আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

জলফড়িং (পর্ব-০৬) - রিধিমা জান্নাত রূপা

কি সম্পর্ক ছিলো ওদের সাথে আমার? জাস্ট একটু কথায় বলতাম ওদের সাথে, তাতেই কম অপদস্ত করে নি ইফাজ আমাকে। মোবাইল চাইতো, একেওকে আমার পিছনে লাগিয়ে দিতো।
Estimated read time: 6 min
জলফড়িং (পর্ব-০৬) - রিধিমা জান্নাত রূপা

জলফড়িং
লেখনীতেঃ রিধিমা জান্নাত রূপা


পর্বঃ ০৬
বিয়ের আগের দিন বাকি বান্ধবী গুলোর সাথে খুশি মনেই দিশার বাসায় গিয়েছিলো দিয়া, তবুও যেন মনের ভাবনায় ইফাজ ছিলো। দিশাকে গিয়ে পায় না তারা। দু'টো দিনে সবকিছু ম্যানেজ করতে বেগ পেতে হয়, কেনাকাটা শেষ হয় না বলে হলুদ রাতেও ব্যস্ত থাকে দিশা। দিয়া সহ বাকি বান্ধবীরা অপেক্ষা করে তার জন্য, বেশ রাত করেই বাসায় ফিরে। বান্ধবীদের অনেক দিন পর দেখে উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে দিশা, ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবার সাথে। রাতে সবাই মিলে গল্প আড্ডায় মেতে উঠে, প্রথম কোন বান্ধবীর বিয়ে হচ্ছে বলে আনন্দের সীমা থাকে না সবার মাঝে। এর মাঝেই দিয়া দিশাকে জিজ্ঞেস করে ইফাজের কথা, তার বিয়ের কথা জানতে পারলে ঠিক কিভাবে নিবে তা জিজ্ঞেস করে। তাতে কিছুটা চিন্তিত ভাব দেখা যায় দিশাকে। বলে উঠে,

“ভালোই ভালোই বিয়েটা হয়ে যাক দিয়া। ইফাজ একটা সাইকো, জানতে পারলে খুব ঝামেলা করবে।”

“ইফাজ ভাইয়া তো তোকে ভীষণ ভালোবাসে, তবে ওনাকে বিয়ে করতে সমস্যা কোথায় ছিলো?”

“ওর ওই বাড়াবাড়ি রকমের ভালোবাসা আমার প্রয়োজন নেই দিয়া। যেখানে স্বাধীনতা নেই সেখানে ওর ভালোবাসা দিয়ে কি করবো? এটা করো না, ওটা করো না, ওর সাথে কথা বলো না, এগুলো জাস্ট নিতে পারছিলাম না আমি। স্বাধীনতা চাই আমার। আর ও তো কারোর সাথে কথা না বললেও সন্দেহের তালিকায় আনতো আমাকে।”

“রিশাত ভাইয়ার সাথে, সিহাব ভাইয়ার সাথে কথা বলতি, সেগুলো কি মিথ্যা ছিলো? ওদের সাথে যে একটা আলাদা সম্পর্ক ছিলো তোর, সেটাও কি মিথ্যা?”

সহসায় জবাব দিতে পারলো না দিশা। একটু থেমে বলো উঠলো,

“কি সম্পর্ক ছিলো ওদের সাথে আমার? জাস্ট একটু কথায় বলতাম ওদের সাথে, তাতেই কম অপদস্ত করে নি ইফাজ আমাকে। মোবাইল চাইতো, একেওকে আমার পিছনে লাগিয়ে দিতো, নজরবন্দী রাখতো সবসময়।”

“আচ্ছা, এসব বাদ। আর আদিব? আদিব ভাইয়ার সাথে কিভাবে পরিচয় হলো তোর?”

