আমাদের সাথে সোস্যাল মিডিয়ায় যুক্ত থাকতে আমাদের ফেইসবুক পেইজে লাইক দিন Facebook Follow us!

ধ্রুবতারা-গল্প কন্যা পর্ব-১২

Estimated read time: 14 min

ধ্রবতারা 
লিখিকাঃ গল্প কন্যা 



বাড়ি ফিরে সবাই ডিনার করে তুর ছাড়া।তুর খায়নি দেখে,ধ্রুব ও না খেয়ে শুয়ে পড়ে।কিছুতেই ঘুম আসছে না।বারবার শুধু প্রেয়সীর ক্রন্দনরত মুখটার কথা মনে হচ্ছে।

তুর এসে সেই যে ঘরে গেছে আর বের হয়নি।বিছানায় শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।কেন আজকে সব কিছু চাইতে পারছি না?কেন মনের দেয়ালে ঘেরা স্বপ্ন গুলো মনের দুয়ারে ই বাধা পড়ে?কেন সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টা নিজের করে পেতে এতো দ্বিধা দ্বন্দ্ব? কেনই বা প্রিয় মানুষ টাকে অন্য কারো পাশে সহ্য হয় না?লোকটার সামনে গেলে চোখের দিকে তাকালে মনে হয় এক্ষণি ঝাপটে ধরে বলি'আপনি শুধু আমার'।পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে হলেই মনটা খুব শক্ত হয়ে যায়,ভেতরটা হুহু করে উঠে।

তুর খুব কান্না করছে।সব কিছু মনে হচ্ছে আর কান্না পাচ্ছে।

ওইদিকে ধ্রুব এক আকাশ কষ্ট নিয়ে,অসহায় হয়ে যন্ত্রণা দায়ক সময় পাড় করছে।"কেন বার বার আমাকে অসহায় করে দিচ্ছিস।একটা ভুলের জন্য আর কতো শাস্তি পেতে হবে।ভুলের বোঝা তো শুধু বাড়িয়ে যাচ্ছিস"

সাড়ে দশটায় তুরের বাবা বাড়ি ফিরে।আজকে ওনার একটা কনফারেন্স ছিল।ওনার লেখা নতুন একটা উপন্যাসের বই খুবই সারা পেয়েছে। তাই ভক্তরা সব ওনার সাক্ষাৎ পেতে মুখিয়ে আছে।আর কিছু পত্রিকার সাংবাদিক ওনাকে নিয়ে আর্টিকেল লিখার জন্য সাক্ষাৎ করতে  চায়।যার দরুন এই কনফারেন্স ছিল।আর কথা বলতে বলতে অনুরাগী দের কথা শুনতে শুনতে এই রাত হলো।

রায়লা বেগম লিভিং রুমে বসে কবির সাহেবের অপেক্ষায় ছিলো।ওনি বাড়িতে ঢুকে সোফায় বসে।রায়লা বেগম পানি এগিয়ে দেন।পানি খাওয়া হলে জিজ্ঞেস করেন "সবাই খেয়েছে? "
রায়লা জবাবে বলেন "না.... তুর খায়নি, মার্কেট থেকে ফিরে ই বলেছে মাথায় ব্যথা হচ্ছে ,তার পর কতো সাধাসাধি করলাম খায়নি। শুয়ে আছে ঘর অন্ধকার করে। আর ধ্রুবর ও নাকি ভালো লাগছে না তাই খায়নি।"
কবির: না খেয়ে শুয়েছে?আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,তুমি খাবার রেডি কর।আর ওদেরকে ডাকো বলো আমি ডাকছি।
রায়লা : ঠিক আছে।
রায়লা তুরের রুমে যেয়ে তুরকে বলে "তুর....তোর বাবা তোকে নিচে ডাকে,আয় মা"
ধ্রুবর রুমের বাইরে নক করে বলে আসে তার চাচা নিচে আসতে ডাকছে ।

মার্কেট থেকে ফিরে ড্রেস চেন্জ করেনি।তাই দ্রুত উঠে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে,ওই থ্রি পিসের ওড়না টা ই মাথায় দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে নেয়।যেন ভালো করে মুখটা বোঝা  না যায়।ঘর থেকে বের হতেই ধ্রুব সামনে পড়ে একদম চোখাচোখি।ধ্রুব বুঝতে পারে অনেক কাঁদার ফলে চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে আছে।খুব কষ্ট হচ্ছে মন চাচ্ছে এখনি টেনে বুকে জড়িয়ে নিতে।তুর আগে আর ধ্রুব পেছনে সিড়ি দিয়ে নেমে আসছে....

