আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৪ -নন্দিনী নীলা

কৃষ্ণবেণী - পর্ব ০৪ -নন্দিনী নীলা,উপন্যাস,কৃষ্ণবেণী,নন্দিনী নীলা,ধারাবাহিক,
Estimated read time: 5 min

 


কৃষ্ণবেণী

পর্ব ৪

নন্দিনী_নীলা


জায়ান তৃষ্ণা কে টেনে তৃষ্ণার রুমে নিয়ে এলো। 

তৃষ্ণা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল,"ওই রুমে কেউ দরজা ধাক্কা দিচ্ছিল। ওই রুমে কে থাকে?"

"আছে একজন তুমি ওই রুমের আশেপাশে যেও না। উনি কিন্তু পাগল তোমাকে দেখলে খামচে দিতে পারে।"

পাগল শুনে তৃষ্ণা ভয় পেয়ে গেল। পাগলে ও খুব ভয় পায়। ওদের এলাকায় এক পাগল আছে নাম সুফি পাগল। সারাদিন রাস্তাঘাটে ঘুরাফেরা করে, একাই  কথা বলে, মাথার উস্কো খুস্কো চুল টানে, মাঝে মাঝে বসে চিৎকার করে আর এলাকার মানুষকে দেখলেই কিছু না কিছু ছুঁড়ে মারে।

তৃষ্ণা ঢোক গিলে বলল,," আপনাদের বাড়িতে পাগল ও আছে। পাগল বাড়ি রাখছেন কেন? আমি পাগল খুব ভয় পাই।"

জায়ান শক্ত গলায় বললেন," তো তোমার জন্য কি এখন বাসার মানুষকে বের করে দেব?"

" না তা বলিনি। পাগল টা আপনার কি হয়?"

" এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য ন‌ই। যাও ঘুমাও একদম যেখানে সেখানে যাবে না।"

বলেই জায়ান গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। 

বললেন না কেন? 

তার মানে এর মধ্যে ঘাপলা আছে। তৃষ্ণার মনে কৌতুহল জাগল। জানার কৌতুহল কিন্তু ভাবলেই কি আর জানা যায়? 


সকালের নাস্তা আমি রুমে করলাম না। বাইরে চলে এলাম। লিয়া চিৎকার করতে করতে আমার পেছনে ছুটে বাইরে চলে এসেছে‌। ততক্ষণে তৃষ্ণা নিজের গন্তব্য এসে পরেছে।

এসেই বলে উঠল," আমি একা রুমে খাব না। আমি এই বাসার ব‌উ আমি সবার সাথে বসে খাব।"

বলতে বলতে তৃষ্ণা লিয়ার হাত থেকে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেল। টেবিলের সামনে আসতেই ওর হাত থেকে খাবার সহ প্লেট নিচে পরে গেল।

তৃষ্ণা হতবিহ্বল চোখে সামনে তাকিয়ে আছে। 

জায়ান একটা মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর তার থেকেও চমকানো বিষয় হলো জায়ান মেয়েটাকে ব‌উ ব‌উ বলে ডাকছে। তৃষ্ণা চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে আছে। ওর স্বামী অন্য মেয়েকে খাইয়ে দিচ্ছে আবার তাকে ব‌উ বলছে।

আমাকে দেখে তারাও চমকে উঠেছে। আমি বিস্মিত নয়নে চেয়ে আছি। জায়ান ও তার পাশে বসা মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে ছিল আছে।


তৃষ্ণা ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকায়। জায়ানের দিকে তাকিয়ে বলল," আপনার আরেকটা ব‌উ‌ আছে। এজন্য আমাকে রুমে থেকে বের হতে দেন না। আলাদা রুমে রেখেছেন। হায় আল্লাহ! এ আমার কি হলো? আব্বা তুমি এ কোন লোকের সাথে বিয়ে দিলে আমায়।"

হাত পা ছড়িয়ে বসে কাঁদতে লাগল তৃষ্ণা। সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। এখানে তৃষ্ণা কে কেউ আশা করেনি। লিয়া জোর করে টেনে তৃষ্ণা কে  রুমে নিয়ে আসে।

সকালের নাস্তা ওকে কেউ খাওয়াতে পারল না। সেই জমজ দুই ছেলে মেয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে উঁকি দিচ্ছে ‌। তৃষ্ণা এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে লিয়া'কে।

তখনি রুমে প্রবেশ করে জায়ান। ওকে দেখে লিয়া বেরিয়ে যায় রুম থেকে। জায়ানকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল তৃষ্ণা," এইটুকু সময়ে পোশাক ও পরিবর্তন করে ফেলছেন। একটা ব‌উ থাকতে আমাকে বিয়ে কেন করেছেন? গরিব বলে যা খুশি তাই করবেন তাই না?"