আদিবের কথাতেই এক লাজুকলতা নেমে এলো দিশার চোখে মুখে। সামান্য হেঁসে বলতে লাগলো,

“বলেছিলাম না ভাইয়ার বন্ধু। মাস খানিক আগে বাসায় এসেছিলো ভাইয়ার সাথে, তখনই সামান্য পরিচয়। কিছুদিন পর ভাইয়ার আইডি থেকে ওর ফেসবুক আইডিও পেয়ে যাই। তারপরই কথা হতো। কিভাবে যেন ওকে ভালো লেগে যায়। জানিসই তো ভাইয়া আমার বিয়ের কথা বলছিলো। তখন আদিবের কথাটাই বললাম, ওর সাথে কথা বলার ছাব্বিশ দিনেই ভালো লেগে যায়। বাসার কেউ আর না করে নি।”

“মাত্র ছাব্বিশ দিনে প্রেমে পড়ে গেলি, আর তার পূর্ণতা দিতে বিয়ে করছিস?”

সুপ্ত নিশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলো দিয়া। সবটা শোনার পর যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। মাত্র ছাব্বিশ দিনেও কি প্রণয়ের সম্পর্ক হয়? হয়তো হয়। আর দিশার ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব।

মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ! বললো দিশা। তাতে দিয়া কিছুটা চাপা রাগ নিয়ে বললো, “ইফাজ ভাইয়ার চার বছরের ভালোবাসায় তোর ছাব্বিশ দিনের সম্পর্ক হেরে গেল দিশা?”

“উফ্! বললাম তো তোকে, ওর সাথে আমার যায় না। ওর সাথে চারটা বছর ঠিক কিভাবে প্রণয়ে থেকেছি তা ভেবেই আমার এখন আফসোস হচ্ছে।”

বলেই সবাইকে নানান সর্তকবাণী করে উঠলো। ইফাজ যেন কিছুতেই তার বিয়ের ব্যাপারটা জানতে না পারে, কেউ যেন অনলাইনে কোন ছবি না ছাড়ে। শুধু কালকের দিনটা। এভাবেই আরও নানান সর্তকতা। সব মিলিয়ে সেই রাত কেটে গেল। পরদিন বাসার মধ্যেই বেশ আনন্দ আয়োজনে দিশার বিয়েটাও সম্পন্ন হলো। সবাইকে বিদায় জানিয়ে আদিবের হাত ধরে শ্বশুর বাড়িতেও পারি জমালো দিশা। কিন্তু এর কিছুই জানতে পারলো না ইফাজ। চার বছরের প্রেমিকা খুব সুক্ষভাবে ধোঁকা দিলো ইফাজকে টেরও পেল না।

দিয়া যখন সবটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো ঠিক তখনই যেন দিয়া সহ তাদের বান্ধবীদের উপর ছোটখাটো ঝড় নেমে এলো। কিভাবে যেন দিশার বিয়ের ব্যাপারটা জেনে গেল ইফাজ। সরাসরি অনলাইনে কল দিলো দিয়াকে। দিশার বাসার কাছাকাছি এক বান্ধবীর বাসায় ছিলো সবাই। ইফাজের কলে সবাই খানিকটা চমকেই উঠলো, তৎক্ষনাৎ বুঝতে পারলো ইতিমধ্যে সবটা জানতে পেরেছে ইফাজ। নিজেদের মধ্যেই খানিকক্ষণ আলোচনা চললো, তবে কলটা ইগনোর করারও উপায় থাকলো না দিয়ার। কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে কলটা রিসিভ করে ফেললো দিয়া। সময় ব্যায় করলো না ইফাজ। সহসায় ভারী কণ্ঠে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

“দিশার বিয়ে হয়েছে?”

জবাব দিতে পারলো না দিয়া, চুপ করে রইলো। আবারও একইভাবে একই কথা জিজ্ঞেস করলো ইফাজ। ধীর গলায় দিয়া বলে উঠলো,

“আপনি কিভাবে জানলেন?”

“যেভাবে জানার জেনেছি, সত্যিটা বলো দিয়া।”

“আসলে ভাইয়া দিশা....”