কবির সাহেব ডাইনিংয়ে বসে তাকিয়ে আছেন।
দুজনেই ওনার কাছে এসে দাড়ায়।নিজেদের মাঝে কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে।তুরের চেয়ে ধ্রুবর হাইট বেশি হওয়ায় তুরের মাথা ধ্রুবর কাঁধ বরাবর,দূরত্ব রেখে দাড়ালে ও দুজন কে পাশাপাশি দেখতে ভালোই লাগছে।

ধ্রুবর পরনে একটা ব্ল্যাক টাওজার আর ব্ল্যাক টিশার্ট।ফর্সা সাস্থ্যবান শরীরে কালো রঙটা একদম ফুটে আছে।ছোট বেলা থেকেই ধ্রুবকে ওনার খুব পছন্দ।ওর মতোন ছেলে এখন লাখে একটা নেই।ছেলেটা মারাত্মক সুদর্শন,মেয়েটাও দেখতে মাশাল্লাহ হয়েছে।কেন যেন দুজন কে পাশাপাশি দেখতে ভালো লাগছে।এমন একটা পারফেক্ট ছেলের হাতে আমার আদুরে মেয়ে টাকে তুলে দিতে পারলে ভালো হতো,মনে শান্তি পেতাম, কোনো চিন্তা থাকতো না।

কবির সাহেব ভাবনা থেকে বের হয়ে বলছেন "তোমরা নাকি খাও নি? কেন কি হয়েছে?"

তুর ধ্রুবর দিকে আর ধ্রুব তুরের দিকে তাকায়।

কবির :কি ব্যাপার কিছু হয়েছে? তুর তুমি কেঁদেছো?
তুর : বাবা (ধ্রুবর দিকে আড় চোখে তাকিয়ে) আমার ড্রেস পছন্দ হয়নি,তাই আনতে পারিনি..... 

কবির সাহেব মেয়ের হাতে ধরে পাশের চেয়ারে বসায় মাথায় হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে"আমার মামুণির ড্রেস পছন্দ হয়নি তো কি হয়েছে, শহরে  কি শপিং মলের অভাব পড়েছে নাকি!!! আরো মল আছে,সেখানে খুজবে।কোথাও না কোথাও পছন্দ হয়ে  যাবে।তার জন্য কাঁদতে হবে?বোকা মেয়ে।এতোটুকুর জন্য  কেঁদে ভাসিয়েছে,হা করো (এক লোকমা মুখে তুলে দেয়)ইসস...কি অবস্থা করেছে চোখ মুখের। "

 বাবার আদরের সংস্পর্শে এসে কষ্ট গুলো নাড়া দিয়ে  উঠে,তুর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে । 

কবির : আবারও কাঁদে তুমি জানো না খেতে বসে কাঁদতে নেই।(চোখের পানি মুছে দিয়ে )দ্রুত খাও আজকে খুব টায়ার্ড আমি।(ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে )কি...দেখো.....?দাঁড়িয়ে আছো কেন?তোমাকে আলাদা করে বলতে হবে?বসে খাও।কিভাবে যে পাইলট হলে কে জানে, কোনো ডিসিপ্লিন নেই.... কিছু ম্যেনটেন করো না.... কি শিখাবে জুনিয়রদের? তুমি কেন খাওনি?তোমার ও ড্রেস পছন্দ হয়নি?কালকে গিয়ে নিয়ে এসো।

ধ্রুব :জি...চাচা। 

খাওয়া শেষে,
কবির: ধ্রুব,কালকে একটু ঘুরে হলেও কিনে নিয়ে এসো, এর পর দিন আবার অনুষ্ঠান।
ধ্রুব :জি চাচা....

পরের দিন সকালে,

ধ্রুব বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামে। ইচ্ছে করে এই টাইমে বের হইছে,এই টাইমে কবির সাহেব আর জহির সাহেব ব্রেকফাস্টের পর লিভিং রুমে বসে কিছু ক্ষণ কথা বলেন।তার পর যার যার কর্মস্থলে বের হন।ধ্রুব কে নামতে দেখে কবির সাহেব ধ্রুবকে ডেকে উঠেন "ধ্রুব...."
ধ্রুব : জি...চাচা...
কবির : কোথাও যাবে?
ধ্রুব ::জি ,শপিং এ....যাবো। 
কবির: একা যাচ্ছ যে?তুর কে সাথে নিয়ে যাবে না?
ধ্রুব : রাতে ছাদে পার্টি করবো তো তাই দ্রুত এসে পড়তে হবে।কিন্তু  ওর কোনো খবর নেই।গেলে বলুন রেডি হতে....

