে খেয়ে তৃপ্তি পাচ্ছে না।ধ্রুব খাইয়ে দিচ্ছে বলে খাচ্ছে,না হয় খেতেই পারতো না। এ দিকে ধ্রুব তুরের এটো খাবার খেতে নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে,আর ওর এই অবস্থা দেখে ওর মুড চেন্জ করতে।এক দলা ভাত টুপ করে নিজের মুখে চালান করে দেয়।তুর ভেবাচেকা খেয়ে যায়।

"কি হলো এভাবে তাকিয়েছিস কেন?ভাত ইতো খেলাম ইঁদুরের বিষ তো না।তুই যেভাবে ভাত চিবোছিস।পেটের ভেতর থাকা পোকারা আমাকে চিবিয়ে খেয়ে নিচ্ছে।বাই দা ওয়ে আমার হাতের মাখানো ভাতটা কিন্তু খুব টেস্টি আজ বুঝলাম।"

হঠাত করে যেন তুরের মধ্যে লজ্জা ভর করেছে।সঙ্গে সঙ্গে মাথা নিচু করে ফেলে।কিন্তু পরক্ষণেই দাদির কথা মনে পড়ে যায়।আর বলে "আপনি খান আমি আর খেতে পারবো না।"

ধ্রুব নাছোড়বান্দা হয়ে জোর করে সব খাবার খাওয়ায়।নিজের খাবার টা ও শেষ করে।তার পর ওষুধ খাইয়ে শান্ত হয়।

"প্রতি দিন কম পক্ষে দু তিনটা খাবার স্যালাইন খাবি।আমি থাকি বা না থাকি।"

"হুম।"

"হুম কি?বল আচ্ছা।"

"আচ্ছা ভাইয়া।"

"ধ্যাৎ... ভাইয়া ডেকে মুডটাই চেন্জ করে দিলো।কেমন একটা হাজবেন্ড হাজবেন্ড ফিল আসছিল।ফিলের বারোটা বাজিয়ে দিলো।"

"শুনুন"

"হ্যা বল"

"আপনি একটু জিসান ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিতে পারবেন।"

"কেন?"

"আসলে উনারা তো বিয়ের কথা বলেছিলো।এখন সব জেনে আমাকে বিয়ে করবে কিনা জিজ্ঞেস করবো।আমার মতো রাস্তার মেয়েকে ভদ্র ঘরের পরিচয় দিতে পারবে কিনা জিজ্ঞেস করবো।নইলে যাকে তাকে একটা দেখে বিয়ে করে নিব।রাস্তার মানুষ হয়ে থাকতে চাই না।আমার একটা পরিচয় চাই।আর কালকে একটা চাকরি যোগার করতে বের হবো। "

"কি সব আবোলতাবোল বলে যাচ্ছিস?মাথা ঠিক আছে? "

"নাহ ঠিক নেই। আমি আপনার এখানে থাকতে পারবো না।পারলে বলুন।না হয় কালকে ই আমি এখান থেকে চলে যাব।আমি আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবো না।কেউ আমার জন্য আপনার বদনাম করুক সেটা চাই না।"

"পাগলামি বন্ধ কর।তুই কোথাও যাবি না।আমি থাকতে তোর দায়িত্ব নেয়ার জন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে।আর আল্লাহ না চাইলে আমার ক্ষতি করা কারো বাপের সাধ্য নেই।"

" কখনো না।আপন জনরাই ছাড়বে না।আর কি পরিচয় থাকবো। আসলে ই তো মানুষ কি ভাববে।আপনার কতো সুনাম।আমি আপনার লাইফে দাগ লাগাতে পারবো না।আমার তো কোন পরিচয় ই নেই, পরিচয় ছাড়া কোথাও থাকতে পারবো না।"

"কে বলেছে নেই।সময় হলে দেখা যাবে। তোর সব দায়িত্ব আমার।তোর সব কষ্ট আমার।আর একটা ও কথা না ঘুমা।কোথাও যেতে দেবো না।"