“ওর বিয়ে হয়েছে কিইইই না?”

“হুউউ!”

ধমকে উঠতেই বলে ফেললো দিয়া। জোরে জোরে বলার কয়েক নিশ্বাস ছাড়লো ইফাজ। নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রাখার চেষ্টা করলো। এর মাঝেই পাশের বাকিদের ফিসফিসানির আওয়াজ কানে গেল ইফাজের। বলে উঠলো,

“ওও আচ্ছা তোমরা দিশার সাথেই আছো। সবটায় জানতে, শুধু আমার থেকে লুকিয়ে গেছো?"

জবাব দিতে পারলো না দিয়া। পাশে থেকে বাকিরাও এবার দিশার হয়ে সাফাই দিতে লাগলো। সেসব কথা কানে নিলো না ইফাজ। বলে উঠলো,

“দিশা কে ফোনটা দাও, নয়লে তাকে ফোন অন করতে বলো।”

“দিশা নেই।”

“আর নাটক করতে হবে না দিয়া, আমি জানি ও তোমাদের সাথেই আছে। ফোন দাও ওকে, জানতে চাই কেন এমনটা করলো?”

বেশ ধমকেই উঠলো ইফাজ। আর চুপ থাকতে পারলো না দিয়া। ইফাজকে বলে দিলো দিশা নেই এখানে, শ্বশুর বাড়ি গিয়েছে। তাতে আরও ক্ষিপ্ত হলো ইফাজ। রাগারাগি করে জানতে চাইলো দিশার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা। জানে না দিয়া, সত্যিটাই বললো। কিন্তু বিশ্বাস করলো না ইফাজ, নানান কথা বলতে লাগলো দিয়াকে। সবটা জানার পরও তাকে কেন বললো না, তা বলে অভিযোগ তুললো। চুপচাপ শুনেই গেল দিয়া। ইফাজ রাগী সুরে, “তোমাকে অন্তত ভালো ভেবেছিলাম দিয়া, কিন্তু তুমিও আমাকে ঠকালে। সবটা জানার পরও লুকিয়ে গেলে। আচ্ছাআআ! দিশার শ্বশুর বাড়ির ঠিকানা বলবে না তো? ঠিক আছে, আমিই খুঁজে বের করছি। তারপর তোমার বান্ধবীর সাথে আমার বোঝাপড়া হবে।”

বলেই কল কে'টে দিলো ইফাজ। এদিকে হতভম্বের ন্যায় বসে রইলো দিয়া ও দিয়ার বাকি বান্ধবীরা। রাত হতেই বেড়ে গেল ইফাজের পাগলামি। দিয়ার শ্বশুর বাড়ির খোঁজ নিয়ে পৌঁছে গেল সেখানে। গভীর রাতেই একের পর এক দিশার শ্বশুর বাড়ির ছবি তুলে সেন্ট করতে থাকলো দিয়ার মোবাইলে, সাথে নানাম ভাবে হুমকি দিতে লাগলো। ইফাজের জন্য মায়া লাগলেও দিশার কথা ভেবে ভয়ে সংশয়ে বুক কাঁপতে লাগলো দিয়ার। কোন রকমে সেই রাতটা কেটে গেল, দিয়ার মনে ভয় থাকলেও দু'টো দিন যেতেই ধীরে ধীরে তা শান্ত হয়ে গেল।

ইফাজকে নিয়ে দিয়ার ভীতি কেটে উঠতেই হঠাৎই তার পিছু নিতে থাকে ইফাজ। নানান ভাবে দিশাকে নিয়ে থ্রেট দিতে লাগলো, বারংবার দিয়ার কাছে জানতে চাইলো সবটা জেনেও কেন এমনটা করলো সে? দিয়ার কথা কোনক্রমেই বিশ্বাস করলো না। দিয়া বোঝায় ইফাজকে, বোঝে ইফাজ। একসময় ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে যায়, দেখাও পাওয়া যায় তার। পরিশেষে যেন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে দিয়া। ভাবে তার কথা হয়তো বুঝেছে ইফাজ।