কবির:কেন যাবে না?গতকাল কতো কান্না করেছে,ও যাবে... তুমি বসো।রাইমা..... রাইমা....তুর কে বল পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নিচে নামতে।

রাইমা আচ্ছা বলে ডাকতে যায়...... আর ডেকে  চলে আসে। 

কিছুক্ষণ পরে ই তুর রেডি হয়ে হাজির।
নিচে নেমে  সোফায় বসে থাকা ধ্রুবর দিকে চোখ যায়,মনে হচ্ছে কোথাও যাওয়ার জন্য বসে আছে।
তুর:বাবা আমি রেডি,কোথাও যাবো আমরা?আজকে ভার্সিটিতে যাবে না?
কবির : যাবো,তুমি ধ্রুবর সাথে শপিং এ যাও।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,এখন না বেরোলে সময় মত পৌছাতে পারবো না।

তুর:বাবা,ইয়্যে...মানে এখন লাগবে না।পরে আনলেও চলবে....
কবির : একদম না...! আমার মেয়ে কেঁদেছে....এটা আমি কিছুতেই মানতে পারবো না ।আজকে কিনে  বাড়ি ফিরবে।যাও...... 
তুর:...........(চুপচাপ কি করবে এখন নিজের মিথ্যার জালে নিজেই আটকে পরেছে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।)

ধ্রুব তো মনে মনে বেশ খুশি।

অতঃপর ওকে বের হতে হয়।বের হয়ে তুর গাড়িতে বসার পর  তুরের বাবা তার গাড়িতে  উঠে বসেন।

গাড়ি স্টাট দিয়ে ধ্রুব চলতে শুরু করে।
তুর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।

আধা ঘন্টা পর অন্য রাস্তা দেখে,
তুর বলছে" কোথায় যাচ্ছেন!!!ওই দিকে তো কোনো মল নেই!!এটা তো ঢাকার বাইরে যাওয়ার রাস্তা!!!!"
:বাইরের রাস্তা হলে বাইরের রাস্তা।
:মানে কি?আপনি মার্কেটে যাচ্ছেন না,তাহলে কেন নিয়ে এসেছেন?বাড়ি যাবো চলেন,সব সময় আপনার ইচ্ছেতে সব হবে না। 
:তোর সব কিছু আমার কথাতে আমার ইচ্ছে তে  ই হবে।
:সেই অধিকার আপনাকে দেইনি।
:কারো দেওয়ার অপেক্ষায় নেই আমি। 
:জোর খাটাচ্ছেন?
:তা মনে হলে তাই।
:...........(চুপ করে আছে কথায় পারবে না বুঝতে পারছে )
ধ্রুব ঢাকার বাইরে একটা নিরিবিলি পুকুরের পাশে গাড়ি দাড় করায় (কাল্পনিক )।নিজে নেমে তুরের সাইডের দরজাটা খোলে। কিন্তু ঘাড় ত্যাড়া তুর ত্যাড়ামি শুরু করে।
 ধ্রুব চুলে আঙ্গুল চালাতে চালাতে বলে" কি আর করার,কোলে চড়ার খুব শখ হয়েছে যেহেতু.... কোলে তুলে নিতে হবে"
তুর কথাটা শোনা মাত্র এক লাফে নেমে যায়।নেমে পুকুর পাড়ে গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ে।ধ্রুব ও একটু ফাঁকা রেখে ওর পাশে বসে। 
তুর পানির দিকে তাকিয়ে বলে "এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?"
ধ্রুব তুরের দিকে তাকিয়ে "ডেট করতে"।
::কি....!
::হুম... তা নয়তো কি? একটা সুন্দরী মেয়ে কে একটা সুদর্শন ছেলে এমন একটা সুনশান জায়গায় কেন নিয়ে আসে?
:ফাজলামো বাদ দিন ,বাড়ি চলুন। 
:যাবো....
ধ্রুব ওর দিকে অসহায় অপরাধী দৃষ্টিতে তাকায়।তাকিয়ে ডেকে উঠে :তুর.....