___________ 
পরের দিন। 

আগের সেই ডক্টর কে দেখাতে হাসপাতালে যায়।তুর যেতে চায় না ধ্রুব জোর করে নিয়ে যায়।
শপিংমল থেকে একেবারে তুরের প্রয়োজনীয় সব কিনে বাসায় ফিরে।
আজকে ধ্রুব তুরের জন্য রান্না করছে।রেসিপি মোরগ পোলা। ইউটিউব দেখে দেখে বেচারা হাত পুড়িয়ে রান্না করছে।

তুর রুমে বসে আছে।বারবার দাদির কথা গুলো মনে হচ্ছে আর কান্না পাচ্ছে।অনলাইনে কয়েকটা জবের সন্ধান পেয়েছে।যেহেতু কোয়ালিফিকেশন বেশি নেই।তাই সামান্য বেতনের চাকরি।

আগামীকাল ধ্রুবর ফ্লাইট আছে।তখন যেয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে আসবে।আর একটা থাকার জায়গা খুজবে।

হঠাত জিসানের কথা মনো হলো।ধ্রুব কখনো যেতে দেবে না।আর জিসানের সাথে ও কথা বলবে না। বেশ ভালো ভাবে বুঝতে পারছে।যা করার ওকেই করতে হবে।পাশের রুম থেকে ধ্রুবর ফোন নিয়ে জিসানের নাম্বারে কল দেয়।

ফোন তুলে জিসান তুরের কথা শুনে অবাকের পর অবাক হচ্ছে।"কয়েক বার দেখা একটা পুচকে মেয়েকে ভুলতে প্রায় দু'মাস ধরে নিজের সাথে লাড়াই করছে। সে আজ যেচে এই প্রস্তাব করছে।তাহলে কি ধ্রুব এখনো কিছু বলতে পারেনি।আমার যদি এই অবস্থা তো আমার বন্ধুর কি হাল হবে।আর কথা শুনে তো নরমাল ইস্যু লাগছে না।এই মেয়ে তো সিরিয়াস।এই বার ধ্রুব না পারলে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই।"

"শুনছেন? আপনি বিষয়টি জানান আপনার ফেমিলি কে।আমি যে কোনো সময় হ্যা অথবা না শোনার জন্য প্রস্তুত  আছি।আর যেটা জানাবেন আজকের মধ্যে জানাবেন প্লিজ। কালকে আমি অন্য কোথাও চলে যাবো কাজের সন্ধানে।"

"কার সাথে কথা বলছিস?"

থতমত খেয়ে যায় "কারো সাথে না।"

হাত থেকে ছো মেরে ফোনটা নিয়ে যায়।স্ক্রিনে থাকা জিসানের নামটা দেখে।চোখ মটকে তুরের দিকে তাকায়।তুর নিচের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে।

"পরে কথা বলছি তোর সাথে"বলে ফোন কেটে দেয়।

ধ্রুবর রাগান্বিত মুখ দেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

মোবাইল টা বিছানায় ছুড়ে ফেলে। তুরের সামনে দাড়ায় একদম খুব কাছাকাছি।তুর প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে।ধ্রুব ওর মুখ উচিয়ে চোখে চোখ রাখে।

"আমার উপর কোনো আস্থা নেই তাই না?"
----------- 

"কি হলো? আর কি করলে বুঝুবি আমি তোর পাশে আছি সব পরিস্থিতিতে।"
----------- 

তুরের দু'বাহুতে জোরে চেপে ধরে।

"কথা বল?বিয়ে করার শখ জেগেছে না।খুব বিয়ে বিয়ে করছিস।দাড়া বিয়ে করা দেখাচ্ছি তোকে।"

ধ্রুব ওকে ছেড়ে দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।

তুরের ছলছল চোখ বেয়ে  শ্রাবণের ধারা বইতে শুরু করে।

"এছাড়া কি বা করার আছে।আপনি আমার ভাগ্যে নেই।আপনার থেকে দূরে থাকাই আমার ভাগ্যে আছে।তাই তো কোনো না কোনো কারণে দূরে সরে যাচ্ছি...।"


চলবে -------

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.