ধ্রবতারা
লিখেছেনঃ গল্পকন্যা (ছদ্ম নাম)
আজ ধ্রুব তুরের গায়ে হলুদ।
আটটার মধ্যে সাজানো শেষ হয়ে যাবে।
গতকাল রাতে,শাড়ি চিঠি বিছানায় রেখে মেহেন্দির পোশাক পড়া অবস্থাতেই,অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে তুর ঘুমিয়ে পড়েছিল।
রাত করে শোয়ার ফলে সকালে একটু দেরিতেই ঘুম ভা'ঙে।উঠে দ্রুত সব কাবার্ডে গুছিয়ে রাখে।পোশাক পালটে ফ্রেশ হয়।দ্রুত নিচে যেতে হবে ধ্রুব ভাইয়া কে যে এক নজর দেখতে হবে।বলতে হবে মনের কথা গুলো।
এমন সময় দরজায় ন'ব ঘুড়িয়ে তন্নি সাথে আরো কয়েক জন ঢোকে।তুরকে সাথে নিয়ে নিচে যায়।সবাই একি সাথে হাসাহাসি করতে করতে বিয়ে বাড়িতে রান্না করা খিচুড়ি খায়।এতো কিছুর ভিতরে ও একটা মুখ যে বারবার দেখতে ইচ্ছে করছে।মনের কথা গুলো বলতে ইচ্ছে করছে।
ফাহিমকে খুঁ'জে বের করতে হবে।সবাই কে তো আর বলা যাবে না।পরে দেখা যাবে ওকে পঁ'চাতে পঁ'চাতে ডা স্ট'বি'নে ফেলে দিবে।কোথাও ফাহিম কে দেখা যাচ্ছে না।
"ওনি কি এসেছেন।একটা কল করে দেখবো।নাহ....বাবা।যদি এসে থাকে তাহলে,সে ও আমাকে নিয়ে মজা করবে।কিন্তু না দেখে ও যে আর থাকা যায় না।তার চেয়ে ভালো ফাহিমকে একটা কল লাগাই।"
ফাহিমকে ফোন করে।রিং হচ্ছে কিন্তু ধ'রছে না।কয়েক বার দেয়ার পর ভাবে,হয়তো ফোনটা কোথাও ফেলে রিয়ার সাথে প্রেম করছে।
কিন্তু মনের অ'স্থি'র'তা কিছুতেই দূর করতে পারছে না।রান্না ঘরে মহিলাদের কাছে যায়।
সবাই আনন্দের সাথে হাতে হাতে দুপুরের রান্নার যো'গা'ড় করছে।
তুর বড় মাকে জিজ্ঞেস করে,"বড় মা ফাহিম কোথায়?ওকে যে দেখছি না।"
"ও তো একটু ধ্রুবর ফ্ল্যাটে গিয়েছে।বললো ধ্রুব নাকি রা'গ করে আছে।তাই আসছে না।সে জন্যে ওকে নিয়ে আসতে গেছে।"
"ওহহ!"
"ওনি কি তাহলে,আমি ফোন না করার জন্য রা'গ করে আছে।কি করবো আমি এখন।ভু'লটা তো আমার ই।কতো আশা নিয়ে হয়তো পথ চেয়ে ছিলো।ঠিকি তো ,আর কতো শা'স্তি ভো'গ করবে।ওনি তো তাহলে ভেবেই নিয়েছে আমি ওনাকে ক্ষ'মা করিনি।কিন্তু ফাহিম ফোন তুলছে না কেন?ধ্যাৎ।"তুরের আর কিছু ভালো লাগছে না।সব আনন্দ যেন ফিকে লাগছে।
___________
ধ্রুবর ফোন বন্ধ।
ফাহিম বের হয়েছে ফাহিম ও কল ধ'রছে না।
সারাদিন ধ'রে ফাহিমের ও কোনো খবর নেই।এবার বাড়িতে সবাই খুব চিন্তিত।এদিকে সারাদিন গ'ড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে।
সকলে এবার উঠে পড়ে খোঁ'জ করছে।দুইটা দিন ধরে ধ্রুবর কোনো খোঁ'জ নেই,ফাহিম বললো ধ্রুবর সাথে কথা হয়েছে।সে নাকি কোনো কারণে রা'গ করে আছে।
তাই ধ্রুবকে নিয়ে আনতে বের হচ্ছে।এখন ওর ও কোনো খোঁ'জ নেই।
হলুদের প্রোগ্রামের জন্য বাড়িতে সব গেস্ট আসতে শুরু করেছে।ধ্রুবর ফ্রেন্ডরা প্রায় সবাই এসে পড়েছে।
মনির ও জিসান ধ্রুবর ফ্ল্যাটে খোঁ'জ নিয়ে জানতে পারে।তিন দিন আগে যে ধ্রুব বের হয়েছে,আর ফিরেনি।আর একটা ছেলে ও নাকি ওদের মতো খোঁ'জ করে গেছে।
এ কথা ওরা বাড়িতে ফোন করে এ কথা জানায়।
তুরের খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু সবার সামনে কাঁদতে ও পারছে না।উঠে রুমে চলে আসে।ফোনটা নিয়ে ফেসবুক ঢুকে ধ্রুবর ছবিটা দেখে প্রায় ৩৪ঘন্টা আগে মানুষ টা কি সুন্দর হাসি খুশি ভাবে পোস্ট করেছে।
"কোথায় আপনি? আমার যে খুব ক'ষ্ট হচ্ছে।তাড়াতাড়ি আসুন না।আপনাকে ক্ষ'মা করে দিয়েছি তো।আপনাকে আর শা'স্তি দিব না।যা বলবেন তাই শুনবো।প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন।"কান্নায় ভে'ঙে পড়ে।
হঠাত নিচ থেকে কান্নার শ'ব্দ ভে'সে আসে।তুরের ভেতর মো'চ'ড় দিয়ে ওঠে।মোবাইল ফেলে দিক'বি'দিক'শুন্যে দৌ'ড়ে নিচে যায়।
কাঁদোকাঁদো হয়ে তন্নি ওকে ধ'রে।
বড় মা,মা,দাদি,ধ্রুবর নানু সবার আ'হা'জা'রি'তে পুরো বাড়ি কেমন যেন মৃ'ত্যু'পু'রী মনে হচ্ছে।
"কি হয়েছে? তোমারা কাঁদছো কেন?মা.... কি হয়েছে? বড়ো মা?"