তুর এমন আদুরে মোহোনিয় ডাকে ধ্রুবর দিকে তাকায়, একদম চোখের দিকে।ধ্রুব ও তাকায় তাকিয়ে ই থাকে,মনে সাজানো কথা গুলো এই পুচকে মেয়ের তাকানোতে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।অনুশোচনা,না পাওয়ার যন্ত্রণারা ঝড় তুলে ভিতর টাকে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে।

ধ্রুবর এতো কাছে থেকে এমন আদুরে ডাকে মনটা একদম গলে গেছে,দিন দিন মনটা তাকে আবার নিজের করে ভাবতে চাইছে ,কিন্তু এটা আর কখনো সম্ভব না।ওনার মতো এমন পারফেক্ট মানুষের সাথে আমি একদম বেমানান।পুরোনো স্মৃতি গুলো মনে পড়ে যায়।মুহূর্তেই মুখ ঘুড়িয়ে নেয়।

ধ্রুব : কেন?মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিস?আর কতো শাস্তি পেলে তোর চোখে পড়বে।তিনটা বছর.... (তুরের দু গালে আলতো করে হাত রেখে ওর দিকে ফিরায়)তিনটা বছর অনুশোচনায় দগ্ধ হয়েছি...হাজার বার চেষ্টা করেছি একটা বার সুযোগ দিসনি, উল্টো জালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করেছিস,আর কতো ধৈর্যের পরীক্ষা নিবি,কতো নিজেকে কন্ট্রোল করবো।এতো দিন পর বাড়ি ফিরেছি একটু শান্তি দিবি না।একটা বার প্রাশ্চিত্য করার সুযোগ দে।প্লিজ একটা বার।না বুঝে ভুল করেছি,দয়া কর আমাকে।
হাত ছাড়িয়ে উঠে যায়"বাড়ি যাব।পুড়োনো কিছু মনে করতে চাই না।এভাবে বারবার আমার কাছে আসবেন না। আমার কাছ থেকে দূরে থাকাই আপনার জন্য ভালো।আমি ক্যারেক্টর লেস একটা মেয়ে ,আমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কিছু নেই। আপনি একজন নামি দামি মানুষ আমার মতো একটা চরিত্রহীনা মেয়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ছোটো করবেন না প্লিজ। আমার কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। সেখানে এই সবের কোনো মানে হয় না।আর একটা কথা ক্লিয়ারলি জেনে রাখেন।আমার ওপর আপনার কোনো ধরনের কোনো অধিকার নেই।দয়া করে দূরে থাকুন এতেই শান্তি বজায় থাকবে।আর কিছু শুনতে চাই না।দয়া করে বাড়ি চলুন আমার ভালো লাগছে না।"

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাড়ায়"আমার কথা শোন প্লিজ..."মোবাইল বেজে উঠায় রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে ফাহিম তাড়া দেয় আসার জন্য।পার্টির জন্য বাজার করতে হবে।বাধ্য হয়ে ধ্রুব ও গাড়িতে বসে গাড়ি স্টাট দেয়।

বাড়ি ফিরার পর ধ্রুব ফাহিমের রুমে যায় আর তুর নিজের রুমে।
ধ্রুবর সাথে পরামর্শ করে  যা যা লাগবে লিস্ট করে।

আবির ফাহিম আর রিয়া বের হয় সুপার শপের উদ্দেশ্যে।
ফহিম আর রিয়া অনেকটাই এগিয়ে গেছে।দুজনের দিক থেকে ই পজিটিভ শুধু মুখে বলার অপেক্ষায়।দুজনের মনের ভাষা কবেই চোখে চোখে আদান প্রদান করে ফেলেছে।
ধ্রুব ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমের সোফায় বসে তুহিন আর ঐশির সাথে দুষ্টুমি করছিল।রাইসা এসে পাশে দাড়ায়,দাড়িয়ে বলে "শুনুন,আপনার সাথে কিছু  কথা ছিলো একটু ছাদে আসবেন। "
ধ্রুবর ভালো মুডটা খারাপ করে দিলো।ওর দিকে না তাকিয়ে বলে"কি বলবে এখানেই  বলো,উপরে যাওয়ার কি আছে!"
:প্লিজ আসুন না.....
:এখানেই বলো,এই দুপুরে ছাদে যাওয়ার দরকার নেই।
রাইসা ডিরেক্ট ধ্রুবর ডান হাতে ধরে টেনে উঠায় (ধ্রুবর মেজাজ তো সপ্তম আকাশ উঠে যায়,এক্ষণি একে না থামালেই নয় খুব বারাবাড়ি করছে )তারপর টানতে টানতে ছাদে নিয়ে যায়..... হাত ছাড়ার বদলে দু'হাতে আরো ঝাপটে ধরে। 