বোকা, ভীতু তৃষ্ণা কে এমন রাগতে দেখে থমকালো জায়ান‌। রাগে তৃষ্ণার ঠোঁট কাঁপছে। ফর্সা গোলগাল মুখটাতে লাল আভা ফুটে উঠেছে। তৃষ্ণার খোঁপা করা লম্বা ঘন কালো চুল গুলো পিঠ ছড়িয়ে আছে। জায়ান তৃষ্ণার কথার উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গেল তৃষ্ণার দিকে।


তৃষ্ণা চেঁচিয়ে বলছে," আম্মা রে এজন্য বলছিলাম না জেনে ওই দূর শহরে আমারে বিয়ে দিও না। শুনল না আমার কথা এখন আসলাম তো সতীনের ঘর করতে।"

তৃষ্ণার চিৎকার থেমে গেল আচমকা। এক জোড়া উষ্ণ হাতে স্পর্শ পেটের উপর পেতেই ও চমকে থেমে গেল। জায়ান পেছন থেকে তৃষ্ণার পেট জড়িয়ে ধরে রেখেছে। মুখ গুঁজে দিয়েছে তৃষ্ণার ঘন কালো লম্বা কেশে।  তৃষ্ণার চিৎকার থামলেও কান্না থামে নি। কিন্তু লোকটার এমন এলোমেলো স্পর্শে তৃষ্ণার বুক ধড়াস ধড়াস করছে। শরীরের প্রত্যেকটা লোম কূপে শীতল হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। 

ও দাঁত চেপে বলল," নির্ল*জ্জ লোক, এক ব‌উ থাকতে আরেকজন কে বিয়ে করতে লজ্জা করে না‌‌। আবার আসছেন এখানে লু*চ্চামি করতে। এক ব‌উকে আদর করে খাইয়ে এসে আমার সাথে লু*চ্চামি করতেছেন।"

জায়ান ভরাট গলায় বললেন,," শোন মেয়ে আমার সাথে সাবধানে কথা বলবে। নাহলে ফলাফল ভালো হবে না। আমার একটাই বউ। আর আমি এখন আমার বউয়ের সাথেই আছি।"

তৃষ্ণা জায়ান কে নিজের থেকে সরাতে জায়ানের হাতে জোরে চিমটি কাটে। জায়ান আহ্ করে তৃষ্ণা কে ছেড়ে দেয়। 


তৃষ্ণা সরে দাঁড়িয়ে বলল," মিথ্যা কথা বলেন কেন? এই মাত্র আপনাকে আর আপনার ব‌উকে দেখে আসলাম বাবাগো কি ভালোবাসা।"

জায়ান তৃষ্ণার কথা শুনে রেগে গেল খুব। তবুও শান্ত গলায় বললেন,," তোমাদের বাসায় যাব। যেতে চাইলে রেডি হ‌ও।"

" কথা এরিয়ে যাচ্ছেন কেন? আপনার আর কয়টা ব‌উ আছে?"

" বললাম তো একটা‌। আর কি বলব?"

" মিথ্যা বলবেন না একদম। আমি গ্রামের মেয়ে বলে আমাকে বোকা ভাবা বন্ধ করুন। আমি যথেষ্ঠ চালাক। রিমলি বুড়ির চুরি হ‌ওয়া কবুতর পেয়ে এনে দিয়েছিলাম। আমাদের গ্রামের সব চেয়ে চালাক মেয়ে আমি।"

জায়ান বললেন," ভুল বললে তোমাদের গ্রামের সব চেয়ে বোকা মেয়ে তুমি। চালাক হলে ফালতু প্রশ্ন করতে না।"

" আপনি আমারে অপমান করতেছেন?"

