আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-৩০

Estimated read time: 5 min

ধ্রবতারা 
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)



আজকে তুরের মেহেন্দির অনুষ্ঠান।

সকাল থেকেই পুরো বাড়ি সাজানো হচ্ছে।বিকেল থেকে অনুষ্ঠান শুরু।

সবাই খুব ব্যস্ত।তুর নিজে ও চুপ করে বসে নেই।এটা সেটা করায় ব্যস্ত আছে।সবাই বার'ণ করছে।কিন্তু কে শুনে কার কথা।

ফাহিম ধ্রুবকে ফোন করে পাচ্ছে না।বাসা থেকে একটু পর পর এজন ও জন ফোন করছে।কারোটাই যাচ্ছে না।সং'যো'গ দেয়া সম্ভব নয় বলছে।

আজকে ওর ডু'বা'ই থেকে বাং'লাদে'শ গা'মী রি'টা'র্ন ফ্লাইট ছিল ।সন্ধ্যার আগে বাসায় থাকার কথা।কিন্তু কোনো খ'ব'র নেই।

তুরকে একটা সবুজ রঙের লেহেঙ্গা পড়িয়ে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।ধ্রুবর জন্য অ'পে'ক্ষা করতে করতে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।

সবাই খুব আনন্দ করছে।কিন্তু তুর বারবার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে।এ কয়দিনে যে কতো বার তাকিয়েছে তার হিসেব নেই।এটা যেন একটা অ'ভ্যা'স হয়ে দাঁড়িয়েছে।

খুব ছটফট করছে ভিতরটা।ম'রু'ভূ'মির পি'পা'সিত পথিকের মতো ধ্রুবকে দেখার পি'পা'সা পেয়েছে। একটু দেখার জন্য ম'রি'য়া হয়ে আছে।

তুরের মেহেদী পড়া সবার আগে আগেই শে'ষ হয়েছে।কেন যেন এতো আনন্দের মাঝে ও কিচ্ছু ভালো লাগছে না।কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে।
ফাহিম কে ঈশারায় ডাকে।

"কি....কিছু বলবি?"

"হুম।ওনি কোথায়,কখন আসবে,কোথায় আছে,জানিস কিছু?এখনো আসছে না যে।"

ফাহিম তুরের বে'কু'লতা আর এতো বড়ো প্রশ্নে হেসে দেয়।

"ফোন দিচ্ছি এসে পড়বে।মাঝে মধ্যে তো এমন হয়।হয়তো ফোন অন করতে ভু'লে গেছে।আসছে হয়তো।টে'ন'শ'ন করিস না।"

"এতো ক্ষণ তো লাগার কথা না।"

"হুম আবার ফোন করে দেখছি।"

সবাই নাচ গানে ব্যস্ত।কিন্তু তুরের কিছু ভালো লাগছে না।রাত নয়টা বাজে এখনো আসছে না কেন?

 ক্লান্ত লাগছে বলে উপরে চলে আসে।

মেহেদী শুকিয়ে গেছে।তাই তুলে ফেলেছে।কিছুক্ষণ বারান্দায় বসে নিচে ওদের না'চ দেখেছে।
রাইসা ছাড়া সবাই না'চা'না'চিতে ব্যস্ত।

রুমে ঢুকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে পু'ন'রা'য় বারান্দায় যায়।
ফেসবুকে ঢুকে দেখে ধ্রুবর ফ্লাইং এর আগে ককপিটে বসে একটা ছ'বি তুলে আ'প'লো'ড করেছে।

কেপশনে লেখা "ফিলিং সো এ'ক্সা'ই'টে'ড।টুডে ইজ এ স্পেশাল ডে ফর মি।এভ্রি ওয়ান প্রে ফর মি এন্ড মাই পোলস্টার।"

পোস্টে সকলে কমেন্টের ব'ন্যা বইয়ে দিয়েছে।তুর মোবাইল রেখে কাবার্ড থেকে কাপড় বের করতে যায়।চেন্জ করার জন্য।

তখন ধ্রুবর দেয়া ব্যাগটা দেখতে পায়।ভু'লেই গিয়েছিল এটার কথা।প্যাকেটটা নিয়ে বিছানায় বসে র্যা'পিংটা খুলে।ভেতরে একটা লাল টুকটুকে জামদানী শাড়ি। আর একটা সাদা রঙের শাড়ি। এক র'ঙা স'ফ্ট টি'স্যু শাড়ি।একদম ফি'ন'ফি'নে পা'ত'লা। এটা দেখেই তুরের ল'জ্জা করছে।সাথে ডি'প নি'কের একটা সাদা রঙের ব্লা'উ'জ।আর একটা চিঠি। খুব উ'ত্তে'জ'না কাজ করছে কি লেখা আছে চিঠিতে জানতে। চিঠি টা যত্ন স'হ'কা'রে খুলে।চিঠিতে লেখা ,