এ দিকে তুর গোসল শেষে অস্থিরতা কাটিয়ে শান্তি  অনুভব করছে।ভাবছে গাছ থেকে পেয়ারা পেরে এনে মাকে তেতুল দিয়ে পেয়ারার ভর্তা করে দিতে বলবে।ঝাল ঝাল করে।ভাবতেই জ্বিভে পানি চলে এসেছে।
তুর এইসব ভাবতে ভাবতে ছাদে যায়।ছাদের দরজায় দাড়াতে ই দেখে,রাইসা ধ্রুবর ডান হাত ওর দুই হাত দিয়ে ধরে রেখেছে,আর বলছে "আপনি সব সময় আমার থেকে এমন দূরে দূরে থাকেন কেন?জানেন কয়েক দিন ধরে মনটা খুব ছটফট করছে,আর কেমন যেন ধম বন্ধ বন্ধ লাগছে,রাতে ঘুমাতে পারি না,খুব অস্হিরতায় ভুগছি। বুঝতে পারছি না কেন এমন হচ্ছ?আপনি কি জানেন কেন এমন হচ্ছে?
আপনার ও কি এমন হয়?"
এই মেয়ে না ওর হাত ছাড়ছে আর না ওকে কিছু বলতে দিচ্ছে।নিজেই একনাগাড়ে সব বলে যাচ্ছে।এতো গায়ে পড়া সভাবের কেউ কিভাবে হতে পারে।ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে ইচ্ছা করছে।কিন্তু মেয়ে বলে পারছে না।
ধ্রুব হাত সরাতেই যাচ্ছিল,তখনই ধ্রুবর চোখ যায় দরজায় দাড়িয়ে থাকা তুরের দিকে।রাইসা ও 
তাকায়।তুর প্রচন্ড রাগ আর কষ্ট নিয়ে তাকিয়ে আছে...।ধ্রুব ঝারা দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। 
রাইসা খুব রেগে যায়।ফাহিম আবির রিয়া কেউ না থাকায় ধ্রুবকে এখানে জোর করে নিয়ে এসেছে মনের কথা গুলো বলার জন্য,প্রপোজ করার জন্য।কিন্তু বেয়াদব মেয়ে টা এসে সব নষ্ট করে দিল।রাগের চোটে চোখ মুখ আধার করে ফেলেছে "এখানে কি? দেখছো না এখানে বড়োরা কথা বলছে?বেয়াদবের মতো দাড়িয়ে আছো কেন?যাও এখান থেকে....। পুরো মুডটা ই নষ্ট করে দিল।বেয়াদব কোথাকার.....কোনো ম্যানারস জানে না।"

তুর:সরি আপু।আসলে আমি বুঝতে পারি নি আপনারা এই ভর দুপুরে ছাদে দাড়িয়ে রোম্যান্স করছেন,আ'ম রিয়েলি রিয়েলি সরি।প্লিজ  কন্টিনিউ ধ্রুব ভাইয়া।এক্সট্রেমলি সরি আপু।সরি ভাইয়া।বলেই ঝড়ের গতিতে ওখান থেকে চলে গেল।
ধ্রুব পেছন থেকে বলছে "তুর.....।
তুই যা ভাবছিস তেমন কিছু না...... ,তুর শোন।" পেছন পেছন যেতে যেতে।কিন্তু তুর ধ্রুবর কথা কানে নেয়নি রুমে ঢুকে ধ্রুবর মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয়।আর ধ্রুব আরো একবার ভুল নামক এক্সিডেন্টের কবলে পড়ে। নতুন ক্ষত নিয়ে হতাশ হয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে।

"এই কয় দিনের ব্যবহারে মনে হয়েছিল হয়তো ওনি আমাকে ভালোবাসে,তাই এমন আচরণ করছে।বার বার কাছে এসেছে।মনের অজান্তেই আবার তার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছি।কিন্তু আমার ধারণা ভুল ছিল,সে কখনো আমাকে ভালো বাসেনি আর বাসতেও পারে না।কতো বোকা আমি।ওনি শুধু ওনার কর্মের জন্য অনুশোচনায় ভুগছে ,তাই বারবার এমন বাহানা খুজেছে,আর কিছু না।"