" তোমাদের গ্রামের এমনকি আমার দেখা সব চেয়ে রুপবতী নারী তুমি। এটা বললে মানা যেতো।"

" আপনি লোকটা তো খুব খারাপ। রুপ দেখে, এক ব‌উ রেখে আরেক ব‌উ নিয়ে বাড়ি আসছেন। হায় আল্লাহ এতো সুন্দর কেন বানালে আমায়। এই লোকটা আমার সৌন্দর্য দেখে আমায় দ্বিতীয় বিয়ে করল। আজ অসুন্দর হলে আমাকে কারো দ্বিতীয় ব‌উ হতে হতো না।" 

আফসোস স্বরে বলল তৃষ্ণা।

" সুন্দরী মেয়েরা যে মাথা মোটা গর্দভ হয় আবার প্রমাণ হলো। নিজের বাড়ি যেতে চাইলে রেডি হ‌ও।"

বলেই জায়ান চলে গেল।


তৃষ্ণা চোখ মুছে রেডি হয়ে নিলো। বাড়িতে যেতেই হবে। আর আসবে না তৃষ্ণা এই রহস্যজনক বাড়িতে। ভেবেছিলো নিজের সংসার সব রহস্য বের করবে। এখন আর দরকার নাই। সতীনের সংসার করা ওর দ্বারা সম্ভব না‌‌। গরিব বলে পেয়েছে কি? যেমন খুশি তেমন নাচাবে। জোভান আর উর্মি আজ দেখে নি। তাদের কাছে একটু সুখ দুঃখের কথা বলতো। 

কিন্তু হয়ে উঠল না। তৃষ্ণা বেগুনি রঙের শাড়ি পরে বসে র‌ইল।

.


যে বকুল কাজ করে না। সারাদিন ডিঙ্গির মতো ঘুরাফেরা করে। আজ সকাল থেকে সে ঘর গুছাচ্ছে, কাজ করতেছে বুবু আসবে বলে কথা।

বকুলের বাবা হাটে থেকে বড় মাছ নিয়ে আসছে। মেয়ে মেয়ের জামাই আসছে। বকুলের মা আর ভাবি মিলে রান্না করতেছে মাটির চুলায়। বকুল বুবুর ঘর গুছিয়ে উঠান ঝাড়ু দিয়ে দৌড়ে চলে গেল তেঁতুল গাছতলা। কাঁচা তেঁতুল বকুল আর তৃষ্ণার দুজনেরই পছন্দ। সব সময় যেটা নিয়ে দুই বোন ঝগড়া করে আজকে বকুল সেই তেঁতুল আনতে যাচ্ছে। 

ওরনার মধ্যে কাঁচা তেঁতুল নিয়ে বাসার দিকে আসছিল তখন দেখা হয় সুজন এর সাথে। 

সুজন বকুল কে দেখেই জিজ্ঞেস করলেন," তোর বুবুরে ক‌ই বিয়ে দিছিস?"

" শহরে। মেলা বড়লোক আমার দুলাভাই।"

" শুনলাম তোর দুলাভাই বুইড়া। মাথার চুল সাদা হাচা নাকি রে?"

বকুল বলল," কি জানি দুলাভাই রে দেইখা বুইড়া লাগে না ওতো। কিন্তু চুল গুলা কেমন হলুদ সাদা লাগছে।"

" আমি তোর দুলাভাই হতে চাইলাম। তৃষ্ণা রে দিল না তোর বাপে আমার কাছে বিয়া। আমি গরিব ব‌লিয়া। এহন বড়লোক বুইড়া লোকের কাছে বিয়া দিছে আমার তৃষ্ণা রে।"

" আমার দুলাভাইরে একদম বুইড়া ‌ক‌ইবেন না। আমার দুলাভাই অনেক সুন্দর খালি চুল গুলা কেমন জানি। আইসেন আজকে আমার বুবু আর দুলাভাই আসবো। আইসেন আমাদের বাড়িতে দেইখা যাইয়েন।"

ভেংচি কেটে চলে গেল বকুল। সুজন ছলছল চোখে দাঁড়িয়ে র‌ইল। আপন মনে বলে উঠল," আজ গরিব বলিয়া তৃষ্ণা তোরে আমার ঘরের বউ করতে পারলাম না। তুই তো আমার দিকে লজ্জা লজ্জা মুখ করে তাকাইতি দেখা হ‌ইলে। তোর মনে কি আমার জন্য একটু ভালোবাসা ছিল না?"


#চলবে.....

إرسال تعليق

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.