মাই পোলস্টার ,
জানি না আমার কথা গুলো বুঝবি কি না। কতো খানি বুঝাতে স'ক্ষ'ম হবো।প্লিজ বোঝার চেষ্টা করিস।প্রতিটি কথা,আমার হৃদয়ের গ'হী'নের লু'কোনো শব্দ।ভালোবাসা কি তা বুঝতে পারার আগে থেকেই তোকে ভালোবেসে ফেলেছি।প্রেমিক কাকে বলে তার সং'ঘা জানার আগেই প্রেমিকের খাতায় নাম লিখেছি।চারিদিকে এতো মুগ্ধতা থাকাতে ও বারবার শুধু তোর প্রতি মুগ্ধ হয়েছি।বারবার তোর প্রেমেই পড়েছি।যতই নিজেকে সং'ব'র'ণ করতে চেয়েছি,কোনো ভাবেই স'ফ'ল হতে পারিনি। উল্টো আর বেশি দু'ব'র্ল হয়ে পড়েছি।দিন দিন যেন তুই আমার পুরো হৃদয় দ'খ'ল করে বসছিলি।তোকে ছোটো বেলা থেকে এতো ভালোবাসতাম যদি কেউ তোর সাথে খেলতো সেটা স'হ্য হতো না।আমার কথা ছিলো,তুই আমার পুতুল বউ।শুধু আমার সাথে খেলবি।কিন্তু তুই সবার সাথে খেলে বেড়াবি।খুব রা'গ উঠত তোর প্রতি।তখন তোর চুল ধ'রে টা'ন'তা'ম।তোর চোখের পানি দেখলে আবার আমার বুকেই ব্য'থা হতো।তুই হাসলে বুকের ভিতর প্রশান্তি হতো।বন্ধুরা যখন তাদের প্রেমি'কা'দের নিয়ে গ'সি'প করতো,তাদের প্রেম কাহিনি বলতো।আমার চোখে শুধু তোর মুখখানি ভা'স'তো।কবে আমি আমার হৃদয়ের আকাশের একমাত্র ধ্রুবতারা করবো।সেই আশায় দিন কা'টা'চ্ছিলাম।তোর আমার কাছে করা সকল আ'ব'দা'র খুশি মনে পূর'ণ করতাম।কিন্তু তুই দিন দিন এমন ভাবে হৃদয়ে ঝে'কে বসছিলি যে আমার আরেক স্বপ্ন আকাশে উড়া সেটাতে ফো'কা'স করতে পারছিলাম না।তাই তোর কাছ থেকে দূরে থাকবো ডি'শি'স'ন নেই।কিন্তু তোর কাছে না থাকলে ও ম'স্তি'ষ্কে তুই ঘুরতি সব সময়।দূরে যেতে চাইলে আরো কাছে চলে যেতাম।আর তোর আ'দু'রে কথা তো আছেই।ভাইয়া তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না খালি দূরে দূরে থাক।আমার সাথে কথা বলো না।তুমি আমাকে আর দেখতে পারো না।একদিন এসে বলিছিস ভাইয়া আমার না একটা  হোয়াইট ফেইরি জামা লাগবে।আমি পরি সাজবো।এনে দিবা?সাথে একটা ক্রা'উ'ন।আমি তোকে ধ'মকে দেই।সাত দিন আমার সাথে কথা বলিসনি।খুব ক'ষ্টে কা'টি'য়েছি সেই সাতটি দিন। নিজের হাত খরচের টা'কা বাঁ'চিয়ে তোর জন্য একটা জামা কিনে এনেছিলাম।কিন্তু তুই পড়বি না।সে নিয়ে ও কতো কাহিনী।সেদিন মায়ের হাতে মা'র ও খেয়েছি।তার পর তোর সাথে আমি দু দিন কথা বলিনি।তিন দিনের মাথায় রাতে আমার ঘরে এসে কাঁদছিলি।ঘুম থেকে উঠে তোর কান্নারতো মুখ টা দেখে খুব ক'ষ্ট হয়েছিলো।সেদিন তুই আমাকে জ'ড়িয়ে ধ'রে কেঁদেছিলি আর বলছিলি "ভাইয়া তুমি কথা না বললে আমার খুব ক'ষ্ট হয়।কিছু ভালো লাগে না।"তোর সেদিন কিছু হয়ে'ছিল কিনা জানি না তবে সে দিন আমি বুঝে গিয়েছিলাম।তোকে ছাড়া আমি বাঁ'চতে পারবো না।তার পর থেকে তোর প্রতি আমার পা'গ'লা'মো আরো বে'ড়ে গেছে।এভাবেই দিন কা'ট'ছিলো।তুই বড়ো হচ্ছিলি আর আমার ভ'য় বা'ড়'ছিল।যদি তুই অন্য কারো সাথে জ'ড়ি'য়ে যাস।আমি কিছুতেই তোকে হা'রাতে পারবো না।তুই যে আমার সব কিছু।