মাস খানিক পর যখন হঠাৎই দিয়াকে রেস্টুরেন্টে দেখে ইফাজ, তখনই যেন পুরানো ব্যাথা জাগ্রত হয়। সবার সামনে অপমান করে দিয়াকে। দিয়া কিছু বলতেই প্রায় টেনে নিয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে, হাতের মোবাইলটাও নিয়ে সুইচঅফ করে দেয়। সেদিনও ইফাজ কে বোঝায় দিয়া, ভদ্র ছেলের মতো খানিকক্ষণ কিছু ভাবে ইফাজ। চুপ করে থাকে, শান্ত হয়ে শুনে দিয়ার বলা কথাগুলো। তারপরই মুচকি হাসে, দিয়াকে বলে —খুব তাড়াতাড়িই তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে দিয়া।

“দিয়া, এ্যাই দিয়া! আর কত ঘুমাবি? শপিংয়ে যেতে হবে তো, উঠ!”

কারোর ডাকে ঘুম ভেঙে গেল দিয়ার। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকালো, দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো তার ভাবী মিথিলাকে। ঘুম ঘুম চোখই বলে উঠলো,

“উফ্! ভাবী ডাকছো কেন? মাত্র ঘুমিয়েছি তো। এমনিতেই রাতে ঘুম হয় নি।”

“সারারাত ইফাজ ভাইয়ার কথা ভাবলে কি ঘুম হবেএএ? আর তো ক'টা দিন, তারপর তো একেবারেই যাবি তার কাছে। এই কয়েকদিনে তো একটু ঘুমিয়ে শরীর স্বাস্থ্য ঠিক কর দিয়া। তার কাছে গেলে তো এই ঘুমানোর সুযোগটাও পাবি না।”

বলেই মুচকি হাসলো মিথিলা। এদিকে ইফাজকে নিয়ে ভাবীর লাগামহীন কথায় ঘুমটা পুরোপুরি ছুটে গেল দিয়ার। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো বিছানায়। তবে ভাবির কথা তো আর মিথ্যা নয়। ইফাজকে নিয়েই তো ভেবেছে সারারাত, ভাইয়ের বলা কথাগুলো কিভাবে নিবে তা ভেবেই খানিকটা অস্থির হয়েছে।

“এবার উঠে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে।আছরের আজান দিবে এখন, শপিংয়ে যেতে হবে তো। কিছু কেনাকাটা বাকি আছে।”

“ভাইয়া কোথায় ভাবি?”

“কিছু কাজ আছে বলে বেড়িয়েছে দুপুরের পর, ঠিক বলেও তো গেল না।”

আর কিছু বললো না দিয়া, বুঝে গেল দিহান হয়তো ইফাজের সাথেই কথা বলতে গেছে। খানিকটা চিন্তামুক্ত হলো দিয়া, বাকিটা এখন দিহান বুঝে নিবে সেটা ভেবেই যেন খুশি হলো।

“তুই ইফাজকে বিয়েটা করে নে বুড়ি। আমি জানি ওর কাছে সুখে থাকবি তুই, অনেক ভালো রাখবে ইফাজ তোকে।”

খানিকটা চমকে উঠলো দিয়া। আশ্চর্যের ন্যায় তাকিয়ে রইলো দিহানের দিকে। ভাইয়ের কথাগুলো বুঝতেই যেন মিনিট খানিক সময় লাগলো। আশ্চর্যের সুর তুলে প্রশ্ন করলো,

“কি বলছিস তুই ভাইয়া? সবটা জানার পরও ইফাজকে বিয়ে করতে বলছিস আমাকে?”

“সবটা জানি বলেই তোকে বিয়েটা করতে বলছি। ছেলেটার তোকে বড্ড প্রয়োজন বুড়ি।”



চলবে.....

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.