আমাজনের গহীনেপর্ব-০৮লেখকঃ রকিব হাসান
দাঁড়াও–হাঁফাতে হাঁফাতে বলল কিশোর। মনে হয় বেঁচে গেছি।
থেমে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফিরে পেল তিন গোয়েন্দা। আমরা কোথায়? কিশোরের জিজ্ঞাসা।
বানরটা কই? বলে জঙ্গলের দিকে চাইল রবিন। জাগুয়ারটা কি ওকে ধরতে পেরেছে মনে কর?
না, বানররা খুব ফাস্ট হয়, বলল মুসা।
জাগুয়ারও খুব ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন, ভাবল ও। কিন্তু এ কথা
রবিনকে বলতে চায় না।
খোদা, ও যেন ভাল থাকে, বলল রবিন।
কিঁচ। রবিনের পকেটের ভিতর থেকে উঁকি দিল জেরি।
জেরি! তোর কথা তো ভুলেই গেছিলাম! বলে উঠল নথি। তুই ঠিক আছিস তো?
বড় বড় চোখ মেলে একদৃষ্টে রবিনের দিকে চেয়ে রইল ইঁদুরটা।
মনে হয় ভয় পেয়েছে, বলল মুসা। বেচারী।
বেচারী বানরটার যে কী হলো খোদাই জানে, বলল রবিন। জঙ্গলের চারধারে দৃষ্টি বুলিয়ে নিল।
বইটা দেখা যাক, বলল কিশোর।
বইটা টেনে বের করল ও। পাতা উল্টাল। সাহায্য খুঁজছে।
ভয়ঙ্কর এক প্রাণীর ছবি।
ভ্যাম্পায়ার বাদুড়-রক্তচোষা, বলল ও।
খাইছে! ছবির নীচের লেখাটা পড়ল কিশোর:
আমাজান রেইন ফরেস্টে ভ্যাম্পায়ার
বাদুড় বাস করে। রাতের বেলা নিঃশব্দে
শিকারকে কামড় দিয়ে রক্ত পান করে।
রাতের বেলা বেরোয়, বলল কিশোর।
তিন বন্ধু চারধারে দৃষ্টি বুলাল। বনভূমিতে আঁধার ঘনাচ্ছে।
আমাদের বাড়ি ফেরা উচিত, বলল রবিন।
কিশোর মাথা ঝাঁকিয়ে সায় জানাল।
কিন্তু আমাদের মিশনের কী হবে? প্রশ্ন করল মুসা। আর মরগ্যানের?
আমরা ফিরে আসব, বলল কিশোর। তৈরি হয়ে।
কাল এলে হয় না? রবিনের প্রশ্ন।
হয়। এখন বলো ট্রী হাউসটা কোন্ দিকে? বলল কিশোর।
এদিকে, বলে আঙুল তাক করল রবিন।
ওদিকে, উল্টো দিক দেখাল কিশোর।
পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করল দুজনে।
আমরা হারিয়ে গেছি, বলল একসঙ্গে।
আমিও চিনতে পারছি না, বলল মুসা।
কিঁচ।
ভয় পাস না, জেরি, ইঁদুরটার গায়ে আলতো চাপড় মারতে শুরু করল রবিন। কিন্তু পরক্ষণে থেমে গেল।
কিঁচ। কিঁচ। কিঁচ।
ও মনে হয় আমাদেরকে হেল্প করতে চায়, বলল রবিন।
কীভাবে? কিশোরের প্রশ্ন।
আগে যেভাবে করেছে। পাতাবহুল বনতলে ইঁদুরটাকে ছেড়ে দিল রবিন।
আমাদেরকে ট্রী হাউসে নিয়ে যা, জেরি।
ইঁদুরটা রওনা হলো।
কোথায় যাবে ও? বলল রবিন। আমি তো ওকে দেখতে পাচ্ছি না!
ওই যে! বলল মুসা। মাটিতে পাতার খসখস শব্দ। সেদিকে তর্জনী নির্দেশ করল।
সাদা কিছু একটা পিলপিল করে ছুটে যাচ্ছে পাতার উপর দিয়ে।
হ্যাঁ, ওই যে! বলল রবিন।
চলন্ত পাতা অনুসরণ করল তিন বন্ধু। সাদা দেহটা একবার উদয় হচ্ছে, পরমুহূর্তে উধাও।
সহসা থমকে দাঁড়াল কিশোর।
বনতল স্থির। জেরির চিহ্ন নেই।
কোথায় ও? প্রশ্ন করল কিশোর।
মাটির দিকে দৃষ্টিনিবদ্ধ ওর।
কিশোর! মুসা!
ঘাড় ঘুরিয়ে চাইল কিশোর। উল্টো পাশে এক গাছের কাছে দাঁড়িয়ে রবিন। উপর দিকে আঙুল তাক করেছে।
মুখ তুলে চাইল কিশোর আর মুসা।
ট্রী হাউস।
খাইছে! অস্ফুটে বলে উঠল মুসা।
ও আবার আমাদেরকে বাঁচিয়েছে, বলল রবিন। কীভাবে মই বেয়ে উঠছে! দেখো, দেখো!
দড়ির মইটার দিকে আঙুল তাক করল রবিন।
দড়ি বেয়ে তরতর করে উঠে যাচ্ছে জেরি।
চলো, বলল কিশোর।
রবিন উঠতে শুরু করল। ওকে অনুসরণ করল মুসা আর কিশোর।
জেরিকে অনুসরণ করে রেইন ফরেস্টের চাঁদোয়ায় উঠে এল ওরা।
চলবে....