ভ'য় থেকে ঘ'ট'লো সেই অ'প্র'ত্যা'শিত ঘ'ট'না।যে ঘ'ট'না আমাকে উ'ল'টে পা'ল'টে দিয়েছিল।তোকে প্র'চ'ন্ড ভালোবাসা আমি রেগে প্র'চ'ন্ড উ'ত্তে'জি'ত যাই।হি'তা'হি'ত জ্ঞা'ন ভু'লে যাই।কিন্তু সেটা আমার বড় ভু'ল ছিলো।এর পর যে কি য'ন্ত্র'ণা দা'য়'ক সময় পার করেছি উপরওয়ালা ছাড়া কেউ জানে না।কতো চে'ষ্টা করেছি তোর কাছে ক্ষ'মা চাইতে কিন্তু পারিনি।তুই আমাকে ঘৃ'ণা করতে শুরু করে দিয়েছিস এটা যে আমার জন্য কতোটা ক'ষ্টের ছিলো বুঝাতে পারবো না।আমি ভু'ল ছিলাম।তোর কথা গুলো আমার শোনা উচিত ছিলো।আমি তোকে বুঝতে চেষ্টা করিনি।এতো ঠু'ন'কো ভালোবাসা ছিলো আমার,কেমন ভালোবেসেছি এটা ভেবে অনু'শো'চ'না'য় নিজেই নিজেকে ধি'ক্কা'র দিতাম।কিভাবে আমি আমার ক'লি'জা'টাকে এতো ক'ষ্ট দিলাম।সেই দ'হ'নে জ্ব'লে জ্ব'লে এই ক'টা বছর শে'ষ হয়ে গেছি।কিন্তু আর পারছি না।তুই আমার এতো কাছে তবুও যেন শত ক্রো'শ দূরে।বারবার কাছে আসতে গিয়েও মনের দুয়ারে বা'ধা পড়ছে।তুই আরো দূরে সরে যাচ্ছিস।এবার কি এই মা'ন অ'ভি'মা'নের পা'লা শেষ করা যায় না।একবার কি আমাকে ক্ষ*মা করে একটা সু'যো'গ দেয়া যায় না।একটা বার ভালোবাসার সু'যো'গ দে, আমি কথা দিচ্ছি কোনো দিন কোনো অ'ভি'যো'গের সু'যো'গ দিব না।দরকার হলে ,যেভাবে বলবি সেভাবেই আমি তোর কাছে ক্ষ'মা চাইবো।বললে তোর পায়েও ধ'র'বো। তবু্ও আমি আর এভাবে দূরে দূরে থাকতে পারছি না।আমি যে তোকে অনেক ভালোবাসি বউ।তোকে ছাড়া যে আমি ভালো নেই।দিন দিন তোকে পাওয়ার নে'শা আমাকে প্র'বল ভাবে গ্রা'স করছে।দয়া কর আমাকে।ক্ষ'মা করে দে।আমার ভালোবাসার ক'স'ম কোনোদিন তোকে ভু'ল বুঝবো না। প্লিজ ক্ষ'মা করে দে। প্লিজ বউ।তোকে হৃদয় উ'জা'ড় করে ভালোবাসার একটা সু'যো'গ দে।এটা পাওয়ার পর যদি একটা ফোন করিস তাহলে ভাববো যে ক্ষ'মা করেছিস।তা না হলে ভাববো আমি ক্ষ'মার অ'যো'গ্য।আমার খুব ইচ্ছে ছিলো।আমার বউকে যেদিন আপন করে নিবো সেদিন বর'ফের মতো শুভ্র শাড়ি পড়বে।লম্বা খোলা চুলে এক গোছা কাঠ-গোলাপের গাজরা গুঁজে, 
কাঠ-গোলাপের গহনা পড়ে সাজাবে।আমি সেই শুভ্র মেঘ কন্যার প'বি'ত্র মুখ খানি মুগ্ধ হয়ে দেখবো, তার সৌরভে মা'তো'য়া'রা হবো।যেদিন আমাকে ভালোবাসতে পারবি।সেদিন এ শাড়িটা পড়ে সামনে আসবি। সে দিন মলে তুই বারবার লা'ল জামাটা নিজের শরী'রে মেলে দেখছিলি। রাইসা তখন তোর হাত থেকে লা'ল জামা টা নিয়ে নিয়েছিল।সেদিন আমার মনে হয়েছিল তোকে লা'ল রঙে একদম পুতুলের মতো লাগবে আর সেই পুতুলটা একান্ত আমার,শুধু আমি দেখবো।তবে লা'ল জামায় নয় লা'ল শাড়িতে।যখন হানি'মুনে যাবো তখন পড়বি। অ'পে'ক্ষা'য় রইলাম সে শু'ভ'ক্ষ'ণে'র।

তোর ..... বাকিটা ভেবে নিস।

চিঠিটা পড়ে ভিতরটা শীত'ল অনু'ভূতিতে ছেয়ে গেছে।শেষ কথা গুলো পড়ে শরী'রের লো'ম কা'টা দিয়ে উঠেছে।

"হুম... অনেক শা'স্তি পেয়েছেন।এবার সব অবসানের পালা।"

 চিঠিটা পড়ে,তিন বছর আগের কথা মনে পড়ে যায়।


 চলবে....

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.