আমাজনের গহীনেপর্ব-০৯লেখকঃ রকিব হাসান
কিশোর, মুসা, রবিন ট্রী হাউসে উঠে পড়ল।
জেরি বসা এক গাদা বইয়ের উপর।
রবিন জেরির খুদে মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। ধন্যবাদ, মৃদু কণ্ঠে বলল।
রেইন ফরেস্ট সম্পর্কে নোট নিতে হবে আমার, বলল কিশোর। পেনসিলভেনিয়ার বইটা বের করো, রবিনের উদ্দেশে বলল।
রবিন পেনসিলভেনিয়ার বইটা খুঁজতে শুরু করল-ওদেরকে সব সময় যেটা বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
কিশোর নোটবইটা বের করে নিল।
ও অনেক তথ্য টুকতে চেয়েছিল। কিন্তু লিখতে পেরেছে শুধু :
আমাজান রেইন ফরেস্ট হচ্ছে…
এখানে নেই! বলল রবিন।
কী বলছ? মুখ তুলে চাইল কিশোর। ট্রী হাউসের চারপাশে দৃষ্টি বুলাল।
রবিন ঠিকই বলেছে। পেনসিলভেনিয়ার বইটা নেই।
এখানে আসার আগে কী ছিল? মুসা জিজ্ঞেস করল।
মনে নেই, বলল রবিন।
খাইছে, আমরা এখন আর ফ্রগ ক্রীকে ফিরতে পারব না, বলে উঠল মুসা।
এর মানে রক্তচোষা বাদুড়েরা আমাদেরকে ধরবে, বলল রবিন।
কিছু একটা উড়ে এল ট্রী হাউসের খোলা জানালা দিয়ে।
আহ! মাথা লুকাল ওরা।
ধুপ।
মেঝেতে পড়ল কিছু একটা। আম।
মুখ তুলে চাইল কিশোর। জানালায় বসে সেই বানরটা। মাথা এক পাশে কাত করে রেখেছে। দেখে মনে হলো ওদের দিকে চেয়ে হাসছে।
তুই বেঁচে আছিস! বলে উঠল রবিন।
আমাদের জীবন বাঁচানোর জন্যে ধন্যবাদ, বলল কিশোর।
বানরটা শুধু দাঁত বের করে হাসল।
একটা প্রশ্ন, বলল রবিন। আমটার দিকে ইশারা করল। তুই খালি আমাদের দিকে আম ছুঁড়ে মারিস কেন?
আমটা তুলে নিল বানরটা।
না! ছুঁড়িস না! বলল কিশোর, মাথা নোয়াল।
কিন্তু বানরটা আমটা ছুঁড়ল না।
বাড়িয়ে দিল রবিনের দিকে। ঠোট নেড়ে কী সব বলার চেষ্টা করল।
রবিন বানরটার চোখে চোখে চাইল। আবারও ঠোট নাড়ল জানোয়ারটা।
হুঁ, এবার বুঝতে পেরেছি, বলল রবিন।
কী বুঝতে পেরেছ? প্রশ্ন করল মুসা।
আমটা বানরটার হাত থেকে নিল রবিন।
এটাই আমাদের দরকার ছিল, বলল। মরগ্যানের জাদুর মায়া কাটানোর জন্যে যে সব জিনিস দরকার এটা তার একটা।
খাইছে, তুমি শিয়োর? বলে উঠল মুসা।
রবিন জবাব দেওয়ার আগেই কিশোর পেনসিলভেনিয়ার বইটা দেখতে পেল।
দেখো! দেখো! আমাদের বই! তর্জনী তাক করে বলল।
আমরা জিনিসটা পেয়েছি। এখন বইটাও দেখতে পাচ্ছি। এভাবেই ওটা কাজ করে, মনে নেই? বলল রবিন।
মাথা কঁকাল কিশোর। যেটা খুঁজছে সেটা না পাওয়া পর্যন্ত পেনসিলভেনিয়ার বইটা অদৃশ্য থাকবে, এমন কথাই বলা হয়েছিল ওদেরকে।
বানরটা এসময় তীক্ষ্ণ স্বরে হেসে উঠল।
তিন বন্ধু ওর দিকে চাইল। হাততালি দিচ্ছে জানোয়ারটা।
রবিন ওর সঙ্গে গলা মিলিয়ে হেসে উঠল।
তুই জানলি কীভাবে আমটা আমাদের দিতে হবে? বলল। কে বলেছে তোকে?
ওদের উদ্দেশে স্রেফ হাত দোলাল বানরটা। এবার ঘুরে দাঁড়িয়ে দোল খেয়ে বেরিয়ে গেল ট্রী হাউসের জানালা দিয়ে।
দাঁড়া! ডাকল কিশোর, জানালা দিয়ে বাইরে চাইল।
অনেক দেরি হয়ে গেছে।
বানরটা উধাও, হারিয়ে গেছে বৃক্ষশীর্ষের নীচে।
বিদায়! গলা ছেড়ে বলল রবিন।
নীচের রহস্যময় জগৎ থেকে উৎফুল্ল এক ডাক ভেসে এল।
দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। নোটবইটা তুলে নিল আবারও। নিজের লেখাটার দিকে চাইল:
আমাজান রেইন ফরেস্ট হচ্ছে চলে যাওয়ার আগে কিছু লিখতে হবে। ঝটপট যোগ করল ও।
অসাধারণ এক জায়গা
নোটবইটা সরিয়ে রাখল কিশোর। পেনসিলভেনিয়ার বইটা তুলে নিল রবিন।
এবার সত্যি সত্যি যাওয়ার সময় হলো, বলল ও।
পাতা উল্টে ফ্রগ ক্রীক বনভূমির ছবিটা বের করল।
আমরা ওখানে যেতে চাই, বলে ছবিতে আঙুল রাখল।
বাতাস বইতে শুরু করল।
কাঁপতে লাগল গাছের পাতা।
ট্রী হাউসটা ঘুরছে।
বন-বন করে ঘুরতে লাগল।
এবার সব কিছু নিথর। একদম স্থির।
চলবে....