দু চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। 

"কতো সুন্দর স্টালিশ একটা মেয়ে রাইসা আপু,কতো সুন্দর করে কথা বলে,পড়াশুনায়ও কতো এগিয়ে।একদম ওনার মতো পারফেক্ট।রাইসা আপুর সাথে ই ওনাকে মানায়,মেড ফর ইচ অদার।"

আর ভাবতে পারেনি কান্নায় ভেঙে পরেছে।দরজার সাথে হেলান দিয়ে নিচে বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। নিজের চোখে দেখা দুজনের এতো কাছে আসা দৃশ্য যে সহ্য হচ্ছে না।কিভাবে অন্য কারো সাথে ওনাকে দেখবে,পারবে না কিছুতেই,মরে যাবে তবুও পারবে না।

 ডিসিশন নেয়" অন্য কারো সাথে ধ্রুবকে দেখার  আগে নিজে  বিয়ে করে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।তাহলে আর অন্য কারো সাথে দেখতে হবে না।"আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েছে।

সারাদিন তুর রুম থেকে বের হয় নি।রাতের বেলা ফাহিম টেনে বের করে ছাদে নিয়ে আসে।সব আগে থেকেই রেডি করে রেখেছে।মুরগি আর একটা কোরাল ফিস বারবিকিউ করবে। সব মসলা মাখিয়ে ম্যেরিনেট হতে রেখে দিয়েছে।সাথে ফ্রাইড রাইস,কাবাব আরো কিছু আইটেম (সেগুলো মা আর চাচি কিচেন থেকে করে দিচ্ছে)।
ছাদে বসার জন্য মেট্র্যাস পাতা হয়েছে।তুরকে নিয়ে আসার পরে সবাই যার যার মতো বসে পড়ে।ফাহিম,আবির ইলেকট্রিক চুলায় মাংস ঝলসানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে।ধ্রুব পাশে বসে ইনসট্রাকশন দিচ্ছে। আর একটু পর পর তুরের ফোলা মুখের দিকে তাকাচ্ছে আর ভাবছে "ভুল বোঝা বুঝি শুধু বারছেই।কোনো ভাবেই  কমছে না।এমন ভাবে চলতে থাকলে জীবনে কোনো দিন ও তোকে নিজের করে পাবে না "।

চুলায় মাংস ঝলসাতে দিয়ে সবাই মাদুরে গোল হয়ে বসে।যার যার ইচ্ছা মতো সে আইসক্রিম চকলেট কোলড্রিস নিয়ে বসেছে।
মাঝখানে একটা বোতল রেখে চারিদিকে সবাই গোল হয়ে বসে।ট্রুথ ডেয়ার খেলার জন্য ।

তুর বলছে খেলবে না।তখন ফাহিম,আবির,ঐশি,তুহিন জোর করছে।না চাইতে ও বাধ্য হয়ে খেলতে হচ্ছে।তবে সবার মতো হইচই করছে না ,একদম চুপচাপ বসে আছে।
 প্রথম রিয়া,তারপর রাইসা,পরে আবির ফাহিম ঐশি তুহিন একে একে সবার নাচ, গান,অভিনয়, সিক্রেট নানা ধরনের ট্রুথ আর ডেয়ার আসে।সবাই খুব হৈ-হুল্লোড়ের করে যার যার চান্স শেষ
করে।এবার আসে তুরের চান্স।ফাহিম বোতল ঘুড়ায়।বোতল ঘুড়াতেই  তুরের ডেয়ার আসে।তখন আবির বলে কাউকে প্রোপোজ করতে হবে।কথা হলো এখন তুর কাকে প্রপোজ করবে?ফাহিম চট করে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারে।আর তুরকে বলে"ভাইয়া কে প্রোপোজ কর"।
তুর অবাক চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়ায় "কখনোই না।
রিয়া বলে" কেন না,সবাই কে যা যা বলা হয়েছে সেটা ই করেছে।এটা জাস্ট একটা খেলা,এতে প্রবলেম কোথায়,আর থাকলে ও করতে হবে।"