জহির সাহেব মাথা ফেলে দিয়েছে একজনের কাধে।কবির সাহেব কপালে দু হাত দিয়ে চে'পে ধ'রে'ছেন।সমির সাহেবের চোখেও পানি।
সেলিম চৌধুরী রেহেনা বেগম কে নিয়ে মাত্র প্রবে'শ করেছেন।আর এই পরিস্থিতি দেখে পুরো দি'শে'হা'রা।
"বাবা বলো কি হয়েছে? তোমরা এমন করছো কেন?আমার কিন্তু ভালো লাগছে না।একটু পরে হলুদের অনুষ্ঠান আমি কিন্তু সাজবো না।বলে দিলাম।"
কবির সাহেব উঠে দাঁড়ান।মেয়ের মাথায় হাত বু'লিয়ে নিজের গাল বেয়ে পড়া পানি মু'ছেন।মেয়েকে জ'ড়ি'য়ে ধ'রে বলেন ,"সব আল্লাহর ইচ্ছেই হয় মা।আল্লাহ বি'প'দ দেন আবার তিনি ই উ'দ্ধা'র করেন।বি'প'দে ধৈ'র্য ধা'র'ণ করতে হয়।ভে'ঙে পড়লে চলে না।"
এটুকু বলে কবির সাহেব থেমে যায়।তুরের মনে অ'জানা শং'কা'য় মো'চ'ড় দিয়ে ওঠে।চুপ করে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে মূল কথা শোনার জন্য।খুব বুজতে পারছে ওর বাবা ওর সা'হ'স যু'গিয়ে চলেছেন মা'রা'ত্ম'ক কোনো কথা শোনানোর জন্য।
"মারে...ধ্রুবর প্লেন ল্যা'ন্ড করার সময় রান'ও'য়ে'তে ক্রা'শ হয়ে যায়।ধ্রুব হাস'পা'তা'লে আই'সিই'উতে আছে।"
তুরের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি স'রে গেছে।পৃথি'বীতে মনে হচ্ছে আলো ক'মে আসছে।অ'ক্সি'জেন ক'মে যাচ্ছে মনে হচ্ছে ।নি'শ্বা'স নিতে পারছে না।আমি কি মা'রা যাচ্ছি? এমন লাগছে কেন?আল্লাহ আমি এখনি ম'র'তে চাই না।
আমার যে ধ্রুব ভাইয়াকে বলতে হবে,ভাইয়া.. আমি আপনাকে ক্ষ'মা করে দিয়েছি।আমি ও যে আপনাকে অনেক ভালোবাসি। সেই ছোট বেলা থেকে।আপনাকে ছাড়া যে আমার দুনি'য়ায় বেঁ'চে থাকা হবে না।আমি যে ধ্রব'হী'ন অ'চ'ল।আপনাকে ছাড়া আমি,কোন আকাশের তারা হবো।আমি ও যে আপনার হৃ'দ'য়ের আকাশের একমাত্র ধ্রবতারা হওয়ার অপে'ক্ষা'য় আছি।এবার কি আপনি আমার উপর রা'গ করে,আমাকে শা'স্তি দিচ্ছেন।আমাকে আর ক'ষ্ট দিবেন না প্লিজ। আমার ভু'ল হয়েছে এত দিন আপনাকে শা'স্তি দেয়া।প্লিজ ফিরে আসেন।আজ যে আপনার আমার হলুদ ছোঁ'য়া।দেখবেন না আমাকে মু'গ্ধ হয়ে?
কেন এমন হলো?আমার জীবনে ক'ষ্ট পাওয়া কি আরো বাকি রয়ে গেছে? যেটা আপনি পূ'র'ণ করতে চাইছেন।
চারিদিক থেকে শো'র'গো'ল ভে'সে আসছে কিন্তু তুর আর কিছুই দেখতে বা শু'ন'তে পারেনি।
চলবে.....