রাইসা প্রথম থেকে ই তুর কে সহ্য করতে পারছে না।আর এখন তো ওর সাথে সাথে সবাইকে।রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে।খুব বারবারি করছে।

ধ্রুব তো ফাহিমকে হাজার টা ধন্যবাদ দিচ্ছে। 

ফাহিম : সবাই করেছে তোকে ও করতে হবে।কোনো তাল বাহানা চলবে না।
সবার জোরাজোরিতে তুর রাজি হয়।ফাহিমের ইন্সট্রাকশন মতে দুজন কে সামনাসামনি বসতে হয়।তুর খুব লজ্জা পাচ্ছে,এতো মানুষের সামনে....ধ্রুবকে প্রপোজ করতে হবে।তার ওপর ধ্রুব বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে।তুর ধ্রুবর দিকে তাকায়,তাকিয়ে ও চোখ নামিয়ে নেয়।
ফাহিম কে বলে"ফাহিম আমি পারবো না,,প্লিজ এটা বাদে অন্য কিছু বল"।
 একসাথে সবাই চিল্লিয়ে উঠে।শুধু রাইসা বলে"ও যখন পারবে না বলেছে তো আর একটা চান্স দেও।"
সবাই নারাজ,করতেই হবে।তুর কে ও সেটা মেনে নিতে হয়।
তুর ধ্রুবর চোখের দিকে তাকায় ধ্রুব তো সেই কখনই তাকিয়ে আছে অধির আগ্রহে।

তুরের কান্না পাচ্ছে ,
আজ কেন ডেয়ার হিসেবে তাকে প্রপোজ করতে হচ্ছে?কি এমন হতো যদি সত্যি এমন একটা দিন আসতো?

কান্না ভেজা কন্ঠে বলে"সেই ছোট্ট বেলা থেকে...যখন বুঝতে শিখেছি তখন থেকে,আপনার  সাথে থাকতে খুব ভালো লাগতো।আপনার সাথে ঘুরতে খেলতে ভালো লাগতো।মাঝে মাঝে যখন আমাকে খুব ক্ষেপাতেন ,আমি রেগে গেলে আমার টমেটোর মতো গাল গুলো টেনে দিতেন তখন আমার সব রাগ গায়েব হয়ে যেতো।আপনার কাছে কোনো কিছু চাইলে খুব বকুনি খেতাম,কিন্তু সাথে জিনিসটা ও পেয়ে যেতাম।বাড়িতে সবাই আমাকে প্রচন্ড আদর করে কিন্তু আপনি তা মানতে পারতেন না।আমি বুঝতাম ,তবে এটাও বুঝতাম।দিন শেষে আপনি ও আমাকে আগলে রাখেন,এক্সট্রা কেয়ার করেন।কোনো কিছু হলে আপনার বকুনি,চুল টানা,সব আবদার পূরণ করা,শাসন বারণ, স্রেহ সব কিছুই ভালো লাগতো।খুব ভালো লাগতো।কখন যে এই ছোট্ট হৃদয়ে এই সম্পর্ক অন্য নামে বাসা বাধচ্ছিল বুজতে পারিনি।যখন বুঝতে পারি তখন আপনাকে না দেখলে কিছু ই ভালো লাগে না,কেমন যেন সব শূন্য শূন্য লাগে,মনে হয় অক্সিজেনের অভাবে মরে যাব।পাশে থাকলে মনে হয় পুরো দুনিয়া ই রঙিন আর আমি সেই দুনিয়ায় একটা স্বাধীন পাখি।ডানা মেলে মনের সুখে শুধু উড়ছি।বাধা বিহীন উড়ে বেড়াচ্ছি মুক্ত পাখির মতো।এক অন্য রকম প্রশান্তি লাগে।সেই ছেলেবেলা থেকে যখন থেকে ভালোবাসা কি বুঝতে শিখেছি ,তখন থেকে শুধু আপনাকেই মনে মনে ভালোবেসে এসেছি।অন্য কারো দিকে ফিরে তাকাইনি পর্যন্ত।চোখ বন্ধ করে কলেজের টপার ছেলেটাকে ও রিজেক্ট করে দেয়েছি।অন্য কারো দিকে চেয়ে দেখবো কিভাবে,আপনি.....ছাড়া যে কোথাও আমার অস্তিত্বই খুঁজে পাই না। আপনি যে আমার জীবনের প্রশান্তি।আমার বাঁচার অক্সিজেন।আপনাকে ছাড়া কি ভাবে বাঁচবো। অক্সিজেন বিহিন প্রাণীর মতো যে ছটফটিয়ে মরে যাবো।আপনি কি আমার এই অনুভুতি গুলোর মূল্য দেবেন?দেবেন আপনার হৃদয়ের এক আকাশ সমান ভালোবাসা?দেবেন আমার হৃদয়ের সুপ্ত ভালোবাসা গুলো আপনার হৃদয়ের আকাশে উড়তে?ভালোবাসার শেকল পড়িয়ে করবেন আপনার বুকের খাঁচায় বন্দী?আপনার হৃদয়ের আকাশে করবেন আমাকে ধ্রুবতারা?দেবেন মুক্ত পাখির মতো মনের সুখে ডানা ঝাপটাতে?বাসবেন ভিষণ ভালো?আপনি না বাসলেও আমি আজীবন আপনাকে ভালো বেসে যাবো।এই মনের আঙিনায় শুধু আপনার ই বসবাস থাকবে।"চোখ বেয়ে আপনা আপনি দুই ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
সবাই নিশ্চুপ..... এ যেন সত্যি কেউ তার মনের আকুলতা প্রকাশ করেছে।
ধ্রুবর চোখের পলক পড়ছে না,ছোটো থেকে তুরের মনে ও যে এমন সুপ্ত অনুভূতি ছিল আজ বুঝতে পারছে।ওর প্রেয়সী ও যে কতটা ভালোবেসেছে আর ভালোবাসতে পারে আজ বুঝতে পারছে।

তুর সকলের উদ্দেশ্য বলে"প্লিজ কেউ সিরিয়াসলি নেবে না,এটা জাস্ট একটা মুভি থেকে কপি করা।"

রাইসা তুরের চোখে স্পষ্ট ধ্রুবর প্রতি ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।তুর মিছেমিছি না সত্যি সত্যিই মনের কথা গুলো বলেছে।রাগে নিজের হাতে নিজেই খামচাচ্ছে, কিছুতেই এমন হতে দিবে না।

এই বার ধ্রুবর পালা।বোতল ঘুরতেই ধ্রুবর ডেয়ার আসে,আর সবাই ধ্রুবকে গান গাইতে বলে।ফাহিম পাশে থাকা গিটার টা তুলে দেয়।
ধ্রুব গিটার হাতে নিয়ে সুর তোলে,আর মোহনিয় দৃষ্টিতে তুরের দিকে তাকায়।ধ্রুবর দৃষ্টির আড়াল হতে তুর ছাদের অন্য দিকে তাকিয়ে আছে, মনে চলছে এক অজানা ব্যথা।তবে আড় চোখে ঠিকি লক্ষ্য করছে।এসব দেখে রাইসার সর্বাঙ্গ জলে যাচ্ছে। ধ্রুব তুরের দিকে তাকিয়ে মহোনিয় স্বরে গানে গানে বলতে শুরু করে ওর মনের কথা .......

আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি
দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি

বিনোদ বেণীর জরীন ফিতায়
বিনোদ বেণীর জরীন ফিতায়
আন্ধা ইশক্ মেরা কস্ গয়ি
আন্ধা ইশক্ মেরা কস্ গয়ি

তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায়ে আসিলো লোভী আমার মন
তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায়ে আসিলো লোভী আমার মন
বেহুঁশ হো কর্ গির্ পড়ি হাথ মে
বেহুঁশ হো কর্ গির্ পড়ি হাথ মে
বাজু বন্দ মে বস্ গয়ি
বাজু বন্দ মে বস্ গয়ি

আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি
দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি

কানের দুলে প্রাণ রাখিলে বিঁধিয়া
আঁখ্ ফিরা দিয়া চোরী কর্ নিন্দিয়া
কানের দুলে প্রাণ রাখিলে বিঁধিয়া
আঁখ্ ফিরা দিয়া চোরী কর্ নিন্দিয়া

দেহের দেউড়িতে বেড়াতে আসিয়া
দেহের দেউড়িতে বেড়াতে আসিয়া
অর নেহিঁ উয়ো ওয়াপস্ গয়ি
অর নেহিঁ উয়ো ওয়াপস্ গয়ি

আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন
দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি
দিল ওহি মেরা ফঁস্ গয়ি



চলবে......

Post a Comment

অনুগ্রহ করে স্পাম করা থেকে বিরত থাকুন।
Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.